মাল্টা
মাল্টার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা যেভাবে আবেদন করবেন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ভূমধ্যসাগর ঘেরা এক দ্বীপদেশ মাল্টা। সিসিলি ও উত্তর আফ্রিকার উপকূলের মধ্যবর্তী এই দক্ষিণ ইউরোপীয় অঞ্চলটি বুকে ধারণ করে আছে রোমান, মুরস, ফরাসি ও ব্রিটিশ শাসকদের কিংবদন্তি। জীবনধারণের উপযুক্ত জায়গা হিসেবেও প্রসিদ্ধ দেশ এটি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশটি তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রচুর জনবল নিচ্ছে। বিশেষত করোনা মহামারির পরিণতি স্বরূপ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মত এখানেও বিভিন্ন সেক্টরে দেখা দিয়েছে কর্মী সংকট। ফলে বাংলাদেশের জন্য খুলে গেছে এক অপার সম্ভাবনা দ্বার।
বাংলাদেশিদের জন্য আরও সুখবর হচ্ছে- এই সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের রাজধানীতে অস্থায়ী ভাবে চালু হয়েছে মাল্টা কনসুলেট। এর অর্থ- মাল্টার ভিসার জন্য আগের মতো আর ভারতমুখী হতে হবে না। চলুন, কীভাবে মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তা জেনে নেয়া যাক।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম: কীভাবে পাবেন মালয়েশিয়ান গোল্ডেন ভিসা বা ইনভেস্টর ভিসা?
মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সমাচার
দ্বীপদেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য চাকরি ভিসার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। বাংলাদেশে মাল্টার কোনো হাইকমিশন না থাকায় বাংলাদেশিদেরকে ভারতের ভিএফএস(ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিস) গ্লোবালের শরণাপন্ন হতে হতো ভিসা পাওয়ার জন্য। সেখানে আবেদনসহ ভিসা প্রসেসিং ফি বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হতো। এটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা নিজেরাই আবেদন করেন। আর যারা বিভিন্ন এজেন্সির সহায়তা নেন তাদের গুণতে হতো প্রায় আট থেকে ১০ লাখ টাকা।
এই ভিসার আবেদনটি আবেদনকারির নিয়োগকর্তা বা প্রত্যাশিত নিয়োগকর্তা দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়। ন্যূনতম ১৮ বছর ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের মধ্যে এই জব ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এই ওয়ার্ক পারমিট একবার ইস্যু হলে, ভিসাধারী শুধুমাত্র একজন নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনেই কাজ করতে পারেন। একই লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনি অন্য কোনো নিয়োগকর্তার সঙ্গে বা একাধিক কাজ করতে পারেন না।
এই কর্মসংস্থান লাইসেন্সগুলো বছর বছর নবায়ন করতে হয়। এই ভিসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। আর মাল্টায় কাজের জন্য তাদের স্থানীয় মাল্টীয় ভাষা জানতে হয় না; ইংরেজি দিয়েই কাজ চালানো যায়। ঢাকায় ভিসা কনসুলেট চালু হওয়ায় মাল্টাগামী জনসাধারণের আর দালালদের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াতে হবে না।
আরো পড়ুন: দশ বছর মেয়াদী ভিসা দিচ্ছে থাইল্যান্ড: কারা যোগ্য?
মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করার পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
→ আবেদনকারী স্বাক্ষরসহ যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র
→ সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সদ্য তোলা ৬ কপি রঙিন ছবি (৩৫ মিলিমিটার/৪৫ মিলিমিটার)।
→ মাল্টায় থাকার পর থেকে শুরু করে ন্যূনতম তিন মাস অতিরিক্ত সময়ের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। পাসপোর্টের কমপক্ষে তিনটি ফাঁকা পৃষ্ঠা প্রয়োজন। মুলত পুরো পাসপোর্টই আসল ও অনুলিপিসহ দিতে হবে। পুরানো পাসপোর্ট থাকলে সেটিও সরবরাহ করতে হবে।
→ বিদেশী ভ্রমণের জন্য চিকিৎসা বীমা। বীমা যেন আবেদনকারীর ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরো বা তার সমতুল্য সমস্ত ঝুঁকির (দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, জরুরী চিকিৎসা, স্থানান্তর ইত্যাদি) কভার করতে পারে। এখানে বীমার বৈধতার সময়কাল স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং তা যেন মাল্টায় ভ্রমণের তারিখ থেকে কমপক্ষে ৯১ দিন কভার করতে পারে।
→ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র/কভারিং লেটার, যেখানে আবেদনকারীর পেশাগত অবস্থা এবং মালটায় কি কাজ করা হবে তার কাজের বিবরণ থাকবে। আমন্ত্রণপত্রটিতে অবশ্যই অনুমোদিত ব্যক্তির স্বাক্ষর, নাম এবং পদবি উল্লেখ থাকতে হবে। স্বাক্ষরিত কর্মসংস্থান চুক্তিটির ম্যাল্টিজ নোটারি পাবলিক দ্বারা প্রত্যয়িত কপি লাগবে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি ডিকলারেশন লেটার সংযুক্ত করতে হবে।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
→ আইডেন্টিটি পত্র। এটি আবেদনকারি যে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য অনুরোধ করেছেন তার স্বীকারক্তি। এখানে আবেদনকারির দক্ষতা/যোগ্যতা; মুক্ত পেশাজীবীদের জন্য বোর্ড সদস্যতার প্রমাণ; অথবা ডাক্তারদের ক্ষেত্রে মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের চিঠি ফটোকপিসহ আসল কপি জমা দিতে হবে।
→ বাসস্থানের প্রমাণ। হোটেল বুকিং/স্বাক্ষরিত ইজারা চুক্তি/প্রমাণের ঘোষণাপত্র যে কোন একটির স্বাক্ষরিত কপি এবং হোস্ট/মালিকের আইডি কার্ডের ফটোকপি। সঙ্গে ম্যাল্টিজ পাবলিক নোটারি দ্বারা প্রত্যয়িত কপি লাগবে।
→ ইউরো পাস ফরমেটে আবেদনকারির স্বাক্ষরিত সিভি, যেখানে রেফারেন্সসহ কমপক্ষে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
→ পিসিসি(পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ)। এটি আবেদনকারি দেশের কোনো অপরাধ না করে বৈধভাবে মাল্টা যাচ্ছেন তার প্রমাণপত্র।
আরো পড়ুন: সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সমাচার: গোল্ডেন ভিসা ও গ্রিন ভিসা
মাল্টার জব ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদনের উপায়
সমস্ত নথি ক্রমানুসারে প্রস্তুত হয়ে গেলে ভিএফএস গ্লোবালের ওয়েবসাইট থেকে ভিসার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে। এই ফর্মটি সঠিক তথ্য দিয়ে ভালোভাবে পুরণ করে সহায়ক কাগজপত্রগুলো একসঙ্গে করে একটি ফাইল প্রস্তুত করতে হবে। এই ফাইলটি ভিসা কনসুলেটে জমা দিলেই আবেদন সম্পন্ন হবে।
ভিএফএস গ্লোবালে আবেদনকারিদের আবেদনের পর ইমেল ও ফোনের মাধ্যমে একটি ট্র্যাকিং কোড পাঠানো হয়। এই ট্র্যাকিং কোড দিয়ে ভিসার সর্বশেষ স্ট্যাটাস জানা যায়। এর জন্য আবেদনকারির শেষ নামসহ ভিসা আবেদন কেন্দ্র দ্বারা সরবরাহকৃত চালান/রশিদে উপস্থিত রেফারেন্স নাম্বার ব্যবহার করতে হবে।
ভিসা প্রসেসিং ফি
একটি একক পারমিটের আবেদনের জন্য খরচ ২৮০ দশমিক ৫০ ইউরো বা প্রায় ২৮ হাজার ২০৬ বাংলাদেশি টাকা, যেটি আবেদন জমা দেয়ার মুহূর্তে দিতে হয়। যে কোনো ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে এই টাকা জমা দেয়া যাবে। এছাড়া ব্যাংকে গিয়েও টাকা জমা দেয়া যাবে। ব্যাংক থেকে একটি জমা রশিদ সরবরাহ করা হবে। সেটি আবেদনপত্রের সঙ্গে দেয়ার জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
আরো পড়ুন: ভারতের মেডিকেল ভিসা: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা প্রসেসিং ফি
মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদনপত্র কোথায় জমা দিবেন
প্রয়োজনীয় সংযুক্তিগুলো সব একসঙ্গে করে আবেদন ফর্মের সঙ্গে এক ফাইলে জমা করতে হবে। তারপর চলে যেতে হবে ঢাকার মাল্টা কনসুলেট অফিসে। তারা আবেদনপ্রাপ্তি স্বীকার করে একটি টোকেন দিবে, যেখানে ভিসা প্রদানের তারিখ উল্লেখ থাকবে। এই টোকেন দেখিয়ে নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট-ভিসা সংগ্রহ করা যাবে।
মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রক্রিয়াকরণের সময় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এটি অনেক সময় চার মাস পর্যন্ত হতে পারে। সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্টে একটি স্টিকার ভিসা যুক্ত করে দেয়া হয়। এটিই মালটার ভিসা; মূলত মাল্টার কোনো ই-ভিসা ইস্যু হয় না। ভিসা সংগ্রহের জন্য আবেদনকারিকে নিজেকেই উপস্থিত হতে হবে।
কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার পক্ষ থেকে মনোনীত প্রতিনিধিকে পাওয়ার অব এটর্নি দিতে হবে। অতঃপর সেই মনোনীত প্রতিনিধি তার হয়ে তার ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। চূড়ান্তভাবে মালটার মাটিতে পা রাখতে রাখতে সর্বমোট ছয় থেকে সাত মাস সময় লেগে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: আসিয়ান দেশগুলোর জন্য ভিসা-মুক্ত ভ্রমণনীতি পুনরায় চালু ইন্দোনেশিয়ার
ভিসার মেয়াদ কত দিনের
মাল্টায় কাজের জন্য অনুমিত এই ভিসার মেয়াদ দুই বছর। সময়টি প্রয়োজনে বাড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে এই মেয়াদ বৃদ্ধিটা নির্ভর করবে নিয়োগকারির সাথে কর্মচারির চুক্তির উপর।
শেষাংশ
পূর্বে বাংলাদেশে ভিসা প্রসেসিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা জনিত কারণে অনেকেরই মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আটকে ছিলো। এবার তারা এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। এর জন্য ভিএফএস সেন্টার থেকে ইমেইলকৃত ট্র্যাকিং নাম্বারটি ব্যবহার করে দিয়ে ভিসা স্ট্যাটাসটির স্ক্রিনশট নিতে হবে। এরপর তার প্রিন্ট কপি নিয়ে তার সঙ্গে ভিসা আবেদনের সময় যে কাগজপত্র দেয়া হয়েছিলো তার এক সেট কপি সঙ্গে নিতে হবে। তারপর ঢাকা কনসুলেট অফিসে গেলেই দেয়া হবে মাল্টার জব ভিসা।
মালটায় সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজের সুযোগ রয়েছে, যেটা সর্বোচ্চ ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইমারত শ্রমিক হিসেবে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি বৈধভাবে মাল্টায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সবদিক থেকে মাল্টা সরকারের এই প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য একদিকে যেমন বেশ লোভনীয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ের জন্যও এক দারুণ সম্ভাবনা।
আরো পড়ুন: ধনী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে প্রিমিয়াম ভিসা চালু করছে মালয়েশিয়া
মাগুরায় বিদেশি ফল চাষে সফলতা
ছোট ছোট গাছের কাধিতে ঝুলছে বিলাতি বা সৌদি খেজুর, গাছ নুয়ে পড়ছে মাল্টার ভারে, সবুজের মাঝে রঙিন ফুলের মতো শোভা পাচ্ছে ড্রাগন ফল, মাল্টা। আশেপাশের গ্রামসহ দুর-দুরান্ত থেকে মাগুরার গাংনী গ্রামের এই বৃহৎ মিশ্র ফল বাগানটি প্রতিদিনই দেখতে আসছে প্রকৃতি ও ফলপ্রেমীরা।
১০ একর জায়গা জুড়ে খেজুর, মাল্টা ছাড়াও ২৫০০ ড্রাগন ফলের পাশাপাশি অনেক কুল ও পেয়ারা গাছও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কুমিল্লার টাউন হলে প্লাস্টিক বোতলে ঝুলন্ত বাগান
কয়েক বছর অগে শখের বসে নিজ বাড়ির সাথে লাগোয়া জমিতে ছোট্ট এই বাগানটি করেন বৃক্ষপ্রেমী ইজাজুল হক রিজু। বর্তমানে মিশ্র এই ফলবাগান থেকে প্রতি বছর আয় করছেন লাখ লাখ টাকা ।
শুধুমাত্র গত বছরেই ড্রাগন ফল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
এ বছরেও ৩৫ লাখ টাকা ড্রাগন ফল বিক্রয়ের আশা করছেন বলে জানান ফল বাগানটির প্রধান দায়িত্বে থাকা রিজুর ভাই।
রিজুর ভাইয়ের তত্বাবধায়নে মিশ্র ফল বাগানটি সর্বদা পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন আরও ১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী , তবে কাজের চাপ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুনঃ এবার খুলনায় ‘বই বাগানের’ যাত্রা শুরু
শুক্রবার মাগুরা জেলার সর্ববৃহৎ মিশ্র ফল বাগানটি পরিদর্শনে আসেন মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মকর্তা ও শৌখিন লোক প্রায় প্রতিদিন দেখতে আসেন এই বাগানটি।
মাল্টা চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন নুরুল হক
বাগানের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ রঙের কাঁচা মাল্টা। ছোট-বড় মিলে পুরো বাগানেই মাল্টার ছড়াছড়ি। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাজীরহাট বানিনগর এলাকার চাষি নুরুল হকের বাগানের মাল্টার রঙ এখন সবুজ।
