অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের ১০টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
প্রগতিশীল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যুগান্তকারী এক উৎসব হতে যাচ্ছে আসন্ন ২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে আসা ফুটবলপ্রেমীদের সুবিধার জন্য ফিফা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে। এগুলোর অধিকাংশই এই প্রথমবারের মতো উপভোগ করতে যাচ্ছে ফুটবল দর্শকরা। চলুন জেনে নেয়া যাক- কোন কোন প্রযুক্তিগুলো এবারের বিশ্বকাপ মৌসুমকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে।
২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দেখা মিলবে
আল রিহলা, ইতিহাসের প্রথম প্রযুক্তি সজ্জিত ফুটবল
আরবি শব্দ থেকে উদ্ভূত ‘আল রিহলা’ নামটি জুড়ে দেয়া হয়েছে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে। বলটি ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি বা ভিএআর প্রযুক্তি অনুযায়ী খেলা তদারককারিদের কাছে রিয়েল-টাইম ডেটা পাঠাতে পারবে। এর থ্রিডি অ্যানিমেশন ফুটবলের সংস্পর্শে প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত খেলোয়াড়দের সঠিক অবস্থানের জানান দেবে। এমনকি প্রয়োজনে তা টেলিভিশন এবং স্টেডিয়ামের বড় মনিটরেও দেখানো হবে।
আল রিহলা ফিফার আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তির কার্যকারিতায় সাহায্য করবে। এই বলের মধ্যে থাকবে মোশন সেন্সর। এর মাধ্যমে বলটি অফসাইড রেখা অতিক্রম করছে কিনা তা যাচাই করতে পারবে। এই যাচাইকরণটি সংঘটিত হবে খেলার তদারককারিদের কাছে থাকা কম্পিউটারের মধ্যে। এখানে সুক্ষ্ম নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো সরাসরি সম্প্রচারিত হবে, যা তাৎক্ষণিকভাবেই গ্যালারি সহ গোটা বিশ্ববাসী দেখতে পারবে।
আরো পড়ুন: ২০২২ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ জার্সি অনলাইনে কোথায় পাবেন
স্টেডিয়ামে উন্নত কুলিং প্রযুক্তি
এবারে ফুটবল বিশ্বকাপ আসরের সবচেয়ে অভিজাত দিকটি হচ্ছে এর ভেন্যুগুলো তথা- স্টেডিয়াম। কাতার এবার ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর এবং প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত কতগুলো স্টেডিয়াম পরিবেশন করতে যাচ্ছে। প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের স্থিতিশীল তাপমাত্রা নিশ্চিত করার জন্য ভেন্যুগুলোতে থাকবে উন্নত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। এটি ভক্ত এবং খেলোয়াড় উভয়কেই খেলায় দেখা এবং খেলায় অংশ নেয়ার জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ দেবে।
এই শীতলতা বজায় রাখার জন্য স্টেডিয়ামগুলোর পাশে প্রস্তুত রাখা হয়েছে শীতল পানির আধার, যেখানে বিদ্যুৎ খরচ হবে বিশ্বের অন্যান্য স্টেডিয়ামের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও কম। স্টেডিয়ামগুলোর বিল্ডিং ইনভেলাপ নকশা এগুলোর পুরো সিস্টেমের তাপ ও বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে দিয়ে ভারসাম্যের মধ্যে রাখে। ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে ৭টিতেই এই প্রযুক্তি থাকবে। উপকূলবর্তী স্টেডিয়াম-৯৭৪ তে সমুদ্রের প্রাকৃতিক শীতলতা থাকায় আর নতুন করে এখানে কৃত্রিমতার সংযোগ ঘটানো হয়নি।
ওয়াইফাই ও স্মার্ট চার্জিং স্টেশন
সৌর বিদ্যুৎ-এ চালিত এলপাম উইন্ড টারবাইন বাতাস ও সূর্য শক্তিকে সমন্বয় করবে। এই যন্ত্রের পরিষেবা হচ্ছে ভক্তদের ছায়া প্রদান করা এবং ইউএসবি চার্জিং ডক হিসেবে কাজ করা। এমনকি এটি তথ্য বহন করার জন্য স্পিকার, ওয়াইফাই, শীতলীকরণ, নজরদারি ক্যামেরা এবং লাইটের কাজ দিবে। তাছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন তো থাকছেই।
আরো পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলা উপভোগের ব্যবস্থা
