মিয়ানমার
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ত্রাণ নিয়ে মিয়ানমার গেল বাংলাদেশি জাহাজ
সম্প্রতি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের উদ্দেশে ত্রাণ, জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ 'বানৌজা সমুদ্র অভিযান' চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে জাহাজটি প্রায় ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসহ মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এতে বলা হয়, আশা করা হচ্ছে, জাহাজটি আগামী ১১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাধানে এই সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, সেনা কল্যাণ সংস্থা এবং রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় প্রাপ্ত ১২০ টন ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৭৭ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, ৯ টনেরও অধিক তাবু এবং ব্যবহারযোগ্য বস্ত্রাদি, ২৯ টন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ৪ টন হাইজিন কিট এবং প্রায় ১ টন প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সংঘটিত ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে দুই ধাপে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ৩১ দশমিক ৫ টন ত্রাণ সামগ্রী, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
৯ দিন আগে
মিয়ানমারে ভূকম্পে নিহত বেড়ে ৩৫০০, বৃষ্টিতে বেড়েছে দুর্ভোগ
ভারী বৃষ্টি ও দমকা হওয়ার পর বজ্রঝড়ের কবলে পড়েছে মিয়ানমারের ভূমিকম্পে-বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা। এতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি, দুর্যোগে যারা বসতবাড়ি হারিয়েছেন ও খোলা জায়গায় বসবাস করছেন, তাদের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘দমকা বাতাস, বজ্রপাত, ভূমিধস ও ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে অসময়ের বৃষ্টির হতে পারে। যে কারণে লোকজনকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের মাঝামাঝিতে দিনের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে গেল ২৮ মার্চ। সাত দশমিক সাত মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে।
এতে রাজধানী নেপিদোসহ ছয়টি অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার (৭ এপ্রিল) মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জো মিন তুন বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে ভূমিকম্পে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ১২ জন। এছাড়াও এখনো ২১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।’
ভূমিকম্পের কারণে দেশটির বিভিন্ন এলাকা এখনো বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মান্দালয়ে মিয়ানমার রেসকিউ ফেডারেশেনের এক কর্মকর্তা বলেন, শনি ও রবিবার ভারী বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযানে ব্যবহার হওয়া বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। এতে উদ্ধার কাজ অনেক কঠিন হয়ে পড়লেও একেবারে স্থগিত রাখা হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন।’
মান্দালয়ে কাজ করা আরেক উদ্ধারকারী বলেন, ‘বৃষ্টি ও ঝড়ো বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকটি ভবন ভেঙে পড়েছে। এতে যারা আশ্রয়ের খোঁজে রয়েছেন, তাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার
২০২১ সালে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির শাসন করছে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে গণতন্ত্রপন্থি প্রতিরোধ যোদ্ধা ও জাতিগত সংখ্যালঘু গেরিলাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তারা।
জান্তা সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে পাঁচ হাজার ২২৩টি ভবন, এক হাজার ৮২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুই হাজার ৭৫২টি বৌদ্ধ মঠের আবাসিক ভবন, চার হাজার ৮১৭টি প্যাগোডা ও মন্দির, ১৬৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, ১৬৯টি সেতু, ১৯৮টি বাঁধ এবং প্রধান মহাসড়কের ১৮৪টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১০ দিন আগে
মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে গত মাসের শেষ নাগাদ একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সাত দশমিক ৯ মাত্রার ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত মোট ৮৯টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়েছে দেশটিতে।
স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগ।
কম্পনগুলো ২.৮ থেকে ৭.৫ মাত্রার মতো ছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মাসের ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই আফটারশকগুলো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব আফটারশকে দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে কারণে অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ‘ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তাতেই আফটারশক হয়ে থাকে।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মাটির উপরিভাগের ৭০০ কিলোমিটার নিচেও ভূমিকম্প হতে পারে। আর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি হয়েছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অনেক অগভীরে হওয়ায় কম্পনের পরিমাণ বেশি ছিল।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি অনেক বড় ছিল। জাপানের হিরোশিমায় আঘাত হানা মার্কিন পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়েছে এই ভূকম্পন থেকে।
