রূপসা
রূপসায় নদীর চরে কুমির, আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ
খুলনার রূপসায় নদীর চরে বড় আকৃতির একটি কুমির দেখতে পেয়েছে এলাকাবাসী। রবিবার উপজেলাধীন চররূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে কুমিরটি দেখতে পায় এলাকাবাসীরা।
এই প্রথম রূপসা নদীতে কুমির দেখতে পাওয়া যায় বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চররূপসার মাছ কোম্পানি এলাকায় কম্পিউটার দোকানদার মো. রফিকুল ইসলাম প্রথমে কুমিরটি দেখতে পেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইলে কুমিরের ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে ছবিটি পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিরের ছবিটি ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন: কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেন যুবক
কুমিরটি দেখার জন্য স্থানীয়রা ও দূর-দূরান্তের মানুষ এসে ভীড় জমাতে থাকে।
সংবাদ পেয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বাদশা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম কুমিরটি দেখতে আসেন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের সতর্ক করার জন্য বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে সঙ্গে নিয়ে চররূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রূপসা নদীর পাড়ে গিয়ে কুমিরের দেখা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, উৎসুক জনতা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে কয়েকটি মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে।
বাগমারা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ লুৎফর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি রূপসা নদীর পাড়ে অবস্থিত। জোয়ারের সময় বারান্দা পর্যন্ত পানি হয়। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় শিক্ষার্থীরা খুবই ঝুঁকিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে নদীর পাড়ে চর এলাকায় কুমির দেখতে পাওয়ায় শিক্ষক/শিক্ষিকা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এতে অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হবে। এই মুহূর্তে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সীমানা প্রাচীর যদি শিগগিরই না দেয়া হয়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও হ্রাস পেতে পারে।
চররূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালমা খাতুন বলেন, সকালে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে নদীর চরে কুমিরটি দেখতে পাওয়া যায়। অল্প সময় কুমিরটি চরে ছিলো। এরপর নদীতে চলে যায়। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে খবর দিলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে তারা কুমিরটি দেখতে আসেন। তারা শিক্ষার্থীসহ উৎসুক জনতাকে সতর্ক থাকতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, কুমির আতঙ্কে বিদ্যালয়ের ক্লপ শিকল গেট আটকিয়ে শ্রেণিতে পাঠদান দেয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থীকে বাইরে যেতে দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল বিশাল আকৃতির কুমির
করমজল পর্যটন কেন্দ্র: প্রজনন হচ্ছে লবণ পানির কুমির ও ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ
রূপসায় ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় কলেজের অধ্যক্ষ নিহত
খুলনার রূপসায় ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় স্থানীয় চাঁদপুর কলেজের মো. রফিকুল ইসলাম (৪০) নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর ১২ টায় উপজেলার আলাইপুর সেতুর বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ট্রলিচালককে আটক করেছে পুলিশ।
আটক ইয়াজুল মল্লিক একই জেলার মহিষাগুনি উপজেলার আজগর মল্লিকের ছেলে।
আরও পড়ুন: ট্রাক ও মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত ২, আহত ১০
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১২ টার দিকে নিহত রফিকুল ইসলাম বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। দুপুর ১২ টার দিকে তিনি আলাইপুর ব্রিজ সংলগ্ন ওয়াপদার মোড়ে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী ইটবোঝাই একটি ট্রলি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রা ঘাতক ট্রলি ও চালককে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে কাভার্ডভ্যান চাপায় কলেজছাত্র নিহত
চট্টগ্রামে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ১১
খুলনায় কিশোরীর লাশ উদ্ধার
খুলনার রূপসা উপজেলায় এক কিশোরীর লাশ পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে গোয়ালবাড়ির চর গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মীম (১৪) গোয়ালবাড়ী চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মন্টু ফকিরের মেয়ে। সে পিঠাভোগ বিজিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার সকালে মীম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সোমবার রাতে স্থানীয়রা জঙ্গলে মেয়েটির লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ রাত ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি বলেন, ‘মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা হোসেন নামে ২২ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করেছি।’
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় প্রকৌশলীর বাসা থেকে গৃহপরিচারিকার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
রাজশাহীতে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
খুলনায় ট্রাকচাপায় এনজিও কর্মকর্তা নিহত
খুলনার রূপসা উপজেলায় কয়লাবোঝাই ট্রাকের চাপায় এক এনজিও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলাইপুর ছোট ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত খন্দকার ফিরোজ আহমেদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের খন্দকার মফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি রূপসা উপজেলায় আরআরএফ নামে একটি এনজিও এর বিজনেস ডেভলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চলতি মাসে তিনি রূপসা শাখায় যোগদান করেন।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
রূপসা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. তারেক রহমান জানান, অফিসে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফিরোজ আলাইপুর ছোট ব্রিজের কাছে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা কয়লাবোঝাই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
এ ঘটনায় ট্রাকের চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাক ও এর সহকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান এসআই।
খুলনায় চাচাতো ভাইয়ের লাঠির আঘাতে বৃদ্ধ নিহত
খুলনার রূপসায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকালে উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামের মধ্যপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত চিত্তরঞ্জন বালার একই এলাকার মৃত নীরধ বালার ছেলে।
আরও পড়ুন: জামাই বাড়িতে বেড়াতে এসে মোটরসাইকেল চাপায় বৃদ্ধ নিহত
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার বিকালে চাচাতো ভাই সমির বালার সঙ্গে চিত্তরঞ্জন বালার পৈত্রিক সম্পত্তির সীমানা নির্ধারন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সমির বালা তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে চিত্তরঞ্জন বালাকে আঘাত করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন তাকে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরা হলো না তার!
খুলনায় অবৈধ কয়লার চুল্লী: কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ কয়লার চুল্লী। এসব কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে চির চেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ। এছাড়া কালো ধোয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার মানুষ। কয়লার চুল্লী গড়ে উঠলেও মানা হচ্ছে না নীতিমালা। তবে অবৈধ কয়লার চুল্লীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতবাড়ির পাশে কয়লার চুল্লীর বিষাক্ত ক্ষতিকর ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্কদের মধ্যে চর্মরোগের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধোঁয়ার কারণে ফসল, গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে এবং গাছের ফল-ফলাদিও কমে যাচ্ছে। জলাশয়ের হচ্ছে মাছেরও ক্ষতি। এমনকি ভর্য়কর এ কালো ধোঁয়ায় সর্দি কাশি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
রূপসা উপজেলার কয়লার চুল্লীগুলো পরিবেশ ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা এবং ভেঙে দিলেও কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যবসা। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
রামনগর নতুন বাজার খেয়া ঘাটের পূর্ব পাড়ের উত্তর পাশে পুরাতন মোমিন রাইস মিল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোসা. আনজিরা খাতুন বলেন, এই কয়লার চুল্লীর কালো ধোঁয়ার কারনে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও সর্দির খুব সমস্যা হয়।
একই এলাকার জামিলা খাতুন বলেন, ‘যেই ধোঁয়া শুরু হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ছেলেটার কাশি হয়। ডাক্তার দেখাতে এবং ওষুধ কিনতে এক হাজার থেকে এক হাজার পাঁচশ টাকা লাগে।’
একইভাবে ঘনবসতি এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম ও সালমা বেগম বলেন, কয়লা চুল্লীর কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়, গলা জ্বলে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ফুটবল: ৬ লাখ পিস টি-শার্ট তৈরি করেছে সনেট টেক্সটাইল
কয়লা চুল্লীর অবৈধ ব্যবসার কথা স্বীকার করে জামাল খাঁ বলেন, আমি বাপ-দাদার আমল থেকেই এ ব্যবসা করছি। তবে, এটি অবৈধ জেনেও পেটের দায়ে করি। এছাড়া এ কয়লা দেশেই ব্যবহার হয়ে থাকে।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মারুফ বিল্লাহ বলেন, গতবছর আমরা অভিযান চালিয়ে কয়লার চুল্লী ভেঙে দিয়েছিলাম। এখন পুনরায় চালু হলে আবারও অভিযান চালানো হবে।
রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অবৈধ কয়লার চুল্লীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ‘শাপলা পাতা’ মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি, বিলুপ্তির আশঙ্কা
খুলনায় আগুনে পুড়ল ২১ দোকান ও ৫ ঘর
