ঈদযাত্রা
এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯৮ জন নিহত
বাংলাদেশে এ বছর ঈদুল আজহার আগে ও পরে ভ্রমণের সময় মাত্র ১৫ দিনে ৩১৯টি দুর্ঘটনায় সড়কে ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবছর ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর রেকর্ড গত ৭ বছরে সবচেয়ে বেশি।
মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও সংস্থাটির মনিটরিং সেল ৩ থেকে ১৭ জুলাই ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৩টি দুর্ঘটনায় প্রায় ২৪৮ জন সড়কে প্রাণ হারিয়েছে।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা ২৫০-৩০০ জনের মধ্যে ছিল এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০০-২৫০টির মধ্যে ছিল।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এ বছর ঈদে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ঈদের ছুটিতে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন এবং আরও চার কোটি মানুষ বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করেছেন।
একই সময়ে পৃথক স্থানে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ২৫ জন, ১০টি নৌদুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় সংবাদপত্র এবং অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪, আহত ১৫
ঈদযাত্রা: বরিশাল লঞ্চঘাটে যাত্রী কানায় কানায় পূর্ণ
বরিশাল লঞ্চঘাট ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই ঘাট থেকে নিজেদের গন্তব্যে পাড়ি জমাচ্ছে।
ঈদের ছুটিতে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সার্ভিস চালু করায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে প্রায় ২৩টি লঞ্চ বরিশাল লঞ্চঘাটে নোঙর করেছে।
টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার প্রতিটি লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত চার হাজার যাত্রী বহন করেছে।
কর্তৃপক্ষের মতে, রাজারহাট বি লঞ্চটি প্রথমে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাত ১টার দিকে বরিশালে পৌঁছায়। এরপর একে একে রয়েল ক্রুজ, পূবালী ৭, ফারহান ৭, মানামী, রেড সান, পর্বত ১০, প্রিন্স আওলাদ ১০, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ১১ এবং সুরভী ৮ ঘাটে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রা: ভোগান্তি কমাতে সরাইলে মহাসড়কে পুলিশের অভিযান
ঈদযাত্রা: ভোগান্তি কমাতে সরাইলে মহাসড়কে পুলিশের অভিযান
মহাসড়কে যানজট নিরসন ও ঈদে ঘরমুখো মানুষদের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ।
বুধবার থেকে চলা এই অভিযানে অংশ নেন খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু, উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম, এসআই আরিফ হোসেন খান, কনস্টেবল মোমেন মিয়াসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা।
আরও পড়ুন: শিগগিরই কমবে যানজট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিন দুপুরে খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্পিডগান দিয়ে যানবাহনের গতি পরীক্ষা করে। ওই সময় মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হেলমেড বিহীন মোটরসাইকেল চালকসহ নিয়ম অমান্য করা যানবাহনের চালকদের বিভিন্ন জরিমানা করা হয়।
আরও পড়ুন: ঈদে যানজট এড়াতে সিরাজগঞ্জে নলকা সেতু খুলে দেয়া হবে
এ বিষয়ে ওসি সুখেন্দু বসু বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষ নিরাপদে যাতায়াতের জন্য পুলিশ সব সময় মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়ক যানজট, ভোগান্তি ও চাঁদাবাজিমুক্ত রাখতে খাটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ সব সময় সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন।
করোনার চেয়ে শক্তিশালী ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ৩২৩ প্রাণ
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘কঠোর লকডাউনে’ দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে করোনার ভয়াল থাবা প্রতিরোধ করে সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৫১৪ জনের।
রবিবার সকালে নগরীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়ে, সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন প্রাণ হারায় ও ৭২২ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন: খুলনা-যশোর মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও গণপরিহন বন্ধ থাকার সুযোগে সড়কে ব্যক্তিগতযান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা-ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বাঘাইছড়িতে চাঁদের গাড়ি উল্টে নিহত ১, আহত ২
ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন ও নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় সংসদ সদস্যসহ আহত ২
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত হয়েছে যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫.২৮ শতাংশ, নিহতের ৪৩.০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ প্রায়।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৫১ জন চালক, ৮০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৯ জন পথচারী, ৬৩ জন নারী, ৪৫ জন শিশু, ১৫ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন সাংবাদিক, ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯ জন শিক্ষক, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন আইনজীবী এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র্যাব সদস্য , ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ জন বিজিবি সদস্য, ৩৫ জন নারী, ৩ জন চিকিৎসক, ২২ জন শিশু, ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ৯৬ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ১ জন প্রকৌশলী, ৬৯ জন পথচারী, ২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৬.৯৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৩৭ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৩.২৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৭.৫৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৭.০৭ শতাংশ অটোরিক্সা, ৬.৮৪ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ৫.৯৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১৬ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ১০.০৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারনে ও ০.৬২ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০.৮৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৩২ শতাংশ ফিডার রোডে সংগঠিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩.১৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংগঠিত হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের যাতায়াতে এত বেশি সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি সড়ক দুর্ঘটনাকে মহামারি করোনাভাইরাসের মত গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ন মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজট, আটকা ৬ হাজার যানবাহন
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শুক্রবার ৩৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে। এর ফলে ঈদের ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষ এবং ঢাকাগামী গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা তাদের কোরবানির পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
সচেতন না হলে ঈদযাত্রা অন্তিমযাত্রায় রূপ নিতে পারে: কাদের
স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সর্বোচ্চ সচেতনতা প্রদর্শন না করলে ঈদযাত্রা অন্তিমযাত্রায় রূপ নিতে পারে বলে যাত্রীদের সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।