দুর্নীতি
দুর্নীতির মামলায় খালাস পেলেন ফালু
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রবিবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘ফালুর বিরুদ্ধে করা মামলার কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন।’
বিচারক আরও বলেন, ‘ফালুর যদি অবৈধ সম্পদ থাকে, সেটা তো অবরুদ্ধ করতে হতো। সেটাও তো করা হয়নি। সুতরাং এ মামলা থেকে তাকে খালাস দেয়া হলো।’
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমদ আলী সালামি রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় স্ত্রীসহ আদালতে উপস্থিত ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। রায়ের পর হাসিমুখে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন গ্রহণ করেন তিনি। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বিএনপির এই নেতা।
২০০৭ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর মতিঝিল থানায় সাবেক সংসদ সদস্য ফালু ও তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুন: মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্টের রুল
এরপর ফালু ও তার স্ত্রী হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করেন। যেকারণে দীর্ঘদিন এ মামলার বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
পরে হাইকোর্ট ফালুর স্ত্রীর মামলা গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেন। তবে তার আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২৭ অগাস্ট মামলাটির অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, দুদকের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পেয়ে ২০০৭ সালের ১ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন ফালু। মামলার তদন্তে ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৬৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং ১০ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৫১৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পায় দুদক।
২০০৪ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ফালু। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এরপরে আওয়ামী লীগ সরকার থাকার সময় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
১৪ ঘণ্টা আগে
দুর্নীতি: হাসিনা-রেহানাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে ৩০ কাঠা প্লট গ্রহণের পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের চার সদস্যসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে এমন আদেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।
প্লট দুর্নীতির আরেক মামলায় এর আগে গত ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে একই আদালত।
১৮ ঘণ্টা আগে
ঘুষ-দুর্নীতি বেড়েছে, তাহলে কীসের সংস্কার হচ্ছে: মুরাদ
সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জেলা যুবদল সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, রাষ্ট্র সংস্কার হবে, সরকারি অফিস-আদালতে ঘুষ দুর্নীতি কমবে। দেশে ঘুষ-দুর্নীতি তো কমেনি বরং বেড়েছে। তাহলে দেশে কীসের সংস্কার হচ্ছে?’
সোমবার (১৭ মার্চ) ধামরাই সদর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
মুরাদ বলেন, দেশের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা নাজুক। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ে মানুষ অতিষ্ঠ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপি বেহেশতে যাওয়ার টিকিট বিক্রি করে না: মুরাদ
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১দফার মধ্যেই রাষ্ট্রের সব সংস্কারের উল্লেখ রয়েছে। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করলে আলাদা করে আর কোন সংস্কার প্রয়োজন হবে নেই।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুরাদ বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটাই আমাদের দলের মূলনীতি। দলের আদর্শচ্যুত হয়ে এই দলে কেউ টিকে থাকতে পারেননি। তাই ভেবেচিন্তে কাজ করবেন। এমন কিছু করবেন না যাতে দলের সুনাম নষ্ট হয়।
ধামরাই সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্ব এবং এনায়েত হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় নেতা এম এ জলিল, এবাদুল হক জাহিদ, মনিরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মো. পলাশ, জসিমউদদীন, মুহাম্মদ রাকিব প্রমুখ।
আগের দিন রবিবার কুশুরা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন লোকমান দেওয়ান।
২৭ দিন আগে
তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ হানিফের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও স্ত্রী ফৌজিয়া আলম, ছেলে ফাহিম আফসার আলম ও ফারহান সাদিক আলম এবং মেয়ে তানিশা আলমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ মাহবুব উল আলম হানিফের বিদেশ যাত্রা বন্ধের আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
দুদকের পক্ষে উপপরিচালক সাইদুজ্জামান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
