অতিথি পাখি
নানা অব্যবস্থাপনায় জাবিতে কমেছে অতিথি পাখির আগমন
শীতের আড়মোড়া ভাঙতেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জলাশয়ের পানিতে ভেসে থাকা শাপলা পাতার ওপর অতিথি পাখির জলকেলি, দলবেঁধে উড়ে যাওয়া, আবার ফিরে এসে পানিতে বসা, জলাশয়ের বুক চিরে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছোটাছুটি করা ও মনোমুগ্ধকর কিচিরমিচির শব্দ— শীতকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাশয়ের চিত্র এমনই দেখা যেত। কিন্তু এখন যেন সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। জাবিতে কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির সংখ্যা।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় শীতকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে অতিথি পাখিরা আসত। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে জাবির লেকগুলোতে প্রথমবারের মতো অতিথি পাখি আসে। এরপর ২০১৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবন-সংলগ্ন লেক, বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র (ওয়ালইড লাইফ রেসকিউ সেন্টার), জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল-সংলগ্ন লেক ও পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকগুলো অতিথি পাখির মূল অভয়ারণ্য। এখন লেকগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুখরিত ক্যাম্পাস। তবে দুই তিন বছর আগের তুলনায় তা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
অতিথি পাখি আসার আগে তাদের সুস্থ ও সুন্দর আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ দায়িত্বে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত লেকগুলো পরিষ্কার করে থাকে। তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতা ও তথ্যমূলক ব্যানার, ফেস্টুন টানায়। এ বছরও এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার, বিক্রি হচ্ছে বাজারে
অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় জলাশয়গুলোতে ফোটা লাল শাপলা। লাল শাপলার চাদরে পাখিদের বিচরণের দৃশ্য মন কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।
প্রতি বছর শীতপ্রধান দেশ মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সাইবেরিয়া ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর দিকে দেশে আসতে শুরু করে পাখিরা। বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখিদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারি অন্যতম। এ ছাড়াও আছে খঞ্জনা, পান্তামুখী, নর্থগিরিয়া, কমনচিল, কটনচিল, পাতিবাটান, পান্তামুখী, বুটি হাঁস, বৈকাল ইত্যাদি প্রজাতির পাখি। তবে জলাশয়গুলোয় পাতি সরালির বিচরণই বেশি লক্ষণীয়।
অতিথি পাখি দর্শনের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ভোরে ও সূর্য ডোবার আগে। এ সময় পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায় জলাশয়ের ওপর। নিভু নিভু সূর্যের আলো, শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে শত শত পাখির কিচিরমিচির শব্দে এ সময়ে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাইরের অনেক দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন তারা।
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা হৃদয় হাসান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতি বছরই আপনাদের ক্যাম্পাসে আসি অতিথি পাখি দেখতে। ঢাকা শহরে এই সুযোগটি নেই। বাসার ছোট ছেলেমেয়েদের এনেছি এবার। তারাও এই সময়টা খুব উপভোগ করছে।’
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আগের তুলনায় গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোর পাখিদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জলাশয়ে পাখিরা থাকে, সেগুলো এখন তাদের বসবাস-উপযোগী নয়। জলাশয়গুলোর আশপাশে অধিক লোকসমাগম ও শব্দদূষণই এর প্রধান কারণ।’
‘পরিবহন চত্বরের পেছনে যে লেক, সেই লেকের ধারে সারা দিনই লোকজন থাকে। এর জন্য পাখিরা ওই লেকে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাছাড়া অন্যান্য লেকেও এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম।’
ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় যে লেক, সেটি হচ্ছে ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার-সংলগ্ন লেকটি। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় ওই লেকে পাখির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে লেকটি এখন পানা দিয়ে ভরে গেছে। পরিষ্কার না হওয়ায় পাখিরা পুরো লেকজুড়ে বসতে পারে না। অল্প কিছু অংশে পাখি বসে। তবে এবার প্রশাসন লেকটি পরিষ্কার করেনি। আমি নিজে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কয়েকবার অবগত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত না করা হলে পাখির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগরের অতিথি পাখি তথা সকল বন্যপ্রাণীর জন্য সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘এ বছর গতবারের তুলনায় পাখি বেশ কম এসেছে। আটটি লেকের মধ্যে মাত্র দুটিতে পাখি বসতে দেখা গিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই পাতি সরালি। ডব্লিউআরসি-সংলগ্ন লেক বাদে, অপর একটি লেকে পাখি বসলেও মাত্র দুই হাজারের কাছাকাছি পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে । অধিকাংশ লেক কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় পাখিরা সেখানে বসতে চায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য, কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে দেখছি উল্টো চিত্র। আগের মতো আর পাখি নাই। জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘অতিথি পাখির সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে— এ ব্যাপারে আমরা অবগত। কিন্তু প্রশাসনের উচ্চ স্তরের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।’
অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, গাছ কাটা, লেক ভরাট ও পরিষ্কার না করাসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে পারলেই অতিথি পাখির আগমন আবারও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব লেক পরিষ্কার করা হয়েছে সেখানে আবার স্থানীয় জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ কম হওয়ায় বুনো হাঁসগুলো বসছে না, যদিও মাছ শিকারি পাখিগুলো, যেমন— পানকৌড়ি, সাপপাখি, মেটে মাথা কুড়া ঈগল ইত্যাদি এখানে পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘আসলে এটা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের সমস্যা নয়, পুরো দেশেই বর্তমানে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের জাবিতে যে বিষয়টা, পাখির আবাসস্থল লেকগুলো ঠিক আছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন এবং এগুলোর আলো পাখির আবস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কেননা পাখিদের বিচরণ স্বভাবতই রাতে বা ভোরবেলায় বেশি হয়ে থাকে।’
‘আমরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে গত ৩ জানুয়ারি পাখি মেলার আয়োজন করে দেশবাসীকে আসলে পাখি আবাসস্থল সংরক্ষণ আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মেসেজটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘পাখি কমে যাওয়ার জন্য বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু উচু ভবন নির্মাণ, যা পাখিদের বিচরণে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও রয়েছে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ (অতিরিক্ত যানবাহন থেকে তৈরি শব্দদূষণ) ও পাখির খাদ্য সংকট। পাখি আসলে ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে, কিন্তু এই খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা কমে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখবেন যে, পুকুরগুলো পরিষ্কার করে প্রতিটি পুকুরে পাখির বসার জন্য নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লেক সংস্কার করেছি আট লাখ টাকা ব্যয়ে। এছাড়া আগে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হতো, কিন্তু বর্তমানে পাখির খাদ্যের কথা চিন্তা করে আর লিজ দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা বিবেচনায় রেখেছি, কীভাবে পাখির আগমন বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশে আবহমান জীববৈচিত্র্যের এক অপরুপ সৌন্দর্য এই অতিথি পাখির আগমন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেই অতিথি পাখি জাহাঙ্গীরনগর থেকে সরে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
৩৭ দিন আগে
নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
পঞ্জিকার পাতায় চলছে হেমন্তকাল। তবে প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। আর শীতকাল এলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মেলে অতিথি পাখির। দেশের যে কয়েকটি স্থানে বৃহৎ পরিসরে অতিথি পাখির উপস্থিতি দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে ৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই রিসোর্টটি যেন পাখিদের এক আপন রাজ্য। বছরের ১২ মাস এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির। আর ৯ মাস থাকে বিদেশি পাখিরা। শীতের হাওয়া বইতেই তাই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসছে অরুণিমায়।
দিন যত যাচ্ছে শীতের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করছেন অরুণিমায়।
৪৮৮ দিন আগে
খুলনায় অভিনব পন্থায় অতিথি পাখি শিকার
প্রতিবছরই শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে পাখিরা আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জলাশয়ে। মূলত নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবস্থান করে এসব পাখি। শীত শেষ হলে আবার ফিরে যায় তারা। এবছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলসহ খুলনা, বাগেরহাট ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিল ও জলাশয়গুলোতে দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। পানি কমে আসা জলাশয়গুলোতে খাবারের সন্ধানে অতিথি পাখির সঙ্গে আসছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিও। আর এই সুযোগে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি নিধন করছে অসাধু শিকারিরা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও মাছে বিষ দেয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশলে পাখি শিকার করছে তারা। প্রতি বছর প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার্থে সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখি এ অঞ্চলে আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদা খোচা, ডংকুর, হুরহুর, খয়রা ও সোনা রিজিয়া অন্যতম। স্থানীয় পেশাদার শিকারিরা আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিবছরেই মেতে ওঠে পাখি নিধনে। এতে করে কমতে থাকে অতিথি পাখির সংখ্যা।
আরও পড়ুন: অতিথি পাখিতে মুখরিত রাণীসাগর দিঘি
৮২৫ দিন আগে
অতিথি পাখিতে মুখরিত রাণীসাগর দিঘি
অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত এখন রাণীসাগর দিঘি। পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বেড়েছে। পুরো দিঘির জলাশয় সেজেছে নতুন সাজে। দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্যে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রতি বছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিকে সাজায় নতুন সাজে।
পাখিদের কলতানে পুরো দিঘি এলাকা পরিণত হয়েছে পাখির স্বর্গরাজ্যে। সন্ধ্যা নামলেই দিঘিপাড়ের লিচু বাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় খাবারের সন্ধানে রামরাই দিঘিতে ভিড় জমায় তারা।
রাণীশংকৈল উপজেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর জলাশয় রাণীসাগরের অবস্থান।
আরও পড়ুন: শীতের অতিথি পাখি দেখতে কোথায় যাবেন?
