জাতিসংঘ
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রয়োজনে জাতিসংঘকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রয়োজনে জাতিসংঘকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুক্রবার (১২ জুলাই) জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা জে মুহাম্মদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ ও হিমবাহ গলার মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য অস্ত্বিত্বের সংকট।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি: পরিবেশমন্ত্রী
ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা স্বীকার করেন।
এসব সিস্টেম দেশের দুর্যোগের প্রস্তুতি ও স্থিতিস্থাপকতাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে, যা অন্যান্য জাতির জন্য মডেল হিসেবে কাজ করছে।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী প্রভাব, চলমান সংঘাত ও অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন উপমহাসচিব ও পরিবেশমন্ত্রী। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং তা কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করবে: পরিবেশমন্ত্রী
এই বাধা অতিক্রম করতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো মোকাবিলা এবং সবুজ রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য কনফারেন্স অব পার্টিগুলোতে কীভাবে বৈশ্বিক দক্ষিণের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করা যায় তাও তারা আলোচনা করেছেন। একইসঙ্গে আরও তহবিল সুরক্ষিত করার বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।
অবিস্ফোরিত বোমা গাজাবাসীর জন্য বড় হুমকি: জাতিসংঘ
গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হওয়া এলাকাগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে অনেক মানুষ। এ অবস্থায় এলাকাগুলোতে থেকে যাওয়া অবিস্ফোরিত বিস্ফোরকগুলো বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডাব্লুএ) বলেছে, 'ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রতিদিন ভয়ানক ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।’
জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের মতে, গাজায় ৩৭ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ টন অ্যাসবেস্টস, অন্যান্য দূষিত পদার্থ ও অবিস্ফোরিত অস্ত্র রয়েছে। গোলাবারুদের অন্তত ১০ শতাংশ কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে হামাসের হামলায় ১২০০ নিহত হন এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। এরপর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে হামলা শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৮৭৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের ‘যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা’ হামাসের প্রত্যাখ্যান
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ অর্জন সম্ভব: জাতিসংঘ
বিশ্বের ৭০০ কোটির বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২৮ জুন) সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, 'এতে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থ হচ্ছে।
২০১৫ সালে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতা অর্জন পর্যন্ত ১৭টি সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছিলেন বিশ্ব নেতারা। এই দশকের শেষ নাগাদ পৌঁছাতে ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ‘পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে: জাতিসংঘ মহাসচিব
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক বিষয়ে ন্যূনতম ও মাঝারি অগ্রগতি দেখা গেছে। এছাড়া এক-তৃতীয়াংশের বেশি স্থবির বা পিছিয়ে গেছে এবং মাত্র ১৭ শতাংশ অর্জনের পথে রয়েছে।
গুতেরেস বলেন, 'বিষয়টি সহজ। শান্তি নিশ্চিত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন জোরদারে আমাদের ব্যর্থতা উন্নয়নকে ব্যাহত করছে।’ প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অতিরিক্ত ২ কোটি ৩ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে এবং ১০ কোটির বেশি মানুষ অনাহারে ভুগছে।
গুতেরেস বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত সম্পদ, জ্ঞান ও প্রযুক্তির এই বিশ্বে বহু মানুষকে মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত করা নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।’
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অর্ধেক দেশে মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি উন্নত অর্থনীতির তুলনায় ধীর, যা সমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সংস্থাটি বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ৬০ শতাংশ দেশ মাঝারি থেকে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের মুখোমুখি হয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন অনেক দূরে রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী মাত্র ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে পড়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক মূল্যায়নে অনেক দেশে গণিত এবং পড়ার স্কোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।’
লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে এতে হলা হয়েছে, বিশ্ব এখনও পিছিয়ে রয়েছে। প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে একজন এখনও ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে করে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, অনেক নারীর তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই এবং বর্তমান হারে ব্যবস্থাপনা পদে পুরুষদের সঙ্গে সমতায় পৌঁছাতে নারীদের ১৭৬ বছর সময় লাগবে।
গুতেরেস বলেন, এই প্রতিবেদনে 'কিছু আশার আলো' রয়েছে।
মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে বিশ্বের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের প্রবেশডেগ্যতা রয়েছে। ২০১৫ সালে এটি ছিল ৭৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বৈশ্বিক সক্ষমতা গত পাঁচ বছর ধরে নজিরবিহীনভাবে বার্ষিক ৮.১ শতাংশ হারে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: কানেকটিভিটি উচ্চতর পর্যায়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করছে ঢাকা-দিল্লি: কর্মকর্তা
চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধির ফলে গত তিন দশকে এইডস-সম্পর্কিত ২ কোটি ৮ লাখ মৃত্যু এড়ানো গেছে। ম্যালেরিয়ার নতুন টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম। বেশিরভাগ অঞ্চলে মেয়েরা এখন শিক্ষায় ছেলেদের সঙ্গে সমতা অর্জন করছে। আর অনেক নারী এখন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করছেন।
তবে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের গতি ও মাত্রা এখনও অনেক ধীর।
গাজা থেকে ইউক্রেন, সুদান ও এর বাইরেও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং ধ্বংস ও যুদ্ধের ব্যয় থেকে জনগণকে রেহাই দিতে এবং শান্তিতে বিনিয়োগের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং 'সবুজ ও ডিজিটাল রূপান্তর' বিষয়ে বৃহত্তর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে বার্ষিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবধান রয়েছে।
গুতেরেস সম্পদ সরবরাহের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার এবং ঋণের চাপ ও ঋণ পরিশোধের ব্যয় হ্রাস, নগদ প্রবাহ সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য আপদকালীন অর্থায়নের প্রবেশযোগ্যতা প্রসারিত করা এবং বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের অবসান, পৃথিবীকে রক্ষা এবং কাউকে পেছনে ফেলে না রাখার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার থেকে সরে আসা উচিত হবে না।’
আরও পড়ুন: ব্রিটনির থেকে ১০০ গজ দূরে থাকতে হবে আলেকজান্ডারকে
মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় জাহাজে হুথিদের হামলা বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের
লোহিত সাগরে জাহাজে সব ধরনের হামলা বন্ধ করতে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) অনুমোদন দেওয়া ওই প্রস্তাবে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার বিষয়ে জরুরিভাবে সমাধানের আহ্বানও জানানো হয়।
তবে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীরা এ হামলা চালাচ্ছে- এমন কোনো দাবি প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি।
লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে হুথিদের হামলা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মাসিক প্রতিবেদনের শর্ত বাড়িয়েও ১২-০ ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। তবে রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
আরও পড়ুন: ইয়েমেনের হুদেইদায় মার্কিন-ব্রিটিশ বিমান হামলায় নিহত ১৬
হুথিরা বলছে, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল ব্যাপকভাবে কমে গেছে। গাজা উপত্যকায় যতদিন যুদ্ধ চলবে ততদিন জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে।
প্রস্তাবে হুথিদের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। আর বিদ্রোহীরা বলছে, তাদের হামলার উদ্দেশ্য গাজায় ৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটানো। প্রস্তাবে ‘আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং সামুদ্রিক সুরক্ষা ব্যাহত করার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বসহ মূল কারণগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের অতর্কিত হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। আর গাজা -ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হুথিরা নৌপথে ৬০টিরও বেশি জাহাজ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নভেম্বর থেকে বিদ্রোহীদের হামলায় চার নাবিক নিহত, একটি জাহাজ জব্দ এবং আরও দুটি ডুবে গেছে।
আরও পড়ুন: লোহিত সাগরে হুথিদের ৪টি নৌকা ও ২টি ড্রোন ধ্বংস করার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
