হজ্জ
ওমরাহ নিয়ে এজেন্সির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ
মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন করতে যাওয়া ব্যক্তিদের আবাসন, পরিবহন ও আর্থিক হেনস্তাসহ নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে। এজেন্সির অনিয়মে ওমরাহ ও হজ পালন করতে যাওয়া ব্যক্তিরা পড়ছেন মারাত্মক সংকটে।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দা খাদিজা বেগম।
এ সময় হজ ও ওমরাহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে এ সমস্যা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী খাদিজা বেগম বলেন, তিনি প্রাথমিকভাবে ‘মুজদালিফা’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে ওমরাহ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এজেন্সিটি তাদের ‘মা আম্বিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামের আরেকটি এজেন্সির হাতে তুলে দেয়। পরে তাদের ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সির তত্ত্বাবধায়নে থাকতে বাধ্য করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘৯ জানুয়ারি দুপুরে সৌদি এয়ারের ফ্লাইটে ওমরার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করি। জেদ্দায় পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। তখন একজন মোয়াল্লেম (গাইড) আমাদের একটি বাসে তুলে দেন, সেখান থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি।’
তিনি বলেন, ‘বাসে ওঠার পরই তারা আমাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে জোর করে বাস ভাড়া আদায় করে।’
এ ছাড়াও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘মক্কায় তুলনামূলক ভালো খাবার দিলেও মদিনায় অধিক লাভের আশায় খারাপ খাবার দেওয়া হয়েছে।’
তার ভাষ্যে, ওমরাহতে গাইড হিসেবে থাকা মুয়াল্লিম নিজের ইচ্ছামতো তাদের প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে নিয়ে গিয়েছে। এমনকি তুলনামূলক কম রোদে যে জায়গাগুলোতে যাওয়া যেত, সেখানে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এজেন্সির সহায়তায় ওমরাহ করতে গিয়ে ইবাদতের পরিবর্তে দুশ্চিন্তা করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয় হারেম শরিফের একদম পাশে বাসা দেবে, কিন্তু গিয়ে দেখি অনেক দূরে একটি গলির ভেতরে বাসা দেওয়া হয়েছে।’
এজেন্সিগুলো অব্যবস্থাপনার কারণে একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকার পাশাপাশি শৌচাগার নিয়েও বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয় বলে অভিযোগ তার।
আরও পড়ুন: হজ্জ ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন করতে সংসদে বিল উত্থাপন
সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা বেগম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে হজ এজেন্সিগুলোর অব্যবস্থাপনা ও যাত্রীদের প্রতারণার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
এ সময় হজ এজেন্সিগুলোর ভুয়া লাইসেন্স বাতিল করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়াও এক এজেন্সির লোক নিয়ে যেন আরেক এজেন্সি কোনোরকম হয়রানি করতে না পারে, সেটি সরকারকে শক্ত হাতে প্রতিহত করার দাবিও জানা ভুক্তভোগী দাবি করা এই নারী।
খাদিজা বেগমের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত হজ এসেন্সি মুজদালিফার পরিচালক হাবিবুর রহমানের যোগাযোগ করতে চাইলে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মা আম্বিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, একজন বা একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে একাধিক এজেন্সি পরিচালনা করা যায়।
এ সময় যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
৩০ দিন আগে
পবিত্র ওমরাতে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি ও কিছু সাবধানতা
ওমরা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই ইবাদতের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মুসলমানরা কিবলা কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। হজ্জ পালনের জন্য মূলত একটি নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে। সেখানে সামষ্টিক কার্যক্রম একই হলেও ওমরার জন্য তেমন কোনো মৌসুমের বাধ্যবাধকতা নেই। তাই মুসলিমরা বছরের যেকোনো সময়েই ওমরা করতে পবিত্র শহর মক্কার পথে যাত্রা করতে পারেন। পদ্ধতিগত দিক থেকে এই ইবাদত যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ, যেখানে দরকার পড়ে দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার। চলুন, সৌদিআরবে পবিত্র ওমরা পালনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের জন্য করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ওমরায় যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যগত পূর্বপ্রস্তুতি কেন জরুরি
মক্কা শহরের সাফা ও মারওয়া নামক দুটি পাহাড়ে পায়ে হেঁটে সাতবার উঠা-নামা করা সাঈ নামে পরিচিত। এটি ওমরার সবচেয়ে শ্রমসাধ্য কাজ। এরপর ওমরার কঠিন কাজটি হচ্ছে কাবা শরীফকে ঘিরে সাতবার প্রদক্ষিণ করা, যাকে তাওয়াফ বলা হয়। এই দুই ক্রিয়াকলাপের জন্য শরীর ও মন উভয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহনশীলতার প্রয়োজন হয়। যারা কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত নন এবং বার্ধক্যপীড়িতদের জন্য এই কাজগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তাই যৌবন বা বার্ধক্যে জীবনের যে সময়েই ওমরার পরিকল্পনা করা হোক না কেন, তার জন্য যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে আগে থেকে শরীর গঠনের প্রয়াস পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যগত কোনো জটিলতা থাকলে তার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। এছাড়া ওমরার পূর্বপ্রস্তুতি ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা এবং মনোনিবেশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমুন্নত করে।
আরো পড়ুন: রমজানে রোজা রাখার প্রস্তুতি: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে করণীয়
ওমরাতে যাওয়ার আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি
.
স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন
প্রথমেই নজর দিতে হবে শরীরের দিকে। কেননা অদম্য স্পৃহা থাকার পরেও অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য জটিলতা তীর্থযাত্রার প্রধান অন্তরায় হতে পারে। তাওয়াফ এবং সাঈর মতো কঠোর পরিশ্রমের কাজগুলোর জন্য রোগহীন সুগঠিত দেহের কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি এবং হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। এতে পায়ের পেশী শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। একই সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হবে নিয়মিত খাদ্যভ্যাসে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাকে পরিপূর্ণ রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে। দিনে পানি পান করতে হবে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস। চিনি, ক্যাফেইন, স্যাকারিন যুক্ত জুস, অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি ঘুমের ব্যাপারেও যত্নবান হওয়া উচিত। প্রতিদিন রাতে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া ও ফজর নামাজের সময় ঘুম থেকে ওঠার রুটিন দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা জরুরি। রাতের ঘুম দুপুর, সন্ধ্যা বা দিনের অন্যান্য সময়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের আবহাওয়ায় যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির পাশাপাশি এই বিষয়টিও শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। সেই আবহাওয়া সহ্য করার মতো শরীরের ন্যূনতম সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য শারীরিক অবস্থা সহনীয় মাত্রায় রয়েছে কিনা—তা যাচাই করতে হবে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রায়ই মেনিনজাইটিস কিংবা মৌসুমী ফ্লুসহ নানা ভ্যাকসিনেশনের প্রয়োজন হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রতিটি প্রক্রিয়া সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি
ওমরা যেহেতু একটি সমষ্টিগত কার্যক্রম তাই প্রচুর জনসমাগম এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষার বিষয়গুলো খুবই স্বাভাবিক। এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য দরকার হয় ধৈর্য্য, মানসিক সহনশীলতা এবং দুশ্চিন্তাহীনতা। এর জন্য ফ্লাইটের অনেক আগে থেকেই মন নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু অনুশীলন পদ্ধতির শরণাপন্ন হতে হবে।
দৈনন্দিন যেকোনো কাজে অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে সংযম বজায় রাখা সবথেকে অপরিহার্য বিষয়। অপেক্ষার সময়গুলো অপ্রয়োজনীয়, হতাশাজনক এবং বিভ্রান্তিকর কাজ করে বিনষ্ট করা যাবে না। পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো মনকে পরম প্রশান্তি দেবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম দেহের পাশাপাশি মননশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়ক।
ওমরার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় দোয়া শিক্ষা
সহসা এই ইবাদতের সুযোগ হয়ে ওঠে না। সঙ্গত কারণেই ওমরার নিয়মগুলোতে প্রতিদিনের আদায় করা নামাজের মতো অভ্যস্ত থাকা যায় না। তাই পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার সময় অবধারিতভাবে ওমরার সঠিক প্রক্রিয়া জেনে নিতে হবে।
শুরু থেকে শেষ ওমরার প্রতিটি কার্যকলাপের ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সময় আত্মিক উন্নয়ন ঘটে। এর ফলে ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা ও মনোনিবেশ আরও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক দোয়াগুলো শিখে তা প্রতিনিয়ত আওড়ানো যেতে পারে। অনুশীলনের সুবিধার্তে মোবাইলে রাখা যেতে পারে দোয়া শিখনের বিভিন্ন অ্যাপ। এগুলোর মধ্যে ‘দোয়া অ্যান্ড যিকির (হিসনুল মুসলিম)’ এবং ‘মুসলিম বাংলা কুরআন হাদীস দুআ’ বেশ সহায়ক দুটি অ্যাপ।
আরো পড়ুন: পবিত্র রমজান মাসে প্রয়োজনীয় ১০টি মোবাইল অ্যাপস
পবিত্র ওমরার জন্য সৌদিআরবে রওনা হওয়ার পূর্বে করণীয়
.
