জলাবদ্ধতা
১৫টি খাল খনন করলেই দূর হবে ঢাকার ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা
রাজধানীর দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫টি খাল খনন করলেই অবিরাম জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশের সমাধান হতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) সম্প্রতি রাজধানীর ৯টি জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে চলমান সমস্যার সমাধান দিয়েছে।
আরডিআরসি যেসব খাল খননের জন্য সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো- রূপনগর মেইন খাল, বাউনিয়া খাল, বাইশতেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কল্যাণপুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, পান্থপথ বক্স কালভার্ট খাল, রায়েরবাজার খাল, জিরানী খাল, রামপুরা খালের দক্ষিণ প্রান্ত, দোলাই খাল, কদমতলী খাল ও মান্দা খাল।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
গবেষণায় যে ৯টি জলাবদ্ধতার ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে: পল্লবী শিয়ালবাড়ি, রূপনগর ও ইস্টার্ন হাউজিং; কালশী ও মিরপুর ১১; টোলারবাগ, আহমেদনগর ও পাইকপাড়া; শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও কাফরুল; কলাবাগান, ধানমন্ডি ২৭, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড ও হাতিরপুল; হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ, রায়েরবাজার, পশ্চিম ধানমন্ডি ও ঢাকা নিউমার্কেট; রামপুরা ও বাড্ডা; সূত্রাপুর, ওয়ারী, নবাবপুর, কাজী আলাউদ্দিন রোড, সিদ্দিক বাজার, নারিন্দা ও তাঁতীবাজার এবং জুরাইন, সিদ্ধিরগঞ্জ, জাকের মঞ্জিল, শ্যামপুর, পূর্ব জুরাইন, সাদ্দাম মার্কেট ও রায়েরবাগ।
চলতি বছরের জুলাই মাসে 'ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা ও আমাদের দখলকৃত খাল' শীর্ষক গবেষণাটি করা হয়।
আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, একসময় ঢাকা থেকে বৃষ্টির পানি সরতে পারে এমন ৭৭টি খাল ও লেক ছিল। এখন এগুলোর বেশিরভাগই আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দখল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চিহ্নিত ১৫টি খাল খনন করতে পারলে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার ৮০ শতাংশ সমাধান হবে।
এসব জলাশয় পরিষ্কার করতে হলে স্থানীয় জনগণ ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এবং দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: একাধিক মাস্টারপ্ল্যান, ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ডুবছে ঢাকা
২ মাস আগে
একাধিক মাস্টারপ্ল্যান, ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ডুবছে ঢাকা
দুই থেকে তিন ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলেই ঢাকার সড়কগুলো যেন পরিণত হয় জলাশয়ে। দীর্ঘ সময়ের জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। কোথাও হাঁটুপানি-কোথাও বা কোমর পানি মাড়িয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে হয়। রাজধানীর বাসিন্দা হলেও অনেকের ঘর-বাড়িতে ঢুকে যায় বৃষ্টির পানি।
প্রায় চারদিকেই নদীবেষ্টিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত ৪-৫ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে হাতে নিয়েছে একাধিক মহাপরিকল্পনা। খাল ও ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কারে ব্যয় করেছে ৭৫০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু যার কোনো ইতিবাচক ফল দেখা যায়নি। বরং জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়ছে দিনকে দিন।
টানা কিছু সময় বৃষ্টি হলে শহরের বুকে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয় অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থার বিপর্যয়। যানবাহনের অভাব, জলাবদ্ধ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া, বৃষ্টি ও পানির অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়াসহ নানা দুর্ভোগে নাজেহাল হতে হয় ঢাকাবাসীকে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার মূল সমস্যা মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা। বিশেষ করে যথাযথভাবে ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার না করায় এসব আটকে নালা ও