হজ
৪১৫ হজযাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে প্রথম ফ্লাইট
চলতি বছরের প্রথম হজ ফ্লাইটে মোট ৪১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাত (২১ মে) ৩টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি (বিজি-৩০০১) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়।
ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেদ্দায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এছাড়াও, বিমানের আরও চারটি ফ্লাইট আজ (রবিবার) দিনের বিভিন্ন সময়ে জেদ্দার উদ্দেশে হজ যাত্রীদের নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করবে।
হজ ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে হজযাত্রীদের বিদায় জানান।
আরও পড়ুন: দোয়া করবেন যেন বাংলাদেশ মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকে: হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
এ সময় বিমান প্রতিমন্ত্রী সম্মানিত হজযাত্রীগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকার জন্য দোয়া কামনা করেন।
এর আগে হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র হজের গুরুত্ব ও ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সুষ্ঠু হজ পরিবহন কার্যক্রম পরিচালনার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লিট আধুনিকায়নের ফলে সক্ষমতা বাড়ায় ২০১৯ সাল থেকে বিমান তাদের নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে হজ পরিবহন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বছরও হজযাত্রী পরিবহনে বিমান তাদের চারটি অত্যাধুনিক ও সুপরিসর বোয়িং-৭৭৭ ইআর এবং একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারসহ মোট পাঁচটি উড়োজাহাজ ব্যবহার করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই ২০১৯ সাল থেকে ‘রোড টু মক্কা ইনেশিয়েটিভ’ এর আওতায় হজযাত্রীগণের সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন ঢাকায় বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সৌদি আরবে পৌঁছার পর তাদের লাগেজও নির্ধারিত আবাসনে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে সম্মানিত হজযাত্রীদের পরিশ্রম, সময় ও কষ্ট লাঘব হয়েছে। হজ যাত্রা হয়েছে সহজ ও আরামদায়ক।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই সফল ও জনবান্ধব কূটনৈতিক উদ্যোগের সম্পূর্ণ সুবিধা যাতে হজযাত্রীগণ পান সেই ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সাল হতে হজের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু ও মনিটরিং বৃদ্ধির কারণে কোনো হজযাত্রীকেই এরপর থেকে এয়ারলাইন্সের টিকিট নিয়ে কোনো প্রকার হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘ইনশাল্লাহ এবারও তারা টিকিট নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যায় পড়বেন না। হজ পরিবহনের সকল বিষয় আমরা সার্বক্ষণিক ও নিবিড় মনিটরিং করছি। সুষ্ঠুভাবে হজ পরিবহন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সম্মানিত হজযাত্রী ও সকল অংশীজনের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৬১ হাজার ১১১ জন হজযাত্রীকে পরিবহন করবে বিমান। বাকিদের পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই নাস।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ( ১৯ মে) হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: হজ কার্যক্রম-২০২৩ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
হজের সাড়ে ৩ হাজার কোটা ফেরত যাবে: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীর কোটা সৌদি আরবে ফেরত যাবে।
তিনি বলেন, কোটা ফেরত দেওয়া হলেও তা আগামী হজে প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে ‘ই-হজ মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘হজ ও ওমরাহ সহয়িকা প্রকাশনা’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: চলতি মাসেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজের নিবন্ধন শুরু হয়। এরপর আট দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময়। এর মধ্যেও কোটা পূরণ হয়নি।
শেষে নবম দফায় মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) নিবন্ধনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। এরপরও কোটা পূরণ হয়নি।
মোট এক লাখ ২০ হাজার ৪৯১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। কোটা পূরণে এখনো ছয় হাজার ৭০৭ জন বাকি। তবে হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে সাড়ে তিন হাজারের কোটা খালি থাকবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
কোটা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। কোটা যতটুকু খালি আছে ততটুকু সৌদি আরবে ফেরত যাবে। এটা আর পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, এবার সাড়ে তিন হাজারের মতো হজযাত্রীর কোটা খালি থাকছে, সেটি সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: হজ প্যাকেজের খরচ কমাবে সরকার: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, আমরা গত বছর দুই হাজার ৪১৫ জনের কোটা সৌদি সরকাররের কাছে চেয়ে নিয়েছিলাম। দুই-তিন হাজার এটা কোনো বিষয় নয়। হজের পরে আপনারা প্রমাণ পাবেন সারাবিশ্বের অবস্থা কী হয়, আর আমাদের কী অবস্থা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নত হজ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। হজের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, হজ যাত্রীদের টিকা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, আবাসন ব্যবস্থার তথ্যাদি, লাগেজ ব্যবস্থাপনা, হারানো হজযাত্রী খুঁজে পাওয়াসহ যাবতীয় সেবা কার্যক্রমে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।
এছাড়া হজ এজেন্সিগুলো প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হজযাত্রী এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত অংশীজনদের জন্য হজ পালনসহ ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ই-হজ মোবাইল অ্যাপ এবং হজ ও ওমরাহ সহায়িকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটি স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি চমৎকার উদ্যোগ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ই-হজ মোবাইল অ্যাপটি আজকে পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হলো। প্রাথমিকভাবে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাক নিবন্ধন রিফান্ড আবেদন এই সিস্টেমের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাশাপাশি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্য এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে হজযাত্রীরা এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে ভাউচার তৈরি করতে পারবেন।
আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে অনলাইনে প্রাক নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আর্থিক লেনদেন নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বর্তমানে ই-হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সেবাও পর্যায়ক্রমে মোবাইল অ্যাপটিতে সংযুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুন: মহানবীর শিক্ষা ও আদর্শ মুসলিম উম্মাহকে উদার ও মানবিক হতে শিক্ষা দেয়: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
বিশেষ অনুরোধে ১ দিনের জন্য হজ রেজিস্ট্রেশন সার্ভার খুলেছে সরকার
হজযাত্রী ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) বিশেষ অনুরোধে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ নিবন্ধনের জন্য একদিনের জন্য সার্ভার খুলেছে।
যারা এই বছর হজে যাওয়ার জন্য তাদের নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা এই সুযোগ নিতে পারবেন।
গত ২০ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের ক্রমিক নম্বর আজকের জন্য খোলা হয়েছে এবং উভয় ব্যবস্থাপনাই হজযাত্রীদের জন্য একটি নতুন প্রাক-নিবন্ধন সুবিধা তৈরি করার সুযোগ পেয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন কোটা পূরণ হলে সার্ভারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এটি শেষ সময় হবে এবং নিবন্ধনের জন্য কোন এক্সটেনশন হবে না।
গত ৩০ মার্চ, সরকার নিবন্ধন কোটা পূরণের লক্ষ্যে হজের নিবন্ধনের সময়সীমা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
৯ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে হজ নিয়ে একটি চুক্তি সই করে সরকার।
আরও পড়ুন: হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত
চুক্তি অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন।
এর মধ্যে ৯ হাজার ৯৩৫ এবং ১০ লাখ ৮ হাজার ৩৫১ জন হজযাত্রী ইতোমধ্যেই যথাক্রমে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন।
এ বছর ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি হজযাত্রী জেদ্দা বিমানবন্দর দিয়ে যাবেন এবং বাকি ৩০ শতাংশ মদিনা বিমানবন্দর দিয়ে যাবেন।
এদিকে, সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ইচ্ছুক হজযাত্রীদের জন্য একটি সার্ভিস চার্জ কমানোয় সরকার সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমিয়েছে।
১১ হাজার ৭২৫ টাকা বাদ দিয়ে এ বছর হজ করতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারীদের প্রত্যেককে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা দিতে হবে।
এছাড়া যারা প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় যাবেন তাদের প্রত্যেককে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা বাদ দিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাড়ল
হজ প্যাকেজের খরচ কমল ১১,৭২৫ টাকা
হজ প্যাকেজ ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মুদ্রার বিনিময় হারকে দায়ী করছে সরকার