হুথিদের দাবি, তারা ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। তবে যেসব জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই সঙ্গে ইরানসহ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিদ্রোহীদের মতে, হুথিদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় জানুয়ারি থেকে হামলা হুথিদের লক্ষ্য করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান চালানো হয়েছে। ধারাবাহিক হামলার অংশ হিসেবে মে মাসের ৩০ তারিখের হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হয়েছেন।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেসময় হুথিরা উত্তর ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। ফলে রাজধানী সানা থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার পালাতে বাধ্য করে। পরের বছর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারি বাহিনীর সমর্থনে হস্তক্ষেপ করে। একপর্যায়ে এই সংঘাত সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধে রূপ নেয়।
যদিও ২০২২ সালে ছয় মাসের যুদ্ধবিরতির পর থেকে লড়াই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এই যুদ্ধের ফলে আরব অঞ্চলের দরিদ্রতম দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবটি গত ১০ জানুয়ারি গৃহীত একটি প্রস্তাবের ফলো-আপ রেজোলিউশন। এতে হুথিদের হামলার নিন্দা ও অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয়। ‘লোহিত সাগর এবং বিস্তৃত অঞ্চলে পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়াতে সতর্কতা ও সংযমের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
বৃহস্পতিবারের ভোটের পর প্রস্তাবটি উত্থাপনকারী যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, হুথিদের হামলা 'আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।' এটি একটি 'বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ' এবং এর 'বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে পরিষদ আবারও হুথিদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। ‘অবিলম্বে এই হামলা বন্ধ করুন।’
আরও পড়ুন: গাজায় আবারও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী
তিনি হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রস্তাবটি ইয়েমেনের স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করে এমন হুথি ও অন্যদের উপর ২০১৫ সালের জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে সব দেশকে মনে করিয়ে দেয়।
রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত আন্না ইভস্টিগনেভা বলেছেন, মস্কো লোহিত সাগর এবং ইয়েমেন সংলগ্ন অন্যান্য জলসীমায় নৌ চলাচলের নিরাপত্তাকে সমর্থন করেন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে ‘তথাকথিত মার্কিন জোট’ হুথিদের উপর তার আক্রমণকে বৈধতা দিতে জানুয়ারির প্রস্তাবটি ব্যবহার করছে।
ইভস্টিগনেভা বলেন, 'আমরা জোটের সব অংশগ্রহণকারীকে অবিলম্বে অবৈধ হামলা বন্ধ করার এবং ইয়েমেনসংলগ্ন জলসীমায় উত্তেজনা কমাতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতিসংঘে চীনের উপরাষ্ট্রদূত গেং শুয়াং বলেছেন, বেইজিং হুথিদের বারবার বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু জানুয়ারিতে তারা ভোটদানে বিরত থেকেছে। কারণ, প্রস্তাবের কিছু মূল উপাদান 'নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।’
তিনি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে 'নির্দিষ্ট কিছু দেশের' পদক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যারা কেবল বেসামরিক লোককে হত্যা করেনি বরং অবকাঠামোই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই সঙ্গে লোহিত সাগরে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলেছে।’
গেং বলেন, ‘গাজায় দ্রুত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ইয়েমেন ও লোহিত সাগরের পরিস্থিতি শান্ত করতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের ‘যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা’ হামাসের প্রত্যাখ্যান
নুসেইরাতের ঘটনায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হতে পারে ইসরায়েল-হামাস: জাতিসংঘ
হামাসের কাছে জিম্মি চার ইসরায়েলিকে মুক্ত করতে সম্প্রতি গাজার নুসেইরাতে প্রাণঘাতী অভিযান চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। শরণার্থী শিবিরে জিম্মিদের আটকে রাখা ও সেখানে হামলা চালানোর অভিযোগে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনী, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর।
শনিবার (৮ জুন) নুসেইরাতের শরণার্থী শিবিরের একটি ভবনে চার জিম্মিকে আটকে রাখার খবরে ব্যাপক সহিংসতা চালায় ইসরায়েল। তাদের বিমান ও স্থল অভিযানে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৭৪ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামাস কমান্ডার নিহত
জেনেভায় জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জিম্মিদের আটকে রাখার মাধ্যমে আশপাশের বেসামরিক নাগরিক ও জিম্মিদের ‘বাড়তি ঝুঁকিতে’ ফেলছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী (হামাস)।
উভয় পক্ষের এসব কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আট মাসের বেশি সময় ধরে টানা আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। বেসামরিক মানুষের মাঝে এমন সামরিক আগ্রাসন ও এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি উল্লেখ করে লরেন্স বিষয়টিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন।
