জাতিসংঘ
সংস্কার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে মনে করে জাতিসংঘ: বিএনপি
সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে, জাতিসংঘ সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে মনে করে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশে আগামীতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামীর নির্বাচন।’
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠকে বিএনপির হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অংশ নেন। বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সালাহউদ্দিন এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার… আপনারা বসে রিফর্ম (সংস্কার) কী করবেন, সেটা ঠিক করেন এবং নির্বাচন যা হবে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে। বাংলাদেশে যেন একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে—এটা তিনি আশা করেছেন।’
আরও পড়ুন: নারী-শিশু নির্যাতনে আইনি ও স্বাস্থ্য সহায়তায় বিএনপির ৮৪ সেল গঠন
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে (বৈঠকে) কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে যে সংস্কারের ব্যাপারগুলো, যেগুলো নিয়ে কমিশনগুলো করা হয়েছে, সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছি।’
‘আমরা একই কথা বলেছি আমরা। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার। আমরা বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এরপর সংসদ গঠনের মাধ্যমে বাকি সংস্কারগুলো করা যাবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া—এটাই আমরা বলে এসেছি।’
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সময়সীমার কথা আপনারা বলেছেন কি না—প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওখানে টাইমফ্রেম নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তো আমাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
‘আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলছি, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাচ্ছে আমরা সব দিয়ে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আমাদের টাইম ফ্রেমটা দিতে যাব কেন?’
আরও পড়ুন: বিএনপির নতুন ভাইস-চেয়ারম্যান নার্গিস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইয়াসিন
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, এবি পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা অংশ নেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক আলী রিয়াজ, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস প্রমুখ।
৯ দিন আগে
সবার টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসংঘকে পাশে পাবে বাংলাদেশ: গুতেরেস
সবার জন্য একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘বাংলাদেশ বর্তমানে যে সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে সবার জন্য একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যত গড়তে জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়টি আপনি বিবেচনায় রাখতে পারেন,’ ইউনূসকে বলেন গুতেরেস।
তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ড. ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব।
এরপর কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অ্যান্তনিও গুতেরেস। দুপুর ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স যোগে তারা কক্সবাজারে পৌঁছান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানান। আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব
কক্সবাজার সফরে নির্মাণাধীন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর উখিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন তারা। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বিমান বন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ায় যাবেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
পরিদর্শন ও ইফতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব একসাথে সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরবেন।
১১ দিন আগে
‘জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের নজরে আনবে’
বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ১৩ থেকে ১৬ মার্চ নির্ধারিত সফর রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধান খুঁজে বের করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের আগে বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ কথা জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সফর এই সংকটকে বৈশ্বিক নজর কাড়তে সহায়তা করবে। 'আমরা আশা করি জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে একটি ভালো বার্তা দেবেন।’
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সংকট যাতে আবার বিশ্বের নজরে আসে—তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, বৈশ্বিক নজর সেখানেই রয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান চায়, যাতে তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারে। ‘এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
