ড. মুহাম্মদ ইউনূস
নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতায় বসেছি: ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পরিবর্তনের দাবি ব্যক্তিগতভাবে তার পক্ষ থেকে আসেনি, এটি জনগণের পক্ষ থেকে এসেছে এবং তিনি কেবল তাদের নির্বাচিত পথ ধরে পথপ্রদর্শন করছেন।
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা বারনামাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, 'এটা আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তারা যেভাবে চলতে চান, আমি শুধু তাদের সেভাবে চলতে সহায়তা করছি।'
গত ১১-১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সফরের শেষ দিকে বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি দেন প্রধান উপদেষ্টা। সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারাম।
ড. ইউনূস বলেন, 'আমি নিজের কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিই না। আমি অপেক্ষা করি এবং মানুষের ইচ্ছা কী তা দেখার জন্য অপেক্ষা করি। তারপর তা বাস্তবায়ন করি।'
অধ্যাপক ইউনূস নিজের বর্তমান ভূমিকা একজন নেতা নয় বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একজন অভিভাবক হিসেবেই তুলে ধরেন।
তবে, নিজের সামনে থাকা বিশাল চ্যালেঞ্জগুলোও স্বীকার করেন তিনি।
পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশে অসুবিধা অনেক। অনেকেই এটাকে ব্যাহত করতে চায়।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক শক্তিগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।'
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, 'বাংলাদেশে গত দেড় দশকে অনেকে নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের বড় অংশ আগে কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। কেউ ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ ১৫ বছর ধরে।'
তিনি বলেন, 'একবার ভাবুন, আপনার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আপনি ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু আপনি সেই সুযোগ কখনো পাননি। এর কারণ হলো— কখনো সুষ্ঠু নির্বাচনই হয়নি। এখন তারা ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন।'
১১০ দিন আগে
জন্মদিনে খালেদা জিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার ফুলেল শুভেচ্ছা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বিকালে প্রধান উপদেষ্টা ম্যাডামের (খালেদা) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তার কর্মকর্তারা এটা গুলশানের বাসভবনে নিয়ে এসেছেন।’
এদিন বিকাল ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারের কাছে ফুলের তোড়া হস্তান্তর করেন ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান।
পড়ুন: খালেদা জিয়াকে কারাগারে নির্যাতন: জড়িতদের বিচারের দাবি মির্জা আব্বাসের
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস চীনা রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠায়।
খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন।
বিএনপি তার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং গুলশান অফিসে আরেকটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন মসজিদে ও এতিমখানা-মাদ্রাসায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দলের চেয়ারপার্সনের আরোগ্য কামনায় খালেদার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনায় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে শহীদদের শান্তির জন্য মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজিত হয়েছে।
১১১ দিন আগে
৫জি চালু ও ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগে আক্সিয়াটাকে ড. ইউনূসের আহ্বান
মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি আক্সিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু করতে এবং দেশের ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ‘বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুযোগ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট অপরিহার্য এবং বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী করতে হবে।
তিনি জানান, শীর্ষস্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের জন্য ব্যবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধিতে অন্তর্বর্তী সরকার লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজতর করছে।
রবি সেলুলার অপারেটরের প্রধান শেয়ারহোল্ডার ও আক্সিয়াটা গ্রুপের সিইও বিবেক সুদ জানান, রবি গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ৫জি সেবা চালুর জন্য আগ্রহী। তবে পূর্ণ ৫জি বাস্তবায়নের জন্য দেশের ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ জরুরি।
তিনি ব্যয়বহুল স্পেকট্রাম ফি ও জটিল লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াকে বিদেশি বিনিয়োগে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া আক্সিয়াটা ডেটা সেন্টারে যৌথ বিনিয়োগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
পড়ুন: মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেসরকারি খাত ও নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একে অপরকে কাছে আনা এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানে আক্সিয়াটা গ্রুপের চেয়ারম্যান শারিল রিদজা রিদজুয়ান নেতৃত্ব দেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।
সঙ্গে ছিলেন আক্সিয়াটা গ্রুপের প্রধান নিয়ন্ত্রক ফুং চি কিয়ং ও প্রধান ব্যবসা ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা থমাস হুন্ড্ট।
১১৪ দিন আগে
