গবেষণা
কোরবানির পশু নিয়ে বাকৃবি গবেষকের পরামর্শ
কোরবানির হাটে পশু আনা থেকে শুরু করে কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে নিরাপদ, বৈজ্ঞানিক ও জনস্বাস্থ্যবান্ধবভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক, ইন্টার ডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির (আইআইএফএস) পরিচালক এবং ভেটেরিনারি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভ্যাব) সভাপতি ড. মো. মাহবুব আলম।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু চিনে বাছাই করা, তার যত্ন এবং বেশকিছু সতর্কতার কথা উঠে আসে এই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপচারিতায়।
সুস্থ ও অসুস্থ পশুর বৈশিষ্ট্য
কোরবানির পশু শুধু কিনলেই হবে না, সেটি সুস্থ কিনা, কিংবা কোনোপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে পশুটিকে মোটাতাজা করা হয়েছে কি না— এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ড. মাহবুব আলম।
সুস্থ পশুর লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সুস্থ পশু এমনিতেই চঞ্চল থাকবে, জাবর কাটবে, নাক ও মাজল ভেজা থাকবে। বিশেষ করে গরু, মহিষ বা ষাঁড়ের ক্ষেত্রে চামড়া টানটান ও পিঠের কুঁজ মোটা হবে, সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুস্থ পশুর চোখ উজ্জ্বল থাকবে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সেটি সজাগ থাকবে। এ ছাড়া খাবার দিলে আগ্রহ নিয়ে খাবে এবং স্বাভাবিকভাবে মলমূত্রও ত্যাগ করবে।’
আরও পড়ুন: কোরবানি: হাটগুলোতে জমে উঠছে পশু কেনাবেচা
অসুস্থ পশুর মধ্যে দুর্বল, ঝিমানো, কম চলাফেরা, খাবারে অনীহার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। পাশাপাশিস এ ধরনের পশুর মুখ দিয়ে লালা পড়বে, শরীর থলথল করবে ও কান নিচের দিকে ঝুলে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্টেরয়েড বা হরমোন প্রয়োগ করা পশু
পশুকে পেশিবহুল ও মাংসল দেখানোর উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোরবানির পশুর শরীরে স্টেরয়েড ট্যাবলেট বা ইনজেকশন প্রয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। অনেক অসাধু খামারি এবং পশু ব্যাবসায়ীই এ ধরনের কাজ করে থাকেন।
স্টেরয়েড প্রয়োগ করা পশুর মাংস খাওয়া মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় তা বিপজ্জনকও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এই ধরনের পশু চিনব কীভাবে, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের এই অধ্যাপকের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরু হবে অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির; তারা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না, বিশেষ করে পশুর উরুতে অনেক মাংস রয়েছে বলে মনে হবে।’
আবার শ্বাস-প্রশ্বাস ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেও গরুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায় বলে জানান তিনি।
ড. মাহবুব বলেন, ‘ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে। তাছাড়া এ ধরনের একটি গরুকে প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।’
হাটে চকচকে চামড়ার যে গরু সহজেই নজর কাড়বে, সেটিই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তিনি।
তার ভাষ্যে, ‘মানুষের শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।’
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ
‘অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে পশুর শরীর মোটা দেখায়। এ ধরনের পশুর শরীরে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।’
তার মতে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনাই ভালো, কারণ বেশি চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া ঠিক নয়। তার ওপর স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরুগুলো বেশি মোটা হয়ে থাকে। তাই দেশি জাতের গরু কেনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কারণ হিসেবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা পশুর সঙ্গে অনেকসময় নানা রকম সংক্রামক রোগ চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশুগুলোও অনেক ক্লান্ত থাকে। ফলে পশুটি সুস্থ নাকি অসুস্থ, তা সঠিকভাবে বোঝা যায় না।’
এ ছাড়া দিনের আলো থাকতে থাকতেই কোরবানির পশু কিনে ফেলা উচিত বলে জানান তিনি। কারণ রাতের বেলায় অনেকসময় রোগাক্রান্ত পশু দেখে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
ব্রয়লার ফিড খাওয়ানোর ঝুঁকি
গরু মোটাতাজা করতে ব্রয়লার ফিড খাওয়ানো মারাত্মক বিপজ্জনক বলে মনে করেন অধ্যাপক মাহবুব।
এ বিষয়ে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরুকে অনেক খামারি মনে করেন মুরগির ফিড খাওয়ালে গরু মোটা হয়, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। এই ফিডের কারণে গরুর চামড়ার নিচে পানি জমে, যার ফলে গরুকে নাদুসনুদুস দেখায়; কিন্তু জবাই করার পর দেখা যায় মাংস হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায় এবং ওজনও কম হয়।
তিনি জানান, মুরগি ও গরুর হজম প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়ায় গরু এই ফিড হজম করতে পারে না। ফলে কিডনি, লিভার, ফুসফুসে পানি জমে এবং এতে গরুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ ছাড়া ব্রয়লার ফিডে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন, এনার্জি ও স্টার্চ গরুর দেহে অতিরিক্ত তাপ, চর্বি ও মেটাবলিক হিট তৈরি করে, যা হিটস্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পেটের নানা সমস্যার কারণ হয়।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ ড. ইউনূসের
এই ফিডে থাকা উপাদান গরুর মাংসের মানও নষ্ট করে জানিয়ে নিরাপদ মোটাতাজাকরণে গরুর জন্য উপযুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবহার জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কোরবানির পশুর রোগ নির্ণয়
এই পশু বিশেষজ্ঞের মতে, শরীরের গঠন, হাঁটার ভঙ্গি বা অবস্থান দেখে পশুর হাড় বা পেশিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। আবার চামড়ার কিছু অংশ ঘষে চর্মরোগ, যেমন: চুলকানি, ছত্রাক সংক্রমণ বা অ্যালার্জির মতো সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
এ ছাড়াও পশুর, বিশেষ করে গরুর ক্ষেত্রে চামড়ায় গুটির মতো ফোলা ফোলা ছোট ছোট গোটা দেখে এলএসডি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
পাশাপাশি ক্ষুরের অস্বাভাবিকতা, যেমন: খুব মোটা ও বাঁকা হওয়া শরীরের ভেতরের কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার লালচে চোখ ও কর্নিয়ার ক্ষত দেখে চোখের রোগ নির্ণয় করা যায় বলে জানান তিনি।
১৮৩ দিন আগে
মাথা-ঘাড়ের ক্যানসারে দ্বিগুণ কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার
মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বিগুণ কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করেছেন একদল গবেষক।
সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সম্মেলনে এই সংক্রান্ত গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়। এই আবিষ্কারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুই দশকের সবচেয়ে যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
নতুন আবিষ্কৃত ইমিউনোথেরাপি ওষুধ পেমব্রোলিজুম্যাব শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। এটি রোগীর দেহের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনকে লক্ষ্য বানিয়ে কাজ করে, যা ক্যানসার কোষ ধ্বংসে সহায়তা করে।
একটি পরীক্ষামূলক গবেষণায় (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) দেখা গেছে, নতুন আবিষ্কৃত ওষুধটি কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ৫ বছর পর্যন্ত ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অথচ, প্রচলিত চিকিৎসার সঙ্গে দেওয়া হলে সেটি ৩০ মাস পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
এই পরীক্ষায় ২৪টি দেশের ১৯২টি এলাকা থেকে ৭০০ জন রোগী অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের গবেষকদল এই গবেষণা পরিচালনা করেন।
এতে সহ-গবেষক ও অনকোলজির অধ্যাপক ড. ডগলাস অ্যাডকিনস বলেন, ‘এই প্রথম এ রকম কোনো ওষুধে এমন প্রভাব দেখা গেছে। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ সাফল্য।
ক্যানসার বা ক্যানসারজনিত রোগের গবেষণা, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনকোলজি শাখা। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অনকোলজিস্ট বলা হয়।বিশ্বব্যাপী গবেষকরা এরমধ্যেই ওষুধটি মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের আধুনিক প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছেন।
প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ৭১৪ জন রোগীর ওপর চালানো এই ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ৩৬৩ জনকে পেমব্রোলিজুম্যাব দেওয়ার পরে প্রচলিত চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাকি ৩৫১ জনকে শুধু প্রচলিত চিকিৎসা— টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের পর রেডিওথেরাপি, মাঝে মাঝে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের প্রচলিত চিকিৎসা গত ২০ বছরে বদলায়নি। এসব রোগীর অধিকাংশ পাঁচ বছরও বাঁচেন না।
এই ইমিউনোথেরাপি বিশেষ করে পিডি-এল১ নামের ইমিউন মার্কারের (মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী জৈবিক উপাদান বা প্রোটিন) উচ্চমাত্রায় থাকলে বেশি ভালো কাজ করেছে। তবে সব ধরনের গলা ও মুখের ক্যানসার আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই এটি রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় বা ক্যানসার কোষ ছড়ানো বন্ধ করেছে।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের বায়োলজিকাল ক্যানসার থেরাপির অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন। এই পরীক্ষায় অর্থায়ন করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমএসডি।