আবেদনে বলা হয়, মাহবুব উল আলম হানিফের বিরুদ্ধে পদ্মা ও গড়াই নদীর বালুমহল থেকে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, হাটবাজার ইজারা বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর-কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সাবেক বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এসব অর্থ বিদেশে পাচার ও স্ত্রীর নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (কুষ্টিয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, মোংলা, কক্সবাজার, টেকনাফ এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরে- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
২৮ দিন আগে
টাকা দিলেই মিলত জন্ম সনদ, সুযোগ নিয়েছে রোহিঙ্গারাও
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন ছুটিতে। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি সদস্যকে হাত করে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে কোনোপ্রকার বাছবিচার ছাড়াই একের পর এক জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছেন পারভেজ। এমনকি রোহিঙ্গারাও টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে জন্ম সনদ নিয়েছে।
সম্প্রতি বিষয়টি সবার সামনে এলে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এলাকার কেউ নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করলে মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও তা ইস্যু নিয়ে কোনো তাড়া দেখা যায় না। অথচ টাকা দিয়ে এখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই জন্ম সনদ নিয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
তাদের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নেওয়ার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, রংপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অধিবাসীরা বুধল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ বানিয়েছেন। এসব সনদে তাদের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ২ নম্বর বুধল ইউনিয়ন পরিষদ।
বিদেশ গমন, বিয়ে, নতুন ভোটার হালনাগাদ ও বয়স বাড়ানো-কমানোসহ নানা প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে নানা জায়গার মানুষ সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: ১০ বছর ধরে নেই কোনো মুসলিম শিক্ষক, ইসলাম শিক্ষা পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকরা
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ও সনদ ইস্যুর পর তা প্রিন্ট করতে হলে প্রসাশনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দিষ্ট সার্ভার অ্যাকাউন্ট ও ওটিপির প্রয়োজন হয়। তাহলে চেয়ারম্যাচের অগোচরে কীভাবে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি ঘটল, তা জানতে চাইলে দুধল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল রহমান (শফিক) বলেন, ‘২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি ছুটিতে ছিলাম। এ সময় প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সাদেক মিয়া। আমার অনুপস্থিতিতে তার সঙ্গে আঁতাত করেই ইউপি সচিব পারভেজ এই জালিয়াতি শুরু করেন।’
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করে ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তারকে দিয়ে তারা সেগুলো প্রিন্ট করাতেন বলে জানান শফিক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ছুটি থেকে ফিরে গত ২২ জানুয়ারি আমি অফিস শুরু করলে এক ব্যক্তি টেলিফোনে বিষয়টি আমাকে জানান। তারপর আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই।’
‘পরে পারভেজকে এ বিষয়ে ধরলে চাপে পড়ে তিনি দায় স্বীকার করেন। এমনকি স্ট্যাম্পে লিখিতও দেন তিনি।’
ইউপি সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২০২৩ সালেও সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রসাশকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। সে সময় আবেদন করা হলেও শুরুতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদেই কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে তাকে কসবা উপজেলা খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তারের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘আমাকে চাপ দিয়ে সুমন পারভেজ স্যার এসব কাজ করাতেন। ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে পারি নাই। সব সময় তিনি আমাকে চাপের মধ্যে রাখতেন।’
নারী উদ্যোক্তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ হাসিলে সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সমর্থন দেন শফিক চেয়ারম্যানও। বলেন, ‘তার (পারভেজ) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে মশার উপদ্রব, নগরজুড়ে উদ্বেগ
কথা হয় চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সাদেক মেম্বারের সঙ্গেও। তার দাবি, তাকে বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে পাসওয়ার্ড নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইউএনবিকে মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘২/৩ দিনে প্রায় পৌনে দুইশ মানুষের জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে এখান থেকে। অন্য জায়গা থেকে আবেদন করে সে (পারভেজ) ইউনিয়ন পরিষদে এন্ট্রি করে পিডিএফ আকারে নিয়ে যেত।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘এমন ঘটনা সব জায়গাতেই হচ্ছে, শুধু আমার জেলাতে হয়েছে—এমন নয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমি শুনেছি। তদন্তে তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সুমন পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নেন। তবে নিজের অসুস্থতা এবং মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে অজুহাতে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি।