ড্রেনেজ সিস্টেমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলোও সুপরিকল্পিতভাবে হয়নি। আর বিভিন্ন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন ও সরকারের অন্য সংস্থার মধ্যে তেমন সমন্বয়ও থাকে না। ফলে জলাবদ্ধতার জন্য একে অন্যকে দায়ী করেই বছরের পর বছর পার করছে সংস্থাগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ করার পর তা মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন কাজ শেষ হওয়ার পর তা আর রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে খাল ও ড্রেনের মুখ আবার ভরাট হয়ে যায়। তাই কাজ বাস্তবায়নের পর রক্ষণাবেক্ষণ ও জবাবদিহি থাকা দরকার।’
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা নিজেরা নদী ও খালগুলো গলা টিপে হত্যা করেছি। প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল খালগুলো। তা আমরা ভরাট করেছি বক্স কালভার্ট বানিয়ে। এখন আবার খাল উদ্ধার নামে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে টাকার অংক বাড়ালেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানায়, বিভিন্ন সময় খাল ও ড্রেনেজ সংস্কার বাবদ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি বাজেটে ড্রেনেজ সংস্কার ও ময়লা পরিস্কারে আরও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সমাধান হয়নি জলাবদ্ধতার। সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা দ্রুত সময়ে নিষ্কাশন করার সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এর বেশি বৃষ্টি হলে নিরুপায় সিটি করপোরেশন।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ কিউআরটি
পানি নিরসনে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তারপরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে। খরচের মধ্যে খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর।
ডিএসসিসি কর্মকর্তারা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এমন ১৩৬টি পয়েন্টের মধ্যে ১০৪টি পয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির খালগুলো সংস্কারের মাধ্যমে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা গেলে ঢাকার জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষা মৌসুমের আগেই ড্রেনেজ পরিষ্কার করা হয়। তারপরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হলে জলাববদ্ধতা তৈরি হয়। এর মধ্যে অনেক স্থানে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। এছাড়াও জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক পয়েন্টের কাজ শেষ হলে আবার নতুন পয়েন্ট যুক্ত হয়। তাই ঢাকার খালগুলো সচল না হলে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের খাল ও ড্রেনেজ সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু খরচ হয়েছে আরও কিছু বাকি আছে।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চারটি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পায়। ৮৯৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুনে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা দক্ষিণের জলাবদ্ধতা অনেকটাই নিরসন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
২ মাস আগে
টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় জলাবদ্ধতা, স্থবির জনজীবন
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে কুমিল্লায় টানা বৃষ্টিপাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়া স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
রবিবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকে টানা বৃষ্টিপাতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে জেলার খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
নগরীর নজরুল এভিনিউ, বিসিক সড়ক, শহরের চানপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া লুঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে কর্মজীবী মানুষ
ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ কিউআরটি
৩ মাস আগে
চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে কর্মজীবী মানুষ
জলাবদ্ধতার কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্টি জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়ছেন কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ।