তিনি বলেন, ‘এই ইমিউনোথেরাপি যেসব রোগীর ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে বা ফিরে এসেছে, তাদের জন্য দারুণ কার্যকর। তবে এবারই প্রথমবারের মতো নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।’
‘ক্যানসার কোষ ছড়ানো শুরু হলে এর চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, ইমিউনোথেরাপি ক্যানসার কোষ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে— পেমব্রোলিজুম্যাব রোগীদের প্রচলিত চিকিৎসার তুলনায় অনেক বেশি সময় রোগমুক্ত অবস্থায় রাখে। যাদের শরীরে ইমিউন মার্কার বেশি, সেসব রোগীর ওপর এটি সবচেয়ে ভালো কাজ। তবে আশার কথা হলো, ইমিউন মার্কারের মাত্রা যা-ই হোক না কেন, এই ওষুধটি মাথা ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রেই চিকিৎসার ফলাফল উন্নত করেছে।’
ডার্বিশায়ারের ৪৫ বছর বয়সী লরা মার্সটন ২০১৯ সালে স্টেজ-৪ জিভের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এই পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘ছয় বছর পর, আমি এখনো বেঁচে আছি! এটি ভাবতেই অবাক লাগছে। এই চিকিৎসা আমাকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।’
ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ-এর প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ক্রিস্টিয়ান হেলিন বলেন, ‘ইমিউনোথেরাপি বারবার নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। যেসব রোগী এই চিকিৎসা পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে গড় রোগমুক্ত থাকার সময় দ্বিগুণ হয়েছে। এমনকি অনেকের ক্যানসার আর ফেরেনি। এটি খুবই যুগান্তকারী।’
১৮৬ দিন আগে
ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ধরন নারী-পুরুষ ভেদে ভিন্ন: গবেষণা
ক্যানসার বিশ্বব্যাপী এক মরণব্যাধি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে শরীরের কোন অংশে এই ব্যাধি দেখা দেবে, তা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন—এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি নতুন গবেষণায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যানসার রিসার্চ ইউকে (সিআরইউকে) সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে চলতি বছর ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ৪ জনের পিঠ, বুক ও পেটে মেলানোমা ধরনের ত্বক ক্যানসার দেখা দেয়। বছরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ পুরুষ এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ত্বকের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্যানসার হলো মেলানোমা।
অন্যদিকে, ৩৫ শতাংশ নারীর কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশে এ ক্যানসার দেখা দেয়। প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ২০০ নারী এতে আক্রান্ত হন।
গবেষকরা মনে করেন, নারী-পুরুষের আচরণগত পার্থক্যের কারণেই এ ভিন্নতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষরা প্রায়ই রোদে শার্ট ছাড়াই বের হন, আর নারীরা গরমকালে শর্টস বা স্কার্ট পরতে পছন্দ করেন।
আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ভুমিকা রাখতে পারে এআই: গবেষণা
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণেই ৮৭ শতাংশ মেলানোমা ক্যানসার হয়। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হন।
‘মেলানোমা’ শব্দের অর্থ ‘কালো টিউমার’। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।
সিআরইউকের তথ্যানুসারে, গত বছর যুক্তরাজ্যে মেলানোমা আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। ২০০৭–০৯ সাল থেকে ২০১৭–১৯ সালের মধ্যে নতুন রোগীর হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেড়ে প্রতি লাখে ২১ জন থেকে ২৮ জনে পৌঁছেছে।
৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মেলানোমার হার ৫৭ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ শতাংশ বেড়েছে। সিআরইউকের অনুমান, চলতি বছর এ সংখ্যা ২১ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছাতে পারে।
সিআরইউকের প্রধান নির্বাহী মিশেল মিচেল বলেন, ‘গবেষণার অগ্রগতির ফলে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার বাড়ছে। তবে মেলানোমায় আক্রান্তের সংখ্যা, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে, বাড়ছে—এটা উদ্বেগজনক।’
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিরোধই এ ব্যাধি থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায়।
ত্বকে নতুন কোনো তিল, তিলের আকার বা রঙের পরিবর্তন, অথবা অস্বাভাবিক কোনো দাগ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিশেল মিচেল। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
আরও পড়ুন: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়: অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণা
সিআরইউকের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য বিভাগের প্রধান ফিয়োনা ওসগুন এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া গরম হলে রোদে সাবধানে থাকতে হবে। প্রতি কয়েক বছর পরপর রোদে পুড়ে গেলেই মেলানোমার ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়। শুধু গরম নয়—রোদেলা যেকোনো দিনেই, এমনকি মেঘলা বা শীতল দিনেও, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।’
তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্যে মার্চ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষতিকর মাত্রায় থাকে।
ফিয়োনার পরামর্শ অনুযায়ী, কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন—বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে ছায়ায় থাকা, সান হ্যাট ও সানগ্লাসসহ এমন পোশাক পরা যাতে ত্বক ঢাকা থাকে, এবং অন্তত এসপিএফ ৩০ ও ৪ বা ৫ তারকা মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসারবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক পিটার জনসন বলেন, ‘ত্বকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়। সূর্যের রশ্মি তীব্র হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে তা প্রতিরোধযোগ্য।’
১৯১ দিন আগে
বাকৃবির গবেষণায় মানুষের অন্ত্রে ক্ষতিকর পরজীবী শনাক্ত
মানুষের অন্ত্রে ক্ষতিকর কয়েকটি পরজীবী জীবাণুর সংক্রমণের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের একদল গবেষক। বিশেষ করে বস্তির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে এই জীবাণুর সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। এমনকি সেখানকার প্রাণীদের শরীরেও এর উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে গবেষক দলটি।
ময়মনসিংহ শহরের রেলওয়ে কলোনি-সংলগ্ন একটি বস্তি এলাকার মানুষ ও প্রাণীর ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে যা রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী বেনী আমীন ও স্নাতক শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান।
অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, “আমাদের এই গবেষণাটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশ—এই তিনটিকে আলাদা করে না দেখে ‘ওয়ান হেলথ’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একসঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি।”
গবেষণাটির পদ্ধতি সম্পর্কে বেনী আমীন বলেন, ‘রেলওয়ে কলোনি-সংলগ্ন বস্তি এলাকার হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, কবুতরসহ শিশু ও বয়স্কদের মল, পানির নমুনা ও মাটির ১০২টি নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। পশুপাখি থেকে কিছু কিছু জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। আমরা এই জীবাণুগুলোই শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি।’
আশিকুজ্জামান বলেন, “সংগৃহীত নমুনাগুলো ল্যাবরেটরিতে এনে প্রথমে ডিএনএ নিষ্কাশন করা হয়। পরে ‘পিসিআর ও সিকোয়েন্সিং’ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণুগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।’
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণায় মানবদেহে ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম—এমন তিনটি অন্ত্রে বসবাসকারী পরজীবী, যথা: ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম, ব্লাস্টোসিস্টিস ও জিয়ারডিয়ার প্রজাতি ও উপপ্রজাতি (সাব টাইপ) শনাক্ত হয়। এসব জীবাণুর জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, কিছু কিছু উপপ্রজাতি পশুপাখি থেকে মানুষে, আবার মানুষ থেকে পশুপাখিতে সংক্রমিত হতে পারে।’
আরও পড়ুন: সনদ পেলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ নেপালি শিক্ষার্থী
এ ছাড়া, পয়নিষ্কাশনের পানি, দূষিত মাটি ও মল থেকে জীবাণু পুকুর, ডোবা বা নালায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই পানিতে গোসল করা, কাপড় পরিষ্কার করা বা বাসনপত্র ধোয়ার সময় মানুষ সংক্রমিত হতে পারে বলে জানান তিনি।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, পরিত্যক্ত আবর্জনা থেকে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণী এসব পরজীবীতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরে সেগুলোর সংস্পর্শে এসে মানুষেরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
ওই জীবাণুগুলোর সংক্রমণের কারণ নিয়ে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, ‘বস্তি এলাকার অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন, যত্রতত্র পশুপাখির বিচরণ ও ময়লা-আবর্জনার কারণে সৃষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এসব পরজীবীর সংক্রমণের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করছে। এসব দূষিত পানি ও মাটির সংস্পর্শে এসে মানুষ ও প্রাণী উভয়েই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।’
তিনি জানান, গবেষণায় ব্লাস্টোসিস্টিসের সর্বাধিক উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটি ২৪টি নমুনায় শনাক্ত হয়েছে। মানব শরীরে এর উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও ছাগল, গরু ও হাঁস-মুরগির মধ্যে এটির ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। ছাগলের মধ্যে এই পরজীবীর উপস্থিতি ছিল শতভাগ, যা গবেষকদের বিস্মিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় ব্লাস্টোসিস্টিসের সাতটি ভিন্ন সাব টাইপ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে এসটি২ ও এসটি৩ শুধু মানুষের দেহে পাওয়া গেছে, আর এসটি২৩ ও এসটি২৪ প্রাণী ও পাখির দেহে পাওয়া গেছে। একই বাড়ির মধ্যে থাকা ছাগল ও মুরগির শরীরে একই রকম উপপ্রজাতি পাওয়া গেছে।’
‘বিভিন্ন পশু ও পাখির দেহে একই ধরনের ব্লাস্টোসিস্টিসের সাবটাইপের উপস্থিতি এসব পশু-পাখির মধ্যে সংক্রমণের বিষয়টিকে প্রমাণ করে।’
ওই গবেষক আরও জানান, ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম ধরা পড়েছে ৮টি নমুনায়, যার মধ্যে একটি ছিল মানুষের নমুনা। ওই রোগীর শরীরে ‘ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম পারভাম’ এর একটি বিশেষ সাব টাইপ শনাক্ত হয়েছে, যা সাধারণত প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এ ছাড়াও তিনটি ছাগল ও তিনটি মুরগির শরীরেও এই পরজীবীটি পাওয়া গেছে। মাটির একটি নমুনায় ‘ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম মেলিয়াগ্রেডিস’ পাওয়া গেছে, যা এক ধরনের পাখিজনিত পরজীবী।
তবে ‘জিয়ারডিয়া ইন্টেসটাইনালিস’ পাওয়া গেছে শুধুমাত্র একটি মাটির নমুনায়, যা সেখানকার প্রাণী বা মানুষের মল থেকে এসেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সহিদুজ্জামান।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিকার নিয়ে এই গবেষক বলেন, বস্তির মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর এলাকায় অন্ত্রপরজীবী জীবাণুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে পশুপাখির মল নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ, সুপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে এসব জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই গবেষণা একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। অর্থাৎ এটি ছিল ছোট পরিসরে প্রাথমিক অনুসন্ধান। তবে এতে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর ও বিস্তৃত গবেষণার জন্য ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
যদি দেশের অন্যান্য বস্তি অঞ্চল, গ্রামীণ এলাকা ও শহরের ঘিঞ্জি এলাকাগুলোতেও এ ধরনের গবেষণা চালানো যায়, তবে পরজীবী সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র স্পষ্টভাবে উঠে আসবে বলে ধারণা তার।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরও বিস্তৃত ও গভীর গবেষণায় এগিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান এই গবেষক।
২০১ দিন আগে
সিকৃবির গবেষণায় লিচু ও লাউয়ের নতুন পোকার জাত শনাক্ত
বাংলাদেশে লিচুর গান্ধি পোকা ও লাউ ফসলের স্যাপ বিটলের নতুন জাতের শনাক্তকরণ করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) গবেষকরা। সিকৃবির কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ফুয়াদ মন্ডলের নেতৃত্বে একদল গবেষক জাত দুটি শনাক্তকরণ করেন।
লিচুর গান্ধি পোকা সাধারণ গান্ধি পোকার চেয়ে আকারে বড়। এই পোকা লিচুর কচি পাতা, কাণ্ড এবং ফলের রস শোষণ করার ফলে কচি অবস্থায় লিচু শুকিয়ে যায় এবং মাটিতে ঝড়ে পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মারাত্মক আক্রমণের ফলে লিচুর শতকরা ৮০ ভাগ ফলন কমে যায়। অপর দিকে লাউয়ের স্যাপ বিটল দলবদ্ধভাবে লাউয়ের প্রজনন পর্যায়ে পুরুষ ফুলে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে সমস্ত পরাগরেণু খেয়ে ফেলে। ফলে পরাগায়ণ না হওয়ায় লাউয়ের ফল ধারণ সম্ভব হয় না।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ভাইস চ্যান্সেলর সচিবালয়ের কনফারেন্স রুমে এই দুটি পোকার পরিচিতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক লিফলেট উন্মোচন করা হয়।
আরও পড়ুন: সিকৃবির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
সিকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডি এ ই) মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল আলম।
তিনি বলেন, ‘কৃষি প্রধান বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় তিনি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
২৩৮ দিন আগে
বাকৃবিতে অসম্পূর্ণ প্ল্যান্ট দেখিয়েই গবেষণা দাখিল
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বাকৃবি রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণায় মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন সম্পূর্ণ না করেই গবেষণা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাউরেসের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মা নিশ্চিত করেছেন, প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হয়ে গেছে।
