১৮ দফা নির্দেশনা
দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের আশায় দেশব্যাপী জারি করা ৭ দিনের লকডাউনকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন যেখান থেকে কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তারা বলছেন, লকডাউনের প্রথম দিনে কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য স্থানে জনগণের ব্যাপক সমাগম, চলাচল ও জনসমাবেশ দ্বারাই বোঝা যায় জনগণ এই 'আংশিক' শাটডাউনটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি যেহেতু একই সাথে অফিস, কারখানা এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলা খোলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সেই আলোচিত ইউএনও এবারও লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে
বিশেষজ্ঞরা জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সকল অফিস, কল-কারখানা, বইমেলা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ১৪ দিনের একটি সম্পূর্ণ লকডাউন কার্যকর করার এবং কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে এটিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার উভয়েরই ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে এক সপ্তাহব্যাপী দেশব্যাপী লকডাউন চলছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এটিই বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক লকডাউন। গত বছরের ২৬ মার্চ সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন কার্যকর করার পরিবর্তে পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল।
আংশিক লকডাউন নিরর্থক
ইউএনবির সাথে আলাপকালে ডব্লিউএইচও-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রাক্তন উপদেষ্টা প্রফেসর মুজাহেরুল হক বলেন, 'সরকার কল-কারখানা, অফিস এবং এমনকি বইমেলা খোলা রাখায় আমরা এটিকে লকডাউন বলতে পারি না। এটি জনসাধারণের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করার বৈজ্ঞানিক উপায় নয়।'
আরও পড়ুন: দেশে ৭ দিনের লকডাউনে যানজট কম রাস্তাঘাটে
তিনি বলেন, লকডাউন মানে পুরোপুরি মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। "লকডাউন মানে সবকিছু বন্ধ হয়ে থাকবে। কেবল কয়েকটি জরুরি পরিষেবা, ওষুধের দোকান এবং নির্দিষ্ট কিছু বাজার যেখান থেকে জনগণ খাবার কিনতে পারবে তা খোলা থাকতে পারে।"
মুজাহেরুল বলেন, সরকারের জারি করা ৭ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা লকডাউনের নীতি ও সংজ্ঞার সাথে মেলে না। "এটি একটি অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিত এবং আংশিক লকডাউন। এটি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জাতিকে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করবে না।"
জাতীয় প্রযুক্তি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন হলো জরুরি সেবা ব্যতীত সবকিছু বন্ধ করে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার সর্বজনস্বীকৃত ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে সরকার অনেক কিছুই খোলা রেখে আংশিক লকডাউন কার্যকর করেছে। সারাদেশে নয়, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি আংশিক লকডাউন কার্যকর করা যেতে পারে। এটি কেবল শক্তি অপচয়, অর্থের অপচয়। এর মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।'
আরও পড়ুন: লকডাউন মানা হচ্ছে না কেরানীগঞ্জে, গণপরিবহনসহ সকল যান চলছে
অধ্যাপক নজরুল আরও বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য কোনো আইন ও এর কার্যকর প্রয়োগ না থাকায় জনগণ লকডাউনটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি।
লকডাউন ১৪ দিনের হওয়া উচিত
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এম এইচ চৌধুরী (লেনিন) বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণকে কমিয়ে আনতে কমপক্ষে ১৪ দিনের সম্পূর্ণ একটি লকডাউন কার্যকর করা উচিত।
তিনি জানান, মানবদেহে করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময়সীমা ২ সপ্তাহ। তাই ভাইরাসের সংক্রমণ চক্রটি ৭ দিনের লকডাউন দিয়ে ভেঙে ফেলা যায় না।
লেনিন বলেন, জনগণ প্রথম দিনেই সরকারের জারি করা ৭ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন করেছে। কেননা তাদের মধ্যে এই শাটডাউন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
আরও পড়ুন: করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি: আরও ৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ৫২
'আমি মনে করি সরকারের অবিলম্বে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। আইন প্রয়োগকারীদের তদারকি বাড়াতে হবে যাতে কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে আসতে না পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত যাতে মানুষ অকারণে বাইরে ঘোরার সাহস না করতে পারে। নতুবা, আমরা এই শিথিল লকডাউন থেকে কোন ফলই পাবো না।'
জনপ্রতিনিধিদের জড়িত করা
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি স্তরের মানুষের বিশেষত জন প্রতিনিধিদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা ব্যতীত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে এককভাবে এই লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 'তবে লকডাউন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদের জড়িত করার জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।'
তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে এবং জনসাধারণের অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে প্রতিটি এলাকায় একটি মনিটরিং টিম গঠন করা উচিত।
আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু: প্রধানমন্ত্রী
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এই লকডাউনে কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া দরিদ্রদের পাশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কীভাবে দাঁড়াতে পারে সে বিষয়ে সরকারকে নির্দেশনা দেয়া উচিত। "বাড়িতে খাবার না থাকলে লোকেরা বেরিয়ে আসবেই।"
এছাড়াও এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে জনগণ কীভাবে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করবে সে সম্পর্কেও একটি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত।
'বড় ভুল'
আটটি বিভাগের জন্য গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, লকডাউনের আগে জনগণকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে সরকার ভুল করেছে। 'লকডাউনের আগে ভাইরাস বহনকারী অনেক লোক বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিল যা সারা দেশে কেবল ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে।'
তিনি বলেন, লোকদের তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে না দেয়ার জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। 'যে যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে থাকার জন্যই এটি প্রয়োগ করা হয়েছে যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে।'
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, 'লকডাউনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই সরকারের উচিত ছিল পরিবহন পরিষেবা বন্ধ করা। ফলে লোকেরা ঢাকা ছাড়তে পারত না।'
লকডাউন বাস্তবায়ন
ডা. ফয়সাল বলেন, 'লকডাউন কার্যকর করার আগে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। ১০টি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল।'
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সোমবার থেকে মাঠে থাকার ঘোষণা ডিএসসিসি মেয়রের
তিনি বলেন, সরকার লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা না করেই কার্যকর করেছে। "কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে লকডাউনটিকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ এখনও রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, 'দোকান ও শপিংমল এবং পরিবহন ছাড়া সবকিছুর খোলা রেখে এই লকডাউনের যৌক্তিকতা কী? বইমেলা অকারণে খোলা। এই মেলা এখনই বন্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে এটি ভার্চুয়ালি চালানো যেতে পারে। মেলা ও অফিস খোলা রেখে জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।'
৩ বছর আগে
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে সরকার
করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনাগুলো কার্যকর করার লক্ষ্যে কঠোর অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিযেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ শনাক্ত এবং এর আগে টানা কয়েকদিন সংক্রমণ ৫ হাজারের বেশি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে জানিয়েছন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে অফিস কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪৬৯ শনাক্ত, মৃত্যু ৫৯
তিনি বলেন, আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা বুধবার থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে অন্যান্য সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি ডিউটি রোস্টার করে দিবে। অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তিনদিন অফিসে এসে কাজ করবেন এবং দুই দিন বাসায় থেকে কাজ করবেন। বাকিরাও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই নিয়মে কাজ করবেন।
গর্ভবতী নারী, ৫৫ বছরের বেশি বয়স, অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন তারা বাসা থেকে অনলাইনে কাজ করবেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এছাড়াও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং অফিসগুলোতে ৫০ শতাংশ কর্মী অফিসে এসে এবং বাকিরা অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়েও আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি। অপ্রয়োজনে কেউ যাতে রাত ১০টার পর বাইরে না যায়, সেটি আমরা নিশ্চিত করব। এ বিষয়ে আমাদের পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা এ সিদ্ধান্তগুলো পালন করব এবং ১২ এপ্রিলের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা জারির পর করোনার সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারের দেয়া নির্দেশনাগুলো জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করেছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ইউএনবিকে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা: সিলেটে ১১টি বিধি-নিষেধ জারি করল জেলা প্রশাসন
এছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্য নির্দেশনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জন্য প্রশাসন সব কিছু করবে।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোন হাসপাতালেই রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। এজন্য করোনা বৃদ্ধি ঠেকাতে এখনই দলমত নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ১৮ দফা নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নসহ সকল স্থানে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে না পারলে আগামীতে এই প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ করতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: করোনা: অনির্দিষ্টকালের জন্য মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ
পরিবহনে বিধিনিষেধ
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইউএনবিকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে বুধবার থেকেই ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘৫০ শতাংশ টিকিটের মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হবে অনলাইনে এবং বাকি অর্ধেক বিক্রি হবে স্টেশন থেকে। আমরা এর আগেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন পরিচালনা করেছি। এবারও সরকারের নির্দেশনা শতভাগ নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছি । স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আমরা কোন যাত্রী পরিহন করব না । প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করার দরকার তাই করব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবস খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন শুরু করেছি। প্রতিটি বাস স্প্রে করা হচ্ছে ও পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা কার্যকরের লক্ষ্যে বুধবার থেকে বিআরটিএ সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। যদি কোন বাস নির্দেশ না মানে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌ যান চলাচল করবে। নৌযানেও ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিহন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা লঞ্চে উঠবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ ‘র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাজ্য ছাড়া পুরো ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের ১২টি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১২টি দেশ হচ্ছে- আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, উরুগুয়ে।
তিনি বলেন, ৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব এয়ারলাইন্স এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে, তারা নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে কেবল ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার আনতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে ওই যাত্রীদের সেসব দেশে ট্রানজিটের সময় অবশ্যই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের মধ্যে থাকতে হবে।
মফিদুর রহমান বলেন, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা বেবিচক নির্ধারিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার অথবা নির্ধারিত হোটেলে থাকবেন। অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে আগত ও বাংলাদেশ ত্যাগ করবে, প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনার নেগেটিভ সনদপত্র সাথে রাখতে হবে (যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হবে)।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর ও ফ্লাইটে সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া যেসব বিমানের প্রতি সারিতে সিট তিনটি করে, সেই ফ্লাইটের মাঝের সিটের যাত্রীকে মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ফেসশিল্ড পরতে হবে।
তিনি জানান, সরকারের দেয়া সকল নির্দেশনা ৩০ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সব পর্যটন জাহাজ চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং কক্সবাজার ও সিলেটের সকল পর্যটন স্পট বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে, নিয়মিত যাত্রী এবং প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস বহনকারী জাহাজগুলির চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) সপ্তাহের শেষ দিকে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সকল নির্বাচন স্থগিত করেছে। জাতীয় ক্রিকেট লীগও মাঝপথে স্থগিত করা হয়েছে।
৩ বছর আগে