যখন পৃথিবীর দুটি খণ্ড হঠাৎ করে পরস্পর থেকে সরে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেখান থেকে ভূখণ্ডটি সরে যায়, সেটিকে ভূগর্ভের ফাটল বলা হয়। কখনো-কখনো ভূমিকম্পের ফোরশক (পূর্বাঘাত) হয়ে থাকে। বড় ভূমিকম্পের আগে যে ছোট ছোট কম্পন হয়, সেটাই ফোরশক।
ভূমিকম্পের প্রধান আঘাতকে মেইনশক (মূলকম্পন) বলা হয়। এই মূলকম্পনের পরে অনেক সময় আফটারশক হয়ে থাকে। এগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প, যেটা মূলকম্পনটি যেখানে ঘটে, সেখানেই হয়ে থাকে।
মূলকম্পনের ওপর ভিত্তি করে কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা কয়েক বছরও এই আফটারশক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
২৮ মার্চ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। ভুমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে এই ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই দুর্যোগ। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়। সোনার পাত উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঝলমলে এই শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
১০ দিন আগে
প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য চিহ্নিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কাছে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ২০১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই তালিকাটি মিয়ানমারকে দিয়েছিল। এছাড়া, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাইকরণের কাজ চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী ঈদ নিজ দেশে করবে রোহিঙ্গারা, প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, চলমান রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে এই প্রথমবারের মতো কোনো তালিকার বিষয়টি নিশ্চিত করল মিয়ানমার।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
সাক্ষাৎকালে ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।
১২ দিন আগে
সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
সোনার শহর হিসেবে খ্যাত মিয়ানমারের মান্দালয় শহর যেন এখন এক মৃত্যুপুরী। সোনালী কারুকার্যে সুস্বজ্জিত মঠ ও বৌদ্ধ সমাধির সৌন্দর্যে ঝলমলে এই শহরটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
তবে এত বড় দুর্যোগও মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে টলাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অবিচল সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীরা কোনো হামলা চালালে পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে আঘাত হানে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। এতে গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। আহত সাড়ে চার হাজারের বেশি।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী মান্দালয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ এই শহরটিতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ায়, শহরের বাতাসে ভাসছে লাশের গন্ধ। ঝলমল শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
শহরটির জে নামের এক বাসিন্দা জানান, মৃতের সংখ্যা এত বেশি যে, তারা স্তূপ করে লাশগুলো দাহ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, তাদের কাছে না আছে কোনো খাবার, না পানি। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
দুর্বল অবকাঠামো ও গৃহযুদ্ধের জটিল পরিস্থিতি ত্রাণ কার্যক্রমকে মারাত্বকভাবে ব্যাহত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়াও দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজস্বার্থে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র গোপন করার ইতিহাস রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যখনই ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও এলাকাগুলোতে উদ্ধারকারীদের প্রবেশ বাড়তে থাকবে, তখনই লাশের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২৩ বছর বয়সী জে মান্দালয়ের মহাউংমেয়ে এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইদিন পর তার খালার লাশ বের করা হয়েছে। ঘুম, খাবার ও পানির সংকটে নাজেহাল দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘুম না হওয়ায় আমার মাথা প্রচণ্ড ঘুরছে।’
জে’র মতো পরিস্থিতি অনেকেরই। নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় অনেকেই তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন। আরেকটি আফটারশক (পরাঘাত) যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশও ধ্বংস করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় তারা রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
জে বলেন, ‘আমি অনেককেই রাস্তায় উবু হয়ে বসে চিৎকার করে কান্না করতে দেখেছি।’
তবে ভাঙা স্থাপনার নিচ থেকে লাশের পাশাপাশি জীবিতও অনেককে উদ্ধার করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী জানান, গত চারদিনে মান্দালয় শহর থেকে ৪০৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এ সময় ২৫৯টি লাশও বের করা হয়েছে।
তবে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের থেকে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ তারিখ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউজিএস) তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মান্দালয়ের মানুষজন শারীরিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক—সব দিক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকাটির শিশুরা মানসিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ মান্দালয়ের পাইগ্যিটাগন এলাকার এক পাদ্রি যিনি রুয়াতে নামে নিজের পরিচয় দেন, তিনি বিবিসিকে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি বলেন, তার আট বছরের ছেলে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার চিৎকার করে কান্না করে উঠেছেন।
চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধ্বংস হতে দেখে ছেলেটি অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়েছে, এ কারণেই তার মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মত দেন শিশুটির বাবা।
রুয়াতে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার ছেলে উপরে তার শোবার ঘরে ছিল। আমার স্ত্রী তার বোনের দেখাশোনা করছিল। বেরিয়ে আসার সময় তার (ছেলে) ওপর কিছু ধ্বংসাবশেষও পড়েছিল।’
তিনি বলেন, গতকাল নিজ এলাকা থেকে তিনি অনেককে লাশ হয়ে বের হতে দেখেছেন। বুধবার (২ এপ্রিল) ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরে রাজধানীর নেপিদোর একটি ভবন থেকে জীবিত একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ভারাক্রান্ত মনে বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মিয়ানমার একের পর এক দুর্যোগের মুখে পড়ছে, এরমধ্যে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু মানবসৃষ্ট। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা হতাশ ও অসহায় বোধ করছি।’
গত বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পে মান্দালয়ের ১২ তলাবিশিষ্ট ‘স্কাই ভিলা’ ভবনটির ছয়তলা ধ্বসে পড়েছে। ওই ভবনের নিকটস্থ এক বাসিন্দা জানান, যদিও কয়েকজনকে সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল লাশই বের হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগ শিগগিরই শেষ হবে আশা করছি। এখনো অনেক লাশ ভিতরে চাপা পড়ে আছে মনে হচ্ছে, সংখ্যাটা শতাধিক হতে পারে।’ মান্দালয়ের আশপাশের কবরস্থানগুলোতে আর জায়গা অবশিষ্ট নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাশের ব্যাগসহ খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে।
শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মঠ ও সোনালী চূড়ার ভাঙা অংশগুলো। এক সময় মান্দালয় সোনার পাত উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। তবে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও দারিদ্র্য বেড়েছে, ফলে শহরটি অনেকাংশে তার জৌলুস হারিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
ভূমিকম্পের পরে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ২০২১ সালের পর থেকে দেশটির ক্ষমতায় আছে জান্তা সরকার।
গতকাল নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে জান্তা সরকার, পাশাপাশি পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়াও গণমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়।
তবে দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি থেকে ভূমিকম্পের আগেই প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জোরপূর্বক সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থেকে বাঁচতে অনেক তরুণ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে এই দুর্যোগের মুহূর্তে প্রয়োজনীয় লোকবল মিলছে না বলে দেশটির বাসিন্দাদের অভিযোগ।
রাশিয়া ও চীন সহায়তা করলেও উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জে। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারকর্মীরা চারদিন ধরে একটানা কাজ করে যাচ্ছে। তারাও এখন ক্লান্ত, তাদেরও কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
১৪ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
উদ্ধারকর্মীরা যখন মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তার মতো আরও অনেকের ফিরে আসার আশা ফিকে হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে; তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, এখনো জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী নেপিদোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চার হাজার ৫২১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিদোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৫ দিন আগে
মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হলো ত্রাণ, ওষুধ ও উদ্ধারকারী দল
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দ্বিতীয় দফায় জরুরি ওষুধ, চিকিৎসক দল, ত্রাণসামগ্রী ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ও বিমান বাহিনীর দুটিসহ মোট তিনটি পরিবহন বিমান উদ্ধার সরঞ্জামাদিসহ একটি উদ্ধারকারী দল, জরুরি ওষুধ সামগ্রীসহ একটি চিকিৎসক দল এবং ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর উদ্দেশে যাত্রা করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
৩৪ জন উদ্ধারকারী ও ২১ জন চিকিৎসাকর্মী মিলিয়ে মোট ৫৫ জনের একটি দল এই মিশনে অংশ নিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল মো. শামীম ইফতেখারের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও জরুরি চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করবে দলটি।
উদ্ধারকারীদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২১ জন, নৌবাহিনীর দুজন, বিমানবাহিনীর একজন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১০ সদস্য রয়েছেন। চিকিৎসা সহায়তা দলে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১০ জন, নৌবাহিনীর একজন, বিমানবাহিনীর দুজন ও অসামরিক ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ১৫ টন ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, তাঁবু, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ঔষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
