জাতিসংঘ
ডিএনসিসি মেয়র জাতিসংঘের স্থানীয়-আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত
জাতিসংঘের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সোমবার(২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সেই করা এক চিঠিতে জাতিসংঘের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মেয়র আতিকুল ইসলামের মনোনয়নের বিষয়টি জানানো হয়।
আরও পড়ুন: জননিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনো প্রকল্প চলতে দেয়া হবে না: আতিকুল
পরে সম্মতি প্রদান করলে ডিএনসিসি মেয়রকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, 'আন্তঃসরকার ও জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের সম্পৃক্ততা জোরদার করার ক্ষেত্রে এই উপদেষ্টা পরিষদের সময়োপোযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং আধুনিক শহর গড়তে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে এই উপদেষ্টা পরিষদ করণীয় বিষয় নির্দিষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে।'
আরও পড়ুন: ১০ দিনের মধ্যে সব ভবনের মালিককে কাগজপত্র দিতে হবে: মেয়র আতিকুল
চিঠিতে আরও বলা হয়, 'উপদেষ্টা পরিষদ স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের সংশ্লিষ্টতা ও কর্মকাণ্ডসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেবে, সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আমাদের বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনীয় বিষয় সংশোধনে ভূমিকা রাখবে।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারগুলোর ধারাবাহিকভাবে ভূমিকা পালন এবং বৈশ্বিক পদক্ষেপেও অবদান রাখবে।
উল্লেখ, ১৫ সদস্যের এই উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে দুইজন সদস্য মনোনিত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের মেয়র অ্যাবি বিনায়। অন্যান্য সদস্যগুলো হলো ইউরোপ থেকে তিন জন, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে তিনজন, উত্তর আমেরিকা থেকে দুইজন, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চল থেকে তিনজন, মধ্য প্রাচ্য ও মধ্য আফ্রিকা (এমইএনএ) থেকে দুইজন।
আরও পড়ুন: ‘সুস্থ, সচল, আধুনিক’ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি আতিকুলের
নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত বাধাই প্রধান: জাতিসংঘ
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতাই নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূরী করার পথে উল্লেখযোগ্য বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গ্উইন লুইস।
তিনি বলেন, সারাদেশে অগ্রগতি সত্ত্বেও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূরীকরণের পথে উল্লেখযোগ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এটি খুলনা ও বরিশালের নারী ও মেয়েদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সফরের ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, 'দেশের ভিশন অর্জনে আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং এই পরিবর্তনে নারীদের সমান অংশীদার হতে হবে।’
আরও পড়ুন: কোনটা এগুচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন, নাকি পুরুষতান্ত্রিকতা?
জাতিসংঘের দলটি এই অঞ্চলে নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তা অনুসন্ধান করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রচেষ্টার অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
সম্প্রতি বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে সফর করে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ ও তাদের উন্নয়ন অংশীদারী সংস্থার একটি যৌথ প্রতিনিধি দল। সফরের পর তারা জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকল্পে অধিকতর কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জেন্ডার সমতা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাবের কারণে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের নারীরা অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ইউএন উইমেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ গীতাঞ্জলী সিং বলেন, ‘মিশনের প্রতিটি দিন আমরা নারী ও মেয়েদের কাছে থেকে তাদের সংকল্প ও সাহসিকতার কথা শুনেছি। এখানে দেখছি জেন্ডার নিয়ে নানা পুরোনো রীতি-আচার মেয়েদের রয়ে গেছে। এটি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাধাগ্রস্ত করছে। জেন্ডার সমতার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে, যুবক, তরুণ ও কিশোরদেরও একইসঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।
আইএলও, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পোটিআইনেন বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা শ্রমবাজারের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছে। এটি শ্রমবাজারে তাদের কম অংশগ্রহণের জন্য দায়ী।’
আরও পড়ুন: ‘প্লানেট ৫০-৫০’ অর্জনে নারীর ক্ষমতায়নের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য: স্পিকার
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী প্রতিনিধি নুর আহমেদ খোন্দকার বলেন, ‘আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের কথা শোনা হতো না কিন্তু এখন নারীরা কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জলজ চাষ প্রকল্পের মালিকানা গ্রহণ করছেন। পাইকারি বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সক্রিয়ভাবে মাছ চাষে অংশ নিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের ক্ষমতায়ন তাদের পারিবারিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে। সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করছে।’
জাতিসংঘের এ মিশনের মূল বিষয় হলো জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) রোধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
এই প্রসঙ্গে, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি, শেলডন ইয়েট বলেন, ‘দেশে বাল্যবিবাহের মতো ক্ষতিকর প্রথা প্রতিরোধে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহিংসতার মৌলিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক রীতিনীতি।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিসের তত্ত্বাবধায়নে তিন দিনব্যাপী জেন্ডার সমতা মিশনে জাতিসংঘের ৫টি সংস্থার প্রতিনিধি ও তাদের অংশীদাররা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে: রাষ্ট্রদূত
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন জাতিসংঘের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলের
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল উনাইসি লুতু ভুনিওয়াকা।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে তিনি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ২ নম্বর শরনার্থী শিবির, বালুখালী ৮ নম্বর শরনার্থী শিবির এবং ২০ নম্বর শরনার্থী শিবিরের বর্ধিত অংশ পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় প্রথমবারের মতো করোনায় আক্রান্ত ২
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, সফরকালে ভুনিওয়াকা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং ক্যাম্পের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জড়িত অন্যান্য মানবিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এর আগে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব বাংলাদেশ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শরণার্থী শিবিরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরেই নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে একাধিকবার এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে এ পর্যন্ত কক্সবাজারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য এর আগে পর্যন্ত জাতিসংঘের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসেননি।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব সোমবার সকালে কক্সবাজারে আসেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
জানা গেছে, উনাইসি লুতু ভুনিওয়াকা রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ও করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য কক্সবাজার সফর করছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে
ডব্লিউএফপি’র সহায়তা হ্রাসে রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়তে পারে অপরাধ, উগ্রপন্থা: এআরএসপিএইচ
পর্যটনশিল্পকে অবশ্যই নিরাপদ করতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও উন্নতির জন্য পর্যটন একটি জোরালো শক্তি। কিন্তু এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে হলে পর্যটনশিল্পকে অবশ্যই নিরাপদ করতে হবে এবং আরও উন্নত করতে হবে।
তিনি বলেন, এবারের এই বিশ্ব পর্যটন দিবসে, আসুন আমরা জনমানুষ ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন খাত গড়ে তুলতে সবুজ বিনিয়োগ ব্যবস্থার শুরু করি।
আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বর্তমানে জলবায়ু জরুরি অবস্থা অনেক পর্যটন এলাকার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল সমাজ ও অর্থনীতির জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে এই পরিস্থিতি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অনেক উন্নত দেশেই পর্যটন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অব্যাহত ধারা হুমকিতে পড়েছে; জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে এই সংকট আরও ঘণীভূত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানুষের উন্নত ভবিষ্যৎ-শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ার পথ হলো শিক্ষা: জাতিসংঘ মহাসচিব
তিনি বলেন, সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই এমনভাবে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে টেকসই ও পুনরুদ্ধারমূলক পর্যটন খাত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বেসরকারি খাতকে অবশ্যই শূন্য নিঃসরণ কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সর্বত্র জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানগত ভারসাম্য রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
গুতেরেস বলেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করলে তা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসা ও শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, এছাড়া এ ধরনের বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর পর্যটনের নেতিবাচক প্রভাব কমানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সমাজের ক্ষমতায়নে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে সবার সামনে তুলতে ধরতে এবং সামাজিক সুরক্ষা দিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।
তিনি আরও্ বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে টেকসই পর্যটনের পূর্ণ সম্ভাবনাকে সম্পুরণ করি। কারণ, টেকসই পর্যটনে বিনিয়োগ মানেই সবার জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনে বিনিয়োগ।
আরও পড়ুন: বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়াতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
পাকিস্তানের ইমরান খানের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া মানার আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের
যক্ষ্মা প্রতিরোধে নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আহ্বান জাতিসংঘের বৈঠকে
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা (টিবি) নির্মূল করার একটি রাজনৈতিক ঘোষণা অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রামক রোগ নির্মূলে একটি নতুন এবং কার্যকর ভ্যাকসিন খুঁজে বের করার উপর জোর দিয়েছেন বিশ্ব নেতা ও বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে (এইচএলএম) যক্ষ্মা প্রতিরোধের ঘোষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘোষণায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য উচ্চ প্রত্যাশার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও পরিচর্যা বিষয়ক পরিষেবাসহ ৯০ শতাংশ লোকের কাছে পৌঁছানো। এ ছাড়া যাদের এই রোগ রয়েছে তাদের জন্য সামাজিক সুবিধা প্যাকেজ প্রদান এবং অন্তত একটি নতুন ভ্যাকসিন বরাদ্দ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, যক্ষ্মা হলো কোভিড-১৯-এর পরে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক ঘাতক। কারণ, এটি প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালে ১৬ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। যক্ষ্মা’র চিকিৎসায় সহজলভ্য একমাত্র ভ্যাকসিনটি এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘চাঁদে একজন মানুষ পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্বকে আমাদের নখদর্পণে নিয়ে আসা পর্যন্ত আমরা যত অগ্রগতি করেছি- এর মধ্যে কেন আমরা যক্ষ্মা’র মতো প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছি? কেন নিরাময়যোগ্য এই রোগে প্রতিদিন ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়?
ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের অগ্রগতির জন্য স্টেকহোল্ডারদের তাদের হাতে থাকা সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করার আহ্বানও জানান তিনি।
যক্ষ্মার প্রধান চালিকাশক্তি - দারিদ্র্য, অপুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব, এইচআইভি সংক্রমণের ব্যাপকতা, ডায়াবেটিস, মানসিক স্বাস্থ্য ও ধূমপান মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ।
আরও পড়ুন: গত বছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত ২ লাখ ৯৩ হাজার: এনটিপি
তিনি উল্লেখ করেন, সশস্ত্র সংঘাত, অর্থনৈতিক উত্থান ও জলবায়ু বিপর্যয়গুলো দূষিত চক্রে সংক্রামক রোগের বিস্তারের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে। এর কারণে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা স্থায়ী হয়। রাষ্ট্রগুলোকে তাদের জাতীয় কর্মসূচিতে যক্ষ্মাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
আমিনা ৩৭ বছর আগে যক্ষ্মা রোগে তার ৫০ বছর বয়সী বাবাকে হারানোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা দরকার তা হলো- একটি ভ্যাকসিন। আসুন এখন যক্ষ্মা নির্মূল করি। এটা সম্ভব।’
ডব্লিউএইচও-র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্রেব্রেয়েসুসও একটি নতুন ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। একমাত্র অনুমোদিত ভ্যাকসিনটি এক শতাব্দীরও বেশি আগে তৈরি করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও নতুন ভ্যাকসিনের উন্নয়ন, লাইসেন্সিং ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের সুবিধার্থে একটি যক্ষ্মা ভ্যাকসিন অ্যাক্সিলারেশন কাউন্সিল গঠন করেছে।
ডব্লিউএইচও ডিজি বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম উচ্চ-স্তরের যক্ষ্মা সভায় প্রতিষ্ঠিত অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, প্রধানত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের চিকিৎসা করার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ কোটি কম হয়েছে এবং প্রতিষেধক চিকিৎসা দিয়ে ৩ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এ ছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা সংক্রমণ রয়েছে বলেও জানান টেড্রোস।
সামাজিক স্বাস্থ্য ও সিভিল সোসাইটি টাস্কফোর্সের নির্বাহী পরিচালক বার্ট্রান্ড ফুমিনঝোয়ার ক্যাম্পোয়ার যক্ষ্মা মূল্যায়নের জন্য মোটামুটিভাবে ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকা আঞ্চলিক অভিযোজনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের যক্ষ্মা শনাক্তে ভ্রাম্যমাণ এক্স-রে ভ্যান চালু
পরবর্তী আলোচনায় বক্তারা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে যক্ষ্মা মোকাবিলায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে কেউ কেউ এই লক্ষ্যে অগ্রগতি শেয়ার নিয়েছে, অন্যরা চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে এবং পদক্ষেপের জন্য মূল ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে।
সৌদি আরবসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিরা যক্ষ্মার প্রতিরোধে তাদের সাফল্যের ওপর আলোকপাত করেছেন। সৌদি প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে, তারা সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণে গুরুত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের দেশ ২০১৮ সালের তুলনায় যক্ষ্মার ঘটনা ২১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে, যা বৈশ্বিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে।
‘যক্ষ্মা একটি সামাজিক ব্যাধি’ উল্লেখ করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব মেডিক্যাল স্টুডেন্টস’র প্রতিনিধি বলেন, যক্ষ্মার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত নির্ধারকগুলোকে মোকাবিলা করতে সমস্ত খাতের অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: যক্ষ্মা এখনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসাবে দেশে রয়ে গেছে: আইসিডিডিআর,বি
মোমেনের সঙ্গে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও মন্ত্রী তায়ে আতস্কে-সেলাসি।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন নিউইয়র্কে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: সবার সহযোগিতা ছাড়া সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না সরকার: মোমেন
এ বিষয়ে তিনি ইথিওপিয়ায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে, কৃষিতে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে বলে অভিমত দেন।
ইথিওপিয়ার মন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, শুধু কৃষি ক্ষেত্রে নয়- গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি সাধন করেছে। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ বিপুল জনশক্তি রয়েছে, যা ইথিওপিয়া কাজে লাগাতে পারে।
আরও পড়ুন: এসিডি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান মোমেনের
প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ রিটার্ন সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে ইথিওপিয়ার বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইথিওপিয়ার সহযোগিতা চান। তিনি ইথিওপিয়ার সঙ্গে সরাসরি বিমান চালুর প্রস্তাব করেন।
ইথিওপিয়ার মন্ত্রী এসব বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে নেদারল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রীর বৈঠক
রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবেন না: বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সৃষ্ট সংকট সমাধানে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও তাদের প্রত্যাবাসন বিষয় এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে 'হ্যাভ দে ফরগটেন আস?' এবং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈশ্বিক সংহতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবনধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।’
তিনি আরও বলুন, ‘এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত, নিয়মে পরিণত করা ও ঘৃণ্য নৃশংসতাকারী অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য চলমান ও প্রচলিত আইনি এবং বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।’
তিনি স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনকে সবচেয়ে কার্যকর করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা বহুগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: 'উষ্ণ আতিথেয়তার' জন্য জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল
বাংলাদেশসহ কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৬ বছরে বাস্তুচ্যুত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি শুধু তাদেরকে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে না; এটি কক্সবাজারের পরিস্থিতিকেও অনিশ্চিত করে তুলছে। আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় আজ তাদের উদারতার শিকারে পরিণত হয়েছে।’
সর্বোপরি, তিনি বলেন, তাদের চাহিদার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এটি মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের অভাব স্পষ্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বিশ্ব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য অনেক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা যে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় পৌঁছেছে, সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে পারে না কেননা ২০১৭ সালে তাদের দেশত্যাগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না এবং তারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়ন ও বিতাড়িত হওয়ার শিকার হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিকারে এগিয়ে আসতে সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য মানবিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটিই সব কিছু নয়।
আরও পড়ুন: শুক্রবার ইউএনজিএ-তে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের প্রথম নারী মহাসচিব পাওয়ার সময় এসেছে: ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব অর্জনের জন্য লিঙ্গ সমতা কোনো বিকল্প নয়, বরং অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা কোনো ফল বয়ে আনবে না যদি বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা পিছিয়ে পড়ে।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে 'অ্যাক্সিলারেটিং দি ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজি৫ টুওয়ার্ডস অ্যাচিভিং পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি' শীর্ষক ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডার্সের বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রতিটি দেশ আলাদা এবং তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতিশীলতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গৃহীত হয়েছিল, তখন সবাই লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে পারি না।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, নারী নেত্রী হিসেবে সবারই দায়িত্ব সব নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করা।
আরও পড়ুন: আসন্ন জলবায়ু সংকট এড়াতে প্রধান অর্থনীতিগুলোকে অবশ্যই ন্যায্য অংশীদারিত্ব করতে হবে: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘লিঙ্গ সমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান ও ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি দু’টি সুনির্দিষ্ট বিষয় তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:
প্রথমত, সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতাকে আদর্শে পরিণত করার জন্য সকলকে অবশ্যই তাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘নেতা হিসেবে আমাদের তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে তাদের উৎসাহিত করা দরকার।’
দ্বিতীয়ত, সবাইকে নিজেদের অবস্থানকে অংশগ্রহণ হতে নেতৃত্বের দিকে উন্নীত করতে হবে। সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করতে ও অন্যান্য নারীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হওয়ার জন্য নারীদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবিধানিক অঙ্গীকারের আলোকে সরকার জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েদের শিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিস্তর বিনিয়োগ করেছি। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা বিনামূল্যে করা হয়েছে। আমরা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং বিনামূল্যে বই প্রদান করছি।’
