মাতারবাড়ী
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের আবিষ্কারক প্রধানমন্ত্রী: নৌপ্রতিমন্ত্রী
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের আবিষ্কারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে পরিচয় করে দিয়েছেন। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এখন দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) প্রতিমন্ত্রী মাতারবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন।
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী শনিবার (১১ নভেম্বর) মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও বেশি শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সিম্বল হয়ে থাকবে। দেশের অর্থনীতিতে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে। সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন খরচ ১০ থেকে ২০ ভাগ কমে আসবে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। মাতারবাড়ীতে নতুন করে চঞ্চলতা ফিরে আসবে। অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত সূচিত হবে। মাতারবাড়ী শহর হবে। এখানে শিল্পায়ন হবে। বিপুল সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠান হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে।
খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে। আমরা গর্ব করে বলতে পারব বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর আছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হবে মাতারবাড়ী। আন্তর্জাতিক হাব হবে মাতারবাড়ী। এখানে সড়ক যোগাযোগ আছে, ভবিষ্যৎ রেল যোগাযোগ হবে।
তিনি বলেন, বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরেও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী। শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব থাকলে দেশ সংকটে পড়বে না।
আরও পড়ুন: ঢেপা-পুনর্ভবার তীরে ২৬ কি.মি. বাঁধ হবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ীকে সিঙ্গাপুরের মতো করতে গেলে যা যা দরকার সবই করা হবে। এখন দেশ অন্ধকার যুগে নেই। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফ লাইন, মাতারবাড়ী বন্দরও হবে প্যারালাল অর্থনীতির লাইফ লাইন।
আগামী ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে শুরু হয়েছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণকাজ। দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে।
বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দর সুবিধাদি নির্মাণের কাজ চলমান।
২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে জাতীয় মহাসড়কের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলমান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মেরিটাইম সেক্টর নিয়ে আরও কাছাকাছি আসতে পারে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
কুড়িগ্রামে এনএমআই স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
১ বছর আগে
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন ১১ নভেম্বর
আগামী ১১ নভেম্বর (শনিবার) মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য তারা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিভিত্তিক অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) চলতি বছরের ২৯ জুলাই জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'এখন প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটটি সংযুক্ত করা হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) দুটি ইউনিট বিশিষ্ট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করেছে।
জাইকা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের সুবিধার্থে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরও নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে কয়লা খালাসের জন্য জেটির কাজ প্রায় শেষ। জেটিতে জাহাজও চলাচল শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি গভীর সমুদ্র বন্দরও উদ্বোধন করবেন।
পূর্ণ সক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এর জন্য কয়লা সরবরাহ জেটি এবং সাইলো (বিশাল সিলিন্ডার) নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ি চ্যানেলে টাগশীপ ডুবি, চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার
৬০ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বিশাল সাইলোতে রাখা হয়েছে। ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বৃহৎ জাহাজ সরাসরি কয়লা জেটিতে প্রবেশ করতে পারে। আর বৃহৎ জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ বছর আজীবন ছাই সংরক্ষণের জন্য দুটি পৃথক অ্যাশপন্ড রাখা হয়। একটির আয়তন ৯০ একর, অন্যটির আয়তন ৬০০ একর। কয়লা সংরক্ষণের জন্য ৮০ একর জমিতে কয়লা ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য একটি ঋণ চুক্তি সই হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার সহায়তা রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেটি নির্মাণ ও ভৌত অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে।
সিপিজিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৬৪ হাজার ৩০০ টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ প্রথম আসে চলতি বছরের ২৩ জুন।
আরও পড়ুন: খরচ বেড়েছে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের
১ বছর আগে
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে ১৫০০ মিলিয়ন ডলার দিলো জাপান
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। যেখানে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। জাপান প্রকল্পটির জন্য আরও ১৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এ লক্ষ্যে ৪৪তম জাপানি অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) ঋণ প্যাকেজের (২য় ব্যাচ) অধীনে মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৭ম ধাপের জন্য নোট বিনিময় ও 'ঋণ চুক্তি' সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান বাংলাদেশের পক্ষে ‘এক্সচেঞ্জ অব নোট’ এবং ‘লোন এগ্রিমেন্টে’ সই করেন। বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ‘এক্সচেঞ্জ অব নোটস’ সই করেছেন এবং জাপানের পক্ষে ‘ঋণ চুক্তি’ সই করেছেন জাইকা বাংলাদেশ অফিস, ঢাকা-এর প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড।
ঢাকার শেরেবাংলা নগরের ইআরডি’র এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে চুক্তি সই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই জাপানি ওডিএ ঋণের অধীনে, জাপান সরকার প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৬ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (জেপিওয়াই) বা প্রায় ১৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে।
এই ঋণের সুদের হার হবে নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ৬ শতাংশ, পরামর্শ পরিষেবার জন্য শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ, একটি ফ্রন্ট-এন্ড ফি (এককালীন) শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩০ বছরের ঋণ পরিশোধের সময়কাল, যার মধ্যে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: জাপানের নিরাপত্তা সহায়তা প্রাপ্ত প্রথম ৪ দেশে থাকছে বাংলাদেশ
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট (৬০০মেগাওয়াটx ২ ইউনিট) আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা-চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতির জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫১ হাজার ৮৫৪ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি ৬ হাজার ৪০৬ হাজার ১৬ কোটি টাকা, জাইকা ৪৩ হাজার ৯২১ দশমিক ০৩ কোটি টাকা এবং সিপিজিসিবিএল ১ হাজার ৫২৭ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
জাপান বাংলাদেশের একক বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তা দিয়ে আসছে।
ওডিএ প্রতিশ্রুতি এখন পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
জাপানি ঋণ ও অনুদান বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু, টেলিযোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, গ্রামীণ উন্নয়ন, পরিবেশ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদির মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জাপানি সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন।
আরও পড়ুন: দেশের বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় জাপান: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে ৪৪তম ওডিএ ইয়েন ঋণচুক্তি সই
১ বছর আগে
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলের ৩ বিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে
মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশসহ আশেপাশের অঞ্চলের প্রায় তিন বিলিয়ন জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। পুরোপুরি চালু হলে মাতারবাড়ী বন্দর দেশের জিডিপিতে শতকরা দুই থেকে তিন ভাগ অবদান রাখবে।
এছাড়া, গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হলে বাণিজ্যিকভাবে আঞ্চলিক হাব বন্দর হবে এটি। তখন এই বন্দরটি পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিভিন্ন বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের পর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।
ইউএনবিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছন।
আরও পড়ুন: এসেনসিয়াল ড্রাগসে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে এটি বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফলাইন। এটি চালু হলে এরপর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।’
তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। যেভাবে কাজ চলমান আছে, এভাবে কাজ চললে ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এই বন্দরে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায় বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে এক হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার ২০০ টিইইউএস ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। ফলে পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালে। কিন্তু এর মধ্যে গত দুই বছরে এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছে ১১২টি। এই ১১২টি জাহাজ থেকে মোট ছয় কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যতসব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম বড় বড় জাহাজে করে এসেছে তা সব মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল দিয়ে এসেছে। এই চ্যানেলের গভীরতা বেশি হওয়ায় বিশ্বের যেকোনো বাণিজ্যিক বড় জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করতে পারবে এবং লোড-আনলোড করার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন: ‘স্থানীয় ও পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। জাহাজে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। সড়কপথে এর দূরত্ব প্রায় ১১২ কিলোমিটার। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী ধলঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও বন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্থানে পাথর ও মাটি ভরাট করা হচ্ছে।
এছাড়া এ বন্দরের অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি। বন্দরের জন্য যে চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেটি ২৫০ মিটার চওড়া, ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার গভীর এবং ১৪ দশমিক তিন মিটার দীর্ঘ। সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় চ্যানেলের পানি পুরো নীল।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বন্দরের নিরাপত্তায় উত্তর ও দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের ঢেউ প্রতিরোধ বাঁধ। প্রকল্পের বিশদ নকশা তৈরি কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া জেটি নির্মাণ, জাহাজ হ্যান্ডেলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও টাগ বোট ক্রয়সহ তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকল প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান ইউএনবিকে বলেন, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে অন্যান্য বন্দর থেকে এর দূরত্ব বেশি হবে না। চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রা বন্দর থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলাবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে। পুরোদমে মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান বলছে গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে দুই থেকে তিন শতাংশ অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন: নতুন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ চ্যালেঞ্জের রিট শুনতে বিব্রত হাইকোর্ট
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯ দশমিক পাঁচ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে। তবে সম্প্রতি ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব জাহাজ ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে। একটি মাদার ভেসেলের ধারণক্ষমতার আট হাজার থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ড্রইং ডিজাইনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে দুই হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ সকল বন্দর সুবিধাদি নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, তিন প্যাকেজে মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সড়কটি নির্মাণের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে বন্দর পণ্য সড়কপথে দেশের যে কোনো স্থানে পরিবহন করা যাবে।
সড়ক নির্মাণের তিনটি প্যাকেজ মধ্যে বন্দরের উত্তর-দক্ষিণে সংযোগের জন্য এক দশমিক ১৫ কিলোমিটার চারলেনের সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে সিডাব্লিউ-৩ এ প্যাকেজে। এই প্যাকেজের আওয়ায় আরও প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।
আরও পড়ুন: সৌদিতে ২০২৪ সাল থেকে ওষুধ উৎপাদন করবে বেক্সিমকো
এছাড়া ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চারটি সেতু, দুইটি গোলচত্বর ও একটি রেলওভারপাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩বি’র আওতায় ছয় দশমিক ৪০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, চারটি সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩সি’র আওতায় ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, ছয় সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে।
১ বছর আগে
মাতারবাড়ী বন্দরে নতুন এলপিজি টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা বিপিসির
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে একটি ডেডিকেটেড তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
৩ বছর আগে