আলম বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার(১৩ মার্চ) বিকাল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ একসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য কক্সবাজারে যাওয়ার আগে শুক্রবার(১৫ মার্চ) সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্ভাব্য রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদনটি 'অসত্য': প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে কমেছে। আশা প্রকাশ করা হচ্ছে, এই সফরটির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের কিছু উপায় খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করা হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা তহবিল সহায়তায় কোনো বিঘ্ন দেখতে চাই না। আমরা তাদের পুষ্টি চাহিদার ঘাটতি করতে চাই না।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে নতুন তহবিল ছাড়া, মাসিক রেশন মাথাপিছু ১২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে মাথাপিছু ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে তাদের জরুরি প্রতিক্রিয়া কার্যক্রমের জন্য তহবিলের গুরুতর ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছে, যা বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা ঝুঁকিতে ফেলেছে।
সকল রোহিঙ্গা সহায়তার রশিদ পায় যার মাধ্যমে ক্যাম্পে নির্ধারিত খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে তাদের পছন্দমতো খাবার নিতে পারে। পূর্ণ রেশন বজায় রাখতে ডব্লিউএফপির জরুরি ভিত্তিতে এপ্রিলের জন্য দেড় কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
আলম বলেন, এই সফর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সামনে রেখে বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ফিনল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও এই আয়োজনের কো-স্পন্সর হিসেবে যোগ দিয়েছে।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় পৌঁছালেও প্রধানত শুক্র ও শনিবার দুটি কর্মদিবস থাকবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা আশা করছেন এক লাখ রোহিঙ্গা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একসঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন।
মিয়ানমারে নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের উদারতার স্বীকৃতি হিসেবে গুতেরেস ও ড. ইউনূস শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও গুতেরেস সকালে (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরবেন।
বার্ষিক রমজান সফরের অংশ হিসেবে গুতেরেস সুশীল সমাজের তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে এক দশকের দীর্ঘ মেয়াদে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাস্তুচ্যুত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে নিয়মিত রমজান পালন করার জন্য সংহতি সফরকে একটি বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত করেছেন গুতেরস।
গুতেরেস এক বার্তায় বলেন, 'প্রতি রমজানে আমি বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি সফর করি এবং রোজা রাখি। এই মিশন বিশ্বকে ইসলামের আসল চেহারা মনে করিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান করুণা, সহানুভূতি এবং উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। এটি পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ...। আমি সবসময় এই মৌসুমে অসাধারণ শান্তির অনুভূতিতে আরও অনুপ্রাণিত হই।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সম্প্রতি ড. ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে আশা প্রকাশ করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বৈশ্বিক অগ্রাধিকারকে নবায়ন করবে এবং তাদের দুর্দশার বৃহত্তর সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করতে তার তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।
তিনি লিখেছেন, 'রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ মিয়ানমারের সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে আমি আমার সদিচ্ছা অব্যাহত রাখব। সেই লক্ষে আঞ্চলিক পক্ষ, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব রাখাইনের জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবিকার সহায়তা কীভাবে সর্বোচ্চ করা যায়—সে বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমগুলোকে দিকনির্দেশনা দিতে তার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের অনুরোধ করেছেন।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সমন্বয়কারী এবং আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারীর সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিখার দেবে। যার মাধ্যমে রাখাইন এবং পুরো মিয়ানমারে অভাবী লোকদের জন্য জরুরি ত্রাণ, নিরাপদ, দ্রুত, টেকসই এবং অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন: মাহফুজ আলম হিযবুত তাহরীরের সদস্য নন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ ব্যবস্থা কীভাবে প্রক্রিয়াটিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করতে পারে—তা বোঝার জন্য আমরা সদস্য রাষ্ট্রের পরামর্শের পরে সম্মেলনের সম্মত ফলাফল এবং পরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
তিনি চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসকে তার চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানান। যেটি ৭ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান তার কাছে পৌঁছে দেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সংহতি এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব এবং রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তিনি।
১২ দিন আগে
তহবিল না পেলে রোহিঙ্গাদের রেশন অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে: ডব্লিউএফপি