বাউরেস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বাউরেসের বার্ষিক কর্মশালায় অধ্যাপক ইলিয়াস বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের ওই তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন।
বাউরেসের কর্মশালার প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, ‘প্রকল্পের কার্যক্রম দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমত; ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারে পোল্ট্রি জবাই এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ও স্থানীয় বাজার এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট থেকে উৎপাদিত মুরগির মাংসের জীবাণু ও গুণাগুণ মূল্যায়ন করা। দ্বিতীয়ত; বাকৃবি পোল্ট্রি খামারে একটি মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছিল। সেই খামারে একটি ১৫০ বর্গফুট খোলা-পার্শ্বযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই তথ্য মতে, গতবছর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই মিনি প্রসেসিং প্লান্ট।’
এদিকে সরজমিনে দেখা যায়, বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে নেই অধ্যাপক ড. ইলিয়াসের কোনো সম্পূর্ণ প্রসেসিং প্ল্যান্ট। তবে রয়েছে ছাদ ও দেয়ালবিহীন একটি কাঠামো।
বাকৃবি পোল্ট্রি খামারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভাষক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান খামারে কোনো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই। তবে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলমান।’
এছাড়া বাউরেসের নিয়ম অনুযায়ী, গবেষণা শেষে ফলাফল যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন— পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, পশু পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন বলে জানা যায়।
কোনো প্রকার প্রসেসিং প্ল্যান্ট ছাড়াই কিভাবে গবেষণা ফলাফল জমা পড়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গবেষণার যাচাই দলে আমি ছিলাম। তবে যাচাই টিমের কাজ হলো গবেষণা প্রবন্ধের ফাইন্ডিংস, অবজারভেশন অর্থাৎ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করা। আর্থিক মনিটরিংয়ের কাজ আমাদের নয়, এটি করে থাকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। আসলে প্রসেসিং প্ল্যান্টের বিষয়ে ওই গবেষণা প্রবন্ধে কিছু ছিল কিনা, সেটা আমরা দেখি না।’
২৬৯ দিন আগে
২০৫০ সাল নাগাদ মুটিয়ে যেতে পারেন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ
আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক, এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী স্থূল বা মুটিয়ে যেতে পারেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যা অকাল মৃত্যু, রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়াসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না-হলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৩১ শতাংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী মুটিয়ে যাওয়ার কারণে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবেন।-খবর গার্ডিয়ানের
গত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী স্থূলতাজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ২১১ কোটি এবং ৫-২৪ বছর বয়সী ৪৯ কোটি ৩০ লাখ শিশু ও তরুণ-তরুণী ওজন বেশি বা স্থূলতায় ভুগছেন। এই সংখ্যা ১৯৯০ সালে ছিল যথাক্রমে ৭৩ কোটি এক লাখ ও ১৯ কোটি ৮০ লাখ।
আরও পড়ুন: ক্রুড অয়েলে পারদের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে ঢাবির গবেষক দল
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এই গবেষণার প্রধান লেখক এমানুয়েলা গাকিদু বলেন, বিশ্বে স্থূলতা যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, তা অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি একে সমাজের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন।
গবেষণামতে কেবল উত্তর আফ্রিকা,মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকাতেই ২০৫০ সাল নাগাদ এক তৃতীরয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী (প্রায় ১৩০ বিলিয়ন) স্থূলতায় ভুগবেন। যা দেশগুলোর সমাজ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে শিশুরা আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত হারে ওজন বৃদ্ধি করছে এবং স্থূলতা অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে বলে জানান গবেষকরা। তারা বলেন, এতে তরুণ বয়সেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে ১৯৬০-এর দশকে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ ২৫ বছর বয়সে স্থূলতায় আক্রান্ত ছিলেন, সেখানে ১৯৯০-এর দশকে জন্মানোদের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে এটি ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩ মার্চ) ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দরিদ্র দেশগুলোকে স্থূলতার প্রভাব নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ শতাধিক গবেষকের অংশগ্রহণে বাকৃবিতে বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গবেষকরা বলেন, উচ্চ বিএমআইয়ের (স্থূলতা) কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অধিক সংখ্যক অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে মত দেন তারা।