১৯৭১
যুক্তরাজ্যে মামলা এবং ১৯৭১-এর ইতিহাসের ভবিষ্যৎ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। সকাল থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আর ফেসবুকের আলোচনাগুলো লক্ষ্য করছি। গুরুত্বপূর্ণ মতামত আর আবেগ উঠে এসেছে সেসব আলোচনায়। অনেকে আবার এই সুযোগে শহীদ দিবসের উত্তপ্ত তাওয়ায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদিও ভেজে নিচ্ছেন একটু করে।
এতে সমস্যা নেই। এসব বিষয় অবশ্যই গুরুত্বের দাবিদার এবং আলোচনাগুলো সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু নির্দিষ্ট যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অন্তত আজকের এই দিনে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ ও সময়োপযোগী ছিল বলে মনে করছিলাম; সেটি কোথাওই আর উত্থাপিত হতে দেখলাম না। তাই এই পোস্টটি লেখার তাগিদ অনুভব করছি। ধৈর্য্য ধরে যদি পড়েন (কারণ এটি একটি দীর্ঘ পোস্ট হতে যাচ্ছে) তাহলে কৃতজ্ঞ হব।
এই যে উপরে লিখলাম ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’, কথাটা কিন্তু এতটুকু বাড়িয়ে বলিনি। এই পোস্টটি পড়লে আপনার কাছেও হয়তো সেটি স্পষ্ট হবে এবং আপনিও একমত হবেন।
আমার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়া থেকে গত ১৫ বছরে এ সংক্রান্ত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘটনাকে যদি চিহ্নিত করি আমরা, তাহলে সম্ভবত এই পোস্টে যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি সেটি হতে যাচ্ছে তার একটি।
একটু ধারণা দিই, এমনকি হয়তো শাহবাগ আন্দোলনও এই তিন প্রধান ঘটনার তালিকার মধ্যে পড়বে বলে আমার মনে হয় না!
তাহলে একটু মন দিয়ে পড়ুন।
আপনারা জানেন, ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন নামে একজনের বিচার হয়েছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি)। আসামির অবর্তমানে তার বিচারের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আইসিটি এবং তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয় ২০১৩ সালে।
আরও পড়ুন: বেদনায় ভরা দিন: শেখ হাসিনা
দণ্ডপ্রাপ্ত মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় সেই সাজা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি বা কি কি করা সম্ভব ছিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে; এখন সে কথা থাক। মুঈনউদ্দিনের পুরো ঘটনা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নতুন মোড় নিয়েছে, সেটি মনে হয় আপনাদের সবার আগে জানা থাকা দরকার।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জঙ্গীবাদ ও ইসলামিজম বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, মূলত অনলাইনে। সেখানকার একটি ‘ফুটনোটে’ চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটির একটি রায়ও রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মুঈনউদ্দিনের নিযুক্ত আইনজীবীরা দাবি করেন, রিপোর্টে তার রায়ের এই বিষয়টির এমনকি উল্লেখও নাকি তার বিরুদ্ধে মানহানির শামিল এবং এই মর্মে তারা স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে আইনি নোটিশ পাঠায়। স্বরাষ্ট্র দপ্তর এই লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফুটনোটটি সরিয়েও নেয় অনলাইন থেকে। তারপরও মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেন।
আদালতে মুঈনউদ্দিনের বক্তব্য ছিল বাংলাদেশের আদালতের রায়কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টিই তার জন্য মানহানিকর, কারণ বাংলাদেশের আইসিটির নাকি কোনো ধরনেরই গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সুতরাং, আইসিটির মাধ্যমে ১৯৭১ এর যে ধরনের ইতিহাস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রায় দেওয়া হয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন। এসবের ফলে নাকি যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মুঈনউদ্দিনের মানবাধিকার ও সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বিপরীত পক্ষ (অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আইনজীবীরা) পাল্টা অভিযোগ আনে এই বলে, অন্য একটি দেশের আদালতে ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় পুনরায় উত্থাপন করে মুঈনউদ্দিন যেটা করার চেষ্টা করছে তা হলো মূলত যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থার অপব্যবহার। সুতরাং, মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক।