দ্রুত তহবিল পাওয়া না গেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক রেশনের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি—ডব্লিউএফপি। অর্থায়নের অভাবে দেশের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (৭ মার্চ) ডব্লিউএফপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে (রোহিঙ্গাদের) মাসিক রেশন জনপ্রতি ১২.৫ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আর এই সংকট এমন এক সময়ে আসছে, যখন শরণার্থীরা রমজান শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা নির্ধারিত দোকানগুলো থেকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার জন্য ভাউচার পান। তবে পূর্ণ রেশন চালিয়ে যেতে এপ্রিলেই জরুরিভাবে দেড় কোটি ডলার এবং এ বছরের শেষ নাগাদ মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা আরও গভীর সংকটে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের সংঘাত থেকে বাঁচতে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যার সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা ডব্লিউএফপির। পালিয়ে আসা এসব মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজছে, যা ইতোমধ্যে চাপে থাকা সম্পদের ওপর আরও বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির এই সংস্থাটি এরইমধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্ভাব্য রেশন কমানোর বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। আর সেটি করা হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস চলাকালে।
স্ক্যালপেল্লি বলেন, ‘এখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তাই হলো তাদের বাঁচা আর হতাশার মধ্যে পার্থক্য। এই সংকট আরও বাড়তে না দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: ‘নিষেধাজ্ঞা’ সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের ধন্যবাদ
২০২৩ সালে তীব্র তহবিল সংকটের কারণে ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে জনপ্রতি রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এর ফলে রোহিঙ্গাদের খাদ্যগ্রহণে ব্যাপক অবনতি ঘটে। এতে করে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা সবচেয়ে খারাপ (১৫ শতাংশেরও বেশি) হয়ে যায়। পরে তহবিল পাওয়ার পর অবশ্য রেশন বাড়ানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু এই জনগোষ্ঠীর কোনো আইনগত অবস্থান নেই, ক্যাম্পের বাইরে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং টেকসই জীবিকার সুযোগও নেই, তাই রেশন আরও কমানো হলে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
পরিবারগুলো বাঁচতে তখন বেপারোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মতো বিশেষত নারীরা শোষণ, পাচার, পতিতাবৃত্তি ও সহিংসতার উচ্চতর ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। শিশুরা স্কুল থেকে বের হয়ে শিশুশ্রমে বাধ্য হবে এবং মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সাহায্যের ক্ষেত্রে তারাই প্রথম ঘাটতির সম্মুখীন হয়। তহবিলের ঘাটতি ও চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অনেক সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
১৭ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমালো জাতিসংঘ
আগামী এপ্রিল থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ (রেশন) অর্ধেকের বেশি কমানোর পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘ। বুধবার (৬ মার্চ) সংস্থাটির সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) লিখিতভাবে বাংলাদেশকে এ কথা জানিয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ডব্লিউএফপি গত মঙ্গলবার মৌখিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য মাথাপিছু রেশন কমানোর কথা জানিয়েছিল। রেশন কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ (বুধবার) সংস্থাটি চিঠি দিয়েছে। ফলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু সাড়ে ১২ ডলারের পরিবর্তে ৬ ডলার পাবে রেশন হিসেবে।
আরও পড়ুন: টাকা দিলেই মিলত জন্ম সনদ, সুযোগ নিয়েছে রোহিঙ্গারাও
তহবিলের ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জন্য রেশন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ১২ ডলার বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করছে; কিন্তু তারা দাতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল বাতিলের নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর।
কারণ, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ডব্লিউএফপির অর্থসহায়তার প্রায় ৮০ শতাংশের জোগান আসত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। তবে গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে ডব্লিউএফপি তহবিল–সংকটে পড়েছে।
১৯ দিন আগে
কেমন কাটছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর জীবন?
রাতের ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার কেমন যেন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করে, যা কোমলমতি শিশুদের মনে ভয়ের সৃষ্টি করে। যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত গাজার রাতগুলো যেন অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে আরও বেশি ভয়ানক!
গাজা উপত্যকায় যখন রাত নামে ভাঙা ঘরবাড়ির বিভিন্ন অংশ অন্ধকারে ঢেকে গিয়ে ভয়ার্ত দৃশ্য তৈরি করে। এতে আতঙ্কিত হয় শিশুরা।
ইসরায়েলের তান্ডবে নিজের বাড়ি বিধ্বস্ত হলেও ধংসস্তূপের মধ্যেই বাস করছেন ফিলিস্তিনি নারী রাওয়া তাম্বুরা ও তার বাচ্চারা। তবে রাত হলেই অন্ধকারে নিজেদের বাড়ির ভগ্নদশায় ভয় পায় তার ছেলেরা।
ভয় তাড়াতে বাধ্য হয়ে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রাখেন তাম্বুরা। অবশ্য যতক্ষণ চার্জ থাকে মোবাইলে। পনেরো মাসের হামলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে গাজায়। তার কর্মস্থলে থাকা একটি জেনারেটরে রোজ চার্জ করে আনেন মোবাইল।
