প্রকাশক
বইমেলায় জমজমাট উপস্থিতির প্রত্যাশা প্রকাশকদের
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বা বইমেলা দরজায় কড়া নাড়ছে। সাহিত্য উৎসবে রূপ নেওয়া মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজনের অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমি ইতোমধ্যে প্রকাশকদের জন্য স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ও বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ঘুরে ইউএনবি দেখতে পায়, ২৩ জানুয়ারি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রকাশকরা তাদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রস্তুতের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রকাশকদের পছন্দসই নকশা অনুযায়ী শ্রমিক ও কাঠমিস্ত্রিদের নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন বেশ সাদামাটাভাবে তৈরি কড়া হচ্ছে, অন্যদিকে কিছু বেশ জাঁকজমকভাবে।
মেলা প্রাঙ্গণে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে প্রকাশকরা নগরীতে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় অতীতের তুলনায় আরও বেশি উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন। তারা মেলা প্রাঙ্গণের কাছে অবস্থিত দুটি মেট্রো স্টেশনের (শাহবাগ ও টিএসসি) কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে দূরবর্তী স্থান থেকে সহজেই সাধারণ মানুষ মেলায় আসতে পারবেন।
উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনীরের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন- এবারের মেলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি উপস্থিতি দেখা যাবে। পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে আসবেন, কারণ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভালো। তাই পাঠকরা আগের চেয়ে খুব সহজে ও কম সময়ে মেলায় আসতে পারবেন।
‘মাসুদ রানা’র লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
জনপ্রিয় রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক ও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। বুধবার বিকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, ‘গত অক্টোবরের ৩১ তারিখ প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে আব্বার (কাজী আনোয়ার)। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।’
কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন ও ছায়ানটের সভাপতি সানজিদা খাতুন জানান, গতকাল তাকে বারডেমে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: বাঙালি কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ আর নেই
আগামীকাল সকালে তার নামাযে জানাজা ও দাফন হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, লেখক ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ও সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
তিনি ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাঠন নন্দিত রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র জন্য ব্যাপক পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৩ সালে সেগুনবাগিচায় ‘সেগুনবাগান প্রকাশনী’ হিসেবে তার প্রথম প্রেস ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশনার নাম ছিল ‘কুয়াশা-১’ এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালের জুন মাসে।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি আর নেই
পরবর্তীতে প্রকাশনা সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ‘শেবা প্রকাশনী’ রাখেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের প্রথম সংস্করণ ‘ধ্বংস পাহাড়’ প্রকাশ করেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত গায়িকা ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান হলেন- ছেলে কাজী মাইমুর হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন ও মেয়ে শাহরিন সোনিয়া।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য বাচসাস পুরস্কার এবং ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী আর নেই
করোনার ঢেউয়ের মধ্যে ‘গ্রন্থমেলা’: লোকসান গুনছেন প্রকাশকরা
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে চলতি বছরের বইমেলা ছিল অন্যান্য বছরের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
বইমেলায় স্টল এবং বই থাকলেও দর্শনার্থী এবং বই কেনার অগ্রহী মানুষ খুবই কম।
সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকায় এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ বইমেলার পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে, যে কারণে প্রকাশকরা বিশাল লোকসানের আংশঙ্কায় রয়েছেন।
বিশেষ করে ছোট প্রকাশকদের পক্ষে এটি কঠিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সুপারিশ উপেক্ষা করে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করেছে।
মেলার বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছে, খুব কমই বই বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে বইমেলা শুরু
তারা জানান, বেশিরভাগ লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন, বই কেনার জন্য নয়।
একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘দর্শনার্থী, লেখক এবং প্রকাশকদের সাধারণ ভিড় অনুপস্থিত। বিক্রয় হতাশাজনক।’
অমর একুশে গ্রন্থমেলা হবে, তবে সময় জানা যাবে পরে
অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা আগের মতোই ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে।