নৌপথ
ড্রেজিংয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১০টি নৌপথ পরিত্যক্ত: এসসিআরএফ
নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে (পলি অপসারণ) অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রবিবার (৩১ মার্চ) সংগঠনটির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নদী খনন ও পলি অপসারণ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।
লঞ্চমালিক নেতাদের বরাত দিয়ে এসসিআরএফ আরও জানায়, ৩১টি নৌপথ সচল থাকলেও সেসব পথের বিভিন্ন স্থানে নাব্য সংকট রয়েছে। ফলে লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে সচল নৌপথগুলোতে লঞ্চের সংখ্যা কমছে।
আরও পড়ুন: বিআইডব্লিউটিএ’র খননকৃত ১২টি নৌপথের অর্ধেক পরিত্যক্ত: এসসিআরএফ
নৌযাত্রী, নৌশ্রমিক ও অধিকার কর্মীদের বরাতে এসসিআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, নদী খনন ও পলি অপসারণে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ১৫ বছরেও নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মধ্যে ৪১টি স্বীকৃত নৌপথ থাকলেও ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মাত্র ৩১টি রুটে বাণিজ্যিক লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করছে। তীব্র নাব্য সংকটের কারণে বাকি নৌপথগুলোতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার লঞ্চের যাত্রীসংখ্যা এক বছরে ৩৪ শতাংশ কমেছে: এসসিআরএফ
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
এ সময় মাঝ পদ্মায় আটকা ছিল ২টি ফেরি। এছাড়া পাটুরিয়ায় ২টি ও দৌলতদিয়া ঘাটে আরও ৭টি ফেরি আটকিয়ে রাখা হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নদী পার করতে আসা যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবদুস সালাম জানান, মধ্য রাত থেকে কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে থাকে। রাত দেড়টায় ঘন কুয়াশায় পুরো নৌপথ ঢেকে যায়। এতে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ
তিনি আরও জানান, মাঝ পদ্মায় আটকা পড়ে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ও করবি নামে দুইটি ফেরি। এছাড়া আরো ১০টি ফেরি উভয় ঘাটে আটকিয়ে রাখা হয়।
এদিকে ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া পাড়ে আটকা পড়ে অর্ধশত যাত্রীবাহী বাস ও তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।
বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় ঘন কুয়াশার প্রকোপ কেটে গেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশায় ঢাকার বদলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নামল সিলেটে
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১২ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে রাত ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাঝ নদীতে আটকা পড়েছে ৪টি ফেরি।
এছাড়া, পাটুরিয়ায় ৮টি ও দৌলতদিয়া ঘাটে আরও ২টি ফেরি আটকে রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নদী পারাপারের যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, মধ্যরাত থেকে কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে থাকে। রাত ৩টায় ঘন কুয়াশায় পুরো নৌপথ ঢেকে যায়। এতে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ঘন কুয়াশায় লঞ্চে কার্গো জাহাজের ধাক্কা, নিখোঁজ ১
তিনি আরও বলেন, মাঝ পদ্মায় আটকা পড়ে হামিদুর রহমান, বনলতা, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ও হাসনা হেনা নামে ৪টি ফেরি। এছাড়া আরও ১০টি ফেরি উভয় ঘাটে আটকে রাখা হয়।
এদিকে ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া পাড়ে আটকা পড়েছে অর্ধ শত যাত্রীবাহী বাস ও ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।
ঘন কুয়াশার প্রকোপ কেটে পুনরায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশা: চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথে ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১২ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১২ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কুয়াশা কমতে শুরু করায় ফেরি চলাচল আবারও শুরু হয়।
এ সময় মাঝ পদ্মায় আটকা ছিল ৩টি ফেরি। এছাড়া, ২ ঘাটে আরো ১১টি ফেরি আটকে রাখা হয়েছিল। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় নদী পারাপারের যাত্রীদের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মহি উদ্দিন রাসেল জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে থাকে।
তিনি আরও জানান, রাত সাড়ে ৯টায় ঘন কুয়াশায় পুরো নৌপথ ঢেকে যায়। এতে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় শাহপরান, কেরামত আলী ও বনলতা নামে তিনটি ফেরির। এছাড়া আরো ১১টি ফেরি উভয় ঘাটে আটকে রাখা হয়। তবে কুয়াশা কমতে থাকায় আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়েছে।
এদিকে ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া পাড়ে আটকা পড়েছিল অর্ধশত যাত্রীবাহী বাসসহ ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।
আরও পড়ুন: ৬ ঘণ্টা পর চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি চলাচল শুরু
৯ ঘণ্টা পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চতুর্থ দিনের মতো ফেরি চলাচল ব্যাহত
চতুর্থ দিনের মতো ঘন কুয়াশায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে কুয়াশায় ফেরি বন্ধ হয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আজ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে চালু হয়। এর আগে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ছোট-বড় ৪টি ফেরি মাঝ নদীতে দিক হারিয়ে আটকা পড়ে। দুর্ভোগের শিকার হন কয়েকশ’ মানুষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানিয়েছে, কুয়াশার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে টানা ৪দিন ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে চতুর্থ দিনের মতো ভারী কুয়াশা পড়তে থাকে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকলে ফেরিসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়। এক পর্যায়ে সামনের সামান্য দূরের কিছুই যখন দেখা যাচ্ছিল না, তখন দুর্ঘটনা এড়াতে রাত ২টা ১০ মিনিট থেকে এই রুটে ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তার আগে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো (বড়) ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, খানজাহান আলী, এনায়েতপুরী ও কেটাইপ (মাঝারি) ফেরি ফরিদপুর মাঝ নদীতে দিক হারিয়ে ঘুরপাক খেয়ে পরে নোঙর করতে বাধ্য হয়। রাতভর ফেরিগুলো মাঝ নদীতেই নোঙর করে ছিল।
বিআইডব্লিউটিসি আরও জানিয়েছে, এ সময় ফেরি ৪টিতে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী গাড়িসহ প্রায় ৮০টির মতো বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ছিল। কুয়াশা আর শীতে দুর্ভোগের শিকার হন অন্তত ৩ শতাধিক মানুষ। এ সময় দৌলতদিয়া প্রান্তে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, কেরামত আলী নামক দু’টি বড় ফেরি এবং রজনীগন্ধ্যা ও কবরী নামক দু’টি ছোট ফেরি নোঙর করে ছিল।
একইভাবে পাটুরিয়া প্রান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামীদুর রহমান, ভাষা শহীদ বরকত, ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা ও শাহ পরান নামক চারটি বড় ফেরি এবং হাসনা হেনা ও বনলতা নামক ২টি ছোট ফেরি নোঙর করে ছিল।
বিআইডব্লিউটিএ’র খননকৃত ১২টি নৌপথের অর্ধেক পরিত্যক্ত: এসসিআরএফ
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নখাতের এক প্রকল্পের অধীনে খনন করা ১২টি নৌপথের অর্ধেকই ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় নাব্যতার অভাবে ওইসব নৌপথ যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করতে পারছে না।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
৫০৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগ।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাত্রী ও পণ্যবাহী জলযানসমূহের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১৬ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১২টি নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ছিল অক্টোবর ২০১১ থেকে জুন ২০১৫।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে প্রয়োজনীয় খনন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পলি অপসারণের মাধ্যমে নাব্যতা বজায় রাখা হয়নি। ফলে অর্ধৈক নৌপথ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
এসসিআরএফ জানায়, জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত দুই বছর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া নৌ পরিবহন বিশেষজ্ঞ, নৌযান মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে।
তবে বিআইডব্লিউটিএ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য দেয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসসিআরএফ জানায়, প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও সংস্থাটির র ড্রেজিং বিভাগ দীর্ঘ দুই মাসেও চিঠির জবাব দেয়নি।
‘১২ নৌপথ খনন’ প্রকল্পের আওতায় থাকা নৌপথগুলো হলো- ঢাকা-তালতলা-ডহুরী-জাজিরা-মাদারীপুর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া, সাহেবেরহাট-টুঙ্গীবাড়ী-লাহারহাট, সদরঘাট-বিরুলিয়া, পাটুরিয়া-বাঘাবাড়ী, ডেমরা-ঘোড়াশাল-পলাশ, ঢাকা-রামচর-মাদারীপুর, ঢাকা-শরীয়তপুর, চাঁদপুর-নন্দীর বাজার-শিকারপুর-হুলারহাট, হুলারহাট-চরচাপিল-গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি এবং ঢাকা-সুরেশ্বর-আঙ্গারিয়া-মাদারীপুর।
তবে এগুলোর মধ্যে সদরঘাট-বিরুলিয়া, ডেমরা-ঘোড়াশাল-পলাশ, হুলারহাট-চরচাপিল-গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি নৌপথ কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া, নাব্যতা সংকটের কারণে আরো কয়েকটি নৌপথের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সঠিকভাবে নদী খনন ও নৌপথ সংরক্ষণ হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
পরিত্যক্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে বিআইডব্লিউটিএ
সরকার নদী খনন এবং পলি অপসারণের মাধ্যমে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ চলাচলের জন্য নৌপথ পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করলেও ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাত্র সাত হাজার কিলোমিটার নৌপথ চালু করতে পেরেছে।
এর মধ্যে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে। এর মানে হলো পরিত্যক্ত নৌপথের মাত্র ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রের মতে, ৫৩টি অভ্যন্তরীণ নৌপথ খননের একটি মহাপরিকল্পনার অধীনে প্রথম পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪টি নৌপথের ১০ হাজার কিলোমিটার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারকারী জাহাজ মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলছে, কাগজে-কলমে সাত হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল করা হয়েছে। যথাযথ ড্রেজিং ও পলি অপসারণের অভাবে অনেক নৌপথ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে।
অধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে খনন ও পলি অপসারণের কারণে নাব্যতা উন্নয়নে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খনন যন্ত্র ও ড্রেজার স্বল্পতার কারণে আগে নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের কাজ ব্যাহত হলেও এখন তেমন কোনো সংকট নেই।
এমওএস সূত্র জানায়, গত ১৪ বছরে বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে অক্সিলিয়ারি ভেসেলসহ প্রায় ৩৮টি নতুন ড্রেজার যুক্ত হয়েছে। এর বহরে ড্রেজারের সংখ্যা এখন ৪৫টি। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানির ৫০টিরও বেশি ড্রেজার নদী খননে নিয়োজিত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদে নৌপথের ২৭ লাখ যাত্রীর চাপ পড়বে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে: জাতীয় কমিটি
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন যে নৌপথে নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিংয়ের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে ১৭৮টি নদী পুনঃড্রেজিং করে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করা হবে। এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ মে নেত্রকোনায় ভোগাই-কংসা নদী খনন উদ্বোধনের সময় প্রতিমন্ত্রী একই পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালীপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্বোধন শেষে তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, সরকার সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৪টি নৌপথ খনন করে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করার জন্য ২০০৯ সালে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল এবং ২০১০ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত হিসাব থেকে জানা যায়, উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিলের আওতায় ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ৮০০ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই সংস্থার নদী নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বর্ষায় ৬ হাজার কিলোমিটার এবং শুকনো মৌসুমে ৪ হাজার ৩৪৭ কিলোমিটার নৌপথে নৌযান চলাচল করেছে।
২০১৭ সালে এই অধিদপ্তরের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছিল যে সরকারের বিশেষ মনোযোগের কারণে নৌপথের দৈর্ঘ্য ৫৪৭কিলোমিটার বেড়েছে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রথম ছয় বছরে পরিত্যক্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ কোনো সাফল্য পায়নি। এছাড়া দুই দপ্তরের দুই ধরনের তথ্যের কারণে নদী খনন ও পলি অপসারণে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ খনন করা হয়েছে। এছাড়া, সমস্ত নৌপথে প্রয়োজনীয় নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়নি। নদী খননের এই ধীর গতির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (যাত্রী পরিবহন) সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল ইউএনবিকে বলেন, ‘নদী খনন ও ড্রেজিং কাগজে কলমে করা হয়েছে। আসলে জলপথগুলো পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে: জাতীয় কমিটি
