প্রতিবন্ধী ভাতা
জীবিত থেকেও সরকারের কাছে মৃত হওয়ায় ভাতা বন্ধ
মাগুরায় জীবিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার এক ব্যক্তিকে মৃত উল্লেখ করায় ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার ৮৯ বছরের বৃদ্ধ মোবারক আলী বিশ্বাস।
তার অভিযোগ, ‘জীবিত থাক সত্ত্বেও নাকি আমি মারা গেছি। তাই আমার প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।’
মোবারক আলী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ও চাকরিদাতাদের সেতুবন্ধনে কাজ করবে ‘ইমপোরিয়া’: প্রতিমন্ত্রী পলক
তার একটি পা না থাকায় গত ১৫ বছর ধরে দুটি ক্রাচের উপর ভর করে চলতে হয় তাকে। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা করে কোনরকম তার সংসার চলছে। নিয়মিত উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন তিনি। কিন্তু গত ছয় মাস ভাতা না পাওয়ায় বারবার উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও নির্বাচন অফিসে গিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
এদিকে, একই ঘটনা ঘটেছে একই উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের শ্রীহট্ট গ্রামের মাজু বিবির সাথে। মাজু বিবি শ্রীহট্ট গ্রামের আত্তাপ মোল্লার স্ত্রী। তাকেও মৃত হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে, যার ফলে তিনিও মাসের পর মাস ভাতা পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী মাজু বিবির ছেলে ফুল মিয়া জানান, আমার মাকে উপজেলা নির্বাচন অফিস মৃত দেখিয়েছে। যার ফলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আমার মায়ের নাম কেটে দিয়েছে। যার বই নম্বর ৪০।
এব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমি এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি কিন্তু তার নাম জানি না। তবে এ ধরনের ভুলের জন্য আমরা দায়ী নই।’
৩নং আড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আরজ আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এ ধরনের ভুল সত্যিই দুঃখজনক তবে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করবো।’
আরও পড়ুন: ট্রেনে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন বরাদ্দে হাইকোর্টের রুল
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেয়েছি, তাদের কাগজ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া কারো জরুরি প্রয়োজন হলে তাকে ঢাকা নির্বাচন কমিশন অফিসে যেতে হবে।
তবে এই নির্বাচন কর্মকর্তা এই সার্বিক ভুলে ভুলের দায় চাপালেন মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী কর্মীদের ওপর।
আরও পড়ুন: ভিক্ষা নয়, কাজ করেই জীবন বদলাতে চান প্রতিবন্ধী রহিম
৩ বছর আগে
জীবনযুদ্ধে হার না মানা প্রতিবন্ধী মাজহারুল, অনেক ঘুরেও পাননি সরকারি ভাতা
মাজহারুল ইসলামের (৩০) জন্ম থেকেই দু হাত, দু পা আঁকাবাঁকা। সমাজের সবাই কেমন যেন তুচ্ছ করে তাকায়। ছোটবেলা থেকেই মনটা বিধ্বস্ত। কিভাবে চলবে জীবন! কে ভালোবাসবে!
জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে বসে বসে মোবাইল সার্ভিসিং কাজকে বেছে নিয়েছেন জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মাজহারুল ইসলাম। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ও নিজের আগ্রহে শিখেছেন মোবাইল মেরামতের কাজ। এরপর ধার-দেনা করে মোবাইল সাভির্সিংয়ের দোকান দিলেন বাড়ির আঙ্গিনাতেই, অভয়পাড়া রাস্তার পা্শে। তার নিজ নামেই রাখা হয়েছে দোকানের নাম ‘মাজহারুল মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার’।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ও চাকরিদাতাদের সেতুবন্ধনে কাজ করবে ‘ইমপোরিয়া’: প্রতিমন্ত্রী পলক
চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের (৫ নং ওয়ার্ড) অভয়পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান মোল্লার ছোট ছেলে মাজহারুল। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। স্থানীয় অভয়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর সংসারের হাল ধরেছেন। বাবা-মায়ের কথায় ২০১৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সংসার ছেড়ে চলে যান তার স্ত্রী। গত বছর মারা যান তার বাবা।
দুঃখ করে বললেন, দীর্ঘদিন একটি প্রতিবন্ধী ভাতার বইয়ের জন্য এলাকার মেম্বর,ও চেয়ারম্যানের অফিসে ঘোরাঘুরি করেও তা ভাগ্যে জুটেনি মাজহারুলের। আশা ছেড়ে দেন মাজহারুল ইসলাম। পরে মা ও বড় ভাইয়ের উপদেশে সিদ্ধান্ত নেন কারো কাছে হাত না পেতে নিজ উদ্যোগে কিছু করার। এলাকায় এক বড় ভাইয়ের দোকানে মোবাইল সার্ভিসিং, মোবাইল রিচার্জ ও ইলেক্ট্রনিক্সের যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজ শেখেন। পরে নিজেই বাড়ির কাছে ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছেন। এতেই ধীরে ধীরে তিনি হয়ে যান মোটামুটি স্বাবলম্বী। প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ টাকার মতো আয় করেন তিনি। পরিবারের কাজেই খরচ করতে হয়। তার এই আঁকাবাঁকা হাতগুলোই এখন রুটি রোজগারের ও পরিবারের একমাত্র চালিকাশক্তি।
আরও পড়ুন: ট্রেনে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন বরাদ্দে হাইকোর্টের রুল
মাজহারুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে একটা প্রতিবন্ধীর কার্ড পেয়েছেন বটে কিন্তু কোনো ভাতার বই আজও পাননি।
স্থানীয় মেম্বর ইউনুস অফিসের ঝামেলার কথা বলে ভাতার বইয়ের জন্য যেতে বললেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে।
নিজের কাজ করার ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ ও অর্থাভাবে এগিয়ে যেতে পারছেন না মাজহারুল। তাই সরকারি কিংবা বেসরকারি একটু সহায়তা পেলে তিনি দোকানটির কর্মপরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন আর মেয়ে, মা ও বোনকে নিয়ে মোটামুটিভাবে চলতে পারতেন।
মাজহারুল বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সংসার করার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। শুধু আমার চার বছরের মেয়েটা আমায় ভালোবাসে। বিয়ে করলেও বউ আমাকে ছেড়ে চলে যায় আড়াই বছর পরে। রেখে যায় ছোট্ট এ মেয়েটাকে।’
আরও পড়ুন: ভিক্ষা নয়, কাজ করেই জীবন বদলাতে চান প্রতিবন্ধী রহিম
মাজহারুল ইসলামের মা নিলুফা বেগম (৫৬) বলেন, ‘সরকার যদি আমার অসহায় প্রতিবন্ধী ছেলেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করতেন তাহলে ছোট্ট দোকানটিতে কিছু মালামাল তুলে কোনোভাবে বাকি জীবন পার করে দিতে পারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুল তো দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কাজ করছেন, দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এর কোনো ফল এখনো পাচ্ছি না। কবে পাবো আশায় আছি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে কচুয়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ আকতারুদ্দীন প্রভাত ইউএনবিকে বলেন, ‘মাজহারুল ইসলাম অফিসে এসে দেখা করলে আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার জন্য কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
৩ বছর আগে