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা আরও প্রশস্ত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার দরজা খোলা রাখার পাশাপাশি তা আরও প্রশস্ত করতে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই ও তিনটি নোট আদান–প্রদানের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অতীতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের শ্রমিকদের আন্তরিকভাবে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই দরজা খোলা থাকবে এবং আরও প্রশস্ত হবে, যাতে আরও বেশি তরুণ এখানে এসে কাজ করতে ও অনেক কিছু শিখতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে অনেক কিছু শিখে দেশে ফিরে নিজ ব্যবসা শুরু করেন, নিজের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যান। এজন্য আমরা মালয়েশিয়ার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, বিশেষত যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক এখানে কাজ করছেন তাঁদের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা তাঁদের আয় দেশে পাঠান, যা তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের জীবনে স্থায়িত্ব এনে দেয়, সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সহায়তা করে এবং ভালো শিক্ষা নিশ্চিত করে।’
‘এরা বহিরাগত কর্মী নয়—তাঁদের কাজ করতে দেওয়া উচিত। তারা এখানে কাজ করতে পেরে খুবই খুশি,’ যোগ করেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মালয়েশিয়ান উদ্যোক্তাদের বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমরা মালয়েশিয়া থেকে বিনিয়োগ চাই। আমাদের আছে মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি, যা আমরা অফার করতে পারি। মালয়েশিয়া চাইলে বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে সারা বিশ্বে বিক্রি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এটাই আমরা চাই—বাংলাদেশে আর্থিক ও বিনিয়োগ–সংক্রান্ত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক, যাতে আমাদের অর্থনীতি টেকসই ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছায়।’
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও বহুপাক্ষিক ইস্যুতেও একযোগে কাজ করার ব্যাপারে কথা হয়েছে; ‘মালয়েশিয়ার জনগণের সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ও অর্থনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে; প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করেছে। এখন আমরা নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।’
তিনি জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যাতে নতুন সরকার গঠিত হয় এবং দেশ স্বাভাবিক পথে চলে। ‘এক্ষেত্রে আমরা মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় সর্বদা ভরসা রাখি,’ যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রফেসর ইউনূসের অবদানকে প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ অগ্রগতি রেখেছেন এবং এখন বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা খাতে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করছেন।’
তিনি আরও জানান, দুই মন্ত্রী—স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ—মাল্টিপল–এন্ট্রি ভিসা সুবিধায় একমত হয়েছেন, যাতে শ্রমিকরা পরিবারের কাছে যেতে ও কাজে নিরাপত্তায় থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, বিশেষত শ্রমিকদের জন্য যারা আটকা পড়েছেন।’
ইতিমধ্যে, গত বছরের অক্টোবরে তাঁর প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বাংলাদেশের শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছিল বলে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
১১৪ দিন আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এগুলো অবমুক্ত করেন তিনি।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবদুন নাসের খান উপস্থিত ছিলেন।
১২১ দিন আগে
জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা: প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। জুলাই শহিদদের আত্মত্যাগই আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, জুলাই শহিদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথচলার প্রেরণা, তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা। আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে দেশজুড়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আজ আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে স্মরণ করছি এমন এক দিনকে, যা এ দেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়—এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।
আরও পড়ুন: হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ এনেছে: প্রধান উপদেষ্টা
এ সময় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
তবে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এ দেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায়—১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এ দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ ১৬ বছর ধরে ক্রমাগত হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফল করেও তারা চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরি ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর তদবিরের বাণিজ্য। যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি, সে চাকরি পায়নি।
সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি ছিল মূলত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটি হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি। এই দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল, যারা আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে ও কাজ করবে। স্বৈরাচারের পক্ষের সঙ্গী হলেই চাকরি মিলবে, কাজ পাওয়া যাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এই ধরনের সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছিল। এ দেশের গরিব মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা একেকজন টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছিল। সীমাহীন দুর্নীতির কবলে পড়ে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