এছাড়া গত এক দশকে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অনেক রুট পরিত্যক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাদল।
তিনি আরও বলেন, তারা ড্রেজিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য একজন লঞ্চ মালিক ও একজন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তা উপেক্ষা করেছে।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী এম. ইনামুল হক ইউএনবিকে বলেন, নদী খননের কিছু মেগা প্রকল্প জনস্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ অনেক নদী অপ্রয়োজনীয় খনন করছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো প্রকল্প চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত নদীর আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা।
এম ইনামুল আরও বলেন, নদী খনন ও পলি অপসারণের প্রক্রিয়া অপরিকল্পিত।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার দাবি করেন, নদী খনন সঠিকভাবে হয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, প্রথম ধাপে ২০১০ সাল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ড্রেজিং নিয়ে অনিয়ম ও জবাবদিহিতার অভাবের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে কোনো খনন বা ড্রেজিংয়ের কাজ তৃতীয় পক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কাজ শেষ করে নিয়মিত রুট রক্ষণাবেক্ষণ করে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ মাস্টার-চালক তৈরির আহ্বান ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের
লঞ্চযাত্রী কমছে চার কারণে: জাতীয় কমিটি
ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চযাত্রীর সংখ্যা কমার পেছনে চারটি কারণ খুঁজে বের করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।
সেগুলো হলো- পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে উন্নত সড়ক যোগাযোগ, মহানগরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে দুঃসহ যানজট, প্রয়োজনীয় খনন ও নিয়মিত পলি অপসারণের অভাবে বিভিন্ন নৌপথে তীব্র নাব্যসংকট এবং টার্মিনালসহ এর আশেপাশে ইজারাদারের লোকজন ও কুলি-মজুরের দৌরাত্ম্য।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব কারণের কথা বলা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা, নৌযান ও বাস মালিক, নৌ ও বাসশ্রমিক, সাধারণ যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সংকট নিরসনে ৭টি সুপারিশও উত্থাপন করেছে জাতীয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন নৌপথে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ লঞ্চযাত্রী কমেছে। এর মধ্যে গত এক বছরেই কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এই মন্দার কারণে নৌযান মালিকরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন এবং লঞ্চ চলাচল কমে আসছে। ফলে অনেক নৌযান শ্রমিকও দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছেন।
জাতীয় কমিটি জানায়, ঢাকা থেকে লঞ্চে যাতায়াতকারীদের বড় অংশ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার যাত্রী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা শহরের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর বিভাগের ২১ জেলার অত্যাধুনিক সড়ক যোগাযোগ হয়েছে। মানুষ স্বল্পসময়ে আরামদায়ক যাতায়াত করতে পারছে। ফলে বরিশালগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ লঞ্চে চড়ছে না। এ কারণে গত এক বছরে লঞ্চযাত্রীর হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লঞ্চে উঠার জন্য যাত্রীদের সদরঘাট পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু গুলিস্তান, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু (বাবুবাজার ব্রিজ) ও শ্যামপুর থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে সারা বছর তীব্র যানজট থাকে। এতে মানুষের দীর্ঘ সময় নষ্ট ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে অনেক মানুষ লঞ্চে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে।
নাব্যসংকটের কারণেও নৌপথে যাত্রী কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নাব্যসংকট নিরসনে পর্যাপ্ত অর্থ দিলেও নদীগুলো যথাযথভাবে খনন করা হয়নি। অনেক নৌপথে নিয়মিত পলি অপসারণের জন্য সংরক্ষণখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা করেনি। ফলে মালিকরা ঢাকা থেকে নাব্যহীন নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন: নৌ দুর্ঘটনা রোধে বাল্কহেড নিয়ন্ত্রণসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জাতীয় কমিটির
