ন্যায্যমূল্য
স্বর্ণ চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার অঙ্গীকার এনবিআর চেয়ারম্যানের
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, স্বর্ণ চোরাচালান রোধ, কর প্রক্রিয়া সহজ করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রবিবার বিমানবন্দর কাস্টমসে যাত্রী সেবা হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন শেষে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
দেশের অভ্যন্তরে আমদানি রেকর্ডের তুলনায় স্বর্ণের পরিমাণের অসামঞ্জস্যতাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এই ভারসাম্যহীনতা নিয়ন্ত্রক কাঠামোর আওতায় আনতে হবে। যেকোনো বিমানের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানে সহায়তার প্রমাণ পেলে নিষেধাজ্ঞা ও রুট পারমিট বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সংযুক্তি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের ৬ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত
উন্নত করদাতা পরিষেবা
ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য আগামী বছর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে চেয়ারম্যান। কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করার ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
জটিলতা কমাতে কর কর্মকর্তা ও করদাতাদের মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া কমিয়ে আনার ওপর জোর দেন তিনি।
কর প্রদান আরও সহজ করতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কার্ডের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকার কম পেমেন্টের ক্ষেত্রে প্রসেসিং ফি ২০ টাকা এবং এর বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের মধ্যে সমস্ত করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে আনা হবে।
মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ট্যারিফ সমন্বয়
রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এনবিআর।
আলু, পেঁয়াজ ও চিনির যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ভোক্তাদের বোঝা আরও কমাতে সরকার শিগগিরই খেজুরের ওপর শুল্ক হ্রাস করতে চলেছে।
তিনি বলেন, শুল্ক দ্বিগুণ কমানোর কারণে চিনির দাম এখন নাগালের মধ্যে রয়েছে এবং ডিমের আমদানি শুল্ক ইতোমধ্যে কমানো হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে স্থানীয় বাজারে।
যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করা
বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চেয়ারম্যান বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কাস্টমস সার্ভিস-সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হবে। দুঃখজনক, অনেক নাগরিক তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় এবং সমস্যাগুলো রিপোর্ট করতে দ্বিধা বোধ করে।’
এখন অভিযোগ করার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করা হয়েছে। যাত্রীরা এখন অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
‘কাস্টমসের সেবা কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি নাগরিকদের অধিকার।’ অনলাইনে জমা দেওয়া অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে বলেও আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: অনলাইনে কর দিতে ১০ লাখ করদাতা নিবন্ধন করেছেন: এনবিআর
১ মাস আগে
পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ, চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
মাগুরা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাটের দাম কমে গেছে। পাটচাষিরা বলছেন, সিন্ডিকেটদের প্রভাবে কমে গেছে পাটের দাম।
ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। অনেকে আগামী বছর পাট না চাষ করার সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন।
প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতে করে খরচ উঠছে না চাষিদের।
আরও পড়ুন: পানির জন্য হাহাকার, গাইবান্ধায় পাটচাষিরা বিপাকে
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনরা কমমূল্য দিচ্ছে, তাই আমরাও কমমূল্যে ক্রয় করছি। এদিকে পাটচাষিরা বলছেন, সিন্ডিকেটদের প্রভাবে কমে গেছে পাটের দাম।
মাগুরা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়ায় প্রতি শনি ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটচাষিরা পাট বিক্রি করতে আসেন। তবে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে অনেকেই পাট ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
অনেকে আবার অর্থের প্রয়োজনে বাধ্যহয়েই স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে উঠাচ্ছেন পাটচাষের খরচ। তবে প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় উৎসাহ হারাচ্ছেন তারা।
আড়পাডা ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের পাটচাষি অছিউদ্দিন মোল্যা বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে পাট বুনেছি। পাট বুনা থেকে শুরু করে ধোয়া ও শুকানো পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, মণ প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করলে সেই খরচ উঠবে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ
বরইচারা গ্রামের পাটচাষি উৎপল বিশ্বাস বলেন, এভাবে পাটের দাম কমে যাবে আগে জানলে পাট বুনতাম না। প্রতি হাটে পাটের দাম মণ প্রতি দুইশ’ টাকা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পাটচাষিরা।
পাটের দাম কম থাকায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পাট যেন হয়ে উঠেছে কৃষকের গলার কাঁটা। না পারছেন ফেলতে, না পারছেন ভালো দামে বিক্রি করতে।
ফলে অনেকেই আগামী বছর পাটচাষ থেকে বিরত থাকবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
১ বছর আগে
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী হাওর উপজেলার ধানচাষিরা এবার বোরো ধান কাটার মৌসুমে চামরাঘাট, ভৈরব, আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
ফলে মণ প্রতি ধানচাষিরা ১৫০-২৫০ টাকা লোকসান গুনছেন। যা তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় হাওরের চাষীরা ইতোমধ্যে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় হাওর এলাকার কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটার ফলে এগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এতে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া বোরো শ্রমিক সঙ্কটে লোকসান বেড়েছে। কারণ কৃষকেরা বোরো ফসল কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পেতে অতিরিক্ত টাকা গুনছেন।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
এবার ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হাওরের কৃষকেরা হতাশায় নিমজ্জিত করছে। তারা এখন বিলাপ করছে এবং কীভাবে তারা স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া তাদের ঋণ শোধ করবে তা ভেবে দিন পার করছে।
ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিরা। কৃষকেরা ব্রি ধান ২৮ বিক্রি করতে পাইকারি বাজারে যাওয়ার পর থেকে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
চামরাঘাট চালের বাজার পরিদর্শন করে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান হাওর এলাকার কৃষকেরা নদীপথে ধান নিয়ে আসছেন। রাইস মিল মালিকেরা এখান থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন।
এ বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কারণ হাওর এলাকায় উৎপাদিত ধান খুব কম দামে কিনছেন মিল মালিকেরা।
শ্রম খরচসহ মোটা ধানের প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার কাছাকাছি, যেখানে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেগুলোর উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
ইটনা উপজেলার ধনপুরের কৃষক করিম মিয়া জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরব বাজারের পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিন মিয়া জানান, অষ্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষকই মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছেন। তাই কৃষকেরা এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইটনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষকই অতিদরিদ্র। ধারের টাকা পরিশোধ করতে বৈশাখের প্রথম দিকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। কারণ বৈশাখ মাসে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মহাজনরা। তারা কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতে পারলে ধানের ভালো দাম পাবে।’
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
২ বছর আগে
আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত আলু উৎপাদিত হচ্ছে। আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের রপ্তানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু রপ্তানি থেকে আয় এতে অবদান রাখবে। সরকার আলু উৎপাদন, ব্যবহার ও রপ্তানির বিষয়ে সজাগ রয়েছে।’
শুক্রবার অপু মুনশি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং নোটারি ক্লাব অব উত্তরার উদ্যোগে রংপুর সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রায় একশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুরে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ম্যামোরিয়াল হাসপাতাল এর চিকিৎসা সেবার মান বড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে পারে: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, এছাড়া অপু মুনশি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট রংপুরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ বেডের ‘ক্যান্সার হাসপাতাল প্রকল্প-রংপুর’ বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এতে সহযোগিতা প্রদানের জন্য ঢাকার নোটারি ক্লাব উত্তরা এগিয়ে এসেছে। মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও এগিয়ে এসেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক থাকার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ভোক্তা যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ এর মতো আমদানি নির্ভরপণ্য যাতে সঠিক মূল্যে বিক্রি হয়, সেজন্য সরকার কঠোর নজরদারি করছে।নোটারি ক্লাব অব উত্তরার প্রেসিডন্ট নোটারিয়ান জুলহাস আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান, রংপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার(ক্রাইম) মারুফ হাসান, রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাক্তার বিমল চন্দ্র রায় বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
কৃষি খাতের লাভজনক বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টা চলছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে
অনিয়ম ও অসাধুতায় ন্যায্যমূল্যে দুধ, ডিম বিক্রির সুফল মিলছে না ফরিদপুরে