ড. ইউনূস বলেন, এই দেড় যুগে প্রতিটি ন্যায্য দাবি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত ১৬ বছরে যারা সরকারের সমালোচনা করেছে বা নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের গ্রেপ্তার কিংবা গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে নির্বিচারে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষ সবাই একত্রিত হয় এক নতুন দিনের প্রত্যাশায়। সমস্বরে তারা বলে ওঠে—এবার ফ্যাসিবাদকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, তবুও দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা চালায় ফ্যাসিবাদী সরকার। তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য গোপন করতে চেয়েছে, রাতের অন্ধকারে এলাকায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন আহতদের ভর্তি না করা হয়। এর ফলে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়ে গেছে।
ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে’ আমি জাতির সূর্যসন্তান—জুলাই শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিয়েছেন—জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই জাতি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
তিনি বলেন, আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি—আমরা একটি শপথ নিতে এসেছি। শপথ এই যে—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র—একটি রাষ্ট্র, যা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ শহিদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ ও যাবতীয় বিষয়াদির প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহিদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে মোট ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট পরিবারের কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তির পর তাদেরও সঞ্চয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল: শফিকুল আলম
এ ছাড়া আহত ১৩ হাজার ৮০০ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ অর্থ ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং চিকিৎসা ব্যয় বাবদ এ পর্যন্ত ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে সব শ্রেণির আহত ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই শহিদ’ ও আহতদের জন্য আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে জুলাইয়ের মহানায়কদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে—যখন এই দেশকে আমরা একটি সত্যিকারের জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
১২১ দিন আগে
লন্ডন বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন দিতে হবে: মুরাদ
ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বালিথা চেয়ারম্যানবাড়ির সামনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় ইউপি চেয়ারম্যান ও ধামরাই উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমিজুর রহমান চৌধুরী রুমার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক সাবিনা ইয়াসমিন, বিএনপি নেতা বর রহমান, হাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের ইবাদুল হক জাহিদ, ইসমাইল হোসেন সুমন, স্বেচ্ছাসেবকদলের শাহজাহান হোসেন শিপু, যুবদলের এসএম জামান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকার গণতন্ত্র হত্যা করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। গত ১৬ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্বৈরাচারের পতনের পর মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সরকারকে নির্বাচন দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে। লন্ডন বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বসে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
১২৪ দিন আগে
রাজনৈতিক উত্তেজনা: ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দল
দেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের বৈঠকটি প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনায়’ শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয়। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের আলোচনা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার রোডম্যাপ নিয়ে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গ্রহণযোগ্য ও দ্রুত নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আজকের আলোচনায় এটি কীভাবে এবং কত দ্রুত সম্ভব—সেই বিষয়েই কথা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এই বৈঠকের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক এজেন্ডার প্রয়োজন নেই।’
‘বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন হলো—আমরা কীভাবে এগোব এবং কীভাবে যত দ্রুত সম্ভব গণতন্ত্রে ফিরতে পারব।’
বিএনপি নেতা বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ‘এটাই কেন্দ্রীয় বিষয় এবং আমি নিশ্চিত আজকের আলোচনায় তা আসবে।’
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ইচ্ছা নিয়ে প্রকাশিত খবরে দেশ সংকটে পড়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, বিএনপি এই পরিস্থিতিকে সংকট হিসেবে দেখছে না।আরও পড়ুন: আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপি
তিনি বলেন, দেশের এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ—যা একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছি, তা কাটিয়ে উঠতে পারি।
গত ১৬ বছরে জনগণের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে খসরু বলেন, তারা এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিএনপি কি আগের বৈঠকে অসন্তোষের পর এবার সন্তুষ্ট হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘এটা আমাদের সন্তুষ্টির বিষয় নয়। আমরা রাজনীতি করি জনগণের সন্তুষ্টির জন্য। আমরা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাই। জনগণ চায় তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করতে—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি ইঙ্গিত দেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেই হতে পারে। আমরা কেন ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব?
অন্য এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের চলমান সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান হলো গণতান্ত্রিক রূপান্তর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৫ বছর ধরে স্বৈরতন্ত্রের অধীনে ছিল। তাই এখন একমাত্র সমাধান গণতন্ত্রে রূপান্তর। দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।’
গত ৯ মাসের ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে জাতির উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে ড. মঈন বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার গান গাইতে শুরু করেছে—৫ আগস্টের রূপান্তরমূলক ঘটনার পর থেকে।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট ছিল প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন—১৫ বছরের জুলুম ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তির দিন। এটি ছিল গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সূচনা... এই রূপান্তরই বর্তমান অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে, বুঝতে হবে ও গ্রহণ করতে হবে।’
১৯৪ দিন আগে
কারও স্বার্থে ব্যবহৃত হবেন না: পুলিশকে ড. ইউনূস
আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে কারও স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতি সমান আচরণ, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা আপনাদের ও আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
‘কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, সেই ব্যক্তির মাধ্যমে ন্যায়প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। সুতরাং যাতে কারো মাধ্যমে ব্যবহৃত না হন। সত্য ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার ব্রত হিসেবে নির্বাচনে নিজেদের নিয়োজিত করবেন। পুলিশ সদস্য হিসেবে, তার চেয়েও বড় বিষয় এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যতে কখনো যাতে পুলিশকে দলীয় বাহিনী বা অন্যায় কাজে ব্যবহার করা না যায়, সে জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের আগের সময়টা অনেক কঠিন। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, পরাজিত শক্তি যাতে কোনোভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। আমরা একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি।
‘আমরা জানা ছিল না যে, দৈনন্দিনভাবে যে কঠিন অবস্থায় আপনাদেরকে জীবন যাপন করতে হয়, সেটার মাত্রা কত গভীর। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আশা করি, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। কতদূর হয়েছে, তা আবার খোঁজ নেব,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রধান ফল হচ্ছে, আপনাদের বিষয়গুলো আবার আমার কাছে উঠেছে। এটা নিয়ে আবার বসবো, যাতে আপনাদের জন্য একটা সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, যাতে কাজ করতে আপনাদের মধ্যে উৎসাহ আসে। পরিস্থিতি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়।’
স্বৈরাচারী শাসনামলের ১৫ বছরে দেশের পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করায় সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের অবৈধ ও অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জনরোষের মুখে পড়েছিল। অনেক সৎ পুলিশ সদস্যকেও এজন্য মাশুল দিতে হয়েছে।’
‘গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সরকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ নিরসনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা, অংশীজনদের সঙ্গে পুলিশের আন্তঃযোগাযোগ জোরদার করা, পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য পুলিশসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
‘নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চায় মানুষ। আপনাদের প্রতি আহ্বান, নারী-শিশুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে কাজ করবেন। সব শ্রেণি-পেশার নারীরা যেন যেকোনো ঘটনায় পুলিশের হটলাইনে ফোন করে সর্বোচ্চ সহায়তা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
নারী-শিশু নিরাপত্তা পেলে আমরা বুঝতে পারবো নিরাপত্তার দিক থেকে দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল
‘বিগত ১৬ বছরে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটা কমিয়ে আনা ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এটা কঠিন না। একবার সেই আন্তরিক পরিবেশ তৈরি হলে এ বন্ধন অটুট থাকবে। আমাদের সমাজ যে সুশৃঙ্খলা সেটা প্রমাণিত হবে,’ বলেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘মাঠপর্যায় থেকে সব ক্ষেত্রে জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে। এ কাজটা পুলিশকে করতে হবে। সরকারের দিক থেকে যা যা প্রয়োজন, তা বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই দায়িত্বগ্রহণ করছি।’
২১৯ দিন আগে
সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে শনিবার (১২ এপ্রিল) এক বৈঠকে তিনি এই তাগিদ দেন। বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা এমন তথ্য দিয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ এবং সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রফেসর আলী রীয়াজ ও ড. বদিউল আলম মজুমদার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক ১৬ এপ্রিল
তারা জানান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা অব্যাহত আছে। শনিবার পর্যন্ত মোট ৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে।
তারা আরও জানান, সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত যাচাই এবং সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সময় কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা তথা সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।
২৩৬ দিন আগে