এ ছাড়া সদরঘাট টার্মিনালসহ আশেপাশের ঘাটগুলোতে হয়রানির কারণেও লঞ্চযাত্রী কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের সঙ্গে থাকা মালামালের জন্য টোল বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। কুলি-মজুররাও মালামাল নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে এবং বাড়তি মজুরি নেয়। সব মিলিয়ে গত দুই বছরে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ লঞ্চযাত্রী কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে সংকট নিরসনে ৭টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়েছে।
সেগুলো হলো-
১. শহীদ নূর হোসেন স্কোয়ার (জিপিও মোড়) থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অবিলম্বে উড়াল সেতু নির্মাণ এবং এ সেতু সদরঘাট থেকে একদিকে বাবুবাজার ব্রিজ, অন্যদিকে শ্যামপুর পর্যন্ত সংযুক্তকরণ।
২. উড়াল সেতু নির্মাণের আগপর্যন্ত উল্লেখিত সড়কগুলোকে যানজটমুক্ত রাখতে দু’পাশের হকারসহ সব ধরনের অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার।
৩. প্রয়োজনীয় খনন ও পলি অপসারণের মাধ্যমে সব নৌপথে সারা বছর নাব্য সংরক্ষণ।
৪. টার্মিনাল ও আশপাশের ঘাটগুলোতে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারাদার ও কুলি-মজুরের দৌরাত্ম্য বন্ধ।
৫. লঞ্চে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি, ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল বন্ধ ও নৌ দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৬. টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন, যাত্রীদের বিনামূলে টয়লেট ব্যবহার, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
৭. লঞ্চমালিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রার প্রথম দিন ছিল স্বস্তিদায়ক: জাতীয় কমিটি
নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ মাস্টার-চালক তৈরির আহ্বান ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের
নৌযানের দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ মাস্টার ও চালকদের গ্রুমিং ও নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে তারা অভ্যন্তরীণ মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, বিদ্যমান পরীক্ষা বোর্ডগুলো অবিলম্বে বাতিল এবং দুটি নতুন বোর্ড গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দুটি পৃথক পরীক্ষা বোর্ড গঠন এবং নতুন বোর্ডে ‘বিতর্কিত কর্মকর্তাদের’ অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানানো হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা অযোগ্য চালকদের কারণে ঘটছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষার বর্তমান ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।
মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ উভয়ের জন্য মাত্র ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে, যার উত্তর প্রশ্নপত্রে টিক চিহ্ন দিয়ে দিতে হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় একজন নৌকার মাঝির দক্ষতা ও যোগ্যতা নির্ণয় করা মোটেও সম্ভব নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা বোর্ডের দুই চেয়ারম্যান নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
দুই বোর্ডের অন্য সদস্যরাও একই প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। তারাই প্রশ্নপত্র তৈরি করে, লিখিত পরীক্ষা নেয় এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে: জাতীয় কমিটি
এছাড়া বোর্ড সদস্যরা মৌখিক পরীক্ষা পরিচালনা করে সনদ দেন। এ কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে, ১৫ জন খ্যাতিমান নাগরিক অভিযোগ করেছেন, ডিওএস-এর একক কর্তৃত্বের কারণে পরীক্ষায় ‘প্রচুর অনিয়ম ও দুর্নীতি’ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রার্থীরা প্রতিটি পরীক্ষার আগে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করছে। এর ফলে বেশিরভাগ প্রার্থীই অযোগ্য।’
বিবৃতিতে সইকারীরা হলেন- কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন; মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম; পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ প্রকৌশলী এম. ইনামুল হক; নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন; সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুনুর রশীদ; উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে; নৌপরিবহন, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া; নীরপদ নৌপথ বাস্তোবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল; সিনিয়র মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হামিদ; বিশিষ্ট শিশু সংগঠক তাহমিন সুলতানা স্বাতী; দীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম; পোভার্টি ইমিউনিজেশন অ্যাসিসটেন্স সেন্টার ফর এভরিহয়্যার (পিস) -এর নির্বাহী পরিচালক ইফমা হোসেন; আলোকিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাপ্পিদেব বর্মণ; পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন এবং জনলোকের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম সুজন।