আরও পড়ুন: এবার অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠাল ইসরায়েল
দীর্ঘ ১৬ মাস পর বাড়ি ফিরেছেন তাম্বুরা। যদিও বাড়ি বলতে সেই অর্থে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পানি, বিদ্যুৎ, তীব্র শীতে উষ্ণতা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা, এমনকি ময়লা আবর্জনা দূর করার উপায়ও তাদের নেই।’
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ-বিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রায় ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী প্রবল আগ্রহ উদ্দিপনা নিয়ে নিজেদের বাসস্থানে ফিরেছিলেন।
তবে ঘরে ফেরার আনন্দে বিভোর গাজাবাসী ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করেছেন তাদের কঠোর বাস্তবতা। ঠিক কতদিন তাদের এই মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে খাবার পানি আনেন তারা। নেই খাবারেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। খাবার রান্না করতে হলে মাইলের পর মাইল খুঁজতে হয় জ্বালানি। ভাঙা বাড়িঘর গুলো থেকে ইট-পাথর সরানোর মতো কোনো সরঞ্জামও নেই গাজাবাসীর কাছে।
তাম্বুরা বলেন, ‘গাজাবাসী এতটা কষ্টে রয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন এরকম যুদ্ধবিরতির চেয়ে তারা যুদ্ধে শহীদ হলেই ভালো হতো।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, ভবিষ্যতে আমরা কি করবো, আমি আর কিছু চিন্তা করতে পারছি না।’
এদিকে, আগামী শনিবার (১ মার্চ) শেষ হতে চলেছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পুনরায় চুক্তি হবে কিনা তা অনিশ্চিত। যদি চুক্তি না করে ইসরায়েল পুনরায় হামলা করে অসহায় গাজাবাসীর ভাগ্যে কি রয়েছে, তারা নিজেরাও তা জানেন না। আশ্রয়ের সন্ধানে কোথায় যাবেন জানেন না দুর্ভাগা মানুষগুলো।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করল ইসরায়েল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
অন্যদিকে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই গাজার পুনর্গঠন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব মতে গাজাকে ফের বসবাসযোগ্য করে তুলতে প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা (৫৩ বিলিয়ন ডলার) প্রয়োজন। তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে আর কোন উৎস থেকে আসবে তা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে মানুষগুলো যেন কোনোভাবে বাস করতে পারে উপত্যকাটিতে সেটি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, আশ্রয়ের জন্য তাঁবু, খাবার পানি ও রান্না করার ব্যবস্থা করতে শুরু করেছে তারা।
তবে একদিকে ইসরায়েলের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতেই কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টার মাঝেই আরেক শঙ্কা তৈরি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে তিনি গাজা দখল করার ঘোষণা দেন। এর আগে তিনি গাজাকে পুর্নগঠনের নামে তার ‘ক্লিন গাজা’ মিশনের কথা বলেন। তিনি মিসর ও জর্ডানে গাজাবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেন।
তবে ট্রাম্পের বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন গাজার বাসিন্দারা। কোনো মূল্যেই তারা জন্মভূমি ত্যাগ করবেন না বলে জানান।
এই বিধ্বস্ত নগরীতেই নিজেদের অদৃষ্ট মেনে নিয়েই বাঁচতে শুরু করেছে গাজাবাসী। বৈইত লাহিয়ার তাম্বুরা রোজ ঘণ্টাখানেক হেঁটে গিয়ে একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন। তার মাত্র ১২ বছর বয়সী ছেলে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। তারা বাস করেন তাদের বাড়ির অর্ধেক ভাঙা একমাত্র রক্ষা পাওয়া রুমটিতে।
তাদের মতোই তেল আল হায়ার আসমা দাওইমাও ফিরেছেন নিজ বাসভূমে। কিন্তু তার বাড়িটির কিছুই অবশিষ্ট না থাকায় থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। আসমা বলেন, ‘আমি এখানে ফেরার সাহস পাচ্ছিলাম না। সত্যটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমাদের বাড়িটা আর নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা শুধু বাড়িই নয়, আমাদের স্বপও ভেঙে দিয়েছে।’ গাজার শহরে ফিরে ভাঙা বাড়ির ছোট একটি রুমে পুরো পরিবার নিয়ে বাস করছেন ২০ বছর বয়সী যুবক হুডা শায়েক। তার ভাষ্যে, অন্তত নিজের জন্মস্থানে তো রয়েছেন তারা।
এমনই মানসিক শক্তিতে বলীয়ান গাজাবাসী। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও জন্মভূমির মাটি আটকে পড়ে রয়েছেন গাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছে, গাজার পুর্নগঠনে লাগতে পারে কয়েক দশক।
জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অঞ্চলটিতে আরও বেশি পরিমানে ত্রান পাঠানোর চেষ্টা করছে।
২৮ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থানে শিশুমৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ, সুরক্ষা ও জবাবদিহি চায় ইউনিসেফ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটিকে হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউনিসেফ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক অফিসের প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে তিনি জানান, ১ জুলাই থেকে ১৫ই আগস্টের মধ্যে যে ১ হাজার ৪০০ ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। ইউনিসেফ এইসব মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে ইতোমধ্যে রিপোর্ট করেছে এবং মোট কত শিশু নিহত বা আহত হয়েছে—তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের প্রত্যেকের জন্য শোক প্রকাশ করছি।
