জাহালম
সাতদিনের মধ্যে জাহালমকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ
ঋণ জালিয়াতির মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর কারাগারে কাটানো টাঙ্গাইলের সেই পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত রেখে ওই ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সোমবার এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে ব্রাক ব্যাংকের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
হাইকোর্ট এক রায়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে সতর্ক করে রায় দেন। গত ৭ আগস্ট এর রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ব্রাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন যার ওপর আজ শুনানি হয়।
আরও পড়ুন: জাহালমের ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত চায় ব্র্যাক ব্যাংক
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত। আদালত একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন এবং তাকে তাৎক্ষণিক কারামুক্তির নির্দেশ দেন। নির্দেশে সেদিন রাতেই জাহালমকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি সম্পন্ন হয়। পরে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট বলেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। আর যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল, সেগুলোর পুনঃতদন্ত করে দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে বলে, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হল ব্র্যাক ব্যাংক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংককে এই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ
জাহালমের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
২ বছর আগে
জাহালমের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
বিনাদোষে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের ৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে দুদককে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন জড়ানো না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে বলা হয়েছিল, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আর টাকা দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।
দুদকের আইনজীবী জানান, ২০২০ সালে ব্র্যাক ব্যাংক এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। এখন তারা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে লিভ টু আপিল করতে পারে। এখন আপিল বিভাগে বিষয়টি বিচারাধীন।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে মোট ৩৩টি মামলা করে দুদক।
দুদক তদন্ত করে জানায়, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক। এরপর দুদকের নবীন অনভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই জরিমানা দিতে বলা হয়। আদালত রায়ে বলেছিলেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের স্থলে জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্যে দেখছি না। দুদকের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে, এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন জড়ানো না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আদালত বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের স্থলে জাহালমকে এনেছেন। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুল পথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে। ওই সময় ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত ঘটনায় ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, জাহালমের মতো আর কোনো নিরীহ লোক যেন ভবিষ্যতে দুদকের মামলায় জেল না খাটে। দুদককে যথাযথভাবে তদন্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বিচারকের উদ্দেশ্যে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না ’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটেন নির্দোষ জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন। পরে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে। পরে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট ও সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার তদন্ত করে দুদক জানায়, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।
আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
২ বছর আগে
নির্দোষ জাহালমের কারাভোগ: ক্ষতিপূরণের রায় ২৯ সেপ্টেম্বর
ঋণ জালিয়াতির মামলায় টাঙ্গাইলের নির্দোষ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়া নিয়ে জারি করা রুলের ওপর আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে।
৪ বছর আগে