কৃষক
ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তার গলায় জড়িয়ে কৃষকের মৃত্যু
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ঘাস কাটতে গিয়ে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনের তারে গলা আটকে গিয়ে আসাদুল ইসলাম (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের খর্পদোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আসাদুল উপজেলার উত্তর গোতামারী এলাকার মৃত সামাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আসাদুল বাড়ির অদূরে ভারতীয় সীমান্তঘেষা খর্পদোলায় ঘাস কাটতে যান। সেখানে পানি সেচের জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের সংযোগের লাইনের বাঁশের খুটি ভেঙে তার ঝুলে ছিল। একপর্যায়ে ওই ঝুলে থাকা তারে তার গলা জড়িয়ে যায়, আর তিনি সেখানেই পড়ে থাকেন। পরে দুপুরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে মৃত অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় ১৬ বছর পর ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, ‘ঘাস কাটতে গিয়ে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনের তারে গলা আটকে আসাদুলের মৃত্যু হয়।’
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
৩ দিন আগে
ভুট্টাখেতে মিলল কৃষকের লাশ
রাজশাহীর বাঘায় ভুট্টাখেত থেকে শফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) চর কালিদাশখালীর আমবাগান এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শফিকুল ইসলাম চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ফজল শেখের ছেলে। শফিকুলের ছোট দুইটি সন্তান রয়েছে। এক ছেলে (৪) ও এক কন্যাসন্তান (১)।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশে গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে যান শফিকুল। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে হাবলু নামের এক মাঠ পাহারাদার রক্তাক্ত অবস্থায় শফিকুলকে পড়ে থাকতে দেখে তার ভাগনে আবদুল হালিমকে খবর দিলে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় নিজ বাড়ি থেকে ভাই-বোনের লাশ উদ্ধার
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার কারণ উদঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।’ ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে’ বলেন তিনি।
৬ দিন আগে
পুকুরে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে রাস্তা বানালেন মেম্বার
নিজের পুকুরে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে রাস্তা বানানোর অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এতে ৪০ বিঘা জমির ক্ষতি হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে।
এই ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
তারা জানান, কৃষকের মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০দিন পর জমি থেকে কাটা হবে ইরি ধান। তবে এরই মধ্যে ঘটল বিপত্তি। সেই ধান গাছ নষ্ট করে হয়েছে রাস্তা।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের ফেরাতে চুক্তি
তারা আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে কৃষকের লাগানো জমিতে লাগানো ধান গাছ ধ্বংস করে নিজ পুকুরে যাওয়ার রাস্তা বানিয়েছেন ইউপি মেম্বার। এতে করে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অথচ কাবিখা প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিরোধপূর্ণ কোনো জমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না বলেও জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটপাড়া বরাক বিলের মাঝ দিয়ে ১০ ফুট প্রশস্ত নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কের শেষ প্রান্তে কোনো বাড়িঘর নেই। রয়েছে কয়েকটি পুকুর। সেই পুকুরের মালিক ইউপি সদস্য ইকবাল হোছাইন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
নতুন সড়কটি জমিতে লাগানো ধানের গাছ ও জমি ধ্বংস করে বানানো হয়েছে, ফলে সড়কের দুপাশ গভীর হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাবিখা প্রকল্পের টাকায় অনিয়ম করে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন এই প্রকল্প করেছেন। শুধু মাত্র ইউপি সদস্যের কথায় কোনো প্রকার পরিদর্শন ও কৃষকদের মতামত না নিয়ে কৃষি জমির ওপর দিয়েই এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
কাবিখা প্রকল্পের নিয়ম গাইডলাইনে বলা আছে— ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা বিরোধপূর্ণ জমিতে এই প্রকল্প দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শ্রমিক দিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অংশ হলেও এই প্রকল্প ভেকু মেশিন দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এই রাস্তা বানাতে বেশি জমি পড়েনি। আর ভেকু দিয়ে কাটতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস বলেছে, তাই কেটেছি। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেব ডেকেছিলেন, তিনি পরিদর্শনে আসবেন। এখন সবাই আপত্তি করায় কাজ বন্ধ রেখেছি।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ‘ওই গ্রামের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন নামে একজন মেম্বার তার পুকুরে যেতে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাস্তা বা ঘরবাড়ি করতে পারে না, এর জন্যে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। ঘটনাটি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।’
আরও পড়ুন: সিলেটে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
এই বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূইয়া বলেন, ‘একটি ফসলি জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, তেমন কৃষি জমি সংরক্ষণে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। দেখা হবে— রাস্তাটি জনগণের উপকারের কিনা ও কৃষি জমির কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা।’
২৩ দিন আগে