বোনোকল হল বিশ্বের প্রথম ব্রেইল বিনোদন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ডিজিটাল সামগ্রী ব্যবহার করার জন্য যাবতীয় সহায়তা প্রদান করা হয়৷ ফোরামটি সমস্ত ডেটা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফুটবল ভক্তদের বোঝার সহায়ক করে আপডেট দিতে থাকবে। ফলে তারা অন্য সবার মতো খেলা উপভোগ করতে পারবে৷
ফিলিক্স পাম হচ্ছে হাতে পরিধানযোগ্য একটি সংবেদনশীল যোগাযোগের যন্ত্র, যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি। ফিলিক্স পাম হাতের তালুতে প্যাটার্নযুক্ত তথ্য প্রেরণের মাধ্যমে এক ধরনের স্পর্শের অনুভূতি তৈরি করে। সংক্ষেপে যার নাম হচ্ছে হ্যাপটিক প্রতিক্রিয়া, যার ফলে পরিধানকারি ব্যক্তিরা স্পর্শ বা গতি অনুভব করতে পারবেন। এটি প্রতিবন্ধীদেরকে নিখুঁত ভাবে খেলায় মগ্ন হতে সাহায্য করবে। খেলার মাঠে সংঘটিত প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনাগুলো তাদের মস্তিষ্ক অব্দি পৌছাতে এতটুকু দেরী হবে না, কারণ হ্যাপটিক প্রতিক্রিয়াগুলো হবে রিয়েলটাইম।
এছাড়া প্রতিবন্ধী তরুণদের নিরাপদ ও আরামপ্রদ স্থান প্রদানের জন্য স্টেডিয়ামে সেন্সরি ভিউয়িং রুম স্থাপন করা হচ্ছে। এখানকার ইন্টারেক্টিভ প্রজেকশন, নিয়ন্ত্রিত আলো, বিন ব্যাগ এবং খেলনাগুলোর মাধ্যমে তারা আরামদায়ক পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা পাবে।
সম্পূর্ণ অপসারণযোগ্য স্টেডিয়াম
দীর্ঘ সময় পর আয়োজন হয়ে থাকে বিশ্বকাপ ফুটবল। অনুষ্ঠান শেষে এর আভিজাত্যকে আর কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। কিন্তু এবার স্টেডিয়াম-৯৭৪ কে একদম অপসারণগ্য করে তৈরি করা হয়েছে। ঠিক খেলনার মত করেই পুনরায় খুলে ফেলা যাবে পুরো স্টেডিয়ামকে। শিপিং কনটেইনার এবং ইস্পাত ফ্রেম থেকে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটি তাই কাতারের একটি আইকনিক স্টেডিয়াম। মডিউল নকশা ব্যবস্থার কারণে প্রতিটি অংশকে আলাদা করে ফেলা যাবে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর। সাধারণ স্টেডিয়ামের তুলনায় কম উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে এর স্থাপত্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। আর খরচের দিক থেকেও অতিরঞ্জিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।
আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি
২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বিপ্লব ঘটবে খেলার মাঠেও। এবারের আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তিটি ম্যাচ রেফারিদের জন্য একটি সহায়ক টুল হবে। কেননা এটি তাদের টুর্নামেন্টের সময় সঠিক ভাবে এবং অনেক কম সময়ের মধ্যে অফসাইড সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
প্রযুক্তি সজ্জিত আল রিহলা বলের ভেতরের সেন্সর ছাড়াও স্টেডিয়ামের চারপাশে থাকবে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা। এই পুরো ব্যবস্থাটি অফসাইড অবস্থানে থাকা খেলোয়াড়কে প্রতিবার বল নিয়ন্ত্রণের সময় ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারিকে একটি স্বয়ংক্রিয় অফসাইড সতর্কতা প্রদান করবে। তাই অফসাইড হয়েছে কি না তা নির্ধারণ করতে দীর্ঘ সময় ধরে ভিএআর ভিডিওর পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন হবে না।
পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
বিশ্বকাপে চলাকালীন যে কোন চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরী পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে পরিধানযোগ্য কতগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সিরিজ। স্নাগ-ফিটিং শার্টের কাপড়ে সরাসরি কম বিদ্যুতের সেন্সর মুদ্রণের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভাবে শার্ট পরিধানকারির হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হাইড্রেশন পরিমাপ করা যাবে। এই শার্টগুলোতে ব্লুটুথেরও ব্যবস্থা থাকবে, যেটি সরাসরি বেস স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করবে। এতে করে অত্যাবশ্যক লক্ষণগুলো রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