খুলনার রূপসায় একটি কাঁচাবাজারে আগুন লেগে ২৫টি দোকান ও পাঁচটি ঘর পুড়ে গেছে। শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা শামসুর রহমান জানান, শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে কাঁচাবাজারের ককশিটের গুদামে আগুন লাগে এবং মুহূর্তে তা আরও ২৫টি দোকান ও ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান তিনি।
দমকলকর্মীরা একটি জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে
আশুলিয়ায় জুতার কারখানায় আগুন, নিহত ৩
রূপসায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
খুলনার রূপসায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ইনতাজ মোল্লার ইটের আঘাতে ছোট ভাই ইসরাঈল নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার টিএসবি ইউনিয়নের পাঁচানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইসরাঈল মোল্লা ওই এলাকার মৃত ইকলাস মোল্লার মেজ ছেলে। ঘটনার পর ইউপি সদস্য ইনতাজ মোল্লা ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে।
রূপসা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুজ্জামান জানান, নিহত ইসরাঈল মোল্লারা পাঁচ ভাই। ভাইদের একজন পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। বাকি চার ভাইয়ের তিন ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন, আটক ১
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকালে ইসরাঈল বাড়িতে অবস্থান করছে জেনে বড় ভাই ইনতাজ, ছোটভাই মারুফ ও বড় ভাইয়ের ছেলে সোহাগ পাঁচানি গ্রামে নিহতের বাড়ি আসে। তাদের চারজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনজন ইসরাইলের ওপর লাঠি ও ইট দিয়ে আক্রমণ করে। এসময় ইসরাঈল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে রেখে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাঈলকে মৃত ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ভাতিজার ইটের আঘাতে চাচা খুন!
খুলনায় এক উপজেলা ও তিন থানায় ৭ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’
খুলনার রূপসা উপজেলা ও খুলনা মহানগরীর তিনটি থানা এলাকায় এক সপ্তাহের কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
খুলনায় সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনসমাগমের স্থানসমূহ বিবেচনায় নিয়ে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে করোনা সংক্রমণের আধিক্য বিবেচনায় রূপসা উপজেলা, খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা এবং খালিশপুর থানায় জরুরি সেবা ব্যতীত সকল দোকান এবং জনসমাবেশের স্থান ৪ জুন থেকে আগামী এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
রূপসা উপজেলাসহ খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ রাখা, হোটেলগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং যত্রতত্র একাধিক লোকের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেবে।
এসময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনে মনিটরিং জোরদার করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে প্রচার-প্রচারণা চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সভায় সিটি মেয়র বলেন, 'সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে খুলনার স্বাস্থ্যবিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সন্ধ্যার পর একাধিক লোকের জনসমাগম বন্ধ করতে হবে।'
তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সর্বক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মসজিদের ইমামদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট: সীমান্তবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিতে খুলনা বিভাগ
উল্লেখ্য, রূপসা উপজেলাতে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা ৪ দশমিক ১৮। কিন্তু অন্যান্য উপজেলাতে এই হার শতকরা প্রায় এক ভাগ। এছাড়া খুলনা মহানগরীর সদরে সংক্রমণ হার শতকরা ৩৫, খালিশপুরে ২৫ এবং সোনাডাঙ্গাতে এই হার শতকরা ১৭। তবে অন্যান্য স্থানে সংক্রমণের হার নিম্নগামী।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন এবং খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে ৭ দিনের লকডাউন
এছাড়া খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান, মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইউসুপ আলী, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কাঁকড়া শিকার যাদের জীবন-জীবিকা
খুলনা জেলার ভৈরব ও রূপসা এলাকার নদীগুলোতে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করেই চলে অনেক কাঁকড়া শিকারির জীবন-জীবিকা।
ভৈরব নদীর গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাটে কথা হলো সজল (২৫) নামে এক কাঁকড়া শিকারির সাথে। পানির ওপর এই জীবন সংগ্রামে ঠিক কখন জড়িয়েছেন সজলের তা মনে নেই। মামার হাত ধরে এসেছিলেন কাঁকড়া ধরার পেশায়। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে সে এখন সংসারি। আজও এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে সে।
সজল জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাজী গ্রামে। কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে চলে সংসার।
তিনি বলেন, কুঁচিয়া দিয়ে বড়শি পেতে কাঁকড়া মারেন। তবে কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয় আকার-আকৃতি ভেদে।
আরও পড়ুন: ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে এমবি কেনার টাকা না দেয়ায় কিশোরের আত্মহত্যা!