মুন্সীগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলনেও কপালে চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আলু তোলা শুরু হয়েছে। এ বছর আলুর বাম্পার ফলনের পরও হাসি নেই কৃষকের মুখে। আলুর দাম কম থাকায় নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এই এলাকার কৃষকরা।
তথ্যানুযায়ী উপজেলার ১ হাজার ৯৫০ হেক্টরের অধিক জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার ৫০০ টন। আলুর ফলন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও আলুর পাইকারি দামে হতাশ প্রান্তিক কৃষকরা। এছাড়া হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য কৃষকের অনেক আলু বস্তায় করে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে আবহাওয়া বার্তায় বৃষ্টির আশঙ্কায় উত্তোলন করা আলু ভেজা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখনই আলু বিক্রি করতে নারাজ। স্থানীয় হাট-বাজারে প্রকার ভেদে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা। পাইকারী বাজারে কৃষকের উৎপাদিত আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে। এই পরিস্থিতিতে লোকসানের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু চাষিরা।
আলু চাষিরা জানিয়েছে, এবার সিন্ডিকেটের কারণে কয়েকগুণ বেশি দামে আলুবীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়েছে তাদের। প্রতি কানি (১৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষে ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় পৌনে ৪ লাখ টাকা। যদিও এলাকাভিত্তিক এই খরচ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। সেই হিসেবে প্রতি কানি জমিতে অন্তত ৪০০ মণ আলু উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। তবে গড়ে কানি প্রতি সাড়ে ৩০০ মণ আলুর ফলন পাওয়ার কথা বলছেন তারা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের হিমাগারে আলু রাখতে বিড়ম্বনা, অপেক্ষায় নষ্ট হওয়ার শঙ্কা
এতে এই অঞ্চলে প্রতি মণ আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এজন্য এখনই লোকসানে আলু বিক্রি করতে চাইছেন না তারা।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এলাকার হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, সিন্ডিকেটের লোকজন অন্য জেলা থেকে আলু এনে হিমাগার ভরছেন।
এলাকার কিছু আলু রাখার জন্য আটপড়ার হিমাগারটির আংশিক খালি রাখা হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে না পাড়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় সচল হিমাগারের সংখ্যা ৩টি। এর মধ্যে তন্তরের সোন্ধারদীয়ার এ. এন. খান হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ৩ হাজার টন, শ্রীনগর সদর এলাকার চকবাজার এলাকায় আল-আমিন আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার টন আলু ও আটপাড়া এলাকার শ্রীনগর হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ৬ হাজার টন।
উপজেলার ৩টি হিমাগারের আলুর ধারণ ক্ষমতা সর্বমোট ১৪ হাজার মেট্রিক টন। আর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের কুকুটিয়া ও তন্তর এলাকার প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃষক তাদের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করে থাকেন পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার হাট নওপাড়া বাজার এলাকার হিমাগারে। চলমান রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও চাহিদা মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া চক ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আলু বহনকারী সাইকেল ও অন্যান্য ট্রলির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দূরত্ব ভেদে হিমাগার পর্যন্ত আনতে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকে বস্তা প্রতি নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
স্থানীয় হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর হিমাগারে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য চার্জ ধরা হচ্ছে ৩০০ টাকা।
আরও পড়ুন: আলু সংরক্ষণে ৮ টাকা ভাড়া বেঁধে দিল হিমাগার মালিকরা
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলায় ৩টি সচল হিমাগার রয়েছে। হিমাগারগুলোতে মোট ধারণ ক্ষমতা ১৪ হাজার মেট্রিক টন।
এ পর্যন্ত হিমাগারগুলোতে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের তথ্য পাওয়া গেছে।
২৫ দিন আগে
নরসিংদীতে কৃষকদের জমির মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
নরসিংদীতে কৃষকদের জমির মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
আব্দুল কাইয়ুম ১৮ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে গত তিন মাস যাবত অবৈধভাবে আলোকবালীর গৌরীপুরা চরের কৃষি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। যার ফলে ১৩৯ কৃষকের কয়েকশত একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে থেকে একটি অভিযোগ পত্র পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া ১৮ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে তিনমাস ধরে অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। ইতোমধ্যে ১৩৯ জন কৃষকের প্রায় কয়েকশত একর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধে দফায় দফায় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। উল্টো অবৈধ বালু উত্তোলনের গতি আরও বেড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কাইয়ুম মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও একাধিক অস্ত্র মামলাও রয়েছে। তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কৃষকদের ভয় দেখানো হয়।
এমনকি, গত ৯ মার্চ ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে আয়োজিত নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার পথে আসা কৃষকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে চারজন কৃষক আহত হয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে জমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক দুদুল মিয়া বলেন, ‘আমার ২৫৪ শতাংশ জমি কেটে নিয়ে গেছে কাইয়ুম। জমিতে ধান চাষ করতাম, আমাদের চরের দুই পাশে নদী হওয়ায় প্রতিবছর জমির পরিমাণ বৃদ্দি পায়। ফলে, প্রতিটি কৃষকের জমিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এসব জমি অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ব্যবহার করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতা কাইয়ুম।’