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার ও সৌদি রিয়ালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হজ প্যাকেজ ফি বাড়াতে হয়েছে সরকারকে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকার ঘোষণা করেছে যে এই বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ফি হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা- যা আগের তুলনায় অভূতপূর্ব ৩০ শতাংশ লাফিয়ে বেড়েছে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) আয়োজিত ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে হজ ব্যবস্থাপনার কোনো খরচ বাড়াইনি। সৌদি রিয়াল ও মার্কিন ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমাদের ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে।
২০২২ সালে সৌদি রিয়াল-এর দাম ছিল মাত্র ২১ টাকা যেখানে এখন এটি প্রতি সৌদি রিয়াল ২৯ টাকা।
মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের তীর্থযাত্রীদের ‘ডি’ ক্যাটাগরির প্যাকেজের আওতায় পাঠিয়ে খরচ কমাতে পারি। কিন্তু হজযাত্রীরা সেই বিভাগের অধীনে দেওয়া পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সন্তুষ্ট হবেন না।’
আরও পড়ুন: হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত
ফরিদুল হক খান উচ্চ ফি নিয়ে হজযাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আগামী বছরের হজযাত্রার জন্য সময়মতো একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, যাতে হজ ফি ও বিমান ভাড়া একটি যৌক্তিক পদ্ধতিতে স্থির করা যেতে পারে।
হজ এজেন্সিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন হাব-এর সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত হজ প্যাকেজ ফি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন এবং হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবের জন্য প্যাকেজ থেকে উচ্চতর খরচ বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরআরএফ সভাপতি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম, মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার ও আরআরএফের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন: হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত খরচ কেন জনস্বার্থ পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট
হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাড়ল
হজযাত্রীদের বিশেষ অনুরোধে হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে সোমবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এতে আরও বলা হয়, নিবন্ধন কোটা পূরণ হলে হজ নিবন্ধনের সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে ৯ জানুয়ারি হজ নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন।
এ বছর ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি হজযাত্রী জেদ্দা বিমানবন্দর দিয়ে যাবেন এবং বাকি ৩০ শতাংশ মদিনা বিমানবন্দর দিয়ে যাবেন।
এদিকে, সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ইচ্ছুক হজযাত্রীদের জন্য একটি সার্ভিস চার্জ কমানোয় সরকার সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমিয়েছে।
১১ হাজার ৭২৫ টাকা বাদ দিয়ে এ বছর হজ করতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারীদের প্রত্যেককে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা দিতে হবে।
এছাড়া যারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন তাদের প্রত্যেককে টাকা বাদ দিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা দিতে হবে।
হজ প্যাকেজের খরচ কমাবে সরকার: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
হজ প্যাকেজের ডি ও সি ক্যাটাগরিতে খরচ কমানো হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
তিনি বলেছেন, ‘সৌদি সরকারকে অনুরোধ করে করে হজের খরচ কিছুটা কমানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেয়া হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে আন্তধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সংলাপে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও মতাদর্শের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
তিনি বলেন, সৌদি সরকার আগের তুলনায় হজযাত্রীদের জন্য কিছু নতুন সুবিধা যোগ করায় প্রতি হজযাত্রীর জন্য প্রায় এক লাখ টাকা খরচ বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: এবছর আর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই: বিমানের এমডি
২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রতিটি হজযাত্রীর জন্য ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি।
বাংলাদেশ থেকে হজের ব্যয় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।
এর মধ্যে প্রতিটি যাত্রীর জন্য বিমান ভাড়া হিসেবে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৪ মার্চ হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলেন সরকার নির্ধারিত প্যাকেজের খরচে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজ করবে।
এতে প্রশ্ন করা হয়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকার কেন হজের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে না?