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া
চূড়ান্তভাবে রওনা হওয়ার আগে ব্যাগ গোছানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর তালিকা করে নেওয়া জরুরি। বেশ সময় নিয়ে এই তালিকা করা হলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নজর এড়িয়ে যাবে না। পাসপোর্ট, ভিসা ও হোটেল বুকিংয়ের মতো ভ্রমণ নথিগুলো সবার আগে রাখতে হবে। এরপরেই অগ্রাধিকার পাবে ইহরাম পোশাক, নামাজের ম্যাট, আরামদায়ক জুতা এবং ঔষধপত্র। ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এগুলোর সঙ্গে স্থান পাবে বিশুদ্ধ পানির বোতল, টিস্যু এবং ব্যান্ড-এইডস। জরুরি অবস্থায় দ্রুত ব্যবহারের জন্য পুরো ভ্রমণে ছোট্ট একটি ব্যাগ সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ডিজিটাল কপি রাখা
হজযাত্রীদের ভিসা, পাসপোর্ট, ফ্লাইট টিকিট ও হোটেল রিজার্ভেশনসহ যাবতীয় নথিপত্র স্ক্যান করে অনলাইনে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এতে করে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা যাবে। অনলাইনে সংরক্ষণের জন্য গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সের মতো বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা রয়েছে। এটি আকস্মিক কোনো কাগজপত্র হারানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকর বিকল্প।
জরুরি যোগাযোগ নাম্বারগুলো সংগ্রহে রাখা
দীর্ঘ যাত্রায় নানা ধরণের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় কিছু ফোন নাম্বার অনেক উপকারে আসে। বিশেষ করে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা এবং দূতাবাস বা কন্স্যুলেটের নাম্বারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও কাছের হাসপাতালের ফোন নাম্বারও সংগ্রহে রাখা উচিত। স্মার্টফোনে রাখার পাশাপাশি অফলাইনেও ব্যবহারের জন্য নাম্বারগুলো একটি ছোট নোটবুকে লিখে রাখতে হবে।
লাগেজে লেবেল দেওয়া
প্রতি বছর ওমরার অনেকগুলো গ্রুপ সৌদি আরব অভিমুখী হওয়ায় কাস্টমসসহ বিভিন্ন জায়গায় লাগেজ অদল-বদলের ঘটনা ঘটে। তাই রওনা হওয়ার পূর্বে লাগেজে ভালোভাবে লেবেল সংযুক্ত করা অপরিহার্য। একটি টেকসই ট্যাগের মধ্যে তীর্থযাত্রীদের পুরো নাম, হোটেলের ঠিকানা এবং বর্তমানে সঙ্গে বহনকৃত একটি যোগাযোগ নাম্বার থাকবে।
রঙিন ফিতা বা স্টিকারের মতো টোটেমগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ভিড়ের মধ্যে অনেকগুলো একই রকম ব্যাগের মধ্যে নিজের ব্যাগটিকে আলাদা করে চেনা যাবে। এছাড়া স্যুটকেসের ভিতরে প্রয়োজনীয় নথিগুলোর এক সেট অনুলিপি রাখলে সেগুলো পরবর্তীতে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হয়।
আরো পড়ুন: সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
সৌদিআরবে পবিত্র ওমরাকালীন সতর্কতা
.
