অটিজম সচেতনতা
অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
বিশ্বজুড়ে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এ সময় ২ এপ্রিল তারিখকে অটিজমের জন্য একটি স্বতন্ত্র দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। অতঃপর ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে শুরু হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন।
এই সচেতনতার রূপরেখায় রয়েছে প্রতিটি অটিস্টিক মানুষের সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা। এর মাঝে প্রত্যক্ত ও পরোক্ষভাবে নিহিত থাকে তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা। এই সার্বিক সুস্থতার বিকাশে অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি চলুন, তা জেনে নেওয়া যাক।
অটিজম কী
বিস্তৃত পরিসরে পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, অস্পষ্ট উচ্চারণ, মৌখিক ও আচরণগত যোগাযোগের সমস্যাকে সামষ্টিকভাবে অটিজম বলা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই অবস্থার নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা এএসডি। অটিজম বা আত্মসংবৃতি অথবা আত্মলীনতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অটিস্টিক বা আত্মসংবৃত কিংবা আত্মলীন বলা হয়ে থাকে।
এই বিকাশগত মানসিক অবস্থা মস্তিষ্ক জনিত বিচ্যুতি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে ঘটে থাকে। আপাতদৃষ্টে এএসডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণ সামাজিক যোগাযোগে অদক্ষ বটে। কিন্তু তাদের শেখার, মনের ভাব আদান-প্রদান, এবং কোনো কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন উপায় থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
অটিজম সচেতনতা কেন জরুরি
অটিজম সম্পর্কে সঠিক ধারণা
আত্মসংবৃত ব্যক্তিদের নিয়ে সমাজে নানা ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত, যেগুলোর মূলত কোনো ভিত্তি নেই। এএসডির ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান বিতরণ সম্ভব হলে এমন তথাকথিত ধারণাগুলোর অবসান ঘটবে। এই চিরাচরিত অনুমান কিংবা মন্তব্যগুলো কোনো কিছুর ব্যাপারে ভালোভাবে না জেনে তার বিচার করার শামিল। অজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আত্মলীন ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য অসম্মানজনক।
বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবাদের প্রায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই বৃহত্তর পরিসরে সচেতনতা সৃষ্টি হলে সবাই এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। কেননা সম্যক ধারণা থাকা যে কোনো ব্যক্তি জানবেন যে, এটি কোনো দুর্বল নিয়মানুবর্তিতা বা শিক্ষাদানের পরিণতি নয়। অর্থাৎ এই অবস্থার জন্য সেই শিশুটি বা তার মা-বাবা কেউই দায়ী নন।
আশু শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ
এএসডি সম্পর্কে যত বেশি জানা যাবে, তত দ্রুতই এর উপসর্গগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই প্রাথমিক শনাক্তকরণ অটিস্টিক শিশুদের পূর্ণ বিকাশের সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য অপরিহার্য। বৃহৎ পরিসরে অটিজমের উপসর্গগুলোর ব্যাপারে জানানো হলে বাবা-মা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
এখানে শিশু ও মা-বাবার মধ্যকার পারস্পরিক বুঝের বিষয় আছে। সন্তানের কোন আচরণ কী অর্থ বোঝাচ্ছে, মা-বাবার কোনো আচরণটি সন্তান কিভাবে গ্রহণ করছে- এ বিষয়গুলোতে নিশ্চিত হওয়া অতীব জরুরি। এর উপর ভিত্তি করে তাদের পরবর্তী সামাজিক এবং যোগাযোগ দক্ষতাগুলো নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
এছাড়া গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত অবস্থাগুলোতে দ্রুত শনাক্তকরণের কোনো বিকল্প নেই। যেমন অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডেলের মতো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে থেরাপি দরকার হয়।
সামগ্রিকভাবে নির্ভরযোগ্য তথ্যের যোগান থাকলে তা অনুসরণ করে অদূর ভবিষ্যতে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিদেনপক্ষে যত তাড়াতাড়ি আত্মলীন শিশুরা সহায়তা পায়, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার আগে তাদের সুষ্ঠু বিকাশের সম্ভাবনাটাও ততটাই বাড়ে।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নির্মূল
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। সমাজের সর্বত্র এটি রীতিমতো একটি অক্ষমতা হয়ে দাড়িয়েছে, যার জন্য তারা সামাজিক অন্তর্ভুক্তিও হারায়। বৃহত্তর সচেতনতা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি এই ধ্বংসাত্মক ব্যুহ ভাঙতে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
অন্যান্যদের প্রতি তাদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও অভিব্যক্তি কখনই সমাজে তাদের কার্যকর অবদান রাখতে বড় বাধা নয়। বরং পর্যাপ্ত পরিবেশ ও সুযোগ পেলে তারাও মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অনেক আগে থেকেই এই বিষয়টি প্রমাণিত। অনেক আত্মসংবৃত ব্যক্তি সাধারণ কর্মকর্তাদের থেকেও বেশি উৎপাদনশীল কাজ করেছে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
তাই নিছক কুসংস্কারে প্রভাবিত না হয়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব এবং অফিস সবখানে তাদের অবাধে বিচরণ নিশ্চিত করা উচিৎ। আর এ জন্যে প্রয়োজন জনসমাগম জায়গাগুলোতে অটিজম নিয়ে সৃজনশীল আলোচনা। সবার থেকে আলাদা হওয়া মানেই সক্ষমতা থেকে পিছিয়ে যাওয়া নয়। বরং বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃজনশীল মানসিকতা উন্নত কর্মযজ্ঞ গড়ে তুলতে পারে।
এরকম বিশ্লেষণী আলোচনার বদৌলতে যে কোনো মঞ্চে আত্মলীন ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ সম্ভব হতে পারে। সেই সঙ্গে সুযোগ তৈরি হবে তাদের প্রতিভা প্রমাণের।
৭ মাস আগে
অটিজম সচেতনতায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস নীল আলোয় সজ্জিত
বিশ্ব অটিজম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সৌদি আরবের রিয়াদের ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে নীল আলো প্রজ্জলন করা হয়েছে।
দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সৌদি আরবে বসবাসরত প্রায় ২৩ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীসহ সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে দূতবাসে নীল আলো প্রজ্জলন করা হয়েছে।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘অটিজম বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতনতা অর্জন করে প্রতিটি শিশুকে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এ সকল বিশেষ শিশুদের (অটিজম) প্রশিক্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক পূর্ণ সমর্থন দেয়া সম্ভব হলে তারাও দক্ষ হয়ে সমাজের জন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
এ জন্য অটিজম বিষয়ে সকল অজ্ঞতা দূর করে এ সকল বিশেষ শিশুদের মায়া মমতা ও সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের সুপ্ত প্রতিভাকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু
জাবেদ পাটোয়ারী সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের মাঝে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তিসহ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
আরও পড়ুন:কাতারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল সৌদি আরব
এছাড়া, বাংলাদেশ অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুভেচ্ছা দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিসহ দেশের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হওয়ায় রাষ্ট্রদূত আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৩ বছর আগে