চলতি বছরের হজ প্যাকেজ সংশোধন নিয়ে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর নির্দেশ সরকারের
গত ১৫ মার্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
গত ১৭ মার্চ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিমানের বিমান ভাড়া যৌক্তিকভাবে কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়।
গত ১৯ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, এ বছর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর কোনও সুযোগ নেই।
এবছর আর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই: বিমানের এমডি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও শফিউল আজিম বলেছেন, আসন্ন ২০২৩ সালের হজ ফ্লাইটের বিমানভাড়া আর কমানোর সুযোগ নেই।
রবিবার বিকালে বিমানের কুর্মিটোলার বলাকা কার্যালয়ে হজ ভাড়ার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
এসময় বিমানের এমডি বলেন, আমরা তিনমাস ধরে হজের বিমান ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রথম প্রস্তাব ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৩৩৮ টাকা। পরে এটিকে কমিয়ে প্রায় এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাহী কমিটি এই ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এবার ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ট্যাক্স বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি। ভাড়া বৃদ্ধিতে আমাদের কোনও হাত নেই।
'হজের বিমান ভাড়া কমছে কি না'- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হজের যে ভাড়া ধরা হয়েছে এটা একদম সর্বনিম্ন ও সর্বশেষ। আমরা যতটুকু সম্ভব ততটুকু কমিয়েছি। এর চেয়ে কম আর করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, 'হজ ফ্লাইটে যে বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে সেটি একটি আদর্শ বিমানভাড়া।’
বিমানের এমডি বলেন, 'হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সেখানে বিমান একটি মাত্র খাত। আমরা সর্বনিম্ন দিয়েছি। এরপরে আমাদের আর কিছু করার নাই।’
বিমানভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, হজের বিমানভাড়া সাইন্টিফিক উপায়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা নিয়ে অযৌক্তিক, অনুমান নির্ভর, অর্ধসত্য বলার সুযোগ নেই। হজযাত্রীরা আমাদেরও যাত্রী তাদের সেবা দেয়া আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর নির্দেশ সরকারের
বিমানের হজ ফ্লাইট নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি, ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ, পাইলট ও কেবিন ক্রু নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিমানে পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, যার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে (পাইলট সাদিয়া) তিনি বিমানে পাইলট হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাননি। একজন পাইলট নিয়োগের আগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়। তার (সাদিয়া) কাছে পাইলটের লাইসেন্স ছিল। বিমানে তাকে পাইলট হিসেবে বাছাইয়ের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে নানা তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এমডি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান নিয়মিত জনসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। তুরস্কের ভূমিকম্পের সময় টরন্টো থেকে বিনামূল্যে ত্রাণসামগ্রী ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও বিমান শিগগিরই ভারতের চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরুতে ফ্লাইট চালু করবে। হজ ব্যবস্থাপনার পর আগস্টে জাপানের নারিতায় এবং এবছরের শেষে নিউইয়র্ক যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
এবার বিমানের হজ ফ্লাইট ভাড়া প্রায় ৫৮ হাজার টাকার মতো বৃদ্ধি করে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হজের খরচ কমানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি: ধর্ম মন্ত্রণালয়
আজ শেষ হচ্ছে হজের নিবন্ধন
হজের খরচ কমানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি: ধর্ম মন্ত্রণালয়
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, হজ প্যাকেজের দাম কমানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখনও আদালতের আদেশের অনুলিপি পাইনি। যদি নতুন কোনও সিদ্ধান্ত হয়, আমরা পরে আপনাকে জানাব।’
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান প্যাকেজের অধীনে হজের নিবন্ধন আজ শেষ হচ্ছে। ইচ্ছুক হজযাত্রীদের এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে।
রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়ানো হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মতিউল।
১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৫৬৯ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ২৪৬ জন হজে নিবন্ধন করেছেন।
আরও পড়ুন: আজ শেষ হচ্ছে হজের নিবন্ধন
তিনি বলেন, নিবন্ধনের জন্য এখনও ২৫ হাজার ৪৮০টি খালি কোটা রয়েছে।
বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে হজ প্যাকেজ খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
চলতি বছর হজের উচ্চ ব্যয় নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা শুনে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মঙ্গলবার আদালত প্রশ্ন তোলেন যে সরকার নির্ধারিত প্যাকেজের খরচে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজ করবে।
এতে প্রশ্ন করা হয়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকার কেন হজের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে না?
এ বছর সরকারের দেয়া হজ প্যাকেজ সংশোধন নিয়ে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি স্মারকলিপিতে ২০২৩ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
প্যাকেজ অনুসারে, একজন ব্যক্তিকে এই বছর হজ করতে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা খরচ করতে হবে; ২০২২ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের
বেসরকারি হজ প্যাকেজে ন্যূনতম খরচ ৬.৭২ লাখ টাকা: হাব
আজ শেষ হচ্ছে হজের নিবন্ধন
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেছেন, আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে হজের নিবন্ধন। এই সময়ের মধ্যে হজযাত্রীদের টাকা জমা দিতে হবে এবং ব্যাংকে নিবন্ধন করতে হবে।
তিনি বলেন, নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া ১৫ মার্চ দুপুর পর্যন্ত হজ্জের নিবন্ধন হয়েছে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৫৬৯ জন।
আরও পড়ুন: সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান
তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ২৪৬ জন। কোটা অনুযায়ী এখনও বাকি আছে ২৫ হাজার ৪৮০ জন।
তিনি বলেন, হজের প্যাকেজ কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আদালতের নির্দেশনার কোনো আর্জির কপি আমরা পাইনি এখনও। পরবর্তীতে যদি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয় সেটা তখন জানাতে পারবো।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হজ প্যাকেজে ন্যূনতম খরচ ৬.৭২ লাখ টাকা: হাব
সাইকেলে হজযাত্রায় বেনাপোল হয়ে ভারত গেলেন থাই নাগরিক সালাম
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় খরচ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজ উপলক্ষে প্যাকেজ প্রস্তুত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আজ হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন খাতের ব্যয় পর্যালোচনা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মিনার তাঁবুর সি-ক্যাটাগরির মূল্য অনুসারে সরকারি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিনার তাবুর অবস্থান সংক্রান্ত ক্যাটাগরি গ্রহণের ভিত্তিতে বেসরকারি এজেন্সিগুলো সরকারি প্যাকেজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্ব-স্ব হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। তাবুর অবস্থান ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজের ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে।’
গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর 'সাধারণ প্যাকেজ' এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। বেসরকারি হজ প্যাকেজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা।
গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর 'সাধারণ প্যাকেজ' এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
চলতি বছর হজ পালনে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় হজচুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
হজচুক্তি অনুযায়ী এ বছর আগের মতোই এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞাও উঠে গেছে।
এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘রুট টু মক্কা চুক্তি’ অনুযায়ী ওই বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছর থেকে এবার হজ প্যাকেজের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর রিয়ালের মূল্য ছিল ২১ টাকা, এখন নেই রিয়ালের মূল্য ৩০ টাকা। এক লাখ টাকার বেশি এখানেই চলে আসে। আনুষঙ্গিক ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। বিভিন্ন খাতে সমন্বয় করে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারির মধ্যেই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
এবার বিমান ভাড়া কত জানতে চাইলে ফরিদুল খান বলেন, ‘এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। বিমান ভাড়া কেন বেড়েছে তা আপনাদের বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান ভাড়া বেড়েছে। বিমান ভাড়া নিয়ে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনদিন বসেছি। বর্তমান সময় আমাদের অনুকূলে না থাকার কারণে বিমান ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।’
গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার।
আগের মতো তিনটি বিমান সংস্থা (বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও নাস এয়ার) এবারও হজযাত্রীদের পরিবহন করবে বলেও জানান ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
এবার একটি প্যাকেজ কেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার একটি প্যাকেজই আমাদের থাকবে। এটার বিষয়ে আর অন্য কোন ব্যাখ্যা নেই।’
বেসরকারিভাবে মিনায় ডি-ক্যাটাগরি অনুসারে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬০ টাকার মতো পড়বে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মূলত আমরা ব্যয়ের খাত দিয়ে দিয়েছি। হাব (হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এটা নির্ধারণ করবে। সি-ক্যাটাগরি নিয়েও তারা প্যাকেজ নির্ধারণ করতে পারবে। আমরা তাদের গাইড লাইন দিয়ে দিয়েছি।’
হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বেসরকারি হজ প্যাকেজ আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করা হবে।’
করোনাভাইরাস মহামারির আগে ২০১৯ সালে স্বাভাবিক হজ হয়েছে। তখন বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন মানুষ হজ পালন করেন। ২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে হজ সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়, সেখানে বাংলাদেশিদের হজযাত্রীর কোটা ১০ হাজার বৃদ্ধি করা হয়। ২০২০ সালে এক লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশি হজে যেতে পারতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ পালন করতে পারেনি। ২০২১ সালেও বিদেশিদের জন্য হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
করোনা মহামারি কমে এলে গত বছর (২০২২) বিভিন্ন দেশের কোটা অর্ধেক করে হজ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার মুসলমান হজ পালন করেন। করোনা মহামারির কারণে গত বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
আরও পড়ুন: সৌদি হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর বৈঠক