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রাথমিক স্তরের স্কুল শিক্ষকদের ৬০ শতাংশ নারী নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারী উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রেয়াতি হারে ঋণ নিশ্চিত করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নারীদের উৎসাহ ও সহায়তার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকারি সংস্থায় উচ্চ পদে নারীদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছি। নারীরা এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সমস্ত স্তরে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারী ও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ হাজার ২৯২টি ইউনিয়ন এবং পৌর ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একজন নারী ও একজন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, পাশাপাশি সরকার নারীদের ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিগত স্টার্ট-আপ এবং ই-কমার্স সেক্টরসহ আইসিটি সেক্টরে লিঙ্গ সমতা অর্জন করা। আমরা লিঙ্গ-সংবেদনশীল বাজেট প্রবর্তনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। আমাদের বাজেটের ৩০ শতাংশ নারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।’
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ এর মতো আরেকটি মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে: জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
আসন্ন জলবায়ু সংকট এড়াতে প্রধান অর্থনীতিগুলোকে অবশ্যই ন্যায্য অংশীদারিত্ব করতে হবে: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নের সমান বণ্টনের জন্য ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বারবার আহ্বানে খুব কম সাড়া পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে 'ডেলিভারিং ক্লাইমেট জাস্টিস: অ্যাক্সিলারেটিং অ্যাম্বিশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন অন অ্যাডাপ্টেশন অ্যান্ড ওয়ার্নিংস ফর অল' শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিষয়ল শীর্ষ সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের থিমেটিক সেশনে তিনি বলেন, ‘অভিযোজন তহবিলকে প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশ এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেকোনো গঠনমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্ম হতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সৎ থাকবে এবং আসন্ন সংকট এড়ানোর জন্য তাদের ন্যায্য অংশীদারিত্ব করবে।’
তিনি বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশকে সাধারণত বিশ্বনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জাতিসংঘ স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের জন্য সম্মাননা পেলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি প্রকৃতি-ভিত্তিক, কাঠামোগত এবং প্রযুক্তিগত সমাধান রয়েছে যা বিশ্বের অন্যান্য অংশে একইভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যাশিত প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এর জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাডাপটেশন পাইপলাইন অ্যাকসেলারেটর অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় একটি কার্যকর মডেল দেখতে চাই।’
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে যে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল তার তুলনায় সরকার প্রাণহানির সংখ্যা এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছে।
আরও পড়ুন: বাইডেনের নৈশভোজে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘৬৫ হাজার উপকূলীয় মানুষের সমন্বয়ে আমাদের বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের সর্বশেষ জাতীয় পরিকল্পনা একটি সমন্বিত বহু-বিপজ্জনক আগাম সতর্কতা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নিয়মিত আপডেট দিতে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী ভূমিকম্প মডেলিং নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের উপস্থিতিতে মহড়া পরিচালনার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।’
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে অভিযোজন ও আগাম সতর্কীকরণে বিনিয়োগ নিখুঁত অর্থবহ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি আমাদের উন্নয়ন অংশীদাররা জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য এই সুযোগগুলো কাজে লাগাবে।’
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ এর মতো আরেকটি মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে: জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
বাইডেনের নৈশভোজে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের সম্মানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট- এ নৈশভোজের আয়োজন করেন বাইডেন।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে জয়শঙ্কর আয়োজিত নৈশভোজে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন হাসিনার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: সালমান এফ রহমানের নৈশভোজে মার্কিন প্রতিনিধি দল
বাজেট পরবর্তী নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী