সালথায় রণক্ষেত্রে
সালথায় রণক্ষেত্র: নিহত এক, আটক ৩
ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
নিহত হাফেজ জুবায়ের হোসেন (২০) রামকান্তপুর গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তারা ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের গাড়ি, তিনটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের না হলেও তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: সালথায় রণক্ষেত্র
এব্যাপারে সালথার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিব সরকার জানান, গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনা পালন করতে সোমবার বিকালে ফুকরা বাজারে যান সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এমতবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে পুলিশের একটি দল পাঠান। পুলিশ যাওয়ার পর স্থানীয়দের সাথে পুলিশের বাক বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের এস আই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা। হামলায় মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়।
আরও পড়ুন: সালথায় আ’লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত
ইউএনও জানান, পুলিশ চলে আসার পর স্থানীয় একটিচক্র গুজব রটায় পুলিশের গুলিতে স্থানীয় কয়েকজনের মৃত্যু ও বাহিরদিয়া মাদরাসার দুই মাওলানাকে গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে। এমন গুজবে হাজারও মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। পরে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।
সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। একটি মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, মিথ্যা গুজবেই মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সালথায় আ’লীগ সভাপতির ওপর হামলা, আহত ১৫
তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি আশপাশের থানা থেকে পুলিশ সদস্যসহ র্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২ টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছোড়ে ।
পুলিশ সুপার জানান, আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে স্থানীয় রামকান্তপুর গ্রামের হাফেজ জুবায়ের হোসেন নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তবে আমরা তিনজনকে আটক করেছি। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ’
৩ বছর আগে
সালথায় রণক্ষেত্র
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সাথে থাকা এক সরকারি কর্মচারীর লাঠিপেটায় এক ব্যক্তির গুরুতর আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথা থানা, উপজেলা পরিষদ ও এসি ল্যান্ডের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতার গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে ভোলায় সড়ক অবরোধ
সোমবার রাত ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির দাবিতে এ ঘটনা ঘটায়।
পরে ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী থানার অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে চা খেয়ে ওই ইউনিয়নের নটাখোলা গ্রামের মো. জাকির হোসেন মোল্যা বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সেখানে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি উপস্থিত হন।
জাকির হোসেনের অভিযোগ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সহকারী কমিশনারের গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি তার কোমরে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার কোমর ভেঙে যায়। আহত জাকির হোসেনকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হয়। এরপর সেখানে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা সালথা থানা অভিমুখে রওনা হয়ে থানা ঘেরাও করে।
পরে বিক্ষুব্ধ জনতা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে । এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আজ যে ঘটনা ঘটলো এর আগে এধরনের ঘটনা সালথার মানুষ কখনো দেখেনি। আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদে গিয়ে আটকে পড়ে যাই। চারদিকে শুধু ধোয়া আর ধোয়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। কোনো রকমে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পিছন গেট দিয়ে পালিয়ে বের হয়ে আসি।
আরও পড়ুন:ভোলা পৌরসভা নির্বাচন: দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ২০
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, সহকারী কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফুকরা বাজারে পুলিশ পৌঁছালে সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে এস আই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, ‘আমার বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার সাথে কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ভাঙচুর
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণির বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
৩ বছর আগে