‘এমকি প্রতিবাদ করলেই হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় আমাদের।’
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে মাদক কারবারিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
আরেক ভুক্তভোগী কৃষক ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘কাইয়ুমের প্রভাবে আমরা অসহায়। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তারা কাইয়ুমকে জরিমানাও করেছে, কিন্তু কাইয়ুম আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
কাইয়ুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তাকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
নরসিংদী জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্স বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ, ‘কৃষক বাঁচলেই, দেশ বাঁচবে।’
‘কৃষকদের পাশে থাকতে কৃষক দল সারা দেশে কৃষক সমাবেশ আয়োজন করছে। যারা কৃষকদের ক্ষতি করবেন, তাদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান থাকবে। দলের নেতাদের প্রতি সুপারিশ করব তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২৮ দিন আগে
জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেটের জৈন্তাপুরের বিভিন্ন হাওর ও পাহাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় চাষ হওয়া তরমুজ বাজারজাতের পাশাপাশি ট্রাকে করে যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে।
সরজমিনে দেখা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর তীরবর্তী সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারিঘাট দক্ষিণ বাজার এলাকায় রাস্তার দুই পাশে বিশাল তরমুজের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যাবসায়ীরা।
দিনভর চলছে বেঁচাকেনা। কোনো কোনো সময় পিকনিকে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা গাড়ি থামিয়ে তরমুজ কিনছেন। আবার ব্যাপারীরা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে তরমুজ ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এ বছরের পুরো উপজেলায় তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৭০ টন, যা ইতোমধ্যে অর্জিত হওয়ার পথে।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে আনারসের ব্যাপক ফলন, হতাশায় কৃষকরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬৫০ জন কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তাদের মধ্য ১১০ জন কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রদর্শনী। পাশাপাশি প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে বীজ, সার ও বালাইনাশক।
তবে সবচেয়ে আশার কথা হলো, তিন থেকে চার বছর আগে জৈন্তাপুর উপজেলায় বছরের পর বছর অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকা বিন্নাউরা জমিগুলোতে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। সে সময় উপজেলার ২০ হেক্টর অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে আরও ৫ হেক্টর অতিরিক্ত অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় বাংলালিংক, আনারকলি ও গ্লোরী জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয় নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে। এ মৌসুমে নিজপাট ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ইউনিয়নের মধ্যে চারিকাঠায় ১৫ হেক্টর, দরবস্ত ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর, ফতেহপুর ইউনিয়নে ৩ হেক্টর ও চিকনাগুল ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়।
২ নম্বর জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালমান আহমেদ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি চাতলারপাড় এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসে ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার মোট উৎপাদন খরচ হয় ২ লাখ টাকার মতো। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তরমুজ তিনি বিক্রি শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ তিনি বিক্রি করেছেন। মৌসুমের শেষে আরও ৪ লাখ টাকার ফসল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
তবে তিনি লাভের পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও তুরে ধরেন। এরমধ্যে অনত্যমত হলো এই অঞ্চলে পানি সেচের জন্য জ্বালানি খরচে কিছু বাড়তি টাকা ব্যয় হয়। তাছাড়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় তরমুজ পরিবহনে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
তিনি আরও বলেন গত তিন মাসে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তার মাঠে পাঁচজন কৃষক কাজ করে থাকেন। তাদের দৈনিক মজুরি ৭০০ টাকা।
একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ভিত্রিখেল এলাকার কৃষক নুর উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাকে তরমুজের উপর প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বছর সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার ব্যয় হয় ১ লাখ ৪ হাজার টাকার মতো। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার তরমুজ। মৌসুমের শেষে আরও ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলেও আশাবাদী তিনি। সেই সঙ্গে ভিত্রিখেল এলাকায় তরমুজ চাষে সেচ ও পরিবহনসহ কিছু সমস্যার কথা তিনি তুলে ধরেন।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে সেচের সুবিধা না থাকার কারণে ভার দিয়ে বহন করে পানি এনে তরমুজ গাছে দিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ১৫০ ফুট হেঁটে ভার বহন করে পানি আনতে হয় কৃষকদের। সরকারি খরচে একটি ডিপটিউবয়েল স্থাপন করা অথবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ভর্তুকি দিয়ে একটি সেচ পাম্প সরবরাহের আহ্বানও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উচ্চ মূল্য ফসল প্রদর্শনী প্রযুক্তিতে কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জৈন্তাপুর থেকে ক্লাইমেট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যনেজমেন্ট প্রকল্প (ডিএই অংশে)'র বাস্তবায়নে কৃষি ও কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে বীজ, সার ও বালাইনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়াসহ ফসলের মাঠ তদারকিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে থাকেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় সরিষার রেকর্ড চাষাবাদ, বাম্পার ফলন