৪৬ দিন আগে
ভিসা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ ইতালি দূতাবাসের
ভিসা প্রক্রিয়া করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকাস্থ ইতালির দূতাবাস। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ইতালিতে প্রতারণামূলক কার্যক্রম বোঝার এবং শনাক্ত করতে দূতাবাস উভয় দেশের পুলিশ কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে।
সম্প্রতি এসব ক্ষেত্রে প্রতারণা সংক্রান্ত ঘটনায় ইতালির পুলিশ (গার্ডিয়া ডি ফিনানজা) একটি তদন্ত করেছে। এরপর দূতাবাসের দুই জন প্রাক্তন কর্মী সদস্যসহ অন্যান্য ইতালীয় এবং বাংলাদেশি নাগরিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গৃহবন্দী করা হয়েছে।
এটি দূতাবাস এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার উদ্যোগ। একই সঙ্গে এটি অভিবাসীদের নির্যাতন ও প্রতারণা থেকে রক্ষা করার জন্য দূতাবাস এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিখুঁত তল্লাশি কার্যক্রমের আরও একটি প্রমাণ।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ইউরোপীয় দেশগুলোর ভিসা সেন্টার খোলার চেষ্টা চলমান: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভিএফএস গ্লোবালের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত কনস্যুলার এবং পরিষেবা ফি ব্যতীত কাউকে কিছু না দিতে এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের এড়াতে ভিসা আবেদনকারীদের আবারও অনুরোধ করেছে দূতাবাস।
আবেদনকারীদের তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত যেকোনো অসদাচরণের অভিজ্ঞতা কর্তৃপক্ষের কাছে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিশেষে, দূতাবাস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইতালি থেকে অতিরিক্ত কর্মী আনার কারণে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় কমেছে এবং সামনের মাসগুলোতে বিদ্যমান সমাস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে দূতাবাস আত্মবিশ্বাসী।
আরও পড়ুন: ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও আরও কর্মী নিতে আমিরাতের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান
৫০ দিন আগে
দুর্নীতির খবর যেন ধামাচাপা দেওয়া না হয়: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন বলেছেন, সমঝোতার মাধ্যমে ঘটে যাওয়া অনেক বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগই দায়ের হয় না। বরং এগুলোকে ধামাচাপা দেওয়া হয়। যার সঙ্গে ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক হোক, তারা খবর দেন না।’
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট দুর্নীতি হলে আমরা আগে খবর পাই। কিন্তু সমঝোতার মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয় অর্থাৎ বড় দুর্নীতি, সেটার অভিযোগই হয় না। সেটার সঙ্গে ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক হোক তারা খবর দেন না। আমাদের আবেদন থাকবে বড় দুর্নীতির নিউজ যেন বেশি বেশি সামনে আসে। দুর্নীতির খবর বেশি আসুক তাতে কোনো সমস্যা নেই।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যেন দুর্নীতির খবর ধামাচাপা না দেই, না লুকাই। জেলা প্রশাসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তারা এটা নিয়ে কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক জেলায় কার্যালয় নেই। সেটা সত্যি। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সম্মুখীন হই, সেটা কমাবো কীভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের সামনে এ ধরনের সংকটের কথা এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ভাষণের বড় একটা অংশ ছিল দুর্নীতি। আজকের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সবচেয়ে বড় বার্তা ছিল পেছনের দুর্নীতি দমনের চেয়ে, সামনে যেন দুর্নীতির না হয় সেই বার্তা দিয়েছি।’
আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বর্তমানের দুর্নীতি বন্ধ, পুরাতনগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি। দুদক মূলত ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সময় ব্যয় করে পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ ও ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ সময় ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা গ্রহণ করেছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসককেও দিয়েছি। কারণ জেলা প্রশাসক হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের প্রধান কর্মকর্তা। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, জেলা প্রশাসককেই আগে জানতে চাওয়া হয়। দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসলে জেলা প্রশাসককেই জবাবদিহি করতে হয়।’
আরও পড়ুন: অনিয়মের অভিযোগে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে দুদকের অভিযান