আরও পড়ুন: ঈদে নৌপথের ২৭ লাখ যাত্রীর চাপ পড়বে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে: জাতীয় কমিটি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে আটকা পড়া ফেরি চলাচল শুরু
ঈদে নৌপথের ২৭ লাখ যাত্রীর চাপ পড়বে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে: জাতীয় কমিটি
পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চে করে বৃহত্তর বরিশালগামী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেলেও, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের অস্বাভাবিক চাপের মুখে পড়বে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।
এছাড়া ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যাবেন।
নৌ পরিবহন, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিদিন তিন লাখ লোক হিসেবে ৯ দিনে গড়ে কমপক্ষে ২৭ লাখ লোক সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে বাড়ি যাবে।
আরও পড়ুন: লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশ ফি আরোপের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশিস কুমার দে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন।
এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবং ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে জাতীয় কমিটি সরকারকে বিকল্প উপায়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ।
এর মধ্যে ৩৭ দশমিক ৫০ লাখ (২৫ শতাংশ) নৌপথে যাতায়াত করে।
এতে বলা হয়, এর প্রায় শতভাগই উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের যাত্রী।
এদিকে নাগরিক সংগঠনটি জানায়, গত জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর চাঁদপুর বাদে উপকূলীয় জেলাগুলোর নৌপথে যাত্রীর হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
ফলে এই ঈদে লঞ্চে ৩০ লাখ মানুষ (মোট যাত্রীর ২০ শতাংশ) যাবেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত ২৭ লাখ ঢাকা নদীবন্দর দিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে নির্মাণ হবে আধুনিক লঞ্চ টার্মিনাল
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল থেকে গৃহমুখী মানুষের ভিড় শুরু হবে। বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের নৌপথের সকল যাত্রী ১৩ থেকে ২১ এপ্রিল (ঈদের আগের দিন) ৯ দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরবেন।
এর ফলে প্রতিদিন সদরঘাট টার্মিনাল দিয়ে তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করবে এবং বাকি যাত্রীরা নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করবে।
নাব্যতা সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে সরকারিভাবে ৪১টি নৌপথ ছিল। তবে নাব্যতা সংকট ও যাত্রী সংকটের কারণে অন্তত ১৫টি নৌপথ ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়েছে।
জাহাজের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে জাতীয় কমিটি বলেছে, বাকি ২৬টি নৌপথে নিয়মিত সর্বোচ্চ ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। ঈদের আগে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০-এর কাছাকাছি।
এর মধ্যে সদরঘাট থেকে ৯০টি নৌযান বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং ৯০টি বিভিন্ন স্থান থেকে আসবে।
নাগরিক সংগঠনটি আরও জানায়, প্রতিদিন ৯০টি লঞ্চে তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করলে একটি লঞ্চ গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ যাত্রী বহন করবে।
কিন্তু লঞ্চগুলোর কোনোটিরই ধারণক্ষমতা দুই হাজারের বেশি নেই।
আরও পড়ুন: লালকুঠি-রূপলাল হাউজ পর্যন্ত লঞ্চ টার্মিনাল সরানোর আহ্বান তাপসের
এমনকি অনেক লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজারেরও কম। এ ছাড়া ঈদের আগের তিন দিনে ভিড় বাড়বে দেড় গুণ।
এছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনেক লঞ্চ চাপ সামলানোর ক্ষমতার বাইরে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ যাত্রী বহন করে। এর ফলে ছাদে ও ডেকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়।
সংগঠনটি নৌপথে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগের ঝুঁকি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে।
এছাড়া নৌপথ ও টার্মিনালগুলোতে সর্বোচ্চ নজরদারি এবং কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।