করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিলছে না পর্যাপ্ত প্যারাসিটামল
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন পাল্লা দিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সামগ্রীসহ অক্সিজেনের সংকট। কিন্তু সকল সংকট ছাপিয়ে বর্তমানে জেলায় প্যারসিটামলের সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
বিভিন্ন ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ চাইলে বিক্রেতারা তা সরবরাহ করতে অপরগতা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: ভেজাল প্যারাসিটামল: ২৬ বছর পর রায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড
বিক্রেতারা জানান, বাজারে ওষুধের মধ্যে সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন হচ্ছে প্যারাসিটামল। পর্যাপ্ত সরবারাহ না থাকার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ থাকলেও, তেমন পরিচিতি না থাকায় সেগুলোর চাহিদাও কম। তবে সর্বোপরি সকল ধরনের প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট চলছে জেলাতে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. একরামুল্লাহ জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালের জেলা সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার জানান, ওষুধ যখন তাদের হাতে এসে পৌঁছাচ্ছে তারা ওষুধ সেগুলো সরবারাহ করছেন।
আরও পড়ুন: ভারতকে ৪ ট্রাক করোনা প্রতিষেধক ওষুধ ও ইনজেকশন উপহার দিল বাংলাদেশ
বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালের ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিজিওনাল ম্যানেজার জানান, এমনিতেই বর্তমান সময়টাতে ‘ফ্লু’ বেশি হয়, তার ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে প্যারাসিটামল জাতীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সরবারাহ চলছে। এক্ষেত্রে আমাদের পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে।
করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি: দেশে মৃত্যু ও শনাক্ত আরও কমেছে
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমেছে বলে শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা, করোনায় আরও ৫৭ জন মারা গেছেন। এনিয়ে মোট মৃত্যু ১১ হাজার ৪৫০ জনে দাঁড়াল।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৭ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট শনাক্ত ৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৩২ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: করোনা চিকিৎসায় দেশে ৮৩৩৫ বেড ও ৪৫৯ আইসিইউ বেড খালি: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
এর আগে বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন মারা গেছেন এবং ২ হাজার ৩৪১ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১০.৩৪ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৫ জন। মোট সুস্থ ৬ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬ জন। সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৫১ শতাংশ।
চীনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন
সরকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য চীনের তৈরি সিনোফার্ম ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) এক সভায় চিনের তৈরি ভ্যাকসিনটি জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োগের জন্য অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান ডিজিডিএ মহাপরিচালক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: করোনা: এবার চীনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিল সরকার
মাহবুবুর রহমান বলেন, সিনোফার্মের টিকাটি চীনসহ বিভিন্ন দেশে অনুমোদিত। এই টিকার সব ডাটা আমরা পেয়েছি। সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এগুলো আমাদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের দিয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের একটা পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি আছে। এই কমিটি ১২ সদস্য বিশিষ্ট। তারা এই টিকাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছে। আমরা দেখতে পেয়েছি কার্যকরী ক্ষমতা অনেক ভালো।
ভারত থেকে আনা অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজের স্বল্পতা দেখা দেয়ায় গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে করোনার প্রথম ডোজের টিকা দেয়া কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সরকার। ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (জেএইচইউ) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ২৪৮ জনে।
এছাড়া, ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭১ জনে।
চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: করোনায় বিশ্বে আক্রান্ত ১৫ কোটি ছাড়াল
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল আক্রান্তে তৃতীয় ও মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ১৮৬ জনের।
পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে করোনায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় এবং মৃত্যু নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৮৩২ জন।
মেক্সিকো মৃত্যুর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মারা গেছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৭ জন।
লকডাউন বাড়ছে: প্রতিমন্ত্রী
সরকার আগামী ৫ মে পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও কঠোর লকডাউন আসতে পারে: কাদের
এই বিষয়ে মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ওই লকডাউনের মেয়াদ শেষ হয় ২১ এপ্রিল। পরে ২২ এপ্রিল থেকে ফের সপ্তহব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যেই গত ২৩ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ এক প্রজ্ঞাপনে শপিংমল ও দোকান খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যা রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
