খেলাপি ঋণ
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১ দফা রোডম্যাপ
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে এবং ব্যাংক কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিত করতে ১১ দফা রোডম্যাপ ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাসের ইউএনবিকে বলেন, রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় ব্যাংকগুলোতে করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই রোডম্যাপ অনুমোদন করা হয়েছে এবং খেলাপি ঋণ কমানোর একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাবে পরিণত করার রোডম্যাপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
নাসের বলেন, ঋণখেলাপিরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। যেমন- নতুন জমি, বাড়ি, গাড়ি কেনা এমনকি নতুন ব্যবসা খোলার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে।
নাসের বলেন, ‘সামগ্রিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অনুপাত যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ কমানো এবং জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে বেনামী ঋণ বিতরণ ও সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আরও পড়ুন: রোডম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশকে শ্রম অধিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে: ইইউ
রাইট অব (অবলোপন) ঋণ ৩ বছর থেকে ২ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে খেলাপি হওয়ার আগে শতভাগ প্রভিশন রাখার নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ৪ হাজার ৩৩০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কমে যাবে।
তিনি বলেন, রাইট অব ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ে একটি ইউনিট গঠন করতে হবে।
ঋণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্ট্রেসড অ্যাসেট (খেলাপি ঋণ) আলাদা ব্যালেন্স শিটে দেখাতে হয়।
আরও পড়ুন: ক্লাসরুমের জন্য নতুন এআই রোডম্যাপ প্রকাশ করল ইউনেস্কো
ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১.৩১ লাখ কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ প্রায় ১০ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বেড়ে ১ কোটি ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, খেলাপি ঋণ তিন মাস আগের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা চ্যালেঞ্জিং এবং চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।।
তিনি বলেনম ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, যখন দুর্বল ব্যবসার কারণে ব্যবসায়ীকেরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা থেকে বিরত ছিল।
আরও পড়ুন: ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
মহামারি চলাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের নিয়মিত পরিশোধের ওপর একটি স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছিল, যা বিপুল সংখ্যক ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি হতে সাহায্য করেছিল।
স্থগিতের সুবিধা প্রত্যাহারের পর, খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত বছরের ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২০ লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, একদল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে কিছু সংগঠিত গোষ্ঠী তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে, যা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
আসন্ন বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান
খেলাপি ঋণ এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায় সরকার: আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার ‘অর্থনীতির শত্রু’ হিসেবে খ্যাত খেলাপি ঋণ-এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায়। কারণ ঋণ খেলাপি মামলাজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
শনিবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ/সমপর্যায়ের বিচারকদের জন্য আয়োজিত ১৪৭তম রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার অভাবেই মামলাজট: আইনমন্ত্রী
তিনি বলন, গত প্রায় সাড়ে ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন ঘটেছে। এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে আমাদের অবশ্যই ঋণ খেলাপি মামলাজট খুলতে হবে এবং এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ বাড়ার লাগাম টানতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধন করে আদালতের বাইরে এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মামলার পক্ষগণের অনাগ্রহের কারণে এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না। ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে-এডিআর পদ্ধতিকে আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপন রোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামাজিক অপরাধ, রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা ও নাগরিক জীবনের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো নিবিড়ভাবে জড়িত। তাছাড়া ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ব্যতিত রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায় না।
মামলাজটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, দেশের আদালতগুলোতে দায়েরকৃত সিভিল মামলার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি সম্পর্কিত। অনেক ফৌজদারি মামলার মূলেও রয়েছে ভূমি বিরোধ। এসব মামলার বিচার পাওয়ার জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীকে আদালতে ধরা দিতে হয়। এতে যে কেবল তাদের সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে তা নয়, মূল্যবান কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে। যেসময়ে তাদের উৎপাদনের কাজে থাকার কথা, সেসময় আদালতের বারান্দায় ঘুরেঘুরে বিচার পাওয়ার প্রহর গুণতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আ.লীগ জনগণের দল, আমাদের শক্তি জনগণের শক্তি: আইনমন্ত্রী
তিনি আশা প্রকাশ করেন বিচারকগণ, বিচারকগণ এসব বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিবেন এবং জনগণকে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদান করে তাদের বিচার পাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব করবেন।
প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এমন এক স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গতিশীল বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন-যেখানে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন- বিচারক হিসেবে আপনাদের ওপরই নির্ভর করে। এই নির্ভরতা আপনাদেরকে যেমন দায়িত্বশীল করেছে, তেমনি মর্যাদাবানও করে তুলেছে।
তিনি বলেন, আপনাদের দায়িত্ব পালনে আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি মাত্র। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদের দাপ্তরিক সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধানসহ পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোটাও অপরিহার্য। আর পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। সেকারণে আমরা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে যাচ্ছি।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রণালয় এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: জিয়া মারা না গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি হতেন: আইনমন্ত্রী
খেলাপি ঋণ রেকর্ড এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা: বিবি
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড এক লাখ ২৫ কোটি টাকা।
বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে কিস্তি শিথিল করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মধ্যেও খেলাপি ঋণের পরিমাণে এই রেকর্ড হলো।
বিবির অস্থায়ী তথ্য অনুসারে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা এবং শ্রেণিবদ্ধ ঋণের পরিমাণ মোট এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ ৮.৯৬ শতাংশ ঋণ শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে যা দেশে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৯০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘খেলাপিদের জন্য বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, খেলাপিরা এখন ভাবছে ঋণ না দিলে ভবিষ্যতে আরও ছাড় পাব। এই কারণে, যতদিন অব্যাহতি থাকবে, এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।’
মির্জা আজিজ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমানোর একমাত্র উপায় সুবিধা বন্ধ করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, ‘বাস্তবে, এটি এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার অনেক বেশি। কারণ কিছু তথ্য যোগ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন: ব্যাংকে ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফ’র উদ্বেগ
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
করোনাভাইরাসের প্রভাব বিবেচনা করে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে আরও শিথিলতা এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুস্থ ও নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় টিআইবির ১০ সুপারিশ
দেশে ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে বছরে গড়ে নয় হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ এই সময়কালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।