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফোরামের প্রধান নির্বাহী জোহানা রালস্টন বলেন, ‘স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজের ওপর স্থূলতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।’ সীমিত সম্পদের দেশগুলোর জন্য এই প্রভাব মোকাবিলা করা আরও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
২৭৫ দিন আগে
বাকৃবিতে ৬ শতাধিক কৃষি বিষয়ক নতুন গবেষণা উপস্থাপন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের শতাধিক গবেষক পোস্টার ও মৌখিক আকারে ছয় শতাধিক কৃষিভিত্তিক গবেষণা উপস্থাপন করেছেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষসহ কয়েকটি স্থানে পোস্টার ও মৌখিক উপস্থাপনাগুলো নেওয়া হয়।
বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) গবেষণা অগ্রগতির তিন দিনব্যাপী বার্ষিক কর্মশালায় ২৩টি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থাপনাগুলো সম্পন্ন হয়েছে।
বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, ‘১৯৮৪ সালে বাউরেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪ হাজার ৫৩৭টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে ও ৬৭৪টি গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনুষ্ঠানে ২৩টি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থাপিত হবে এবং তা থেকে পরবর্তী গবেষণার পরিকল্পনা করা হবে। পরবর্তীতে সেশনভিত্তিক বেস্ট ২১ জন উপস্থাপনকারীকে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হবে।’
এছাড়া পোষ্টার সেশন মোট ৬ জনকে সেরা পোস্টার উপস্থাপনকারী হিসেবে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান ড. মো. হাম্মাদুর রহমান।
সরজমিনে দেখা যায়, গবেষকরা কৃষিখাতে বিভিন্ন রকম নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন। কেউ কাজ করেছেন ডায়াবেটিস কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে; কেউ কাজ করছেন গবাদি পশু, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান উন্নয়নে; বাজারে থেকে কিনে আনা মুরগি, ডিমের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে; গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও এর সমাধান; জৈব সারের মানোন্নয়ন ও উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে; ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন; মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলজ সম্পদের অধিকতর ব্যবহার; কৃষি প্রযুক্তিতে উন্নয়ন; গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় কৃষি অর্থনীতির নানা দিক ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালার উদ্বোধন
এ সময় ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক গবেষণায় বাজার থেকে আমরা যে পোল্ট্রি মুরগি কিনে আনি তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি কক্সিডিওস্ট্যাটও থাকে। এর প্রভাবে মানুষের লিভার, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া কক্সিডিওস্ট্যাটও অতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশ আরিয়াল ও আসমিতা ভূজেলের সহযোগিতায় প্রাথমিক গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারাহ তাসফিয়া বলেন, বাউরেসে আমার গবেষণা উপস্থাপনের সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এটি আমাকে বৈশ্বিক গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ করে দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর গবেষণার পথ সুগম করবে। আমি আশা করি, আমার কাজ কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষণা কার্যক্রম সূক্ষ্মভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৮৪ সনের ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৬১তম অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) অধ্যাদেশ’ অনুমোদন লাভ করে। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকদের পরিচালিত প্রকল্প-গবেষণা কার্যক্রমের তদারকি, ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব বাউরেস পালন করে আসছে।
২৯০ দিন আগে
স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ভুমিকা রাখতে পারে এআই: গবেষণা
স্তন ক্যান্সার শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- এআই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে একটি মার্কিন গবেষণায় উঠে এসেছে।
স্তন-স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম ম্যামোগ্রাফি স্ক্রিনিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে দারুণ ফল পেয়েছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, এআই দিয়ে স্ক্যান করা হলে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২১ শতাংশ বেশি।
