ধান চাষ
ঠাকুরগাঁওয়ে নদী ভরাট ও চর দখল করে চলছে ধান চাষ
১১টা নদী নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা। ঠাকুরগাঁও মূল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও শুক নদী। তবে কয়েক মাস আগে টাঙ্গন নদীর কিছু কিছু স্থানে খননের কাজ করা হয়। কিন্তু আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী।
বর্ষাকালেও অনেক কম পানি থাকে। টাঙ্গন নদী দেখলেও বোঝার উপায় নেই সেটি এক সময়কার প্রমত্তা টাঙ্গন নদী।
টাঙ্গন ও শুক নদীতে জেগে উঠেছে ছোট ছোট চর, আর সেই চরে পাশ থেকে মাটি এনে ভরাট করে চলছে নামে-বেনামে চর দখল এবং ধান চাষ।
নদী দুইটি জেলার অন্যতম প্রধান নদী ও তখনকার যাতায়াতের মাধ্যম ছিল। এর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। এসব নদীর বুকে কিছু কৃষক এখন ধান চাষ শুরু করেছে।
অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ধানের বীজতলা তৈরি করছে। এখন নদীতে আর মাছ পায় না জেলেরা। তাই জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর খালপাড়া গ্রামের প্রবীর দাস বলেন, এক সময় মাছ শিকার আমার পেশা ছিল। নদী ভরাট হয়ে এখন আর মাছ নেই নদীতে। পানি নাই, মাছ নাই। নদী ভরাট করে অনেকে ধান চাষ করছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া ভরাট নদীতে পানি না থাকলে মাছ থাকবে কীভাবে! তাই বাধ্য হয়ে এখন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।
বরুণাগাঁও এলাকার বজলু হক বলেন, নদীতে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যায় না। ২০১৯ সাল থেকে নদী খনন করলেও ছয় মাস যেতে না যেতে আবারও ভরাট হয়ে গেছে নদী। মাছ ধরা বাদ দিয়ে মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করছি।
কহরপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, নদীতে এক সময় অনেক পানি ছিল, সেই পানি কৃষি কাজে ব্যবহার হতো। এখন নদীতে এক হাঁটুর কম পানি থাকে। তাই নদীর পানি আর কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারি না। যদি নদীটা আবারো খনন করা হয় তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে। অল্প খরচে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারব।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে 'ফাতেমা’ ধান চাষে যুবকের স্বপ্ন পূরণ
ঠাকুরগাঁওয়ে কালো ধান চাষে চমক
করোনা: স্কুল মাঠ দখল করে ধান চাষ
এক সময় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় দিনভর মুখর থাকতো স্কুলের সামনের মাঠটি। কিন্তু এখন এটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি এক সময় মাঠ ছিল। করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে স্কুলের খেলার মাঠটি দখল করে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সেখানে ধান চাষাবাদ করছেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর পশ্চিমপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। সবুজ ধান খেতের হাতছানির দৃশ্যটি সুন্দর হলেও স্কুল মাঠে ধান চাষাবাদের কারণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমনকি এই কাজের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিচার দাবি করেছেন ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: ৫০০ পরিবারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো!
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্কুলটির জমি সরকারি দলিলকৃত সম্পত্তি। সরকারিকরণে চিঠিও এসেছিল। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকেও কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুহুল আজম সেখানে ধান চাষাবাদ করছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির এমনকাণ্ডে হতবাক শিক্ষকরাও।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আগে স্কুল মাঠে ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা হতো। স্কুলের সভাপতি রুহুল আজম ধান চাষ করায় বেশ কিছু দিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের খেলাধুলার মাঠটি আবারও ফিরিয়ে দেয়া হোক।
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
রামনগর পশ্চিমপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল জানান, স্কুলটির জমি সরকারি দলিলকৃত সম্পত্তি। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান ভালো ছিল। বিদ্যালয় মাঠে ধান চাষ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কেনো যে করছেন এটা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে রুহুল আজম কেরু বলেন, ‘এতো বড় একটি জায়গা ফেলে রাখবো কি করে? তাই ধান চাষ করেছি।’
মিরপুর উপজেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল করিম বলেন, বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক। তিনি এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া দাবি জানান।
আরও পড়ুন: যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
মিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ দখল করে ধান চাষ করা হচ্ছে এটা করার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা অফিস থেকে লোক পাঠানো হবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, ‘এমন কাজের সাথে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। দ্রুত ওই বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফরিদপুরে 'ফাতেমা’ ধান চাষে যুবকের স্বপ্ন পূরণ
ইরি ধানের জাত 'ফাতেমা' ধানের চাষ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলাতেও শুরু হয়েছে। উপজেলার হেলেঞ্চা পশ্চিমপাড়া গ্রামের তরুণ যুবক রিয়াজুল ইসলাম তার ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্যতিক্রম এই ধান চাষ করেছেন। জমিতে বাম্পার ফলন ফলবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা পশ্চিমপাড়া গ্রামের যুবক রিয়াজুল ইসলাম তার ৭৫ শতাংশ জমিতে 'ফাতেমা' জাতের ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। ১০-১২ দিন পর থেকেই ধান কাটা শুরু হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় মাঠে মাঠে সোনালি ধান কাটার উৎসব
উল্লেখ্য, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কথা মতো ছেলে লেবুয়াত শেখ নিজেদের জমিতে ধান চাষ করে তিনটি শীষ খুঁজে পান। পরে সেই শীষের ধান বুনে পান দুই কেজি বীজ। সেই বীজ এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে লেবুয়াত ৩৫ মণ ধান ঘরে তোলেন যেখানে অন্যান্য ধানের ফলন বিঘা প্রতি ১৮ মণের বেশি পাওয়া সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে কৃষক লেবুয়াতের মা এই ধানের উদ্ভাবক হওয়ায় তার মায়ের নামানুসারে এই ধান 'ফাতেমা’ ধান হিসেবেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পরিচিতি পায়।
এ ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়, যা বেড়ে ৮-১০টিতে রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। একেকটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬-৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১২০০টি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম।
ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিফ (ছড়ার সঙ্গের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়া দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কাণ্ড ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। তাই এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ফাতেমা ধান একর প্রতি ফলন হয় প্রায় ১৩০ মণ। তাই অন্য যে কোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
কৃষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে ফাতেমা ধানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করার পর বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াতের মায়ের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করি। এরপর প্রাথমিকভাবে আমার ৭৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করি। এতে সবকিছু মিলে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশাবাদী এ জমিতে প্রায় ৯৫-১০০ মণ ধান হবে। এই ধান উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, 'এই ধান চাষ করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। নিজেও স্বাবলম্বি হতে পারবো। এবছর আরও জমিতে আবাদ করবো এই ধান।’
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, বাগেরহাটের কৃষক কর্তৃক উদ্ভাবিত ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, উপজেলাতে এধানের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ মে. টন
চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
হাওরে পানি আটকে মাছ শিকার, সুনামগঞ্জে বোরো আবাদে শঙ্কা
হাওরে পানি আটকে মাছ শিকার করায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বোরো ধান আবাদের সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও হাওরের অনেক জায়গায় বোরো আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। হাওর জলমগ্ন থাকায় এবার বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।