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার একমাত্র সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রামরাই দিঘি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে এখানে। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখিপ্রেমি ও সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত পর্যটন কেন্দ্রের পাখিগুলোকে দেখার জন্য ছুটে আসেন।
কিন্তু স্থানীয় ও পর্যটকদের মতে, কিছু লোক লেকে পোল্ট্রি বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করায় অতিথি পাখিরা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পর্যটকদের প্রায়ই হ্রদে বা এর তীরে ফেলা বর্জ্য থেকে নির্গত দুর্গন্ধ থেকে সুরক্ষার জন্য মুখ ঢেকে রাখতে দেখা যায়। তবে কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে যথেষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই।
আরও পড়ুন: অভিনব কায়দায় চলছে অতিথি পাখি শিকার
১১৩৮ দিন আগে
অভিনব কায়দায় চলছে অতিথি পাখি শিকার
শীতের শুরুতেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে কিছুটা উষ্ণতার আশায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে প্রচুর প্রজাতির অতিথি পাখি। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের কারণে প্রতিনিয়ত এসব পাখি নিধন হচ্ছে। পাখি নিধন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে বন্ধ হচ্ছে না পাখি শিকার।
জানা গেছে, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়িঘের থেকে সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র ফাঁদে ফেলে প্রতিদিন রাতে শিকার করছে অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য এখন মহাদেবপুরের কুঞ্জবন
পৌরসদর থেকে কয়রা অভিমুখে শিববাটী ব্রিজ পার হয়ে একটু দূরে নির্মাণাধীন কৃষি কলেজের বিপরীতে শামীম হোসেনের ‘ইব্রাহীম গার্ডেন’ নামে বনায়ন প্রকল্প রয়েছে। দিনের শেষে সন্ধ্যার পর থেকে বালিহাঁস, দলকচু, খয়েরী ও দেশীয় বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি দল বেঁধে আশ্রয় নেয় সেখানে। অন্যদিকে পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের প্রবাসী ভাই শামীম হোসেন পাখিদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল।
সূত্র জানায়, পাইকগাছা উপজেলার বয়রা, কচুবুনিয়া, বাসাখালী, বাইসারাবাদ, তেঁতুলতলা, লতা, উলুবুনিয়া, পুটিমারী, শংকরদানা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, কপিলমুনি, তালতলা, গোয়ালবাথান, শ্রীফলতলা, প্রতাপকাটি, শামুকপোতা, চকবগুড়া, খড়িয়া, অকাইবাসী, ঠাকুনবাড়ী, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালী ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা বিভিন্ন প্রজাতির এসব অতিথি পাখিরা দলবেঁধে এসব এলাকায় গিয়ে খাদ্য সংগ্রহে নেমে পড়ে। এ সময় সংশ্লিষ্ট ঘের বা জলাশয়ের কর্মচারীদের যোগসাজসে শিকারি চক্র পাখি শিকারে করে।
আরও পড়ুন: অতিথি পাখিতে মুখরিত কুমিল্লার পুকুর আর দিঘিগুলো
স্থানীয়রা জানান, এর আগে তারা বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় কীট-পতঙ্গে বিষ, ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখতো। কোথাও কোথাও ফাঁদ পেতে রাখা হয়। এভাবে শিকারি চক্র প্রতিদিন পাখি শিকার করে। তবে এখন তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তাও নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, শিকারিরা গুগল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ডাক ডাউনলোড করছে নিজ নিজ মোবাইলে। এরপর রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা দেখে মোবাইলে ওইসব পাখির ডাক বাজানো শুরু করছে। পাখিরা ওই টোন শুনে মনে করছে তার অন্যান্য সাথীরা সেখানে জড় হতে থাকে। আর শিকাকিদের এই প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে নিচে নেমেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে প্রতিদিন শিকার হচ্ছে অসংখ্য অতিথি পাখি।
পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালী বনায়ন সমিতির অধ্যাপক জিএমএম আজাহারুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে অতিথি পাখি আসা শুরু হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত এলাকায় পাখিগুলো অবস্থান করে। এরপর আগতদের মধ্যে বেঁচে থাকারা উড়াল দেয় নিজ দেশে। তবে এদের থাকার জন্য তেমন কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা অভয়াশ্রম না থাকায় শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে হাজার হাজার মাইল দূরে আসা অতিথি পাখিদের অধিকাংশরাই প্রবাসেই নিধন হয়।
আরও পড়ুন: অতিথি পাখিতে মুখরিত ফরিদপুরের নুরপুর বিল
তিনি জানান, পাখিরা রাতের চেয়ে দিনের বেলায় বেশি নিরাপত্তাহীন থাকে। বিশেষ করে রাতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে সকালে যখন খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তখন তারা শিকারিদের কবলে পড়তে হয়। পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানান বনায়ন সমিতির এ নেতা।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, পাখি শিকার বন্ধে থানা পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। পাখি শিকারের ব্যাপারে তথ্য পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
১১৭২ দিন আগে
শীতের অতিথি পাখি দেখতে কোথায় যাবেন?
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পাখিরা তাদের খাবারে সন্ধানে, প্রজনন এবং ছানাদের লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের খোঁজে হাজার হাজার মাইল উড়ে যায়। বাংলাদেশে অতিথি পাখিরা আসে মূলত উত্তর মেরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, মঙ্গোলিয়া এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে। নিজেদের জায়গা থেকে তুলনামূলকভাবে কম শীতল হওয়ায় বাংলাদেশকে বেছে নেয় এই পরিযায়ী পাখিগুলো। এই অতিথি পাখিদের ভীড় করা দেশের কয়েকটি স্থানের তালিকা নিয়েই এবারের ফিচার।
শীতের অতিথি পাখি দেখতে কোথায় যাবেন
ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকা
ঢাকার ভেতরে অতিথি পাখির দেখা মেলে পিলখানা, মিরপুর চিড়িয়াখানা ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী লেকে। তবে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ভীড় প্রাণ ভরে উপভোগ করতে হলে যেতে হবে ঢাকার নিকটে সাভার উপজেলায় অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়া নয়নাভিরাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৪ সালে ঘোষণা করা হয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
সিলেটের হাওড় এলাকায়
হাওড়, নদী ও পাহাড়ের সমৃদ্ধ সিলেটে অতিথি পাখিগুলো খুঁজে পায় পরম আশ্রয়। সিলেট বিভাগজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওড়, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাইল হাওড় ও পাত্রখোলা লেক, সুনামগঞ্চের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও রোয়া বিল-এ প্রতি বছরই মুখরিত হয়ে উঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।
১১৭৩ দিন আগে
নওগাঁয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য এখন মহাদেবপুরের কুঞ্জবন
হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত কুঞ্জবন গ্রাম। এখন পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে নদীর দু’পাড়ের মানুষের। আর অতিথি পাখিদের ‘নিরাপদ আবাস’ গড়তে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো।
১৪৯০ দিন আগে
অতিথি পাখিতে মুখরিত কুমিল্লার পুকুর আর দিঘিগুলো
কুমিল্লার পুকুর আর দিঘিগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে অতিথি পাখি। বিশেষ করে শহরতলীর কয়েকটি পুকুরে মেলা বসিয়েছে নানা রঙের পরিযায়ী পাখিরা।
১৫০৪ দিন আগে
অতিথি পাখিতে মুখরিত ফরিদপুরের নুরপুর বিল
অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরপুর বিল। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ বিলে শীতের পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন নানা বয়সের দর্শনার্থীরা।
১৫৪১ দিন আগে
অতিথি পাখির কলরবে মুখর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)!
১৫৬৭ দিন আগে