ফরিদপুরে করোনাকালে একদিকে খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যদিকে জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সরকার ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মাধ্যমে প্রাণিজাত পণ্য বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
গত এক সপ্তাহ যাবত শুরু হওয়া এ বিশেষ প্রকল্পে এখনও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না জনগণ। বরং প্রচারণার অভাব পাশাপাশি অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আমিষ তথা দুধ, ডিম ও মাংসজাত পণ্যের ঘাটতি মেটাতে সরকার খামারীদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে এই প্রকল্পটি চালু করে এক সপ্তাহ আগে। এখানে প্রতি কেজি গরুর দুধ ৬০ টাকা, প্রতি পিস মুরগির ডিম ৬ টাকা হতে সাড়ে ৬ টাকা, মুরগির মূল্য সোনালী প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রমজানের শুরুতেই সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতি, ক্রেতাদের অসন্তোষ
পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট খামারীদের জনপ্রতি প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হয় শুধুমাত্র পরিবহন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বাবদ। ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাদে তারা চার হাজার একশ টাকা পাচ্ছেন। ফরিদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার দশজন খামারী এই বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ জন এবং বোয়ালমারী, মধুখালী, ভাঙ্গা ও সালথা উপজেলায় একজন রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, জেলায় প্রায় এক হাজারের মতো গরু খামারী থাকলেও এই সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র দশ জন। তারা প্রণোদনার টাকা ঠিকই তুলে নিচ্ছেন কিন্তু জনসাধারণ ন্যায্যমূল্যের এসব প্রাণিজাত পণ্য পাচ্ছে না। প্রচারণার অভাবে অনেকে জানেনই না সরকার এমন একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভোক্তারা অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত দুধ ব্যতীত অন্য কোনো পণ্য এই ভ্রাম্যমাণ দোকানে মিলছে না। আর যেই পরিমাণ দুধ বিক্রির কথা সেই পরিমাণও বিক্রি করা হচ্ছে না। দু-একটি স্থানে মুরগির ডিম পাওয়া গেলেও কোথাও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। এসব ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনাতেও অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান জানান, গত মঙ্গলবার হতে জেলায় এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দশজন খামারীদের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদেরই এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, 'প্রতিদিনই এই কর্মসূচীর মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে।'
আরও পড়ুন: রমজানে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: শিল্পমন্ত্রী
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মীর কাশেম বলেন, গত বছর ফরিদপুরে করোনার কারণে ভ্রাম্যমাণ দোকানে করে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রির একটি উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সরকার সারাদেশে এবছর এই প্রকল্প গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে হতে এটি শুরু হলেও ফরিদপুরে তিনদিন যাবত চালু হয়েছে। শহরের ঝিলটুলীতে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি কর্ণারের সামনে তার ভ্যান গাড়িতে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে প্রায় সাড়ে ৪শ লিটার দুধ তিনি বিক্রি করছেন।
ভ্রাম্যমান পণ্য বিক্রির অনুমতি প্রাপ্তদের একজন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করে সদর উপজেলার বিলমামুদপুর এলাকার মাইশা ডেইরী ফার্মের মালিক সবুজ বলেন, আতিকুর প্রণোদনার টাকা তুললেও ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে কোন পণ্য বিক্রি করেন না। এমনকি তিনি মাইশা ডেইরি ফার্মের দুধ বিক্রেতার অটো রিকশাকে ভ্রাম্যমাণ দুধ বিক্রির দোকান দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ছবি জমা দিয়েছেন।
মো. ইসাহাক নামে আরেক গরু খামারী বলেন, জেলায় অনেকে প্রকৃত গরুর খামারী থাকলেও মুষ্টিমেয় কিছু লোক গত দুই বছর যাবত সরকারের এসব বিশেষ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জেলা অফিসের একটি অসাধু চক্র জড়িত। তারা সরকারের প্রণোদনা নিলেও ভ্রাম্যমাণ দোকান পরিচালনা করছেন না। দু’একটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ এসব প্রাণিজাত পণ্যের দোকান দেখা গেলেও তা খুব কম সময়ই সেসব অটো বা ভ্যান দেখা যায়। কোথাও মাইকিংও করা হয় না।
আরও পড়ুন: রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান এব্যাপারে জানান, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে দু-একজনের জন্য এমন একটি ভাল উদ্যোগ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।
তিনি বলেন, বুধবার ১০টি দোকান হতে প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ ও ৭ হাজার ৪শ পিস মুরগির ডিম বিক্রি করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনলাইন ফরমে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এসব দোকানে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস এমনকি ঘি বিক্রির জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৩ বছর আগে