এরই মধ্যে বাগানের সবগুলো গাছেই মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। নুরুল হক তার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: খামারিদের দেয়া সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: কৃষিমন্ত্রী
চাষি নুরুল হক বলেন, ‘১৯৯৪ সালে বাড়ির সামনে সামান্য জমিতে নার্সারি দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করি। নার্সারিতে ফল ও ফুলসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা উৎপাদন করতে থাকি। আস্তে আস্তে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে যায় আমার নার্সারির পরিচিতি। আমার নার্সারি থেকে চারা নিয়ে গিয়ে অনেকেই বাগান গড়ে তুলেন। কিন্তু আমার ভাগ্যের পরির্বতন ঘটে না।’
তিনি বলেন, ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে দেখতে পাই মানুষ থাই পেয়ারা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনছে। এ দৃশ্য দেখে আমার থাই পেয়ারার বাগান করার ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ দিতে চলে যাই কানসাটের থাই পেয়ারা বাগানে। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের নার্সারিতে চারা তৈরি করি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা কৃষিকে দিয়েছেন নতুন দিগন্ত: কৃষিমন্ত্রী
নুরল হক বলেন, ‘নিজের নার্সারির চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক থাই পেয়ারার চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় স্থানীয় ধান চাষিদের জমি বছরে বিঘা প্রতি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে লিজ নিয়ে থাই পেয়ারার বাগান তৈরি করি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে থাই ৩ পেয়ারার চাষ শুরু করলেও প্রকৃতিক দুর্যোগে সম্পূর্ণ বাগান নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় প্রায় ৪০ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয়।’
কিন্তু এতে তিনি থেমে থাকেন নি। ২০১৭ সালে আবারও লিজকৃত ১১ একর জমিতে মাল্টা ও কমলার ৩ হাজার ৫ শত চারা লাগান। এক বছরে গাছে ভালো ফলনের দেখা মেলে। প্রতি গাছে ৫০-৬০টি করে মাল্টা ধরেছে। আগামী আশ্বিন মাসের শুরুতেই মাল্টাগুলো পাকতে শুরু করবে।
আরও পড়ুন: ফুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
নুরুল হকের বাগানে দৈনিক ২৫০-৩২০ টাকা মজুরিতে ১৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে নুরল হক বলেন, তুলনামূলক একটু উচু জমিতে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুড়ে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে প্রতিটি গর্তে একটি করে কলম চারা লাগাতে হয়। এরপর শুধুই পরিচর্যা।
নুরুল হকের বাগানের শ্রমিক রাধা রানী, ননিবালা, জোহরা বেগম, জোবেদা বেগম জানান, সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা থাকায় কয়েক বছর ধরে নুরল হকের এসব বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘নুরুল হক এতো সুন্দর মাল্টা বাগান করে উপজেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি শুনেছি তার বাগানে কোন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।’
এমন সুন্দর বাগান এ অঞ্চলে মাল্টা উৎপাদনে অনেককেই উৎসাহিত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘অল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকেরা। মাল্টা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে। সেই সাথে আধুনিক কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
কৃষি অনুষ্ঠান দেখে চাঁদপুরে যুবকের মাল্টা চাষে সফলতা
টেলিভিশনে প্রচারিত কৃষি অনুষ্ঠান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের সাতানি গ্রামের যুবক আল-আমিন।
মাল্টা চাষ করে লাভবান নওগাঁর কৃষক ওবায়দুল্লাহ
নওগাঁর পোরশা উপজেলায় বরেন্দ্র ভূমিতে মাল্টা চাষ করে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন ওবায়দুল্লাহ শাহ নামের একজন সৌখিন কৃষক।
বাংলাদেশ-মাল্টা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার
বাংলাদেশ এবং মাল্টা দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক সংসদীয় পর্যায়ের সহযোগিতাসহ নানাক্ষেত্রে বৃদ্ধি করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন মাল্টার জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর এঞ্জেলো ফারুজিয়া।