শীঘ্রই দেশে ‘করোনাভাইরাস ধ্বংসকারী’ নাকের স্প্রে বাজার আসছে
মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যখন একটি প্রতিযোগিতা চলছে তখনই এই ভাইরাসকে ধ্বংস করার সক্ষমতা আছে এমন একটি নাকের স্প্রে তৈরি করার দাবি করছে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টস-বিআরআইসিএম।
এটির নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রে’।
আরও পড়ুন: করোনাকালে অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরামর্শ ‘সহজ হেলথে’
বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক ড. মালা খান ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস ধ্বংস করার সক্ষমতা আছে এমন একটি নাকের স্প্রে তৈরি করার কাজ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, এই স্প্রে তৈরি করার বিষয়ে আমরা এখন বিস্তারিত জানাতে চাই না। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে আসতে চাচ্ছি।
মালা খান বলেন, নাকের এই স্প্রে গত ২৪ মার্চে বিএমআরসি থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছি আমরা। এখন ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। খুব শিগগিরই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের কাজ শেষ করব আমরা।
নাকের এই স্প্রে কবে নাগাদ বাজারে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা একদম প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে আসতে চাই। এখন বিস্তারিত বলতে চাই না। কবে বাজারে আসবে সেই তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে খুব শিগগিরই বাজারে আসবে।’
মহাপরিচালক বলেন, করোনাকালীন সময়ে মানুষের কথা চিন্তা করে করোনা রোধে কি করা যায় তা আমরা অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে আসছি। আমরা আশা করছি, এই স্প্রেটি মানুষের অনেক কাজে আসবে।
আরও পড়ুন: করোনার ১ম ডোজের টিকাদান সোমবার থেকে স্থগিত
স্প্রেটির মূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি তৈরি করতে বা উৎপাদন খরচ কত টাকা হয় তা বুঝে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে।
‘বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রে বাজারজাতকরণে কোন মুনাফা করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। মানুষের উপকারে আসবে চিন্তা করেই এটি তৈরি করা হচ্ছে,’ বলেন মহাপরিচালক।
কি পরিমাণ স্প্রে উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আমরা প্রোডাকশন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
বিআরআইসিএম থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাস নাক, কান, গহ্বর ও শ্বাসনালীতে অবস্থান করে। যদি এই স্প্রেটি নাক, কান ও গহ্বরে দেয়া হয় তাহলে করোনাভাইরাস ধ্বংস করার সক্ষমতা রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এই স্প্রে ব্যবহার করে সুফল পাবেন।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি
দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবারও বেড়েছে বলে রবিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এক দিনে মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০১ জন মারা গেছেন। এনিয়ে মোট মৃত্যু ১১ হাজার ৫৩ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: করোনায় একদিনে আবারও শতাধিক মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ২৯২২
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯২২ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট শনাক্ত ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ জনে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বাংলাদেশ বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। আগামী জুন মাসের আগে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দল বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ।
বাংলাদেশ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দলটি গাণিতিক মডেলিং ব্যবহার করে করোনার পূর্বাভাস জানার চেষ্টা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে আগামী মে মাসের শেষ নাগাদ করোনা পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থাতেই থাকবে। তবে জুন মাস থেকে পরিস্থিতি উন্নতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি : ফের চালু হল ‘সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল’
তবে স্থানীয় কিছু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার লকডাউন কার্যকর করার আগেই অনেক মানুষ রাজধানী ছেড়ে নিজ জেলায় চলে যায়। এর ফলে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও এখন দ্রুত করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
গাজীপুরে কঠোর লকডাউনের শুরুটাই ‘ঢিলেঢালা’
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ১৪-২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। যদিও লকডাউনের প্রথমদিন আজ বুধবার পূর্বঘোষিত সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনে গাজীপুরের পরিস্থিতি ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা।
এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাস, মিনিবাস চলাচল না করলেও, রাস্তায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক ও হালকা যানবাহন চলতে দেখা যায়। লকডাউন বাস্তবায়নে মহাসড়কগুলোতে কাজ করছে পুলিশ। তবে মহাসড়ক ছাড়া সিটি করপোরেশন ও জেলার অন্তর্গত অন্য সব রাস্তায় হালকা যানবাহন চলাচল করছে। আর এসব যানবাহনের যাত্রীসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: খুলনায় চলছে কঠোর লকডাউন
