ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
জলবায়ুর কারণে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৩১ সালের মধ্যে ২ কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হবে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।
অভিবাসন বর্তমানে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। অভিবাসনের জন্য মূলত পুশ ফেক্টর ও পুল ফেক্টর দায়ী। তাছাড় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নতুন সংকট তৈরি করছে যা ভবিষ্যতেও ফোর্সড মাইগ্রেন্ট এর সংখ্যা বাড়াবে। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার।
মঙ্গলবার অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ: টেকিং এ হিউমেন রাইটস বেজেড অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মালদ্বীপকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
তিনি একশনএইডের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশ নয় এটি গ্লোবাল ই্স্যু। সরকারি, বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের সবার সাথে আলোচনা করে গবেষণাধর্মী তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ঐক্যমত হয়ে আমরা কপ সম্মেলনসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে এ বিষয়টি তুলে ধরতে পারি যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টির সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেন কারো অভিবাসন না ঘটে সেজন্য তিনি স্থানীয় পর্যায়ে বেশি কাজ করার তাগিদ দেন। এ সময় তিনি দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একশনএইড বাংলাদেশ এর সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নিয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ ও ঢাকা জেলায় পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়। ফলাফলের আলোকে সেমিনারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বক্তারা ওই অঞ্চলের বিদ্যমান সমস্যা ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান
একশনএইডের এ গবেষণায় উঠে আসে মানুষের জীবিকাই অভিবাসনের মূল কারণ। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ই্যসু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া জীবিকা ও অর্থনীতি এর একটি বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কোন বর্ডার নেই। মানুষ বাস্তুচ্যূত হওয়ার পর অভিবাসী হওয়ার মাঝে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে। তারপর ধীরে ধীরে একটি বড় অংশ অভিবাসনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জীবিকা, ঋণগ্রস্থতা, দক্ষতাহীনতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, উচ্ছেদ ইত্যাদি ফ্যাক্টরও বড় কারণ বলে তুলে ধরা হয় এ গবেষণায়।
এ অভিবাসন ঠেকাতে গবেষণায় মৌলিক অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বহুমুখী তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা, দক্ষতা উন্নয়ন, এ খাতে সচ্ছতার সাথে কার্যকর বিনিয়োগ এবং জাতীয় অভিবাসন নীতিমালা করার কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: কথার চেয়ে কাজ বেশি চান শেখ হাসিনা
সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি ধরণের অভিবাসন হচ্ছে তা নিয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে নিয়মিত এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক হয়। সরকার থেকে বাস্তুচ্যুতদের ঋণ দেয়া হয় তবে অনেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। আমাদেরকে যৌথ প্রয়াসে সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ও আজকের আলোচনায় অভিযোজন, প্রশমন, জীবিকা, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন জীবিকার উন্নয়ন ঘটাতে। একটা সমন্নিত উদ্যোগ ও রোডম্যাপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আমাদের উন্নয়ন যেন পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকির কারণ না হয়ে উঠে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন কাউকে বিশেষ সুবিধা দেবে না বরং সবার উপর প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সেমিনারে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, একশনএইড ইন্টারন্যাশনারের প্রকল্প সমন্বয়ক জেসিকা ফেলারিও, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, ইউএন উইম্যানের জেন্ডার সমন্বয়ক দিলরুবা হায়দার প্রমুখ।
৩ বছর আগে