পরিশ্রমের ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা
আগে থেকে ইবাদতের জন্য মনস্থির করা থাকলে ওমরাকালীন পরিশ্রম অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরেও ওমরার সময় নিজের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রতিটি প্রক্রিয়ায় নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী ছোট ছোট বিশ্রাম নেওয়া উচিত। একটানা না হেঁটে মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য জটিলতায় থাকা ব্যক্তিদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।
মূল্যবান জিনিসপত্রের ব্যাপারে সাবধানতা
হজযাত্রীদের টাকা, পাসপোর্ট এবং মোবাইল ফোন রাখার জন্য নিরাপদ মানিবেল্ট বা লুকানো পাউচ ব্যবহার করা উচিত। নগদ টাকা এবং ব্যয়বহুল সামগ্রী যথাসম্ভব চোখের আড়ালে রাখা উচিত। হোটেলের ভেতরে ও আশেপাশে, স্থানীয় মার্কেট থেকে কেনাকাটার সময়েও এই সতর্কতা আবশ্যক।
অনেক সময় নিজের অসাবধানতার কারণেও সঙ্গে বহন করে চলা জিনিসপত্র পড়ে যায়। তাই শুধুমাত্র নিতান্তই দরকারি জিনিস ছাড়া সবকিছু হোটেলে নিরাপদে রাখা উচিত।
যতটা সম্ভব মাত্রাতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলা
অপ্রয়োজনীয় যানজট এড়াতে হজযাত্রীদের নির্ধারিত নামাজ ও তাওয়াফ এলাকার মধ্যে থাকা উচিত। চলাফেরার সময় হুট করে কোথাও কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেই সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত জটলার সৃষ্টি হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রায় ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ধাক্কার ঝুঁকি থাকে। তাই এই জায়গাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা বজায় রাখতে হবে। এর জন্য আশেপাশের গতিবিধি সম্পর্কেও সর্বদা সতর্ক থাকা জরুরি।
গ্রুপের সান্নিধ্যে থাকা ও নির্দেশনা অনুসরণ
যেকোনো অপরিচিত পরিবেশে যে গ্রুপ বা সঙ্গীর সঙ্গে ভ্রমণ করা হয়েছে তাদের সান্নিধ্যে থাকাটা অত্যাবশ্যক। বিষয়টি ওমরার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রীদের সমাগম হওয়ায় আকস্মিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি থাকে। এই সমস্যা সমাধানে গ্রুপের প্রধান একটি সাধারণ মিটিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। এই নির্দেশনা অনুসরণ করা ঝামেলাবিহীন ওমরার অভিজ্ঞতারই নামান্তর। এর মধ্যেও যেকোনো সন্দেহ তৈরি হলে মোবাইল কলের মাধ্যমে সংযোগ রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
শেষাংশ
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ওমরা পালনের জন্য দেহ ও মনকে প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য। কেননা এখানে একই সঙ্গে দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহনশীলতার পরীক্ষা দিতে হয়। শরীর ঠিক রাখার জন্য মনোযোগ দিতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঘুম ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার দিকে। অপরদিকে ওমরার আচার-অনুষ্ঠান ও দোয়া শেখা প্রাথমিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি দেবে। উপরন্তু, যাত্রার পূর্বে প্রয়োজনীয় নথি, ওষুধপত্র, ও যোগাযোগ নাম্বার সংগ্রহ, এবং লাগেজ লেবেলিংয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিশেষে, সফলভাবে ওমরা পালনের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভিড় এড়িয়ে চলা, হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং গ্রুপের সান্নিধ্যে থাকাকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
৩৮ দিন আগে
করোনা মহামারির মধ্যেই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রাপ্ত কয়েক হাজার মুসল্লি নিয়ে মুসলমানদের পবিত্র নগরী মক্কায় শুরু হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র হজ্জ। সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরিধানের মধ্য দিয়ে করোনা মহামারির মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো হজ্জ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রবিবার থেকে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সৌদি হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর বৈঠক
এই বছর করোনা মহামারি সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে সৌদি কর্তৃপক্ষ হজ্জে শুধুমাত্র ৬০ হাজার সৌদি জনগণ এবং দেশটিতে বসবাসকারী করোনার টিকাপ্রাপ্ত বাসিন্দাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।
