ঋণ কেলেঙ্কারি
ঋণ কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও ২০২২ সালে পরিচালন মুনাফার শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক
অব্যবস্থাপনা এবং ঋণ কেলেঙ্কারির সমালোচনা সত্ত্বেও ২০২২ সালে পরিচালন মুনাফা অর্জনে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আইবিবিএল এখন দেশের সর্বোচ্চ আমানত ধারণকারী ব্যাংক। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবেদনের পর এই ব্যাংক থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সংকটে ৪০০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকগুলি বিতরণকৃত ঋণ এবং সংগ্রহের আপডেটের ওপর তাদের শাখা অফিসের তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
শনিবার প্রকাশিত বিবি’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২০২২ সালে আগের (২০২১) বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিচালনা মুনাফা অর্জনে ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আইবিবিএল। ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর), ব্যাংকটি দুই হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।
এর আগের বছর ২০২১ সালে ব্যাংকটির (আইবিবিএল) মুনাফা ছিল দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে তা ছিল দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে, ২০২২ সালে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০২১ সালে তা ছিল দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা।
কিন্তু পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে প্রভিশন বা সেফটি স্টক সংরক্ষণ এবং কর্পোরেট ট্যাক্স পরিশোধের পর নিট মুনাফা গণনা করা হবে। নিট মুনাফা হল ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ২০২২ সালে পরিচালন মুনাফা করতে পারেনি। বিপরীতে, তারা ৩৭১ কোটি টাকা লোকসান করেছে; গত বছরও লোকসান হয়েছিল ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া ছয় মাসে সিটিজেন ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে কার্যক্রম শুরু করে।
অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে এবং এ ধরনের ঋণের সুদ আয় খাতে দেখিয়ে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। কাগজে ভাল দেখানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকার বেশি, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে বিবি’র পর্যবেক্ষক
১ বছর আগে
৩ ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ ‘কেলেঙ্কারি’: জড়িতদের তালিকা চান হাইকোর্ট
ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে ইসলামি ব্যাংক, সোসাল ইসলামি ব্যাংক ও ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ, দুদক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অনুন্ধান করে আগামী চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী চার মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তিনটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: দণ্ডিত আবদুস সামাদকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
আদালত ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া ও এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে ঋণ বিতরণের অনিয়মের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চার মাসের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আগামী বছরের ৫ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক বলেন, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পত্রিকায় যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে এ বিষয়ে কোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংবাদের সত্যতা যাচাই করার আগামী ৫ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। ঋণ নেয়ার বিষয়ে এস আলম গ্রুপকেও জানাতে বলা হয়েছে।
গত ২৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি-ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল,এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি -ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।
সবমিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর সময়ে। যার পরিমাণ দুই হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এজন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।
একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও দুই হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।
এদিকে, গত ২৯ নভেম্বর নিউ এইজ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই প্রতিবেদনটিও আদালত নজরে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না মর্মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনের নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টে স্থগিত
১ বছর আগে
ফার্মার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি: রাশেদ চিশতীর জামিন শুনানিতে বিব্রত আপিল বিভাগ
ফারমার্স (বর্তমানে পদ্মা) ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারীর ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলার আসামি রাশেদ চিশতীর জামিন শুনানিতে বিব্রত হয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
৪ বছর আগে