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনাবাদি বিন্নাউরা ২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করে সফলতা অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে উপজেলার অনাবাদি বিন্নাউরা জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
৫৪ দিন আগে
রাঙ্গামাটিতে আনারসের ব্যাপক ফলন, হতাশায় কৃষকরা
সুস্বাদু হানি কুইন জাতের আনারসের জন্য রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বিখ্যাত হলেও কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় আগাম হানি কুইন আনারসের ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় সংকটে পড়েছেন চাষিরা। ফলে বাগানেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে পাকা হানি কুইন আনারস।
রাঙ্গামাটি জেলায় সাধারণ জায়েন্ট কিউ ও হানি কুইন নামের দুই জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। জেলার নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও বরকলসহ বিভিন্ন উপজেলায় হানি কুইন জাতের আনারস বেশী চাষ হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলার খামাড়ি ঢলা চান চাকমা বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে এবছর ব্যাপকহারে হরমোন প্রয়োগ করায় আগাম হানি কুইন জাতের আনারসের ব্যাপক ফলন হয়েছে। মূলত মে ও জুন মাসে আনারস বাজারে আসলেও এবার জানুয়ারিতেই আনারস বাজার আসতে শুরু করেছে।
নানিয়ারচর উপজেলার খামারি আব্দুল করিম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিশেষ পদ্ধতিতে হরমোন ব্যবহার করে সারা বছর উৎপাদন হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল এই জাতের আনারস। আকারে বড়, স্বাদে মিষ্ট হলেও বাজারে এই আনারসের ক্রেতা নেই। দাম কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
কৃষক ও বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত আনারস কৃষকরা ইঞ্জিন বোটে করে রাঙ্গামাটি শহরের সমতাঘাট, তবলছড়ি, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং রির্জাভ বাজারে নিয়ে আসছে। সেখান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে ট্রাকে করে জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই আনারসের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষক ও বিক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
৫৭ দিন আগে
শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২ কৃষক নিহত
শেরপুর সদর উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আকরাম ও আব্দুল হানিফ নামে দুই কৃষক নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে বাজিতখিলা ইউনিয়নের ছাত্তারকান্দি এলাকায় ধানখেতে পানি সেচ দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
বাজিতখিলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. উজ্জল মিয়া বলেন, আকরাম খেতে সেচ দেওয়ার জন্য সেচ পাম্প চালু করতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়লে তাকে বাঁচাতে আব্দুল হানিফ এগিয়ে আসেন। এ সময় তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। পরে আশপাশের লোকজন বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জোবাইদুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। এরপর ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।’
৬৩ দিন আগে
মেহেরপুরে বোরো চাষে সার-কীটনাশক নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা
মেহেরপুরের ৩ উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১৯ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করতে জেলায় ৯৭৮ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস জানায়, শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যেও কৃষকরা ইরি-বোরো চাষে মনোযোগী হয়েছেন। ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। কৃষকরা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা পানিতে নেমে বীজ তোলার পাশাপাশি জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এছাড়া আগাম আলু উত্তোলনের পর ফাঁকা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ চলছে। গ্রামে গ্রামে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধানের চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ৫০, ৫৮, ৭৪, ৮৯ সহ স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। হাইব্রিড এবং উপশী জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের মতে, বীজ, সার এবং শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি চাষাবাদে কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবে আগাম চারা রোপণ এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে ফসল উৎপাদনে ভালো ফল আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এবছর আবহাওয়া ও বীজ ভাল থাকায় চাষীদের বীজতলার অবস্থা ভালো। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি উপকরণের প্রাপ্যতায় নিধার্রিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের রঙিন স্বপ্ন নতুন ফসলের ফলনে গোলা ভরার। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এ মৌসুমে বাম্পার ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
গাংনীর বাওট গ্রামের কৃষক ছাদ আলী জানান, এবছর আবহাওয়া ভাল ও বীজও ভাল পাওয়া গেছে তাই ফলনও ভালো হবে। গতবছর আবহাওয়া খারাপ ছিল বীজও খারাপ ছিল তাই চাষিরা ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