যদিও সৌদি আরব হজ্জের আয়োজন করছে, তবে ভ্যাকসিন, পাসপোর্ট, ভ্যাকসিন হার ইত্যাদি ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও রূপরেখা প্রদান করেনি দেশটি।
আরও পড়ুনঃ হজ্জ ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন করতে সংসদে বিল উত্থাপন
এইবার হজ্জ পালনকারীদের একধরনের ‘স্মার্ট ব্রেসলেট’ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে হাজীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা, ভ্যাকসিন ডাটা জানা যাবে এবং হাজীরা তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য গ্রহণ করতে পারবেন।
এছাড়া দিনের মধ্যে কয়েকবার করে কাবা প্রাঙ্গন ও আশেপাশের এলাকা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
অলিস গুল নামে কাবার এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি শিফটে ২-৩ বার করে ফ্লোর সেনিটাইজ এবং তরল পরিষ্কারক দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
১৩৪৮ দিন আগে
সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মীদের কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতির অনুরোধ ঢাকার
বাংলাদেশের শ্রমিকরা দেশে কোয়ারেন্টাইন শেষে সৌদি আরব গমন করলে সেদেশে কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার পর সাতদিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করতে হয়।
শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সাথে ফোন আলাপকালে এ অনুরোধ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদের খরচ সাশ্রয় হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এসময় বিষয়টি বিবেচনার করা হবে বলে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন।
আরও পড়ুনঃ সৌদিগামী প্রবাসীরা কোয়ারেন্টাইনের খরচ পাবেন ব্যাংকে
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশি শ্রমিকের সৌদি গমনে অনুমতি প্রদানের জন্য সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান ড. মোমেন।
এসময় ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জানান, এবছর করোনা মহামারির কারণে অন্য দেশ থেকে কোন ব্যক্তি সৌদি আরবে গিয়ে হজ্জ পালন করার সুযোগ পাবেন না। তবে সৌদিতে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকের পাশাপাশি অন্য দেশের নাগরিকরাও হজ্জ পালনের সুযোগ পাবেন।
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সেদেশে নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। এ বিষয়ে তিনি সৌদি আবরের সহযোগিতা কামনা করেন।
ফোনালাপকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের করবেন বলে জানান।
১৩৮৪ দিন আগে
হজ্জ ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন করতে সংসদে বিল উত্থাপন
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধে রবিবার হজ্জ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিল ২০২১ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন এবং ৪০ দিনের মধ্যে এটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
দেখা গেছে, সরকার যখনই কোন হজ্জ এজেন্সির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, তখনই এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসা হয়। তাই হজ্জ এজেন্সি পরিচালনার জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রয়োজন। প্রস্তাবিত আইনের আওতায় নিবন্ধন না থাকলে কেউ হজ্জযাত্রী নিতে পারবে না এবং নিবন্ধনকৃত এজেন্সিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: আ’লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা গেছেন
উত্থাপিত বিল অনুযায়ী, যে কোনো হজ্জ ও ওমরাহ এজেন্সির অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে।
এছাড়াও অনিয়মের জন্য একটি হজ এজেন্সিকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ওমরাহ এজেন্সিকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: চলতি সংসদের ১২তম অধিবেশন মুলতবি
বিলে বলা হয়, কোনো এজেন্সি যদি পর পর দুই বছর তিরষ্কৃত হয় তাহলে এজেন্সির নিবন্ধন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে যাবে। এছাড়াও হজ্জ ও ওমরাহ এজেন্সির সংঘটিত ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: চলতি সংসদের ১২তম অধিবেশন শুরু
নতুন আইনটি কার্যকর হওয়ার পর যদি কোনো বাংলাদেশি সৌদি আরবে হজ্জ-সংক্রান্ত অনিয়মের সাথে জড়িত হন, তাহলে ওই অপরাধ বাংলাদেশে হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে।
১৪৫৪ দিন আগে