বকেয়া মজুরি
বকেয়া মজুরির দাবিতে রবিবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা চা শ্রমিকদের
গত ২০ সপ্তাহ ধরে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের চা শ্রমিকরা। প্রায় ২ হাজার ৫০০ চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগামীকাল রবিবার (৪ মে) সিলেট-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে চা শ্রমিক ও বাগান রক্ষা কমিটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চা শ্রমিক ও বাগান রক্ষা কমিটির সাধারণ সদস্য সোহাগ ছত্রী।
তিনি বলেন, প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের ২০ সপ্তাহের বেতন ও রেশন প্রদান, সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট হারে নির্ধারিত সময়েই বেতন বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে এ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১ মে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আমরা গিয়েছিলাম, এ বিষয়ে কথা বলেছি। নিয়মিত আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছে তাদের অগ্রগতি। অনতিবিলম্বে চা বাগান ও শ্রমিদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিতে আমাদের এ কর্মসূচি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
আরও পড়ুন: সিলেটে মজুরি-রেশন পরিশোধের দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল
চা শ্রমিক ও চা বাগান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে এ সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক রঞ্জিত নায়েক রঞ্জু।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও কেউ তাদের কথা রাখেনি। একে একে ২০ সপ্তাহ ধরে বেতন ভাতা বন্ধ শ্রমিকদের। আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু একটিও পূরণ হয়নি। তাই দাবি আদায়ের জন্য আমরা রবিবার (৪ মে) মালনীছড়ায় সিলেট-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করব।
জানা যায়, সিলেটের বুরজান চা-কোম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান—বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুল কারখানার শ্রমিকদের ২০ সপ্তাহের বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া পরিশোধ ও চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ১ মে বকেয়া নগরীর লাক্কাতুরা এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করেন শ্রমিকরা। মিছিলটি বন্দরবাজারের সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সেখানে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভও করেন চা শ্রমিকরা। পরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. আনোয়ার উজ জামানের আশ্বাসে তারা স্থান ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা সঞ্জয় কান্ত দাস বলেন, গত প্রায় ২০ সপ্তাহ ধরে মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না কালাগুল, বুরজানসহ ৪টি চা বাগানের শ্রমিকরা। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। তারা বারবার আশ্বাস দিচ্ছেন, কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আগামী ৪ মে বকেয়া মজুরি-রেশনের দাবিতে তারা রাজপথে অবস্থান নেবেন। রাজপথ ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প পথ নেই। প্রাপ্য মজুরি-রেশন আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা এখন রাজপথেই থাকবেন।
চা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি সমূহ হলো:
১. অবিলম্বে বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে।
২. অবিলম্বে বকেয়া রেশন পরিশোধ করতে হবে।
৩. সরদার চা শ্রমিকদের বকেয়া মাসিক বেতন পরিশোধ করতে হবে।
৪. আট মাসের অধিক সময় যাবৎ চা শ্রমিকদের কর্তনকৃত প্রডিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) এবং টাকা অবিলম্বে জমা দিতে হবে।
৫. অবিলম্বে চা শ্রমিকদের চিকিৎসা চালু করা ও ওষুধ সরবরাহ করতে হবে ।
৬. অবিলম্বে চা শ্রমিকদের বসতবাড়ি নির্মাণসহ টিন, কাঠ, দরজা-জানালা দিতে হবে।
৭. অবিলম্বে চা শ্রমিকদের বকেয়া বোনাস পরিশোধ করতে হবে।
৮. চা শ্রমিকদের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা সরবরাহ করতে হবে।
৯. চা শ্রমিকদের প্রডিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্নসাৎ করা বন্ধ করতে হবে।
১০. অবিলম্বে চা বাগানের সম্পদ গাছ কাটা ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
১১. অবিলম্বে বেকার চা শ্রমিক ও চা শ্রমিকের শিক্ষিত সন্তানদের চা কর্মচারী ও চা শ্রমিক পদে নিয়োগ দিতে হবে এবং অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত চা শ্রমিকদের অবিলম্বে চাকরিতে বহাল করতে হবে।
২১৬ দিন আগে
বকেয়া মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের আল্টিমেটাম
বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট আম্বরখানা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকেরা।
এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেন।
এতে করে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। পরে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। দুই দিনের মধ্যে বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা।
তবে আগামী দুদিন কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
জানা যায়, ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা। বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। আন্দোলনের কারণে ৭ দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগান।
৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির সব পরিচালকরা পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে কোম্পানির সব বাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও মজুরি।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে শ্রমিকরা। ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বকেয়া মজুরির দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন এনটিসির মালিকানাধীন বাগানগুলোর শ্রমিকরা। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন তারা।
সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো- লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে এনটিসির ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এই সবগুলো বাগানেই আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত দুর্গাপূজার আগ থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পূজার সময়ে বোনাস প্রদান করলেও দেড় মাসের মজুরি বকেয়া রয়ে গেছে।
শ্রমিক সজিব মুন্ডা বলেন, যে টাকা মজুরি পাই, তাদিয়ে সংসারই চলে না। কোনরকমে চালাতে হয়। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ। আমরা বাঁচব কী করে? দোকানে বাকির টাকার অংশ বেকল বড় হচ্ছে। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।
লাক্তাতুরা বাগানের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের শুরুতে প্রথমে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসরকর কাছে বকেয়া মজুরির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল।
রবিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক।
রাজু বলেন, আমাদের দেড় মাসের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। মজুরি না পেয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কে সরকারে আসল বা গেল তা নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোনো রাজনীতিতে নেই। আমরা কেবল আমাদের মজুরি চাই।
এ ব্যাপারে লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ বলেন, শ্রমকিদের মত আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, দুই থেকে একদিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
৪০৩ দিন আগে
খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন অব্যাহত
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা ও যশোরের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে।
২১৬৭ দিন আগে
খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ফের অনশন শুরু
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রবিবার থেকে ফের আমরণ অনশন শুরু করেছেন খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা।
২১৬৭ দিন আগে