অভ্যুত্থানে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। তা ভাষ্যে, ‘এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকিসহ নানাপ্রকার জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনার নথি পাওয়া গেছে।’
‘শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি; তাদের অনেককে হত্যা করা হয়, পঙ্গু করে দেওয়া হয়, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়, অমানবিক অবস্থায় আটক করে রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়।’
বিবৃতিতে শিশুদের ওপর সহিংসতার তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন ফ্লাওয়ার্স। বলেছেন, ‘একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ধানমণ্ডিতে, যেখানে ২০০টি ধাতব গুলি ছোড়ার কারণে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জে; সেখানে ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এই বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়ে আজমপুরের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে বলে— সব জায়গায় বৃষ্টিপাতের মতো গুলি চলছিল। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেদিন।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে।’
বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে আর কখনোই যেন এমনটি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে দেশের সকল মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভে ৩২ শিশু নিহতের বিষয়ে ইউনিসেফের বিবৃতির জবাব দিল সরকার
প্রাপ্ত এসব ফলাফলের আলোকে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনা-বিষয়ক ইউনিসেফের আগের বিবৃতিগুলোর জের ধরে বাংলাদেশের সমস্ত নীতিনির্ধারক, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শিশু, যুবসমাজ ও পরিবারগুলোকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত সারিয়ে ওঠার পাশাপাশি আশা সঞ্চার করে তাদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
এজন্য তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক এই সংস্থাটি:
প্রথমত, যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে, তাদের ও তাদের শোকাহত পরিবারের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, যারা এখনও আটক অবস্থায় আছে এবং যাদের জীবন কোনো না কোনোভাবে এই ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের সবার জন্য পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজোট হওয়া।
তৃতীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল ও নীতিনির্ধারকদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে, যাতে বাংলাদেশের কোনো শিশুকে আর কখনও এমন বিচার-বহির্ভূতভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আটক থাকতে না হয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে গিয়ে, যা তাদের অধিকার, তাদের যেন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হতে না হয়। আর এভাবে বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার সমুন্নত রাখা সম্ভব।
জবাবদিহি ও সংস্কারের এই আহ্বানে ইউনিসেফ যেসব কাজে সহায়তা দিতে চায় তার মধ্যে রয়েছে—
১. শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বেআইনিভাবে আটকে রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা।
২. বিচার খাতের সংস্কার নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশু সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আদলে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোকে সাজিয়ে তোলা।
৩. ভবিষ্যতে শিশু অধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও নীরিক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৪. আমরা সবাই শিশুদের উপযুক্ত এমন বিচার ব্যবস্থা চাই, যেটি শিশুদের অপরাধী হিসেবে দেখবে না, শিশুদের হুমকি হিসাবে বিবেচনার পরিবর্তে তাদের কথা ও ব্যাখ্যা বুঝবে; তাদের যত্ন, সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সে মোতাবেক কাজ করবে।
আরও পড়ুন: জুলাই বিপ্লব চলাকালে পরিকল্পিত দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে: জাতিসংঘ
৫. যেসব শিশু অপরাধ করেছে বলে আদালতে সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের আটক করে না রেখে এর বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে হবে। শাস্তি যা শিশুর স্থায়ী ক্ষতি করে, তার পরিবর্তে বিভিন্ন ডাইভারশন প্রোগ্রাম, প্রবেশন ও পুনর্বাসনমুখী বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৬. শিশু-সংবেদনশীল আইনি প্রক্রিয়াগুলি নিশ্চিত করবে; যেখানে শিশুদের জন্য বিশেষ আদালত, আইনি সহায়তা এবং শিশু-সংবেদনশীল তদন্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৭. শিশু ভুক্তভোগীদের রক্ষা করবে; ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জবাবদিহির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে, যাতে ভবিষ্যতে শিশুদের অধিকার এমন লঙ্ঘন না হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন বড় এক পরিবর্তন, প্রত্যাশা ও রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে। সংস্কার কমিশনগুলো বর্তমানে পুলিশ, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে যেভাবে কাজ করছে, তাতে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও আরও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরির সুযোগ রয়েছে।
৩৯ দিন আগে
প্যারিস চুক্তি প্রত্যাহার, জাতিসংঘকে জানাল যুক্তরাষ্ট্র