কথা হয় আর এক শিকারী দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামের মৃত কালাম মন্ডলের ছেলে সালাম মন্ডলের সাথে।
তিনি জানান, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে হয়। এক পর্যায়ে নদীতে নৌকা নিয়ে কাঁকড়া শিকারে নামে। কাঁকড়া শিকার করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি খেয়ে পড়ে ভালোই আছে।
সজল ও সালামের মতো অনেক জেলেদের জীবন সংসার চলছে কাঁকড়া ধরে। এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শি বেঁধে নদীতে ফেলে ধরা হয় কাঁকড়া। এছাড়াও এক প্রকার বিশেষ জালও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে ১৫ বস্তা চিনিসহ ৭ মৌয়াল আটক
জেলেরা জানান, ২৫০ থেকে ৫০০ হাজার টাকা বিক্রি হয় কাঁকড়ার কেজি। পুরুষ-নারীসহ কাঁকড়ারও রয়েছে তিনটি ধরণ। এই তিন ধরণের কাঁকড়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম আলাদা নির্ধারণ করা হয়। তবে ছোট সাইজের এক কেজি পুরষ কাঁকড়া ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে নারী কাঁকড়ার দাম একটু চড়া। ডিম ওয়ালা নারী কাঁকড়া ৫০০, ডিম ছাড়া ৩৫০, ২০০ গ্রাম ওজনের নারী কাঁকড়া ৮-১ হাজার ৫০০ টাকা এবং হিজড়া কাঁকড়া ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাট এলাকায় নদীতে ট্রলার ও ছোট নৌকা দিয়ে কাঁকড়া ধরা চলছে। জেলেরা কুচিয়া কেটে বড়শিতে লাগানোর প্রক্রিয়া করছিলেন।
নন্দনপ্রতাপ গ্রামের জেলে কাওসার বলেন, কাঁকড়া ধরার জন্য কুঁচিয়া মাছ কেটে টুকরো করে আহার হিসেবে বড়শিতে লাগানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে নদিতে বৃষ্টির পানি বেড়ে গেলে মিঠা পানিতে কাকড়া পাওয়া যায় না। দাড় বেয়ে চলা মাঝারি ধরণের নৌকায় শত খানেক বাঁশের শলা দিয়ে বাশের খাঁচা বা ঘুনি দিয়ে ধরা হয় কাঁকড়া। এক ঘুনির সাথে আরেক ঘুনি দড়ি দিয়ে বেধে তা মালার মতোন সাজিয়ে রাখা হয় নৌকায়। খাচার মধ্যে কুচিয়া মাছের টুকরো দিয়ে পেতে রাখা হয়। লম্বা রশির মাথায় ভারি (ওজন) বেধে দিয়ে খাঁচাগুলোকে লম্বা দড়িতে মালার মতো বেধে নদিতে ফেলে দেয়া হয়। জোয়ার বা ভাটায় মাঝা-মাঝি পানি যখন স্থির হয় তখন তা টেনে তোলা হয় নৌকায়। খাঁচার ভিতরে কুচে মাছের টুকরো খেতে আসা কাকাড়া খাঁচায় ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এক এক খাঁচায় একের অধিক হারে কাকড়া আটকা পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ইয়াসের তাণ্ডব: সাতক্ষীরায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
একাধিক কাঁকড়া শিকারিরা বলেন, বড় সাইজের কাকড়া মহাজনদের কাছে বিক্রয় করেন তারা। মহাজনরা তা বিদেশে পাঠায়। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় দাম অনেক কম। আগে তারা অনেক ভালো দাম পেতো, কিন্তু এখন বাজার দাম কমে গেছে। তবুও জীবিকার প্রয়োজনে কাঁকড়া শিকার করে তা বিক্রি করে চলছে।
কিছুটা আক্ষেপের সাথে সজল বলেন, 'কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে আমাদের যে পুঁজি খাটাতে হয় ও পরিশ্রম হয়, সেই হারে দাম পাচ্ছি না।’
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুব উল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে জেলেদের জন্য কোনো বরাদ্দ আসলে কাঁকড়া শিকার করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের প্রকৃত তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।’