জিম্মি ও তাদের পরিবারগুলো যে ‘অগ্নিপরীক্ষার’ মুখোমুখি হয়েছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, চারজন জিম্মি মুক্তি পেয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে খুব ভালো খবর। তবে এদের (জিম্মি) ধরে নিয়ে যাওয়া একেবারেই উচিৎ হয়নি। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। যত শিগগির সম্ভব হয়, বাকিদেরও মুক্তি দিতে হবে।
গত আট মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৩৬ হাজার ৭৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের মধ্যে সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মৌলিক সামগ্রী গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অচলাবস্থা থাকায় উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ের মধ্যে গাজার অন্তত ১০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার সংকটের মুখোমুখি হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঝুলে যাওয়ায় আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফরে ব্লিঙ্কেন
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামাস কমান্ডার নিহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর হামাসের এক কমান্ডার নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে হামাসের সদর দপ্তরের কাছে রামাল্লার একটি গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে কমান্ডার মোহাম্মদ জাবের আবদোসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছেন।
আবোদা ২০ বছর ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিলেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: চার জিম্মিকে মুক্ত করেছে ইসরায়েল, শনিবারের হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে ২১০
অপরদিকে, ইসরায়েলের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইহুদি বসতির কাছে ইসরায়েলে হামলায় অভিযুক্ত এক সন্দেহভাজনের অবস্থান শনাক্ত করে গুপ্ত বাহিনী। লোকটি আরও তিন সন্দেভাজনের সঙ্গে একটি ভবনে লুকিয়ে ছিল। এরইমধ্যে একটি গাড়িতে করে তারা পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তখন ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছোড়ে। এরপর তাদের গাড়িতে অস্ত্র পাওয়া যায়।
গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে হামলা ও জিম্মির ঘটনার পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়েছে।
শুধু এই বসতিতেই ৫৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিক্ষোভ চলাকালে কিংবা ইসরায়েলের গ্রেপ্তার অভিযানের সময় এদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়।
১৯৬৭ সালের লড়াইয়ে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল। কিন্তু ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনে ওই তিনটি অঞ্চলই চায় ফিলিস্তিনিরা।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তাজনিত কারণে গাজার মার্কিন জেটিতে ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা
গত আট মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৩৬ হাজার ৭৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের মধ্যে সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মৌলিক সামগ্রী গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অচলাবস্থা থাকায় উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ের মধ্যে গাজার অন্তত ১০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার সংকটের মুখোমুখি হবে।
আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৩ শতাধিক: জাতিসংঘ
আফগানিস্তানে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে এক হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
শনিবার (১১ মে) জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আফগানিস্তানে আঘাত হানা বন্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষের মাঝে বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বাঘলান প্রদেশ শুক্রবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী তাখার প্রদেশে বন্যায় অন্তত ২০ জনের মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো।
তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ( সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেছেন, ‘এই বিপর্যয়কর বন্যায় শত শত প্রাণহানি এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আহত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানের গ্রামে পুরনো ‘মাইন’ বিস্ফোরণে ৯ শিশু নিহত