সোমবার প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চের একটি প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়।
রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আরএসএনএ) বার্ষিক সভায় এই ফল উপস্থাপন করে রেডিওলজি জায়ান্ট র্যাডনেটের মালিকানাধীন এআই ফার্ম ডিপহেলথ।
১২ মাসে ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬০৪ জন নারীর ওপর ম্যামোগ্রাফি স্ক্রিনিংয়ের পর এই ফলাফল উপস্থাপন করে র্যাডনেট।
আরও পড়ুন: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়: অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণা
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণার আওতাধীন নারীদের অনেকে ম্যামোগ্রাফিতে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের এআই সফটওয়্যার বেছে নেন। চিকিৎসকের চোখ এড়িয়ে গেলেও ওই সফটওয়্যার ক্যান্সারের জীবাণু শনাক্তে সহযোগিতা করায় ম্যামোগ্রাফিতে এটি ‘দ্বিতীয় চোখ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই প্রকল্পে যেসব নারী অংশগ্রহণ করেন বাকিদের চেয়ে তাদের মধ্যে ক্যান্সার শনাক্তের হার ৪৩ শতাংশ বেশি ছিল বলে জানানো হয়।
তবে স্তন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নারীদের ওপরই শুধু এআইয়ের পরীক্ষা চালানো হয়। ফলে ৪৩ শতাংশ বেশি শনাক্ত হারকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। পরে সার্বিকভাবে এই হার ২২ শতাংশ বলে জানানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা ২১ শতাংশের কম নয় বলে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
গবেষকরা বলছেন, তারা এখন এআই থেকে আরও বেশি সুবিধা কীভাবে নেওয়া যায়, তার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে গাজীপুর: গবেষণা
৩৫৯ দিন আগে
দাবানলে সৃষ্ট বায়ুদূষণে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু: গবেষণা
অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিবছর দাবানলে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী ১৫ লাখেরও বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী। যা এই জাতীয় পরিবেশগত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলোকে তুলে ধরে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বার্ষিক গড়ে ১৫ লাখ ৩০ হাজার মৃত্যুর কারণ এই দাবানলে সৃষ্ট ক্ষতিকারক বায়ুদূষণ।
মৃত্যুর ঘটনাগুলোর ৯০ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। যার মধ্যে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও আঞ্চলিক বৈষম্য
বার্ষিক মৃত্যুর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ কার্ডিওভাসকুলার রোগে হয়েছে। ২ লাখ ২০ হাজার মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে। দাবানলের সূক্ষ্ম বস্তুকণা হতাহতের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য দায়ী। আর পৃষ্ঠের ওজোন অবশিষ্ট ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
গবেষণাটিতে কঠোর আঞ্চলিক বৈষম্য উঠে এসেছে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় দাবানলের আগুন-উৎসযুক্ত বায়ু দূষণের সঙ্গে যুক্ত মৃত্যুর সর্বোচ্চ হারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: পেরুর দাবানলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮
অন্যান্য লেখকরা উল্লেখ করেছেন, ‘উষ্ণ জলবায়ুর কারণে দাবানল ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন এবং মারাত্মক হয়ে ওঠার পাশাপাশি জলবায়ু সম্পর্কিত মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত যথেষ্ট স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
বৈশ্বিক সমর্থনের আহ্বান
গবেষণায় উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে দাবানলে সৃষ্ট বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলো কমাতে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা হিসেবে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার পক্ষে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি মৃত্যুর হারে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেয়।
লেখকরা যুক্তি দেন, লক্ষ্যযুক্ত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ধনী দেশগুলো দরিদ্র অঞ্চলগুলোর কাঁধে থাকা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বোঝা কমাতে সহায়তা করতে পারে। যা শেষ পর্যন্ত জলবায়ু সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদ্ধতিতে অবদান রাখতে পারে।
এই বিস্তৃত গবেষণায় সারা বিশ্বের গবেষকরা অবদান রেখেছেন। এটি দাবানলের কারণে বায়ু দূষণের মানবিক ব্যয়কে বোঝার এবং মোকাবিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করে।
সূত্র: এজেন্সি ও অন্যান্য
আরও পড়ুন: দাবানলের কারণে ইকুয়েডরের রাজধানীতে জরুরি অবস্থা জারি
৩৭০ দিন আগে