এর আগে, রবিবার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে প্রথম দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়। সেই মিশনে ওষুধ, তাঁবু, শুকনো খাবার ও একটি মেডিকেল টিম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত শুক্রবার দিনের মাঝামাঝি সময়ে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে মিয়ানমারে। এরপর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ হাজার ৯০০ মানুষ। ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও প্রায় ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
১৬ দিন আগে
মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজারে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার অভিযান ধীর গতিতে চলছে। গেল শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে দেশটিতে। এরপর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি মঠ ভেঙে ২০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন। একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে পড়লে ৫০টি শিশুর প্রাণহাটি ঘটেছে। আর জুমাতুল বিদার নামাজ আদায়ের সময়ে সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।
সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পটি উৎপত্তি স্থল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এতে শহরের বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। আর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে শত শত ভবন।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে খাদ্যসংকট ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে। এই দুর্যোগ সেই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
ভেঙেপড়া মান্দালয়ের ইউ হ্লা থেন মঠের উদ্ধারকারীরা বলছেন, ‘তারা এখনো ১৫০ ভিক্ষুকের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৬ দিন আগে
জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে নিহতদের মধ্যে সাত শতাধিক মুসল্লি রয়েছেন। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির একটি মুসলিম সংস্থা এমন তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে রমজানের শেষ দিকে জুমাতুল বিদার দিনে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে ছিলেন বেশিরভাগ মুসল্লি।
জান্তা সরকার বলছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০’র বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তবে সেসব মুসল্লিদের নিহতের তথ্য সরকারি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে বেশ কিছু মসজিদ ভেঙে পড়ছে। লোকজন ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লবের মুসলিম নেটওয়ার্কের পরিচালনা কমিটির সদস্য টুন কিই বলেন, মান্দালয়ের এই ভূমিকম্পে ৬০টির বেশি মসজিদ ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় আগে থেকেই ঝুঁকিতে ছিল বলে জানান তিনি।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জো মিন তুন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩ হাজার ৪০০ জন। এখনও আরও ৩ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ভূমিকম্পে অসংখ্য ভবন মাটিতে মিশে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে, সেতুগুলো ধসে পড়েছে। দেশটির সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন পড়েছে।
ব্রিট্শি দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর বলছে, উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য স্থানীয়দের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার নেই।
রেডক্রসের কর্মকর্তাদের দাবি, গত ১০০ বছরে এই মাত্রার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি এশিয়া।
উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ‘যাদের সহায়তা দরকার, তারা আমাদের ডাকছেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না।’
এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। দেশটির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভেঙে পড়ায় এই প্রাণহানি ঘটেছে।
১৭ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত বেড়ে দেড় সহস্রাধিক, বাড়তে পারে আরও
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৬৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটির জান্তা সরকার এমন তথ্য দিয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিনের মাঝামাঝিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মধ্যাঞ্চলের সাগেইং শহরে সাত দশমিক সাত মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। পরবর্তীকে বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরাঘাত) হয়েছে। এরমধ্যে একটি আফটারশকের মাত্রা ছিল ছয় দশমিক সাত মাত্রার।-খবর ডনের।
প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডও কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পে। দেশটিতে ১০ জনের নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের বহু ভবন ও সেতু ভেঙে পড়েছে। রাস্তায় ফাটল ধরে চৌচির হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর মান্দালয়। শহরটিতে এক কোটি ৭০ মানুষ বাস করেন।
জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তিন হাজার ৪০৮ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৩৯ জন।
গেল একশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিল্ডিং কোড-মহাপরিকল্পনা অনুসরণ না করলে বিপর্যয় ডেকে আনবে ভূমিকম্প
দেশটিতে কয়েক শত বছরের পুরোনো একটি প্যাগোডা মাটিতে মিশে গেছে। প্যাগোডার পাশেই তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেনা বলেন, ‘হঠাৎ করে কম্পন শুরু হয়েছে। পরে তা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। মঠও ভেঙে গেছে। একজন সন্ন্যাসী নিহত হয়েছেন। কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধকবলিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে সড়ক ও সেতু ভেঙে পড়ায় চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
১৮ দিন আগে