মুজাহিদ বাদাখশান, বাগলান, ঘোর ও হেরাত প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, 'ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের' ফলে 'উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতি' হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দুর্গতদের উদ্ধার, আহতদের হাসপাতালে পাঠানো এবং নিহতদের উদ্ধারের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির বিমানবাহিনী এরই মধ্যে বাঘলান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে এবং বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া বিপুল সংখ্যক মানুষকে উদ্ধার করেছে। আহত ১০০ জনকে ওই অঞ্চলের সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেছেন, এই বন্যা জলবায়ু সংকটে ক্ষতির শিকার আফগানিস্তানের দুর্বলতাকে স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে। তালেবান ও আন্তর্জাতিক পক্ষকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার: তালেবান মুখপাত্র
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, শনিবার কয়েক ডজন মানুষ বাঘলান হাসপাতালের পেছনে জড়ো হয়ে তাদের প্রিয়জনদের খুঁজছেন। কর্মীরা দাফনের জন্য লাশগুলো প্রস্তুত করার সময় একজন কর্মকর্তা আগত স্বজনদের বলেন, তাদের কবর খনন শুরু করা উচিত।
এর আগে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গত এপ্রিলে দেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই হাজার বাড়ি, তিনটি মসজিদ ও চারটি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৫০, নিখোঁজ অনেক
দেশে উৎপাদিত শস্য ও খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে কর্মসূচির আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
দেশে উৎপাদিত শস্য ও খাদ্য গ্রহণে মানুষকে উৎসাহিত করা ও জনসচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধিকে সেমিনার ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির দেশ প্রতিনিধি ডোমেনিকো স্কালপেলির সঙ্গে সাক্ষাতে এ আহ্বান জানান তিনি।
পৃথক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘ নারী সংস্থার দেশ প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং।
দুই কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নারী উন্নয়ন বিষয়ে মত বিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্ব আর সর্বনিম্ন মাথাপিছু জমির বাংলাদেশে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিকল্প নেই। মালিকানা চিহ্নিত করতে জমির মধ্যে 'আইল' দেওয়ায় বহু জমি চাষের আওতা থেকে বাদ পড়ে যায়। এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার বিষয়েও ডব্লিউএফপিকে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবেন বলে জানান ডব্লিউএফপির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডোমেনিকো স্কালপেলি।
বৈঠকে তিনি বিদ্যালয় পর্যায়ে ও রোহিঙ্গাদের জন্য তার সংস্থার খাদ্য কর্মসূচির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: দ. কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চুক্তির কথা ভাবছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২০১১ সাল থেকে পরিচালিত স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম ও পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের জন্য ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জিম্মিদের ওপর যৌন সহিংসতা ইসরায়েলের হামলার বৈধতা দেয় না: জাতিসংঘ দূত
সংঘাতের সময় যৌন সহিংসতার বিষয় তুলে ধরে জাতিসংঘের দূত ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় অপহৃত হওয়া জিম্মিরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন এমন ‘স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ পাওয়া গেলেও পরবর্তীকালে চালিয়ে যাওয়া হামলাকে এটি বৈধতা দেয় না।
সোমবার প্রমিলা প্যাটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অকথ্য দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জন্য একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি নৈতিকভাবে অপরিহার্য।
এ সময় অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গাজা ও সুদানে রমজান মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
প্রমিলা আরও বলেন, ‘হামলা চালিয়ে যাওয়া, কোনোভাবেই, তাদের রক্ষা করতে পারে না। এটি যৌন সহিংসতাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঝুঁকির পথ তৈরি করে দেয়।’
ইসরায়েলের আহ্বানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ডাকা এক কাউন্সিলের বৈঠকে প্যাটেন তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। যেখানে জানা যায়, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলাকালে হামাস ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং নারীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক কাজ করেছে এমন প্রমাণ মিলেছে। এ সময় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
এখনও ১৩৪ জিম্মি বন্দি এবং গাজার ২ মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক অসহায় অবস্থায় রয়েছে। তাদের স্বার্থে এখনই যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান আক্রমণে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইসরায়েলি সমাজকে প্রতিরোধ ও ভয় দেখানোর জন্য হামাসের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব উচ্চস্বরে প্রতিবাদ জানাতে তিনি পরিষদে এসেছিলেন।
হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে ৭ অক্টোবর থেকে ৪০টিরও বেশি বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থার উচিত চরমপন্থী গোষ্ঠীটিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা এবং অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া।’