রবিবার (১৯ আগস্ট) রাতের বৃষ্টিতেও ডুবে গেছে শহরের নিম্নাঞ্চল। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত উঠেছে পানি।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ইতোমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তবুও মিলছে না সুফল।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
সোমবার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর মোহাম্মদপুর, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর, শোলকবহর, ২ নম্বর গেট, বাকলিয়া ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব এলাকার কোনো কোনো সড়কে কোমর সমান পানি জমেছে।
৯টার পর থেকে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের এ ধারা আরও দুইদিন অব্যাহত থাকবে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে।’
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহনুর সুলতানা বলেন, ‘আমার বাসা বহদ্দারহাট। বহদ্দারহাট থেকে একে খান হয়ে যেতে হয় অফিসে। বৃষ্টি হলেই বাসার আশপাশ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। আজকেও একই অবস্থা। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে অফিসে আসতে হয়েছে।’
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কখন রেহাই পাবো আল্লাহ ভালো জানেন। শুনেছি হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। প্রত্যেক বছর বলা হয়, আগামী বছর পানি উঠবে না। কিন্তু যে লাউ, সে কদু।’
রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হুদা সিদ্দিকী বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে হাঁটু পানিতে। আমরা এই অবস্থার উন্নতি চাই।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে।
এই কাজ চলছে প্রায় ৫ বছর ধরে। তবুও মিলছে না সুফল।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ কিউআরটি
ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
৩ মাস আগে
স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
অনিয়ন্ত্রিত নগর ও শিল্পায়নের নিষ্পেষণে প্রতি বছরই বৃষ্টির মৌসুমে দেশের অধিকাংশ শহরগুলোর প্রধান সমস্যা থাকে বন্যা ও জলাবদ্ধতা। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, যাতায়াত সমস্যা, মশা ও রোগের উপদ্রব- সব মিলিয়ে জনজ্জীবন রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়ে। এই স্থবিরতায় গতি ফেরাতে পারে ‘স্পঞ্জ সিটি’। উদ্ভাবনী ধারণাটি ইতোমধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কার্যকরভাবে পানি অপসারণের কাঙ্ক্ষিত সুফলও মিলছে সেই সঙ্গে। কী এই স্পঞ্জ সিটি, এই ধারণার উৎপত্তিই বা কোথায়- সেসব বিষয়ে বিশদ আলোচনার পাশাপাশি চলুন জেনে নেই কীভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশের বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
স্পঞ্জ সিটি কী
বন্যা ও জলাবদ্ধতা প্রশমিত করার জন্য প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও অপসারণের বিভিন্ন পদ্ধতিকে সামগ্রিকভাবে ‘স্পঞ্জ সিটি’ বলা হয়। এখানে মূলত পানি নিষ্কাশনের উপযোগী রাস্তাঘাট নির্মাণ, সবুজায়ন ও পানি সঞ্চয় ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর পানিচক্রকে অনুসরণের চেষ্টা করা হয়।
স্পঞ্জ সিটি ধারণার প্রবর্তন করেন চীনা ল্যান্ডস্কেপ স্থপতি ও অধ্যাপক কংজিয়ান ইউ। শৈশবে একবার তিনি ধানখেতে কাজ করার সময় বন্যায় প্রায় ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে যান। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতাটিই মূল রসদ জুগিয়েছে পরবর্তীতে তার প্রকৃতি-বান্ধব নগরায়ন নিয়ে কাজ করার।
পূর্বে এ নিয়ে তার বেশ বিশদ গবেষণা থাকলেও ধারণাটি দৃশ্যমান হয় ২০০০ সালে বেইজিং ঝংগুয়ানকুন লাইফ সায়েন্স পার্ক নির্মাণের সময়। এখানে ব্যবহৃত ব্যবস্থাটির নাম ছিল ‘আর্থ-লাইফ সেল্স’, যেখানে জলাভূমি তৈরির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা বিশুদ্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে শহরের নির্ভরযোগ্য পানি ব্যবস্থাপনা গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক রচিত হয়।
আরও পড়ুন: সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ঢাকায় জলাবদ্ধতার ভয়ংকর রূপ