দেশ ঘুরে দেখার অ্যাপ্লিকেশন
বিশ্বের জমজমাট এই উৎসবের অংশ নিতে কাতার ভ্রমণকারিদের জন্য থাকছে নাভবাডি অ্যাপ। এটি দেশ ঘুরে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য সরবরাহ করবে। স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থান সহ হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, যানবাহন ইত্যাদির খোঁজ পাওয়া যাবে অ্যাপে। এতেও আছে রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহারের সুযোগ তাই ইনডোর নেভিগেশনেও কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এই অ্যাপের আওতায় রাখা হয়েছে প্রতিটি ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক বাস চলাচলের সময়সূচী। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দেশ এমনটা করল। বাসগুলো কার্বন নিরপেক্ষ এবং অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আর খেলা শুরু আগেই স্টেডিয়ামে পৌছার জন্য অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই এগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে৷
সহজে ব্যবহারযোগ্য পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট
এই বিশ্বনন্দিত ইভেন্টটিকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে একটি স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট। এটি পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত ফুটবলপ্রেমিদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার বিশ্বকোষ হিসেবে প্রতীয়মান হবে। টিকিট থেকে শুরু করে হোটেল, যাতায়াত, দর্শনীয় স্থান সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটিতে। এই ইন্টার্যাক্টিভ সাইটে ম্যাগনিফায়ার, এআই(আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) রিডার, উন্নত রঙের স্কিম, স্পিচ সফটওয়্যারের মত সহায়ক প্রযুক্তি থাকবে।
স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার
গ্যালারির দর্শকরা নিজেদের আসনে থেকেই খাবার অর্ডার করতে পারবেন। এএসঅ্যাপ নামের স্মার্টফোন অ্যাপটি খাবার সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। তাই টান টান উত্তেজনাকর খেলা রেখে খাবারের জন্য উঠে যাওয়ার দিন শেষ। অ্যাপ সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখার নিমিত্ত্বে ফোনের চার্জ চলে যাওয়ারও ভয় নেই। গ্রাউন্ডের আশেপাশে স্মার্ট ওয়াইফাই এবং চার্জিং স্টেশনগুলো তো আছেই।
শেষাংশ
২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো বিশ্ববাসীর খেলা দেখায় আনবে আমুল পরিবর্তন। দীর্ঘ চার বছর ধরে এই মৌসুমটির জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনে চলেন ফুটবল অনুরাগীরা। কিন্তু এবার বোধ হয় তারা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতাটি পেতে যাচ্ছেন। নিদেনপক্ষে কাতারের মোহনীয় আড়ম্বরের এই প্রস্তুতি তারই ইঙ্গিত বহন করছে।
২ বছর আগে
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক নিয়ে এল অপো রেনো৫
অনেক জল্পনার পর প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের নতুন স্মার্টফোন আনলো অপো। রেনো সিরিজের অপো রেনো৫ স্মার্টফোনটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক। যার মধ্যে অন্যতম হলো স্মার্টফোনটি ৫জি সাপোর্টেড, সবশেষ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। সেইসাথে রয়েছে ৬৪এমপি প্রাইমারি ক্যামেরা।
৩ বছর আগে
রিয়েলমি নিয়ে এলো ১২৫ ওয়াট আল্ট্রাডার্ট চার্জিং
স্মার্টফোন চার্জ দেয়ার সমাধানে ১২৫ ওয়াট আল্ট্রাডার্ট চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি।
৪ বছর আগে