শুকুরকান্দি গ্রামের আমির হামজা জানান, ধান চাষ করতে প্রথমেই কৃষক হোঁচট খাচ্ছে। খুচরা সারের দোকানগুলোতে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কীটনাশকের দামও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। সার কীটনাশকের দোকানগুলোতে সার মিলছে না। অথচ, অতিরিক্ত দাম দিলেই তারা সার বের করে দিচ্ছেন।
গাংনীর মাইলমারী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিক সারের কোনো সংকট আছে বলে আমি মনে করি না। যে সারের দাম ১ হাজার টাকা। দোকানদারকে নির্ধারিত দাম দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ, ১ হাজার ৪০০ টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের উচিৎ নিয়মিত তদরকি (মনিটরিং) করা। নাহলে কৃষকরা এবার ধানের আবাদ করতে গিয়ে মরে যাবে।
আরও পড়ুন: দেশ থেকে সার সংকট জাদুঘরে পাঠানো হবে: কৃষি সচিব
৭৫ দিন আগে
সরিষা ও মধুতে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে নওগাঁর কৃষকদের
নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষে খেতে ফলন আসায় এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সরিষার এসব জমির পাশেই মৌ বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়েরই ভাগ্য বদলে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি।
নওগঁ সদর, রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার, ধামইরহাট, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমির শর্ষেখেতে এসব মৌ বাক্স স্থাপনা করা হয়েছে। ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স থেকে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধুর ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় সরিষার ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।
শর্ষেখেতে মৌখামার করে মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় মৌখামারের সংখ্যাও বেশি। মান্দায় এ বছর ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিজুড়ে সমন্বিতভাবে সরিষা ও মৌচাষ হয়েছে। উপজেলার তেতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে শর্ষেখেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, সরিষাখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে সরিষার ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি সরিষার ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলন বাড়ে। যে সরিষাখেতে মৌমাছি আনাগোনা থাকে না সেখানে ফলন কম হয়।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের প্রত্যাশা
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত দুই-তিন বছর ধরে কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ করছেন। এছাড়া গত মৌসুমে সরিষার ভালো দাম পাওয়ার কারণেও এবার অনেক কৃষক সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি বিভাগ নানাভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সরিষা চাষে আগ্রহী করে তুলতে এ বছর ৫৭ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলায় উচ্চফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-১৫ ও বারি-১৭ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। এসব জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।
সম্প্রতি জেলার মান্দা ও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে সরিষার পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
গত বৃহস্পতিবার মান্দা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে। মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাঠের পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি আবু বক্কর সুজন। পার্শ্ববর্তী পিরাকৈর মাঠে তার আরও একটি মৌখামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌ বাক্স রয়েছে। সুজন ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।
আবু বক্কর সুজন বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌ বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে চার বার মধু সংগ্রহ করছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
মৌচাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ দিন হলো তিনি ওই মাঠে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪০০টি বাক্স থেকে দুই বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও তিন সপ্তাহ ওই মাঠ থেকে মধু পাওয়া যাবে। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি মধু সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ বছর ধরে নিজের সরিষাখেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌ বাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’
মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ এবার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিল।
আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রতি বছর সাত থেকে আট বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। সাধারণত অন্যান্য বছরগুলোতে মাঠের নিচু জমিগুলোতে ডিসেম্বর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। তবে এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নভেম্বরের আগেই নিচু জমিগুলা থেকে পানি নেমে গেছে। বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত দুই-তিন মাস ১০ বিঘা নিচু জমি ফেলে না রেখে সেগুলোতেও সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা গাছে ফুল ভালো এসেছে। আশা করছি, ফলনও ভালো পাবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নওগাঁয় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব জমির পাশে রবিবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। বাক্সে থাকা মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। গত বছরও এ জেলায় সরিষাখেতের পাশে ৭ হাজার ৮০০ মৌ বাক্স বসেছিল। নওগাঁয় রবিশস্য সরিষার সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
৯৬ দিন আগে