স্পঞ্জ সিটি যেভাবে কাজ করে
এখানে জলাবদ্ধতা বা বন্যা সমস্যা নিরসণ এবং পানির গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃষ্টির পানিকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো হয়। স্পঞ্জ নগরায়নের একটি পদ্ধতি হচ্ছে একদিকে রাস্তাঘাট পানি প্রবেশের উপযোগী করে তোলা, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ করা। এতে করে নানা দুর্যোগে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের স্থানগুলো দিয়ে সরাসরি সেই জলাধারে জমা হতে পারে। এই পানি পরবর্তীতে শহরের বিভিন্ন কাজে লাগার পাশাপাশি উষ্ণ মৌসুমগুলোতে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে।
আরেকটি উপায় হচ্ছে সড়ক ও ভবন সবুজায়ন। এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদগুলো বৃষ্টির পানি শোষণ করে ও পানি অপসারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় নেয়। ফলশ্রুতিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে না।
এছাড়া কৃত্রিম জলাভূমি বানিয়ে তার চারপাশে রেইন গার্ডেন বা বৃষ্টি বাগান সাজানো হলে, তা ঝড়-বৃষ্টির সময় পানি বিশোধনে কাজে লাগে। এই বাগানগুলো গড়ে তোলা হয় বাড়ির ছাদ, ফুটপাত ও গাড়ি চলাচলের পার্শ্ব রাস্তা এবং পার্কিং লটসহ বিভিন্ন সংকীর্ণ এলাকায়।
বৃষ্টি বাগান সাধারণত জলাভূমির চারপাশজুড়ে সাজানো হয়, যেখানে থাকে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। এগুলো পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টি সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প ছেড়ে দিয়ে চিরায়ত শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ সময় উদ্ভিদগুলো আশেপাশের পরিবেশ থেকে তাপ টেনে নেয় বিধায় পরিবেশ ঠান্ডা থাকে।
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস নেদারল্যান্ডসের
বিশ্বব্যাপী স্পঞ্জ সিটির প্রভাব
স্পঞ্জ সিটি ধারণার প্রবর্তক দেশ হিসেবে অভিনব কৌশলটি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিক পালন করে আসছে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীন। উহান ও শেনঝেনসহ দেশটির ৩০টিরও বেশি শহর এই পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করেছে। ফলে এই শহরগুলোতে বন্যার মাত্রা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। একই সঙ্গে ব্যবহার্য পানির গুণগত মান উন্নয়নে সারা বিশ্বে তারা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে।
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস অনেক আগে থেকেই তাদের দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচিত ছিল। সেখানে এই স্পঞ্জ সিটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে রটারড্যামের তৈরি জল প্লাজাগুলো ভারী বৃষ্টির সময় পানি ধরে রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পানি শুষ্ক আবহাওয়ায় নগরের ভূ-ত্বকের তাপমাত্রা আরামদায়ক করে রাখে।
পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশ জার্মানিতে হামবুর্গের মতো শহরগুলো এখন স্পঞ্জ সিটির আওতাভূক্ত। হাফেনসিটি জেলায় ঝড়ের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে সবুজ ছাদ, পানির প্রবেশযোগ্য গ্রীড ফুটপাত ও বৃষ্টি বাগান। এগুলো যে শুধু জলাবদ্ধতাই কমিয়েছে তা নয়, সেই শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকেও উন্নত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস-অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক ও ফিলাডেলফিয়ার মতো উন্নত শহরগুলো তাদের নামের সার্থকতা বজায় রেখেছে। নিউ ইয়র্কের ব্লুবেল্ট প্রোগ্রাম প্রাকৃতিক নিষ্কাশন করিডোর ব্যবহার করছে ঝড়ের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য। ফিলাডেলফিয়ার গ্রিন সিটি ও ক্লিন ওয়াটার্স উদ্যোগগুলো পানিসহ বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা ছাড়াই নিশ্চয়তা দিচ্ছে শিল্পায়নের।
যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম শহর লন্ডন নাইন এলমস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ-বান্ধব শহরায়ন নিশ্চিত করেছে।
ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী পূর্ব আফ্রিকার দুর্যোগপ্রবণ দেশ কেনিয়াও ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে সবুজ অবকাঠামো স্থাপনায়। তাদের আপ্রাণ চেষ্টার ফসল হচ্ছে কিটুই ও কাজিয়াদি শহরের রেইন গার্ডেন এবং সুপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাগুলো।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত দাবদাহে যেভাবে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখবেন
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা নিরসণে স্পঞ্জ সিটির কার্যকারিতা
ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ
পানি না জমলে বা জমে থাকা পানি সরে গেলেই আর জলাবদ্ধতা বা বন্যার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু এই পানি সরে পড়ার জন্য প্রয়োজন বাধা-বিঘ্ন মুক্ত নির্দিষ্ট পথ, যেটি শেষ হবে নদীতে গিয়ে। পানি অপসারণের এই চ্যানেল তৈরিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে পারে ভূগর্ভস্থ জলাধার। এটি শুধু সরে পড়া পানিকে জায়গাই দিবে না, বরং সঞ্চিত পানিকে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রীতিমতো সম্পদে রূপ দিবে। এই পানি ব্যবহার করা যাবে আগুন নেভানোর কাজে। গরমের প্রচণ্ড দাবদাহে পানি ভর্তি জলাধার সাহায্য করবে ভূ-ত্বকের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে।
পানি প্রবেশযোগ্য ফুটপাত তৈরি
ছোট-বড় যেমনি হোক না কেন, মহাসড়কের দু’পাশের ফুটপাত পানি অপসারণের উৎকৃষ্ট জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। পায়ে চলাচলের এই রাস্তার গড়নে ব্যবহার করা যেতে পারে ছিদ্রযুক্ত কংক্রিট, ভেদযোগ্য অ্যাস্ফাল্ট ও ইন্টারলকিং পেভারের মতো উপাদানগুলো। এটি ফুটপাত ও প্রধান সড়কের সংযোগস্থলে থাকা অকেজো উন্মুক্ত ড্রেনের বিকল্প হতে পারে। বর্তমান ড্রেন ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট দূরত্বে দুয়েকটি গর্ত থাকায় ময়লা-আবর্জনা জমে পানি অপসারণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গ্রিড সিস্টেমের ফুটপাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
ছাদ সবুজায়ন
প্রতিদিন আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণের কারণে এখন পথে ঘাটে গাছ লাগানোর জায়গা থাকে না। অবকাঠামো স্থাপনের জন্য উল্টো বরং অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভবনের ছাদকে সবুজ গাছপালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা যেতে পারে। এই বাগানগুলোতে থাকা প্রতিটি উদ্ভিদ এবং মাটি পানি শোষণের প্রধান হাতিয়ার।
জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পাশাপাশি সবুজ ছাদ বায়ুর গুণমান বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকর। ঢাকার মতো উষ্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এই সবুজায়ন পদ্ধতি হতে পারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত উপায়।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
বৃষ্টি বাগান ও জলাভূমি তৈরি
ঢাকার মতো শহরগুলোতে বৃষ্টি বাগানসহ জলাভূমির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া বেশ মুশকিল। কিন্তু এরপরেও নগরের পরিবেশ রক্ষার্থে এই কার্যক্রমটি অবশ্য করণীয়। পূর্বাচলের ৩০০ ফুট ইতোমধ্যে একটি দারুণ দৃষ্টান্ত উপস্থান করেছে। দৃষ্টি নন্দন উদ্যানের পাশে জলাভূমি তৈরি না করলেও দু’পাশের ১০০ ফুট প্রশস্ত খালগুলো রিটেনশন পন্ডের কাজ করে। কেননা আশেপাশের ছোট ছোট খালগুলোর পানি এই খাল দুটোতে মিশে বালু নদী পর্যন্ত চলে গেছে। এতে করে চওড়া রাস্তা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অন্যদিকে সবুজ উদ্যান স্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য পুরো সড়কটিকে পরিণত করেছে দর্শনীয় স্থানে।
বায়োসওয়েলস ও উদ্ভিজ্জ স্ট্রিপস স্থাপন
বিভিন্ন ধরনের দূষণ প্রশমণের সময় গাছপালা দিয়ে তৈরি নির্দিষ্ট আকৃতির চ্যানেল হচ্ছে বায়োসওয়েলস। এর মাধ্যমে ঝড়ের পানি শোষণ বা নির্দিষ্ট দিকে পরিবাহিত করা হয়, যেগুলো জমা হয় ভূগর্ভস্থ জলাধারে। বায়োসওয়েল দিয়ে পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে না বিধায় পানিতে থাকা যাবতীয় দূষিত পদার্থ অপসারিত হয়ে যায়।
উদ্ভিজ্জ স্ট্রিপগুলোর উদ্দেশ্যও একই। খেতের সীমান্ত দিয়ে রোপণ করা স্ট্রিপগুলো আকৃতিতে আরও সংকীর্ণ হয়। এগুলোতে ব্যবহার করা উদ্ভিদগুলোর মধ্যে রয়েছে বহুবর্ষজীবী ঘাস বা শিম গাছ।
পরিশিষ্ট
ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে স্পঞ্জ সিটি। পানি অপসারণে উপযোগী ফুটপাত, ভূগর্ভস্থ জলাধার, সবুজ ছাদ, বৃষ্টি বাগান, বায়োসওয়েলস ও উদ্ভিজ্জ স্ট্রিপগুলো সম্মিলিতভাবে উন্নত পরিবেশ গঠনের সহায়ক।
পানির গুণমান বৃদ্ধির পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিগুলো বাংলাদেশের জন্য অতীব জরুরি। সেই সঙ্গে ব্যবহারিকভাবে স্বীকৃত এই তত্ত্বের বাস্তবায়নের মধ্যে নিহিত রয়েছে পরিবেশ দূষণ এড়িয়ে শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
৫ মাস আগে
ভারী বর্ষণে রাজধানীতে সড়কে জলাবদ্ধতা
বুধবার সকালে ভারী বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, ফার্মগেট, বাড্ডা, মগবাজার, মিরপুর ও খিলক্ষেত এলাকায় হাঁটুপানি পর্যন্ত পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে অনেককে।
সকালে পরিবহন না থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয় অফিসগামীদের।
বৃষ্টির পানিতে ব্যক্তিগত গাড়ি ও প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও পানি ঢুকে ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত ও বিকল হয়ে পড়তে দেখা গেছে।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ সব বিভাগে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ে।
তবে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বান্দরবানে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বিরাজ করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থানে রয়েছে।
৫ মাস আগে
অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাটে জলাবদ্ধতা, নিরসন চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বুধবার (১৯ জুন) সকালে কুমিল্লা-সিলেট সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুরে নির্মাণাধীন চার লেন সড়কের পাশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন সুহিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির খান, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, ডা. নয়নমনি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি মোবারক মিয়া, সাবেক জনপ্রতিনিধি বাবুল মিয়া , সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন
সুহিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির খান বলেন, ‘চার লেন কাজের জন্য অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাট করায় সুহিলপুর ও নন্দনপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এর কারণে গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে এখানে প্রায় ১ হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য বর্তমানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার যে কাজ চলছে, তা পর্যাপ্ত নয়।’
এছাড়া, লক্ষাধিক মানুষকে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রক্ষার পাশাপাশি কৃষিকাজ ও কৃষকদের সুবিধার জন্য বড় পরিসরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালুর দাবিও জানান তিনি।
মানববন্ধন শেষে কুমিল্লা-সিলেট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। জনদুর্ভোগ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
৫ মাস আগে
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে কুইক রেসপন্স টিম: ডিএনসিসি মেয়র
জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৩০০ কর্মী নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে ১০ জন করে মোট ১০০ জন সদস্য কাজ করছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীরমার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সোমবার (২৭ মে) বিকালে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেন্টার পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতেও ডিএনসিসি এলাকায় প্রধান সড়কগুলোতে কোথাও দীর্ঘসময় পানি জমে থাকেনি।
এছাড়াও ডিএনসিসির হটলাইন নম্বর ১৬১০৬ নম্বরে প্রাপ্ত ৯৪টি স্পটের জমে থাকা পানি অপসারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের সড়কে উপড়ে পরা বড় ও মাঝারি মিলিয়ে মোট ১০৮টি গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পুরো কার্যক্রম নগর ভবনের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সংকেতের কী অর্থ?