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের প্রতিবন্ধকতার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষেরা ভেঙে ভেঙে দূরদূরান্তে যাচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক সহ নানা ধরনের যানবাহন চড়ে।
মূল শহরের প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অন্যান্য এলাকাগুলোতে নানা ধরনের দোকানপাট খোলা ছিল বলে জানান গাজীপুর প্রতিনিধি। তবে এসকল দোকানগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণত দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: সিলেটে কঠোর লকডাউন পালিত হচ্ছে
নববর্ষের প্রথম দিনে অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকরা পাঁয়ে হেটে, রিকশা ও হালকা যানবাহনে চড়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিক আনা নেয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকেই নগরীরর চান্দনা চৌরাস্তায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক উপেক্ষা করে খেটে খাওয়া মানুষের জটলা দেখা যায়।
হতাশার সাথে তারা জানান, এভাবে কর্মহীন অবস্থায় থাকলে তাদের পরিবার-পরিজন জীবন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে
লকডাউন বাস্তবায়ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু কিছু পয়েন্টে কড়াকড়িভাবে দায়িত্ব পালন করলেও অনেক স্থানেই তাদের দেখা মেলেনি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে এলাকাগুলোতে মানুষের যত্রতত্র ঘোরাফেরা চলছেই।
করোনাভাইরাস: দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৬০২৮
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৯ জন মারা গেছেন বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনানো হয়েছে।
এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৯১ জনে।
আরও পড়ুন: করোনা: চট্টগ্রামে আরও ৫ জনের মৃত্যু
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৬ হাজার ২৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৮৫৩ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬ জন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ হাজার ৯৫৫টি।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৮.২৯ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত ১৩.৭৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৪২ শতাংশ। সুস্থতারহার ৮৩.৯৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: 'জনসন অ্যান্ড জনসন'-র করোনাভাইরাসের টিকা কিনবে না অস্ট্রেলিয়া
করোনার সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
চলমান টিকাদান কার্যক্রম
সরকার ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ হতে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ব্যবহার করছে, যা ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট হতে সংগ্রহ করা হয়।
বিশ্ব পরিস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বর্তমানে বিশ্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ লাখ ৪৪ হাজার ৭১৪ জন।
এছাড়া সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫৯ জন।
করোনার আঘাতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ লাখ ৬২ হাজার ৫২১ জন মানুষ।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: বিশ্বে মৃত্যু ২৯ লাখ ৪৪ হাজার ছাড়াল
গত জানুয়ারি মাস থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনার নতুন ঢেউ মোকাবিলা করছে। দেশটিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা।
দেশটি বিশ্বে করোনা আক্রান্তে তৃতীয় ও মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ৩৫ লাখ ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৭ জনের।
অপরদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত করোনায় আক্রান্তে দ্বিতীয় অবস্থান উঠে এসেছে। দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৭১৭ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ জন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে সরকার
করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনাগুলো কার্যকর করার লক্ষ্যে কঠোর অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিযেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ শনাক্ত এবং এর আগে টানা কয়েকদিন সংক্রমণ ৫ হাজারের বেশি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে জানিয়েছন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে অফিস কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪৬৯ শনাক্ত, মৃত্যু ৫৯
তিনি বলেন, আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা বুধবার থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে অন্যান্য সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি ডিউটি রোস্টার করে দিবে। অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তিনদিন অফিসে এসে কাজ করবেন এবং দুই দিন বাসায় থেকে কাজ করবেন। বাকিরাও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই নিয়মে কাজ করবেন।
গর্ভবতী নারী, ৫৫ বছরের বেশি বয়স, অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন তারা বাসা থেকে অনলাইনে কাজ করবেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এছাড়াও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং অফিসগুলোতে ৫০ শতাংশ কর্মী অফিসে এসে এবং বাকিরা অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়েও আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি। অপ্রয়োজনে কেউ যাতে রাত ১০টার পর বাইরে না যায়, সেটি আমরা নিশ্চিত করব। এ বিষয়ে আমাদের পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা এ সিদ্ধান্তগুলো পালন করব এবং ১২ এপ্রিলের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা জারির পর করোনার সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারের দেয়া নির্দেশনাগুলো জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করেছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ইউএনবিকে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা: সিলেটে ১১টি বিধি-নিষেধ জারি করল জেলা প্রশাসন
এছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্য নির্দেশনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জন্য প্রশাসন সব কিছু করবে।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোন হাসপাতালেই রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। এজন্য করোনা বৃদ্ধি ঠেকাতে এখনই দলমত নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ১৮ দফা নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নসহ সকল স্থানে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে না পারলে আগামীতে এই প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ করতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: করোনা: অনির্দিষ্টকালের জন্য মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ
পরিবহনে বিধিনিষেধ
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইউএনবিকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে বুধবার থেকেই ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘৫০ শতাংশ টিকিটের মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হবে অনলাইনে এবং বাকি অর্ধেক বিক্রি হবে স্টেশন থেকে। আমরা এর আগেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন পরিচালনা করেছি। এবারও সরকারের নির্দেশনা শতভাগ নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছি । স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আমরা কোন যাত্রী পরিহন করব না । প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করার দরকার তাই করব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবস খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন শুরু করেছি। প্রতিটি বাস স্প্রে করা হচ্ছে ও পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা কার্যকরের লক্ষ্যে বুধবার থেকে বিআরটিএ সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। যদি কোন বাস নির্দেশ না মানে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌ যান চলাচল করবে। নৌযানেও ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিহন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা লঞ্চে উঠবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ ‘র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাজ্য ছাড়া পুরো ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের ১২টি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১২টি দেশ হচ্ছে- আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, উরুগুয়ে।
তিনি বলেন, ৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব এয়ারলাইন্স এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে, তারা নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে কেবল ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার আনতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে ওই যাত্রীদের সেসব দেশে ট্রানজিটের সময় অবশ্যই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের মধ্যে থাকতে হবে।
মফিদুর রহমান বলেন, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা বেবিচক নির্ধারিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার অথবা নির্ধারিত হোটেলে থাকবেন। অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে আগত ও বাংলাদেশ ত্যাগ করবে, প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনার নেগেটিভ সনদপত্র সাথে রাখতে হবে (যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হবে)।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর ও ফ্লাইটে সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া যেসব বিমানের প্রতি সারিতে সিট তিনটি করে, সেই ফ্লাইটের মাঝের সিটের যাত্রীকে মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ফেসশিল্ড পরতে হবে।
তিনি জানান, সরকারের দেয়া সকল নির্দেশনা ৩০ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সব পর্যটন জাহাজ চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং কক্সবাজার ও সিলেটের সকল পর্যটন স্পট বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে, নিয়মিত যাত্রী এবং প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস বহনকারী জাহাজগুলির চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) সপ্তাহের শেষ দিকে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সকল নির্বাচন স্থগিত করেছে। জাতীয় ক্রিকেট লীগও মাঝপথে স্থগিত করা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
১ এপ্রিল থেকে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সার্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।’
আরও পড়ুন: হাটহাজারীর পরিস্থিতি থমথমে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
মো. রুহুল আমিন জানান, এ নির্দেশনার আলোকে বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে। সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে মঙ্গলবার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) তৃতীয় খারাপ অবস্থানে উঠে এসেছে বিশ্বের অন্যতম দূষিত বাতাসের শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ল
মহামারি করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (কওমি ছাড়া) চলমান ছুটি আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।