হয়তো বুঝতে পারছেন, পরোক্ষভাবে এই মামলাটির অন্যতম বিচার্য বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালতে আইসিটি আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্ট মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মুঈনউদ্দিন আপিল করেন যুক্তরাজ্যের উচ্চতর আপিল আদালতে।আপিল আদালতের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে একমত হন, কিন্তু একজন বিচারক মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ মামলা খারিজের বিপক্ষে) রায় দেন। এই এক বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মুঈনউদ্দিন আবার আপিল করেন, এবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে। এটাই যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১ ও ২ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে মামলার বিষয়টির চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারকের সামনে সেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মুঈনউদ্দিন ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান দু'টি ল'ফার্মের আইনজীবীরা সেখানে পাল্টাপাল্টি অংশ নেন।
গত চার বছর ধরে এবং বিশেষ করে গত ন'মাস ধরে আমি এই মামলার পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি। সরাসরি মামলার পক্ষ না হতে পারার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, নিজের সীমিত সাধ্য আর সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করে গেছি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এই মামলায় ১৯৭১ এর ভিকটিমদের ও আইসিটির মূল দিকগুলো সামনে নিয়ে আসার।
উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের মামলার আইনজীবীদের দু’পক্ষের সাবমিশনে যে মৌলিক বিষয়গুলো একেবারেই উঠে আসেনি সেগুলোর পাশাপাশি তাদের এবং যুক্তরাজ্যের বিচারকদের করা জ্বলজ্যান্ত ভুলগুলো তুলে ধরা।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
চূড়ান্ত বিচারে কতটুকু সফল হয়েছি তা এখনি বলা মুশকিল, কারণ যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন। তবে এটুকু উল্লেখ না করলেই না।
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দু'পক্ষের শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার অন্তত যা মনে হয়েছে, তা হলো পুরো মামলাটির শুনানি আইসিটির জন্য ইতিবাচক হয়েছে তা বলা যাবে না। যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গী হয়তো (ধরে নিচ্ছি যদিও) অনেকাংশেই নির্ভর করেছে মুঈনউদ্দিন ও যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দুই পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা এ পর্যন্ত যা শুনেছেন বা যা শুনেননি শুধু তার উপরই।
যে কোনো দিনই রায় হতে পারে। জানি না যুক্তরাজ্যের বিচারকরা কি রায় দেবেন শেষ পর্যন্ত, এবং তা কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত ও (অপ)ব্যবহৃত হতে পারে ১৯৭১, বিচার, আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে!
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টি কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটি জানিয়ে রাখাটা প্রয়োজন মনে করছি, যে কারণে মূলত এই লেখাটি লেখা।
চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের এই মানহানি মামলাটিকে যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট যদি সর্বতোভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দেন তাহলে তো কিছুই বলার নেই। সেই সম্ভাবনা এখনও আছে। তেমনটি হলে এই মামলাটি হয়তো ইতিহাসের বা আইনের বইয়ের কোনো একটি ছোট ফুটনোট হয়ে থেকে যাবে।
কিন্তু রায়ে যদি এর বিপরীতটি ঘটে, অর্থাৎ, মুঈনউদ্দিনের মানহানির দাবি যদি টিকে যায়, তাহলে নিচের আশঙ্কাগুলো বাস্তব হয়ে উঠার এক ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হবে আমাদের সবার জন্য। অনেকগুলো সম্ভাব্য ফলাফল আর আশঙ্কার মধ্যে শুধু চারটি উল্লেখ করছি নিচে:
প্রথমত:
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ আইসিটির প্রক্রিয়ার বিপক্ষে) রায় দিলে সেই রায়টি দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধী আসামিপক্ষ উদ্ধৃত করবে আইসিটির পুরো প্রক্রিয়া এবং এর প্রতিটি বিচারের রায়কে চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধভাবে করার কাজে। অবশ্যই, আইনি বিচারে যুক্তরাজ্যের রায় বাংলাদেশের আইসিটির রায়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, তবে প্রচার/অপ-প্রচারের বিভ্রান্তিকর রাজনীতিতে এবং ১৯৭১ এর ইতিহাসকে ঘোলা করার কাজে যুক্তরাজ্যের আদালতের রায় শক্তিশালী এক হাতিয়ার হয়ে উঠবে ১৯৭১ বিরোধীপক্ষের হাতে। এই যে প্রথম সম্ভাবনার কথাটি লিখলাম, তা হলো আমার লেখা চারটি সম্ভাবনার মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর, কারণ বাকিগুলো আরও সুদূরপ্রসারী!
দ্বিতীয়ত:
যদি যুক্তরাজ্যের আদালতে বাংলাদেশের আইসিটির বিরুদ্ধে করা সমালোচনাগুলো ধোপে টিকে যায়, তাহলে এর প্রভাব হবে মুঈদনউদ্দিনের মামলা ছাড়িয়েও আরও বিস্তৃত। কারণ, তখন সমালোচনাগুলো পশ্চিমের এক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বদৌলতে এক ধরনের আইনি বৈধতার সিল পেয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে তখন আইসিটির বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই ব্যবহার করতে পারবে এ জাতীয় কৌশলগত মানহানি মামলায়। তাদের উদ্দেশ্য হবে ১৯৭১ ইস্যুতে নিজেদের কৃতকর্মের ইতিহাস চাপা দেওয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থা ও আদালত এমনিতেই এ জাতীয় মানহানি মামলার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ফোরাম হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বের অন্য সব ব্যবস্থার তুলনায়। এই সুযোগটি ঢালাওভাবে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে তখন যুদ্ধাপরাধী পক্ষের দিক থেকে। এভাবে ১৯৭১ এর প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস একটু একটু করে বিকৃত হতে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-৩
তৃতীয়ত:
আইসিটির রায়ের পরও যদি দণ্ডিত একজন অপরাধী এই রায়কে মানহানিকর বলে যুক্তরাজ্যের আদালতে উতরে যেতে পারে, তাহলে ১৯৭১ এ সংঘটিত অপরাধগুলো (যেমন: গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ) নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ধরনের গবেষণা আর লেখালিখির কাজ আর উদ্যোগগুলো এক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। লেখক ও গবেষকদের তখন তাদের কাজগুলো করতে হবে প্রতি পদে মানহানি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে। আইন বিষয়ে যাদের কিছুমাত্র ধারণা আছে তারা জানবেন কাউকে হয়রানি করতে বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করতে মানহানি মামলার কোনো জুড়ি নেই।
চতুর্থত:
বাংলাদেশের গণহত্যার বৈশ্বিক সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জনের যে প্রজন্মব্যাপী আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে, তার পুরোটাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হবে।
আশা করি এই লেখাটি পরিস্থিতির সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
১১ মাস আগে
১৯৭১ সালে আটকা পড়া অবাঙালিদের কেরাণীগঞ্জে পুনর্বাসন করা হবে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তথাকথিত 'বিহারি ক্যাম্পে' বসবাসকারী অবাঙালিদের পুনর্বাসনের জন্য ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ৫ হাজার ৬০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
মঙ্গলবার সংসদে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বরিশাল থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সব শহরে ধীরে ধীরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রান্তিক অংশকে টেকসই উন্নয়নের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজউক অধিক্ষেত্র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে: সংসদকে জানান প্রতিমন্ত্রী
সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় খুবই আন্তরিক: সংসদে হাছান মাহমুদ
বিএফআইইউ-এর কার্যক্রম সম্পর্কে সংসদে অর্থমন্ত্রীর ব্রিফিং
১ বছর আগে
বাংলাদেশে ১৯৭১’র গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচারণা জোরদার করুন: রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেতে তৃণমূল থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
ফোরামের কার্যকরী সভাপতি নুরুল আলম ও মহাসচিব লেখক ও সাংবাদিক হারুন হাবীব মঙ্গলবার বঙ্গভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
তিনি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আত্মস্থ করার জন্য সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে একাত্তরের বিজয় বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি সোনালী অধ্যায়।
আরও পড়ুন: নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ‘৭১ সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’-এর সার্বিক কার্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনা সভাপতিকে অবহিত করেন।
তারা রাষ্ট্রপতিকে জানান, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে।
তারা এ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফোরামের তাদের পরবর্তী কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানান।
এ সময় বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউজিসিকে কর্মমুখী পাঠ্যক্রম চালু করার আহ্বান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের
সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে: আইজিপির প্রতি রাষ্ট্রপতি
১ বছর আগে
পাক সেনাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ ইমরান খানের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বর্তমানে তার দেশে ১৯৭১-সালে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) সৃষ্ট পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে যা হয়েছে, তা এখন তার দেশে হচ্ছে।
শুক্রবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান বর্তমান অবস্থাকে ১৯৭০ সালের সঙ্গে তুলনা করেন। সেসময় ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও সরকার গঠনের অধিকার দেয়নি পশ্চিম পাকিস্তান। ঠিক সে ঘটনার পরই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে লংমার্চ চলাকালে সশস্ত্র হামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর পিটিআই-এর ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটেছিল? নির্বাচনে জয়ী দলের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ব্যবস্থা নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দল জয়লাভ করেছিল। কিন্তু তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। একই বিষয় এই মুহূর্তে এখানে ঘটছে।’
আরও পড়ুন: ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের
লাহোরের এক হাসপাতালে হুইলচেয়ারে বসে ৭০ বছর বয়সী সাবেক এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা জানান, যদি হামলাকারীরা নিজেদের মধ্যে ‘সমন্বয় করে’ (একসঙ্গে গুলি চালালে) হামলা করত, তাহলে তিনি হয়তো বন্দুক হামলায় বাঁচতেন না।
হামলায় ইমরানের একজন সমর্থক নিহত ও দুই সংসদ সদস্যসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালের হামলার আগে পর্যন্ত ইমরান খানের প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণ ছিল। এই হামলার ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতা ও হত্যার ইতিহাসসহ পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
ইমরান খানের অভিযোগ- গত এপ্রিলে পার্লামেন্ট থেকে তার বহিষ্কার ছিল বেআইনি এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করেছিল।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সরকারবিরোধী সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলিবিদ্ধ
যদিও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষ খানের এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এছাড়া ইমরানের দাবি সরকারকে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে।
কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে শুক্রবার লাহোর থেকে শুরু করা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বলেন, তার দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলবে।
তবে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালে নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের মিছিলে পিষ্ট হয়ে নারী সাংবাদিক নিহত
২ বছর আগে
১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি আ’ লীগের
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলাকে 'গণহত্যা' হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এই ‘ন্যায়বিচারের আহ্বান’ জানানো হয়েছে। ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটিতে বলা হয়েছে, ‘বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের সমকক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চেয়েছিল। পরিবর্তে, ঘুমের মধ্যে তাদের নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।’
পোস্টটিতে আরও বলা হয়, ‘২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খানের সহকর্মী টিক্কা খান অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার জন্য ডেথ স্কোয়াডকে একত্র করে। তারা এক রাতে সাত হাজার বাঙালিকে হত্যা করে। সেই দিন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা দু’লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ এবং ৩০ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি সম্প্রীতি বাংলাদেশের
এই ব্যাপক গণহত্যার ফলে ৩০-৪০ মিলিয়ন বাঙালি বাস্তুচ্যুত হয় এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।
হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হওয়া গণহত্যার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল।
এই প্রতিবেদনে পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে ব্যাপক নৃশংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ এবং ক্ষমতা অপব্যবহারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টটিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এই প্রতিবেদনের প্রতিটি কপি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই জঘন্য অপরাধগুলো এখনও গণহত্যা হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত হয়নি। ১৯৭১ সালের এই নারকীয় হামলাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে শুধুমাত্র গণহত্যার ভুক্তভোগীদের ভয়াল অভিজ্ঞতার প্রতি চরম অবিচার করাই হবে না; এর ইতিহাসের প্রতিও অবিচার করা হবে।’
আরও পড়ুন: গণহত্যা দিবসে সারাদেশে এক মিনিটের প্রতীকী ব্ল্যাকআউট
জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হবে শুক্রবার
২ বছর আগে
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে দেশ
মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মঙ্গলবার যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
১৯৭১ সালের এ দিনে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিকসহ অন্যান্য মেধাবী ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। পরে তাদের মরদেহ রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন
পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঠাণ্ডা মাথায় এ গণহত্যা চালায়। তাদের উদ্দেশ ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যাতে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।
আরও পড়ুন: শাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. ডালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ডা. ফজলে রাব্বি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সান্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান, এএনএম গোলাম মুস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক ও সেলিনা পারভিন।
২ বছর আগে
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি হায়দার আলী
৫০ বছর পেরিয়ে দেশ যেখানে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী পালন করছে সেখানে এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি দর্শনা পরানপুরের হায়দার আলী। জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি এখন রংমিস্ত্রী। অতি কষ্টে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন।