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন, কীভাবে, কারা করেন
৬ মাস আগে
জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ডিএসসিসির ৯১ দল
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবজনিত বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মাঠ পর্যায়ে পাঁচ সদস্যের ৯১টি দল কাজ করছে এবং একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।
সোমবার(২৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ডিএসসিসি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ফলে করপোরেশন এলাকায় কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে নগরবাসীকে ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গু রোগ থেকে সুরক্ষায় এডিসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে চাই: ডিএসসিসি মেয়র
নগরবাসীর এ সংক্রান্ত ফোন পেলে করপোরেশন দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৮০টি এবং প্রকৌশল বিভাগের ১১টি দল কাজ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি করে এবং কয়েকটি ওয়ার্ডে দুই থেকে তিনটি করে দল কাজ করছে। পাশাপাশি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলে প্রকৌশল বিভাগেরও ১১টি দল কাজ করছে।
করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকৌশল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের এসব দলের কার্যক্রম তদারকি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
একইসঙ্গে করপোরেশনের কাউন্সিলরাও বৃষ্টির পানি যাতে জমে থাকতে না পারে, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
উল্লেখ, অনেক জায়গায় নর্দমাগুলোর ক্যাচপিটে (যেদিক দিয়ে পানি সড়ক হতে নর্দমায় প্রবেশ করে) পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যাদির জন্য পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হতে বাধা সৃষ্টি করছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমের সুফল পেতে ঢাকাবাসীকে যত্রতত্র বর্জ্য না ফেলার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসসিসি।
আরও পড়ুন: ডিএসসিসির ৪ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
জনঘনত্ব ও ঢাকামুখী অভিবাসন রোধ করলে সুফল পাওয়া যাবে: ডিএসসিসি মেয়র
৬ মাস আগে
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’: জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে বাতাসের গতি বৃদ্ধি ও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় চাঁদপুর জেলায় ১৯০ হেক্টর আধাপকা ও পাকা আমন ধান এবং অন্যান্য ৪২০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যার ফলে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়া কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ধান তুলে রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয় থেকে শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে এই তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার মাছ
এদিকে শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে উপজেলা সদরের বাগাদী ইউনিয়নের সোবহানপুর, বাগাদী গ্রাম, নানুপুর, বালিয়া ইউনিয়নের সাপদি, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদি রামপুর ও মদনের গাঁওসহ আশাপাশের এলাকায় গিয়ে আমন ধানের অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া সোবহানপুর ও বাগাদী গ্রামের জমিগুলোতে কৃষকরা পাকা ধান দুই দিন আগে কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছেন। সেই সব জমিতে এখন হাটু সমান পানি। অনেক জমির পাকা ও আধাপকা ধান বাতাসে নুয়ে পড়েছে। এসব এলাকার খাল ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই।
এদিকে কৃষক মো. হাবিব সোবহানপুর মাঠে দুই দিন আগে কেটে রাখা ধান পানি থেকে তুলে এনে জানান, এ বছর তিনি পৌনে ৩ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। অধিকাংশ জমি এখন পানির নিচে। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন কী করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।
বাগাদী মাঠের কৃষক হাবিব বেপারী ও শেখ মো ওবায়েদ জানান, তাদের পুরো মাঠের অধিকাংশ জমির ধান হাটু সমান পানির নিচে। অনেকেই ধান কেটে শুকানোর জন্য দুই থেকে তিন দিন আগে রেখেছেন। চিন্তাও করতে পারেননি ঘূর্ণিঝড়ে এমন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী ইউএনবিকে জানান, প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে চাঁদপুর জেলায় আধাপাকা ও পাকা রোপা আমান ১৯০ হেক্টর, সরিষা ১৪০ হেক্টর, আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ২৭০ হেক্টর ও বীজতলা (ধান) ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বঙ্গোপসাগরে ২টি ট্রলারসহ নিখোঁজ ২৫ জেলে, উদ্ধার ১৪
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বরিশালে লঞ্চ চলাচল ফের শুরু
১ বছর আগে