সোমবার মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে উল্লেখ করে কাটজ রমজানের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে আমাদের মুসলিম ভাইদের শুভেচ্ছা জানাতে সুযোগ দিন।’
কাটজ বলেন, হামাস মুসলিম বিশ্বের পক্ষে কথা বলছে না। মুসলিম ধর্মের নামে যে যৌন সহিংস অপরাধ তারা করেছে এর নিন্দা জানানো উচিত।
কাউন্সিলে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলমানরা রমজান পালন করছে কিন্তু গাজার সর্বত্র মৃত্যু ও দুর্ভোগ। খাদ্য ও আশা কোথাও পাওয়া যাবে না।’
তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চান না কারণ তার ‘রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য আক্রমণ চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে দিয়ে আমাদের জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে রাখা ইসরায়েলের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
প্যাটেনের প্রতিবেদনে এক সপ্তাহের মধ্যে সভা ডেকে নিরাপত্তা পরিষদ যে ‘নজিরবিহীন’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষদের ওপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবেদনেও সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্যাটেনের মূল সুপারিশ হলো হামাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান এবং স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশাধিকার দিতে ইসরায়েলকে উৎসাহিত করা।
ফিলিস্তিনিরা এই তদন্তকে স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে মনসুর ইসরাইলকেও তদন্তে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে প্যাটেনকে গাজা পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
বৈঠকে প্যাটেন কাউন্সিলকে বলেন, পশ্চিম তীরে তিনি ধর্ষণের কোনো তথ্য না পেলেও ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ আটকের সময় যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছেন।
প্রতিবেদনগুলো ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেছেন জানিয়ে প্যাটেন বলেন, এসব কাজ প্রতিরোধের জন্য যারা তথ্য দিয়েছিলেন তারা অন্যান্য অভিযোগ লঙ্ঘনের তদন্ত করতেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কিছু ‘রাজনৈতিক অভিনেতা’র দেয়া প্রতিবেদনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেসব অভিযোগগুলোর তদন্তের অনুমতি ছিল না বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি প্রত্যাখান জানিয়েছিলেন তারা।
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে: জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী
বিশ্বব্যাপী দেশগুলোকে ২০৫০ সালের আগে নেট জিরো (গ্রিন হাউজ নির্গমন শূন্যের কোটায়) অর্জন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে জরুরি ও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেবরুয়ারি) কেনিয়ার নাইরোবিতে ষষ্ঠ জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে জাতীয় বিবৃতি প্রদানকালে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় তিনি মানবজাতির সামনে অভূতপূর্ব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধতার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে যোগ দিতে কেনিয়া যাচ্ছেন পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নগন্য অবদান সত্ত্বেও বাংলাদেশ হিমবাহ গলে যাওয়া, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিরূপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণগুলো নিরসনের গুরুত্ব এবং টেকসই স্থাপনার লক্ষ্যে আরও বেশি বহুপক্ষীয় প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের পরিবেশগত দায়িত্বের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে পরিবেশমন্ত্রী ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ‘পৃথিবীর জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন।
পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নকে প্রচারের লক্ষ্যে 'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
মন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবেশ সংরক্ষণের নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি তুলে ধরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের আন্তরিকতার প্রমাণ দেন।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশমন্ত্রী প্লাস্টিক দূষণকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে প্লাস্টিকের বর্জ্য মোকাবিলা এবং টেকসই ভোগ ও উৎপাদন পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ বৈশ্বিক পরিবেশগত শাসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউএনইএ-৬ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সবুজ, আরও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইউএনইএ-৬ এর সভাপতি লেইলা বেনালি, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, প্রতিনিধি ও বিশ্ব নেতারা।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা যথেষ্ট নয়: পরিবেশমন্ত্রী