হায়দার আলী দাবি করেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পরানপুরের কলিমুদ্দিনের বড় ছেলে হায়দার আলী ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সে সময়ের টগবগে তরুণ হায়দার ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
৩ বছর আগে
কুমিল্লা শহরে গ্রেনেড হামলা-১৯৭১
বুম বুম বুম। ঠিক দুপুরবেলা ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে বোমা ফাটার শব্দ শোনা গেলো। ঠিক শহরের মাঝেই হয়েছে বোঝা গেলো। মাঝে মাঝে ক্যান্টনমেন্টের দিক থেকে কামান দাগানোর শব্দ আসে। এগুলো নিছক ভয় দেখানোর জন্যই। আজ সত্যিকার বোমা ফেটেছে। বোমা ফাটানোর সাথে সাথে নিমেষে কান্দিরপাড়-রাজগঞ্জ- চকবাজার প্রধান সড়ক জনশূন্য হয়ে গেলো।
মুক্তিবাহিনী এ ঘটনা ঘটিয়েছে এটা নিশ্চিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি আর্মি এসে যাবে। যাকে পাবে তাকেই ধরে নিয়ে যাবে। কাউকে গুলি করে মেরেও ফেলতে পারে। হায়েনাদের বিশ্বাস নেই। ভয়ের মাঝেও জনগণ খুশি। আজ নিশ্চয় কোন বড় অপারেশন হয়েছে। এখন না জানা গেলেও সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতারে খবর পাওয়া যাবে। আজ চরমপত্রে এম আর আখতার মুকুল রসিয়ে রসিয়ে মুক্তি বাহিনী কিভাবে হানাদার বাহিনীর অবস্থা ছেরা বেরা করে দিয়েছে তা বর্ণনা দেবেন।
চকবাজার এর পাশ দিয়ে গোমতী নদীতে যাওয়ার পথে এক রাজাকারের হই চৈ শুনে লোকজন জমে গেলো। এক রাজাকার বাহাদুরি দেখিয়ে চিৎকার করছে মুক্তি ধরে ফেলেছি। একটা যুবক মাটিতে বসে আছে মাথা নিচু করে। শরীরের বাম অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যুবক কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে? কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যুবক সম্বিত ফিরে পেলো। মনে হল সে এখানে কেন? আঁচ করলো সে লোকজন বেষ্টিত। মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে এক রাজাকার তাকে ধরে ফেলেছে। মুহূর্তের মধ্যে তার পূর্ণ স্মৃতি শক্তি ফিরে এলো।
মেলাঘর ক্যাম্পের কুমিল্লার বিশেষ দলটির ডাক পড়লো হায়দার ভাইয়ের (ক্যাপ্টেন হায়দার) অফিসের সামনে। তিনি জানালেন কর্নেল ওসমানী ও নীতি নির্ধারকদের সাথে বৈঠক শেষে আগরতলা থেকে মেজর খালেদ মোশাররফ গতকাল ফেরত এসেছেন। সেখানে আলোচনা হয়েছে যে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট, কুমিল্লা শহর ও সীমান্তের বিবির বাজার লাইনটি শান্ত রয়েছে যা মোটেই কাম্য নয়। এখানে কিছু একটা করা দরকার। আন্তর্জাতিক মিডিয়া পাকিদের পক্ষে স্থিতিশীলতার সুর ভাজছে। খালেদ মোশাররফের নির্দেশে হায়দার ভাই এই গেরিলা গ্রুপকে নিয়ে বসেছেন কি করা যায়।
বিশেষ গ্রুপের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তিনি গ্রুপ সদস্যদের থেকে মতামত নিলেন। কুমিল্লা শহর এখন শান্ত। কারফিউ নেই। শহরে ঢোকা সহজ। রেকি করে ঠিক করতে হবে কোন কোন টার্গেট হাতে নিতে হবে। তারপর অপারেশন। এ প্রস্তাবে হায়দার ভাই সায় দিয়ে গাইডলাইন দিলেন। বার বার মনে করিয়ে দিলেন ‘সেফটি ফার্স্ট’। নিরাপত্তা সবার আগে। তারপর কঠিন টার্গেট নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। পলায়নের রাস্তাটা হবে নিরাপদ ও সহজ। প্রতিটা গেরিলাকে বেঁচে থাকতে হবে শত্রুর উপর বার বার আঘাত হানার জন্য ও তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য।
বিশেষ গ্রুপ এর সদস্যরা রেকি শেষ করে টার্গেট বাছাই করে মেলাঘর ফেরত এলো। ঠিক হলো একই সময়ে আটটি স্থানে গ্রেনেড হামলা করা হবে যাতে বড় ইমপ্যাক্ট হয়।
কুমিল্লা শহরে প্রবেশের সহজ পথ হল নৌকায় গোমতী পার হয়ে অলিগলি দিয়ে চলা। অন্য পথে গেলে বার বার রাস্তা বদল করতে হয়। সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বাইপাস করতে হয়। মোটামুটি ঠিক হল গোমতী পার হয়েই অপারেশন করতে হবে।
পারাপারের কাজ করবে সংরাইশের আবুল। অপারেশন শেষে ফেরতও একই ভাবে। সম্পূর্ণ প্ল্যান হায়দার ভাইয়ের অনুমোদন পেলো। বাহার, জামাল খোকনসহ মোট ছয় জনকে গ্রেনেড দেয়া হল। বাহার একটা চাইনিজ পিস্তল পেল। সে একাই তিনটি টার্গেটে গ্রেনেড হামলা চালাবে। মনোহরপুর ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান, রাজগঞ্জের ব্যাংক (বর্তমান জনতা ব্যাংক) ও ছাতিপট্টি কমার্স ব্যাঙ্কে মূল সড়কে হামলা চালাবে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পিস্তল দেয়া হয়েছে। অন্যান্য টার্গেট গুলো ছিল জজ কোর্ট, ডিসি অফিস ও অন্যান্য সরকারি অফিস। ব্রিফিং শেষে হায়দার ভাই মনে করিয়ে দিলেন ঝুঁকি থাকলে অপারেশন করা যাবে না। পিস্তল হারানো যাবে না। পিস্তল হচ্ছে তোমার আত্মরক্ষার শেষ সম্বল। ছয়জন গেরিলাকে মেলাঘর থেকে গাড়িতে করে সোনামুড়ায় নামিয়ে দেয়া হল। সোনামুড়া থেকে প্রথম গন্তব্য পেয়ারা বাগান।
সময় ঠিক করা ছিল দুপুর বারোটা বাজলে যে যার কাজ শুরু করবে। বাহার উজির দিঘির পাড় দিয়ে মনোহরপুরের গলিতে ঢুকে প্রথম গ্রেনেড ছুঁড়ল ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তানে ( বর্তমান সোনালি ব্যাংক)। তারপর দৌড়াতে দৌড়াতে রাজগঞ্জের ব্যাংকে গ্রেনেড চার্জ করলো। না থেমেই আরও সামনে দৌড়ে গিয়ে ছাতিপট্টি কমার্স ব্যাংক এ শেষ গ্রেনেডটি ছোড়া হল। কিন্তু তৃতীয় গ্রেনেড ৬ সেকেন্ডের আগেই ফেটে গেলো। স্প্লিন্টারের আঘাতে গ্রেনেড হামলাকারী যুবকের বাম হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ রক্তাক্ত হয়ে গেলো। দ্রুত পালাতে হবে। শত্রুর এলাকা থেকে পালানোর চিন্তা মাথায় ছিল বলে রক্তক্ষরণ ও ব্যথার কথা মনেই এলো না। বাহার প্রানপণে দৌড়াচ্ছে। শরীরের শক্তি শেষ হয়ে আসছে। আর পা চলতে চাচ্ছে না। এই দুর্বল মুহূর্তেই রাজাকার এসে তাকে ধরে ফেলল। মুক্তি ধরে রাজাকারের উল্লাস।
মুক্তির মাথা এখন পরিস্কার। কি হয়েছে তা পুরাপুরি মনে এলো। এখান থেকে পালাবে কি করে এটাই একমাত্র চিন্তা। চারিদিকে লোকজন। পাকিস্তানি হায়েনারা দ্রুত চলে আসতে পারে। গায়ে তো শক্তি নেই। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত বুলিয়ে দেখল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। রক্তে ভেজা শরীর। হাত বুলাতে বুলাতে পেটের কাছে শক্ত কি যেন একটা ঠেকল। কি হতে পারে। শক্ত জিনিসটার উপরে আবারও হাত বুলালো। মনে পড়ে গেলো এটাতো ৭.৬২ মি মি চাইনিজ পিস্তল।
আত্মরক্ষার শেষ সম্বল। পেট এবং নাভি বরাবর বাঁধা ছিল। মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো। শরীরে অসুরের শক্তি ভর করলো। মুক্তি এক লাফে দাড়িয়ে গেলো। পিস্তল বের করে রাজাকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেই পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গেলো। রাজাকার ও জনতা উধাও। গোমতীর দিকে প্রাণপণে দৌড়। আবুল নৌকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। নদী পার হয়েই জ্ঞান হারাল যুবক। ওপারে ভিক্টোরিয়া কলেজের UOTC (বর্তমান BNCC) সার্জেন্ট কামাল ভাই আহত যোদ্ধাকে সোনামুড়া নিয়ে আসেন।
সূত্র: বাহার উদ্দিন রেজা বীর প্রতীক
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: আফগানিস্তান দেখা হলো না
মুর্তজা বশীর ভাই, কেমন আছেন আজকাল?
নেশা করা মধ্যবিত্তের ইতিহাস কোন দিকে?
৩ বছর আগে
মদ, ঘুষ হারাম না হালাল? লাইসেন্স থাকলে চলবে?
মদ, জুয়া, ইয়াবা, আইস, গাঞ্জা সবই হারাম। কিন্তু বিষয় হইলো আমাদের দেশে এগুলা খোরের সংখ্যা এতো বেশি যে গুইনা কূল করা যাইবো না। নেশাখোর কত এই দেশে? সরকার আম কাঁঠালের ফলনের হিসেব ভালো রাখে, কিন্তু নেশার খবর কম রাখে।
তবে এই দেশে বুড়া, পোলাপান অনেকেই এগুলা খায়। আমরা যারা ১৯৭১ এ তরুণ হিসেবে পার করছি তারা দেখছি, যুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের স্মৃতি ভুলতে নেশা করতো। তাদের মনোরোগ ছিল। চিকিৎসা ছিল না তাই আশ্রয় চাইছে নেশার ঘরে। এখন আমাদের বয়সীরা সব ভুইলা যায়, এমনকি যুদ্ধ হইছিল সেইটাও।
যোদ্ধার নেশা?
আমাদের এক বন্ধু ছিল, অসাধারণ যোদ্ধা। জানুয়ারি মাসে ঢাকা, তারপর ইউনিভার্সিটি, চা, আড্ডা, নেশা এবং প্রেম। সবগুলাই সামলানো যেত, কিন্তু শেষটা বড় দাহ করে। যেই মেয়ে তার সাথে কদিন ঘোরাঘুরি করতো, কয়দিন পর তাকে ছেড়ে যেতো। সে ছিল নেশাখোর, আড্ডাবাজ, বেকার।এমনকি তার গায়ে তখন যোদ্ধার গ্লামারটাও লাগে নাই। আমার বোন এমন করলেও আমি খুশি হতাম।
তারপর আমার বন্ধুর নেশার মাত্রা বাড়তেই লাগলো, জীবনের লাগাম ঢিলে হতে থাকলো। ১০ বছর পর কেবল নেশাখোর পরিচয় ছাড়া তার আর কিছুই রইলো না। বাবার অবস্থা ভালো ছিল তাই ভাড়া তুলে জীবন কাটালো। বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা সবই হলো। কিন্তু নেশা ছাড়লো না। পরে ট্যাবলেটের বদলে মদ খেত।
এই লোক কি হারামখোর ছিল ? সে তো যুদ্ধেও গেছে, জান দিতে গেছে, কারো কোনো ক্ষতি করেনি। সে খারাপ না ভালো লোক? সে কি হারাম খায় ? তার এক বিন্দু রুজিও হারাম নয়। অতএব .. সে কি খারাপ না ভালো ?
যে মানুষটা সারা দিন রিকশা টানে আর রাতে এক পুড়িয়া গাঞ্জা টানে আর যে লোক কোটি টাকার বিজনেস করে লাখ টাকার মদ খায় তারা কি সমান পাপের বাক্স হাতে দাঁড়ানো ?
মদ আর চুরি?
প্রতিদিন মদ উদ্ধারের খবর পাই মিডিয়া থেকে। যাদের বাসা থেকে এইসব পাওয়া যায় তাদের অবশ্যই খারাপ ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এই শহরে কত স্থানে খুব হালাল পরিবেশে মদ পাওয়া যায়, তার হিসেব কি আছে? কতগুলো বার আছে ঢাকায়? গত ১০ বছরে খুব কম বড়োলোক পেয়েছি যে মদ খায় না। তবে কিনা তাদের লাইসেন্স আছে -মানে হালাল? মদ কই খেলো সেটা তাহলে আসল কথা, কাগজ থাকলে হালাল ?
কিন্তু যে পরিমাণ দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, চুরি হয় এবং এসব নিয়ে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রতিবেদনও ছাপা হয়, তার পিছনে আমরা তো পড়ে নেই? দুর্নীতি নিয়ে কথা বলবো না। কিন্তু কতবার মানুষ ভাবে ঢাকার এতো বিলাসী জীবন হারামের না হালাল টাকায় চলে? এখন কি ঘুষ খাওয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে?
আসলে আমরা দুর্নীতিকে হারাম মনে করি না। আমরা বেশির ভাগ হাইল্লা মানুষ, গ্রামের কালচার মানি। মক্তবে মৌলভী সাহেব বলেছেন, মদ খাওয়া হারাম, তা নিয়েই চলছি। ঘুষ খাওয়ার কথা নিয়ে তো উনি তেমন কিছু বলেননি। গ্রামের মানুষকে গ্রামে শান্তিতে থাকতে দিন।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
৩ বছর আগে
আজ সোহাগপুর গণহত্যা দিবস
আজ ২৫ জুলাই সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। শেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত সোহাগপুর গ্রাম।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পাকসেনারা যুদ্ধাপরাধি জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকার, আলবদরদের নিয়ে গ্রামের সাধুর আশ্রম থেকে প্রফুল্লের দিঘী পর্যন্ত এলাকা ব্যারিকেড দেয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণহত্যার ‘স্বীকৃতি’ আদায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। মুহূর্তেই রক্তে লাল হয়ে যায় গ্রামের সবুজ ধানের মাঠ। পাশবিক নির্যাতন চালায় নারীদের ওপর। সেদিনের ছয় ঘণ্টার তাণ্ডবে ১৮৭ জন প্রাণ হারায়।
এই গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও সোহাগপুর বিধবাপল্লী শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আজ ২৫ জুলাই রবিবার দুপুরে শহীদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালিত
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ তালুকদার মুকুল বলেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কল্যাণে আমার ইউনিয়নে স্বাধীনতা যুদ্ধে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার সোহাগপুর গ্রামের পরিচিতি এখন বিশ্বময়। গণহত্যার স্মৃতিকে ধরে রাখতে দ্রুত স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ হোক।’
৩ বছর আগে