রোহিঙ্গা সংকট
মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্র সচিবের
মানব পাচার সমস্যার টেকসই সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ‘বালি প্রসেস’-এর কো-চেয়ার রাষ্ট্রদূত লিন বেল (অস্ট্রেলিয়া) ও রাষ্ট্রদূত ত্রি থারিয়াতের (ইন্দোনেশিয়া) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তুলে ধরেন। পাশাপাশি মানব পাচারের কারণগুলো তুলে ধরে সেগুলো রোধ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা ও বাধার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিচ্ছে বিবদমান পক্ষগুলো: মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব
পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃএকত্রীকরণের জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে গৃহীত কর্মসূচি ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন।
মানব পাচার রোধকে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসেবে উল্লেখ করে এই সমস্যার সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব দেন বালি প্রসেস কো-চেয়াররা।
আরও পড়ুন: মানব পাচার প্রতিরোধে লক্ষ্যভিত্তিক সচেতনতা ও বিস্তৃত প্রচেষ্টা 'অত্যাবশ্যক': ব্লিঙ্কেন
এছাড়াও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন এবং ‘বালি প্রসেস’ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানব পাচার নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি জোরদার করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এছাড়াও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে অসহায়ত্ব ও হতাশার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অনিয়মিত স্থানান্তর বেড়ে যাওয়ায় কো-চেয়াররা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক-এডিবির ঋণ নয়, অনুদান চাই: টিআইবি
এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে ‘বালি প্রসেস’-এর সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘায়িত সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে এবং এটি সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছে যুক্তরাজ্য
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক-এডিবির ঋণ নয়, অনুদান চাই: টিআইবি
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করতে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে চাওয়া এক বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে ৫৩৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৪৬৫ মিলিয়ন অনুদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত: টিআইবি জরিপ
একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য অনুদান হিসেবে দিতে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
পাশাপাশি, এই নীপিড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবিলার সব ভার শুধু বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়।
এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সংহতি। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ করেছে বাংলাদেশ।
এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে, এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকটসংশ্লিষ্ট সব খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ নয় অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।’
বাস্তুহীন রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান হ্রাসের প্রবণতায় টিআইবি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে কাপুরুষের মতো তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এই বোঝা বহনের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনুদান কমে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু খাদ্য সহযোগিতায় বরাদ্দ প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলারে নেমে এসেছে।
ড. জামান বলেন, ‘বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মিয়ানমারের বহুমাত্রিক অংশীদারত্ব, স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশসমূহের দায়িত্ব হলো রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের টেকসই সমাধান এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মায়ানমারকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো।’
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সমন্বয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের উপর চলমান নিপীড়নসহ এই সংকটের মূল কারণসমূহ মোকাবিলায় জাতিসংঘকেও কাজ করতে হবে।’
পরিচালক আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়েছে এবং মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের অধিকার তাদের আছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন-গণহত্যা থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বইতে গিয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি চাপে রয়েছে। এখন সেই চাপ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে বাধ্য করার মতো নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য কাজ আর কী হতে পারে!’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অ্যামনেস্টি,আরএসএফ ও টিআইবি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবি মিথ্যাচার করেছে: মন্ত্রী
এসিডি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান মোমেনের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এবং এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ ভবনে অনুষ্ঠিত ১৮তম এশিয়া কো-অপারেশন ডায়লগের (এসিডি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে।
তারা যাতে দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করুন: এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গারা যদি তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে, যদি তাদের নিজ দেশে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে এই বিপুল জনগোষ্ঠী এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলেও নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের ইস্যু আলোচ্যসূচির শীর্ষে রাখতেও তিনি বৈঠকে অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, এসিডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং এশীয় দেশগুলোর ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি এসিডি’র পৃষ্ঠপোষকতায় মানবসম্পদ উন্নয়নে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব করেন, যাতে এশিয়ার বিশাল মানবসম্পদকে এই অঞ্চলের উন্নয়ন চাহিদা মেটাতে কাজে লাগানো যায়।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে সিয়েরা লিওনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীরে আগ্রহ প্রকাশ
ড. মোমেন বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ও জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং এশীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য এসিডির মিশনের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহের কথা জানান।
বৈঠকে এসিডি’র সেক্রেটারি জেনারেল, বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ এসিডি সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে নেদারল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রীর বৈঠক
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এ আহ্বান জানান।
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ৬ বছর ধরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রত্যাবাসনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গা জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করুন: এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে মোমেন
তিনি আরও বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সমর্থন কমে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে, ফলে তাদের জন্য খাদ্য রেশন কমে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ক্ষতি নয়, বরং পরিবেশ রক্ষা করে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে: ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
