নুসরাত হত্যার দুই বছর
আলোচিত নুসরাত হত্যার দুই বছর
ফেনীর আলোচিত দগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দুই বছর আজ শনিবার।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকালে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
নুসরাত জাহান রাফির ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের দুই বছর উপলক্ষে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। নুসরাতের বাড়ির দরজায় পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ পাহারায় রয়েছেন।
নুসরাতের মৃত্যুবাষির্কীতে কুরআন খতমের মাধ্যমে মসজিদ ও পারিবারিকভাবে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হবে বলে জানান নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, দুই বছর পার হলেও আজও প্রতিদিন ভোরে তাকে খুঁজি । মনে হয় এইবুঝি নুসরাত এসে জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাকছে। তার স্মৃতি আজও ঘরে, বাড়ির সবকিছুতেই রয়েছে। তার পড়ার বই, জামা কাপড় ও পছন্দের সবকিছুই গোছানোভাবে রাখা হয়েছে ঘরের মধ্যে।
নুসরাতের শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা জব্দ
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না।
বিচারে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনদের অপপ্রচারে আজও আতঙ্কিত নুসরাতের পরিবার।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসামিদের স্বজন ও একশ্রেণির অপপ্রচারকারীরা সক্রিয় হয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে আতঙ্কিত থাকি।
আরও পড়ুন: পিবিআইয়ের তদন্তে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ
নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আমাদের পরিবারের জন্য খুনিরা ও তাদের স্বজনরা মারাত্মক হুমকি হচ্ছে তাদের ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুনি ও তাদের স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুকই হচ্ছে চরম আতঙ্ক।
তিনি বলেন, আমরা এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে কিছু দিন পূর্বে আমাদের আইনজীবী শাহাজাহান সাজুর মাধ্যমে জেনেছি করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির বেঞ্চ গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।
আরও পড়ুন:নুসরাত হত্যাকাণ্ড: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’
গত ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
৩ বছর আগে