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত হয়েছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) নিউ ইয়র্কের সদরদপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘অর্থদাতা হিসেবে প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের কথা ২৭ জানুয়ারি মহাসচিবকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চুক্তির ২৮ ধারার অনুচ্ছেদ ২ অনুসারে, ২০২৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি। এ সময়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ ও প্যারিস চুক্তির প্রতি জাতিসংঘের অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্ত করেন মুখপাত্র।
আরও পড়ুন: শুল্ক এড়াতে ইইউকে যুক্তরাষ্ট্রের তেল গ্যাস কিনতে হবে: ট্রাম্প
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার প্রথম দিনেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের নির্বাহী আদেশে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের জন্য যা বড় একটি ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এরআগে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে এই চুক্তি থেকে সরে আসার উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রথম দিনেই চুক্তি পুনর্বহাল করেন জো বাইডেন।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত যত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে এই চুক্তিকে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। যা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাকে একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের
বিবিসির খবরে বলা হয়, ‘জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থেকে সরে এসে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে এই রূপরেখা প্রণয়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে দেশগুলোর প্রতি আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার উৎসগুলোকে সীমিত করতে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয় এটিকে।
৫৫ দিন আগে
ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতায় নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস ও মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তারা চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে ট্রাইব্যুনালের অন্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপক্ষের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
আরও পড়ুন: ক্রসফায়ার ও গুম-খুনের অভিযোগ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিএনপি
ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই ট্রাইব্যুনালের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়া কেমন এগোচ্ছে? কোনো সমস্যা আমাদের আছে কি না? তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা বা সমন্বয় দরকার কি না?—এইসব বিষয় তারা জানতে চেয়েছেন। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার ব্যপারে আমরা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি, কী কী কাজ করছি, এসব ব্যপারে কোনো সহযোগিতার দরকার আছে কি না—এসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আলোচনা শেষে তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করেছি, আমাদের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে প্রশিক্ষিত করতে সহযোগিতার জন্য। তারা যদি এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটা আমাদের জন্য সহায়ক হবে।
বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং তারাও অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ে আমাদের একটা ট্রেনিং সেশন হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আরও ট্রেনিংয়ের আয়োজন করবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে, সে আশ্বাস দিয়েছেন। প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: ডা. ফয়েজ হত্যা : হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
‘তারা আমাদের জানিয়েছেন যে, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিচারের ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষা আছে। যে অপরাধ এখানে হয়েছে বা যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের বিচারপ্রাপ্তির অধিকার আছে। ফলে বিচারটা যাতে ভালোভাবে হয় সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘ সমর্থন জানাবে।’
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি। না দিলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বিচারপ্রক্রিয়া তার নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চলবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে।
৬৪ দিন আগে
রোহিঙ্গা নিয়ে ভুল প্রতিবেদন: জাতিসংঘের কাছে ব্যাখ্যা চাইল সরকার
মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) একটি প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে বাংলাদেশ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসকে পাঠানো বার্তায় এই প্রতিবেদেন নিয়ে অসন্তোষের কথাও বলা হয়েছে। ইউএনবিকে এমন তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
কীসের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, জাতিসংঘের কাছে সেটাও জানতে চেয়েছে সরকার। সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ সঠিক তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
গেল ৭ জানুয়ারি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মিয়ানমার কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭১ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের সবাই ভারতের মনিপুর ও মিজোরামে প্রবেশ করেছন।
গেল তিন বছরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে কেউ অনুপ্রবেশ করেননি বলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
৭০ দিন আগে