ট্রান্সিপারেন্সি ইন্টারন্যাশনলের দুর্নীতির ধারনা সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের সঙ্গে দুদক একমত কিনা জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রথমত আমরা পরীক্ষা করি নাই। সিপিআই একটি কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়। কাঠামো নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু ১৮০টি দেশ যেটা গ্রহণ করে। আমরা এর বাইরে থাকতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘দুদকের সঙ্গে বিরোধী মতের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে। এমনকি আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই, আমাদের সঙ্গেও বিরোধ থাকতে পারে। যাদের আইনের আওতায় আনা চূড়ান্ত লক্ষ্য। ভবিষ্যতে দুর্নীতি যেন প্রতিরোধ করতে পারি, আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।
৫৫ দিন আগে
টিআইবি দুর্নীতি সূচকে ২ ধাপ অবনতি বাংলাদেশের
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো ও ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম স্থানে আছে ঢাকা। গেলো তেরো বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম স্কোর অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
গেল বছরে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বৈশ্বিক ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪ প্রকাশ উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সারা দেশে সহিংস ভাঙচুর: সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান টিআইবির
দুর্নীতির ধারণা শূন্য থেকে ১০০ টিআই সূচক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যে দেশটির স্কোর থাকবে শূন্য, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যারা ১০০-তে থাকবে, তাদেরকে বলা হবে সবচেয়ে বেশি সুশাসিত।
২০২৪ সালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ এর মধ্যে ২৩। আগের বছরের চেয়ে যা এক পয়েন্ট কম, আর গেল তেরো বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সিপিআই অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের স্কোর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পরেই। আফগানিস্তানের স্কোর ১৭।
২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিপিআইয়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫ থেকে ২৮। কিন্তু ২০২৩ সালে এটি কমে গিয়ে চব্বিশে দাঁড়ায়।
২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিপিআই ট্রেন্ড বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সিপিআই স্কোর ২৩, গেলে তেরো বছরের গড় স্কোরের চেয়ে যা তিন পয়েন্ট কম।
আরও পড়ুন: বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় টিআইবির উদ্বেগ
গেল বছরের তুলনায় এ বছর ৫৬টি দেশে সিপিআই স্কোর বেড়েছে। ৯৩টি দেশের স্কোর কমেছে, আর ৩১টি দেশের অবস্থা অপরিবর্তিত। স্কোরের মাত্রায় কোনো দেশই নিখুঁত স্কোর অর্জন করতে পারেনি। এ বছরে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশের স্কোর পঞ্চাশের নিচে।
৯০ স্কোর নিয়ে চলতি বছরে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা পেয়েছে ডেনমার্ক। এরপর ৮৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড, আর ৮৪টি নিয়ে তৃতীয় সিঙ্গাপুর।
২০২৪ সালে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, তাদের স্কোর ৮। সোমালিয়া এরপরেই, স্কোর ৯। আর ১০ স্কোর নিয়ে দুর্নীতিতে তৃতীয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা।
এদিকে দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) পাকিস্তানের অবনতি হয়েছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ১৩৩তম, চলতি বছরে সেটা ১৩৫তম।
আরও পড়ুন: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ ভিন্নমত-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে: টিআইবি
৬১ দিন আগে
সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ৭০-৮০ শতাংশ ক্রয় নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ৭০-৮০ শতাংশ পিপিআর ২০০৬ এবং পিপিআর ২০০৮ রিলেটেড। এদিকে নজর দিলে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজে দুদক কর্মকর্তাদের সরকারি ক্রয়নীতির উপর ১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় অসংখ্য দুর্নীতির খবর আপনারা পেয়েছেন। কোথাও অস্বাভাবিক বেশি দামে মালামাল কেনা হয়েছে, কোথাও নিম্নমানের মালামাল কেনা হয়েছে- যা এখন ব্যবহার করা যায় না। এসব ব্যাপারে দুদক কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি'।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের লকার খুলতে দুদকের অভিযান
দুর্নীতি করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি) আক্তার হোসেন বলেন, 'দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর রাখতে হবে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ(আইইবি)'র সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম রিজু।
৬২ দিন আগে
দুর্নীতি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ধ্বংস করেছে: শ্বেতপত্র
বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। এসব দুর্নীতির কারণে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করেছে এবং বার্ষিক অবৈধ অর্থ ব্যয় হয়েছে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক সাহায্য ও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণের দ্বিগুণেরও বেশি।
রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটি শ্বেতপত্র উপস্থাপন করে। এই তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে পদ্ধতিগত জালিয়াতি, অব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
খাতভিত্তিক দুর্নীতি
১. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত
ব্যাংকিং খাতকে সবেচেয়ে দুর্নীতিবিধ্বস্ত খাত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারি, অবৈধ অধিগ্রহণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণদানে জর্জরিত এ খাত।
প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতুর মতো একাধিক বড় আকারের অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয়ের সমান সম্পদ নষ্ট হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণ এবং হাইপ্রোফাইল খেলাপি আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তহবিলগুলোকে উৎপাদনশীল বিনিয়োগ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
২. ভৌত অবকাঠামো
সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্পগুলো অতিরিক্ত ব্যয়, তহবিলের অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতিমূলক নিয়োগে জর্জরিত।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, সরকারি প্রকল্পগুলোতে গড়ে ৭০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে দুর্নীতির কারণে। পাঁচ বছরেরও বেশি দেরি করেছে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে। গত ১৫ বছরে ঘুষ ও সম্প্রসারিত বাজেটের মাধ্যমে ১৪ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এর ফলে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনা কমে গেছে।
৩. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ
রাজনৈতিক ও আর্থিক লাভের জন্য জ্বালানি চুক্তি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কারসাজি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিযোগিতাহীন দরপত্র প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, সম্পদ পাচার এবং পদ্ধতিগত অদক্ষতা সৃষ্টি জ্বালানি সরবরাহে বাধা দেয়।
৪. শ্রম অভিবাসন
গত এক দশকে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগ ও অবৈধ হুন্ডি লেনদেনের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। এটি ঢাকা এমআরটি-৬ প্রকল্প নির্মাণের ব্যয়ের চেয়ে চারগুণ বেশি। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভ হয়নি।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
প্রতিবেদনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে পদ্ধতিগত অদক্ষতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ খাতে ৭৩ শতাংশ সুবিধাভোগীকে দরিদ্র নয় বলে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে আর্থিকভাবে দুর্বল লাখ লাখ ব্যক্তিকে সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
৬. আইসিটি খাত
আইসিটি খাতের প্রযুক্তিগত নতুনত্ব এটিকে অপারেশনাল অদক্ষতা এবং দুর্নীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। জোটবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি এবং অতিরিক্ত ক্রয় খরচের ঘটনা এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
কমিটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে:
অবৈধ আর্থিক বহিঃপ্রবাহ: ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈদেশিক সাহায্য ও এফডিআইয়ের পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
সরকারি বিনিয়োগ: উন্নয়ন প্রকল্পের ৩০ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। যার ফলে ক্ষতি হয়েছে ১.৬১-২.৮ লাখ কোটি টাকা।
বিকৃত সরবরাহ শৃঙ্খল: উৎপাদন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কারসাজির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সেখানে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে, অথচ ভোক্তারা এর ভার বহন করতে বাধ্য হচ্ছে।
দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ
এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ব্যাংকিং ঋণ কেলেঙ্কারি: অপব্যবহার ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত খেলাপি।
বর্ধিত ও অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয়: তহবিল পাচার করতে পদ্ধতিগত খরচ বাড়ানো।
জমির অপব্যবহার: রাজনৈতিকভাবে দুর্বল জমির মালিকদের লক্ষ্য করে জোরপূর্বক অধিগ্রহণ চর্চা।
ঘুষ ও স্বজনপ্রীতি: প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও জনসেবায় বিস্তৃত।
জরুরি সংস্কার প্রয়োজন
শ্বেতপত্রে সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা পুনরুদ্ধারের জন্য পদ্ধতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি মোকাবিলার জন্য জবাবদিহি ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
রবিবার প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে চিহ্নিত দুর্নীতির মাত্রা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৩২ দিন আগে