ড. মোমেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের জবাবদিহির জন্য গাম্বিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন, যেখানে মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলোও এই মামলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সভায় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে ওআইসিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভা পরিচালনা করেন ওআইসি’র মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা। সভায় তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া, জিবুতি, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনেই ও সেনেগাল আলোচনায় অংশ নেয়।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ
খাদ্য, জ্বালানি ও রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা করবে ঢাকা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের নির্ধারিত ৭ সেপ্টেম্বরের বাংলাদেশ সফরে উভয় দেশ খাদ্য, সার, জ্বালানি ও রোহিঙ্গা সংকটের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ইউক্রেন সংকটের পর থেকে সারা বিশ্বে যে জটিল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে তা আমরা তুলে ধরব।’
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেন ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাশিয়াকে অনুরোধ করতে পারে।
মঙ্গলবার ঢাকায় রুশ দূতাবাস জানিয়েছে, উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় করবে।
আরও পড়ুন: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে মোমেনের বৈঠক ৭ সেপ্টেম্বর
এর আগে গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সফরকালে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যু উত্থাপন করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যেদিন এখানে আসবেন সেদিন আমাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। আমাদের অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় আলোচনা করার আছে। আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যুও আছে।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানান তিনি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষে ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
মূলত ২৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইওআরএ (ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন) কাউন্সিলের ২২তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ল্যাভরভের গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সফরটি বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইইউ’র সঙ্গে সংযুক্ত নয়: রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ টেলিফোনে কথা বলেন ও উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন এবং এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
টেলিফোনে আলাপকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সময় জটিলতার কারণে ঢাকায় আসতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শিগগিরই সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসারে, মোমেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতার জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আরও পড়ুন: পুতিন-শি জিনপিং বৈঠক, বিচ্ছিন্ন রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য রাজনৈতিক উৎসাহ
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের প্রচেষ্টা জোরদার হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ: শাহরিয়ার
অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক থাকায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আশা করি জাপান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা আরও জোরদার করবে।’
শনিবার (২৬ আগস্ট) প্যান-এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিএআরআই) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে জাপান দূতাবাসে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
জাপানে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত জামিল মজিদ ও আশরাফ-উদ-দৌলা, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. লাইলুফার ইয়াসমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শাখার পরিচালক সায়েম আহমেদ, জাইকা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রতিনিধি ইজি ইয়ামাদা, ঢাকায় জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (জেসিআইএডি) সভাপতি তেতুরো কানো এবং প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) মহাসচিব মো. আনোয়ার শহীদ।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম মাতারবাড়ী প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান জাপানি কোম্পানির উপস্থিতি ও সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জাপানের সমর্থিত এই অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে দেশ ও জনগণের অনেক সমস্যার সমাধান হিসেবে মনে করছি।’
এর আগে বাংলাদেশ সরকার জানায়, প্রতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম এবং রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অনেক কমে যাওয়ায় এই সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও দেরি এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে এত দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেওয়ার আর্থ-সামাজিক, জনসংখ্যাগত ও পরিবেশগত ব্যয় বাংলাদেশকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ও অধিকার রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনগুলো অসাধারণ এবং এ ধরনের অর্জন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরে সহযোগিতা করবে জাপান: নিশিমুরা ইয়াসুতোশি
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। গত ৫০ বছরে আমরা যা অর্জন করেছি তা আরও বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটা (লক্ষ্য অর্জন) সহজ হবে না। একমাত্র জাপানের মতো বন্ধুরা আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান অবশ্যই সম্মিলিতভাবে কাজ করবে এবং উভয় দেশ ও তাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক কল্যাণকর ভবিষ্যৎ অর্জনের যাত্রায় এক থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বর্তমানে শুধু একটি জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিত, তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বা তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সফররত ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) যৌথ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব ওআইসি-ইউএনএইচসিআর যৌথ প্রতিনিধি দলকে এই মর্মান্তিক সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে জোরালো আন্তর্জাতিক সমর্থন না পাওয়া ও প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ওআইসি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকবিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তারিগ আলী বাখেত; খালেদ খলিফার নেতৃত্বে ইউএনএইচআরসি প্রতিনিধি দল; হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা; উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (জিসিসি) ভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীজনরা ৬ থেকে ১১ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে সংকট সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ভুলে যায়নি ইইউ: ইউএনবিকে গিলমোর
পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং তাদের প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর অর্থবহ সম্পৃক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশের অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তারও প্রশংসা করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলের সফরের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটি এই সংকট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত ভাসানচর প্রকল্প সম্পর্কেও প্রতিনিধি দলকে জানান।
ওআইসি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্র সচিব গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলার প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোকপাত বজায় রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য এর মহাসচিবের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: অনেক বৈশ্বিক নেতৃত্ব এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চান না: মোমেন
গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলাটি অপর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাসুদ ওআইসির পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন।
তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে ওআইসির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যাবাসনই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।’
হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: পুনর্বাসন কর্মসূচি: সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা চলছে
এর আগে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে মুখ্য সচিব কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি সফররত প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন এবং জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) আরও অবদানের আহ্বান জানান।
তিনি সফররত প্রতিনিধি দলকে রোহিঙ্গাদের জন্য যৌথভাবে নিবেদিত কর্মসূচি আয়োজনের অনুরোধ জানান এবং বিষয়টিকে বৈশ্বিক আলোচ্যসূচিতে সক্রিয় রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ওআইসি ও ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারে নিযুক্ত ওআইসির বিশেষ দূত ইব্রাহিম আহদি খাইরাত, ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ড (আইএসএফ), কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (কিউএফএফডি), কুয়েতের যাকাত হাউস এবং কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (কেএফএইডি) প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
রোহিঙ্গা সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মতবিনিময়
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম স্টকহোমে সুইডিশ পার্লামেন্ট রিক্সডাগের পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্রস-পার্টি সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, পারস্পরিক স্বার্থ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।
১৬ জুন উভয় পক্ষ বাংলাদেশকে সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতায় সমর্থন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা এবং শ্রম খাতে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও মতবিনিময় করেছে।
আরও পড়ুন: স্বাধীন নীতি অনুসরণে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারকে সকলের সম্মান করতে হবে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আইটি ও ফিনটেক(আর্থিক লেন-দেন প্রযুক্তি) খাতে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতা এবং সবুজায়ন, বাংলাদেশ-ইইউর ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়েও আলোচনা করেন।
প্রতিমন্ত্রী সুইডিশ সংসদীয় কমিটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশেষ করে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং তার ‘রূপকল্প ২০৪১’ সম্পর্কে অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের সক্রিয় ভূমিকা চায় ঢাকা
কমিটির চেয়ারম্যান অ্যারন এমিলসন (সুইডেন ডেমোক্র্যাট), ডেপুটি চেয়ারম্যান মরগান জোহানসন (সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি), এবং সদস্য মার্গারেটা সেডারফেল্ট (মডারেট পার্টি), জ্যাকব রিসবার্গ (গ্রিন পার্টি) এবং ম্যাগনাস বার্নটসন (খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট) রিক্সড্যাগের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেহেদী হাসান এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়ক মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ) কাজী রাসেল পারভেজ।
আরও পড়ুন: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন, সবুজ রূপান্তরে সহযোগিতা করতে আগ্রহী সুইডেন
আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা ও কিশিদার আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা একমত পোষণ করেছেন যে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি স্বাগতিক সম্প্রদায়ের ওপর বোঝা বাড়াবে এবং ‘এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি করবে।
তারা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মিয়ানমারে 'টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ' প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি ভাসানচরে পুনর্বাসিতদের জন্য প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য দেশটির সহায়তার জন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাদের প্রতি জাপানের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে প্রায় দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ইয়েন এবং প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পূর্ববর্তী সহায়তার শীর্ষে ভাসানচরসহ আয়োজক সম্প্রদায় ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাবাসনের পর তাদের আত্মনির্ভরশীল জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো যথাযথ সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে শিক্ষার সুযোগ প্রদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ, আটকদের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।
তারা মিয়ানমারে একটি সমাধান খুঁজতে আসিয়ান প্রচেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এ বিষয়ে আসিয়ান চেয়ারের সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন।
তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলো মিয়ানমারের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত প্রভাবের সম্মুখীন হওয়ায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল পদক্ষেপের দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের অব্যাহত মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা বর্তমানে জাপানে সরকারি সফরে রয়েছেন এবং ২৬ এপ্রিল একটি শীর্ষ বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে: প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা চায় বাংলাদেশ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নোলিন হাইজারকে রাখাইনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির উন্নয়নে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অন্যান্য সকল অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেন।
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বিশেষ দূতের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ অনুরোধ করেন তিনি।
তিনি বিশেষ করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ে সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত বিভিন্ন রেজুলেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ দূতকে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং আসিয়ান নেতৃত্বসহ সকল বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুযোগ দেয়া হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ওআইসি সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হবে: মোমেন
কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তনসহ রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ প্রেক্ষিতে তিনি বিশেষ দূতকে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সবচেয়ে জরুরি চাহিদা যেমন: খাদ্য, শিক্ষা, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা মেটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করতে কাজ করার আহ্বান জানান।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ নীতির আওতায় জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ যাতে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরত্বারোপ করেন।
তিনি বিশেষ দূতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করেন এবং তাকে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন। বিনিময়ে বিশেষ দূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের পরে মঙ্গলবার বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার এবং তাজিকিস্তান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমানের সঙ্গে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের নৈশভোজে যোগদান করেন।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ২২ থেকে ২৪ মার্চ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট ভুলে যাওয়ার নয়: ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি