চট্রগ্রাম
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ধাক্কায় নিহত নানী-নাতি
চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটর ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধ নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। তারা দুজন সম্পর্কে নানী ও নাতি বলে জানা গেছে।
রবিবার (২৫ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা নিহত
নিহত দুজন হলেন -রাজিয়া বেগম (৬৮) ও তার নাতি সাহিল (৮)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুর আলম আশিক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বায়েজীদ থানাধীন অক্সিজেন মোড় রেলক্রসিং -এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ট্রেন এসে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তিকে ধাক্কা দেয়।
তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
দুজনকে হাসপাতালে আনয়নকারী ও প্রত্যক্ষদর্শী যুবক রিয়াজ জানান, নানী নাতি দুইজন একটি রেল ব্রিজ পার হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন তাদের ধাক্কা দেয়।
কয়েকজনের সহযোগিতায় আমি তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।
তিনি জানান, নিহত দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। তবে তারা ঘটনাস্থলের কাছে অক্সিজেন পাঠানপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন বলে জেনেছি।
আরও পড়ুন: নাটোরে ট্রেনের ধাক্কায় দম্পতির মৃত্যু
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় বাবা-ছেলে নিহত
১ বছর আগে
দেশের অধস্তন আদালত তদারকিতে ৮ বিচারপতির মনিটরিং কমিটি
দেশের আটটি বিভাগের জন্য হাইকোর্টের আটজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়ে অধস্তন আদালত তদারকি কমিটি (মনিটরিং কমিটি ফর সাবঅর্ডিনেট কোর্টস) গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি দেশের প্রত্যেক বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে মনোনয়ন দিয়ে পৃথক আটটি মনিটরিং কমিটি ফর সাবঅর্ডিনেট কোর্টস গঠন করেছেন।
যেখানে ঢাকা বিভাগে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, খুলনা বিভাগে বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বরিশাল বিভাগে বিচারপতি জাফর আহমেদ, চট্রগ্রাম বিভাগে বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, সিলেট বিভাগে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, রংপুর বিভাগে বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগে বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও রাজশাহী বিভাগে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে এই মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় এসি ল্যান্ড ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর আদেশ
এছাড়া আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আটজন বিচারপতিকে সার্বিক সহায়তা দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আটজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হলেন-ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আব্দুছ সালাম (ঢাকা), সহকারী রেজিস্ট্রার সানজিদা সরওয়ার (খুলনা) সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন (বরিশাল), সহকারী রেজিস্ট্রার মিটফুল ইসলাম (চট্টগ্রাম), সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হারুন রেজা (সিলেট), রেজিস্ট্রার জেনারেলের একান্ত সচিব জীবরুল হাসান (রংপুর), সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হায়দার আলী (ময়মনসিংহ), সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ওমর হায়দার (রাজশাহী)।
এর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত ২ জানুয়ারি বলেছিলেন, ‘দেশের অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আটটি বিভাগে একজন করে হাইকোর্টের বিচারপতিকে প্রধান করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতিমাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করবো।’
আরও পড়ুন: আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
২ বছর আগে
সীতাকুণ্ড ডে ট্যুর: একদিনে ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে যাওয়ার মাঝের পথটুকুতে সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর দুটি উপজেলা হচ্ছে মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মূল আকর্ষণ এক হাজার ১৫২ ফুট উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই তীর্থস্থানটি চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান। আর মীরসরাইয়ের পূর্বের ছোট-বড় পাহাড়গুলো সান্ত্রীর মত দাঁড়িয়ে থেকে ঘিরে রেখেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া লেক। এই মনোরম স্থান দু’টিতে ঢাকা থেকে পুরো একদিনে ঘুরে আসা যায়। আর সেই ট্যুর প্ল্যান নিয়ে এই ভ্রমণ বিষয়ক ফিচার।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
চন্দ্রনাথ মন্দিরের আগে আধমাইল দূরত্বে আছে বিরুপাক্ষ মন্দির এবং এই দুই জায়গা থেকে আশপাশের পাহাড়সহ দূরের বঙ্গোপসাগর চোখে পড়ে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশের সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক এবং সুপ্তধারা ও সহস্রধারা পাহাড়প্রেমীদের অপার্থিব উন্মাদনায় যোগ করে জীবনের স্পন্দন।
মহামায়া লেকটি মূলত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে চালু হওয়া সরকারের একটি সেচ প্রকল্প। রাবার ড্যাম, ঝর্ণা ও পাহাড়ি গুহার রোমাঞ্চ ছাড়াও মহামায়া লেক কায়াকিং-এর জন্য উপযুক্ত জায়গা।
আরও পড়ুন: বগালেক, দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওক্রাডং মানেই হারিয়ে যাওয়া রূপকথার রাজ্যে
৩ বছর আগে
মনপুরায় ট্রলারে জাহাজের ধাক্কা, ২ জেলের মৃত্যু
ভোলার মনপুরায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় জাহাজের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে দুই জেলের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে এই দুর্ঘটনায় ১১ জেলে ডুবে গেলে আটজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
ট্রলারডুবির ঘটনায় মৃত জেলেরা হলেন- মো. রুবেল (২৭) ও মো. মাফু (২৮)। তাঁদের বাড়ি উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন ও দাসেরহাট গ্রামে।
নিখোঁজ জেলে হলেন, ওই ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুল হকের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (৩৬)।
চট্রগ্রামের গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার অবস্থায় জাহাজের সাথে ট্রলারের সংঘর্ষে এই দুঘর্টনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের জেলেদের উদ্ধার করা অপর ট্রলারের মাঝি মো. কামাল স্থানীয় সাংবাদিকদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় পাশে থাকা মনপুরার কামাল মাঝির ট্রলার আট জেলেকে উদ্ধার করে। পরে মৃত অবস্থায় দুই জেলের লাশ উদ্ধার করেছে। কিন্তু সাগরে নিখোঁজ থাকা এক জেলেকে অনেক খোঁজার পরও সন্ধান না পাওয়ায় জীবিত আট জেলে ও মৃত দুই জেলের লাশ নিয়ে মনপুরার উদ্দেশ্যে কামাল মাঝির ট্রলার রওয়ানা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি: ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার
বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি: আরও ২ লাশ উদ্ধার
৩ বছর আগে
চট্রগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ভুল থাকলে সংশোধন: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
চট্রগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসমূহের অবকাঠামোর ডিজাইনে ভুল থাকলে সংশোধন করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, চট্রগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্রগ্রাম পোর্ট অথোরিটি এবং সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশনসহ অন্যান্য সকল সমস্যা সমাধান করা হবে।
বুধবার (১১ আগস্ট) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে 'চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন' শীর্ষক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, 'চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া, চট্রগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের উদ্যোগেও প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের অধীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে নকশা করা হয়েছে সেগুলো আজকের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনঃবিবেচনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সমস্যা সমাধানে চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প নেয়ার কথা উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার মাস্টার প্ল্যান এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসমূহের অবকাঠামোর ডিজাইনেকোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইনে ওয়াটার পন্ড নির্মাণ ও স্থান নির্বাচনের বিষয়ে যৌথ পর্যালোচনারও পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রবল বর্ষণে ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতা, তলিয়ে গেছে ২০ চাতাল
মন্ত্রী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অবকাঠামোসমূহের নির্মাণকাজ বাস্তবসম্মত ও টেকসই হতে হবে যাতে চট্টগ্রামবাসী প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুফল ভোগ করতে পারে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাপারে কোন গাফলতি মেনে নেয়া হবে না। এমন কোন কাজ করা যাবে না যার জন্য পরবর্তীতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছি। মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। তাই জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় সব জায়গায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ যদি অসচেতন হয় তাহলে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা কঠিন হবে।
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা
অবৈধভাবে দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
৩ বছর আগে
ঘুরে আসুন মহামায়া, উপভোগ করুন প্রকৃতির সৌন্দর্য
নগর জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার খ্যাত মিরসরাই উপজেলা। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত সেই উপজেলার ছোট্ট একটি বাজারের নাম ঠাকুর দীঘি। বাজার ঘেঁষে সামান্য দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে পাহাড় ঘেঁষে মহামায়া লেকের অবস্থান।
যেই মহামায়া একসময় ছিল অভিশাপ সেই মহামায়া আজ এলাকাবাসীর জন্য আর্শীবাদ। কোন একসময় মহামায়া নিয়ে দ্বন্দ্বে কয়েক ইউনিয়ের কয়েকজন মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে যায়। সে অনেক আগের কথা। সেসবই এখন কেবল ইতিহাস। সুষ্ঠ পরিকল্পনা যে একটি এলাকার তথা জনপদের জীবনমান বদলে দিতে পারে তার এক অনন্য উদাহরণ প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত পাহাড় ও লেক পরিবেষ্টিত মহামায়া। মহামায়া আজ রুচিশীল ও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পছন্দের একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মহাময়ার প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য যে কোন ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে নিয়ে যাবে তার স্বপ্নের জগতে।
প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহামায়া। লেকের পূর্ব দিক পাহাড় পরিবেষ্টিত। পাহাড় ঘেঁষে রয়েছে একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক ঝর্ণা যা এখানে ঘুরতে আসা মানুষের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। আঁকাবাঁকা লেকের স্বচ্ছ সবুজ জলধারা দেখলে মনে হবে কোনো শিল্পীর সুনিপুণ হাতের কারুকাজ। লেকের পানিকে ধরে রাখার জন্য রয়েছে কৃত্রিম রাবার ড্যাম। যাতে পানির তীব্র স্রোত জনজীবনের কোনো ধরনের ক্ষতি করতে না পারে। দিনে দিনে মহামায়া হয়ে উঠছে আকর্ষণীয় ও জমজমাট পিকনিক স্পট। প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসে।
তাদেরই একজন ঢাকা থেকে আসা মাকসুদ-অহনা দম্পতি। মাস তিনেক আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবার। দুজন- দুজনকে বুঝার জন্য দেশের ভিতর সুন্দর ও দৃষ্টি-নন্দন পর্যটন অঞ্চল মনে মনে মাকসুদ খুঁজছিলেন। অফিস সহকর্মী সোহরাব তাদের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত মহাময়ার সন্ধান দিলেন। কালবিলম্ব না করে নতুন দম্পতি মহামায়াতে চলে আসলেন। নতুন দম্পতি এখানকার প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করে ভীষণভাবে খুশি। তাদের সাথে আলাপে এসব তথ্য জানা যায়। সময় ও সুযোগ হলে তারা ভবিষ্যতে আবার এই মহামায়াতে ঘুরতে আসবেন বলে জানান।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আবদুর রহমান এসেছেন স্বপরিবারে। ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে তিনি এখানে ঘুরতে এসেছেন।
এখানকার কথা জিজ্ঞেস করতে তিনি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললেন, মহামায়া যে এত সুন্দর এখানে না আসলে উপলব্ধি করতে পারতাম না।
আরও পড়ুন: মেঘের রাজ্য সাজেকে স্বপ্ন ছোঁয়ার একদিন
তিনি বলেন, মহামায়ায় এসে এখানকার মায়ায় পড়ে গেলাম।
মহামায়া লেকে ঘুরার জন্য রয়েছে ইঞ্জিনচালিত ছোট বড় অসংখ্য বোট। ছোট সাইজের বোট ঘণ্টায় ৮০০ টোকা থেকে ১ হাজার টাকা। ৮-১০জন লোক উঠা যাবে। বড় সাইজের ২০-২৫ জন লোকের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বোট ঘন্টায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিবে।
প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে এখানে ভিড় জমায়। বছরে দুই ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের দিনগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কোথাও তিল ধারনের জায়গা খালি থাকে না। এখানে বেড়াতে আসা লোকজনের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ মহামায়ার ভেতরে ও বাহিরে খাবার হোটেলের ব্যবস্থা রেখেছেন। এখানকার হোটেলগুলো পরিচ্ছন্ন। দাম তুলনামূলক কম। পিকনিকে ঘুরতে আসা মানুষের গাড়ি রাখার জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। টিকিট কেটে লেকের ভেতরে ঢুকতে হয়। শীতের পুরো সময়টাতে ভ্রমণ পিপাসু লোকদের ভীড় লেগেই থাকে। এক কথায় নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য মহামায়া হয়ে উঠছে আকর্ষণীয় স্থান।
মহামায়াতে রয়েছে একটি সেচ প্রকল্প। তিনটি ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠী সেচ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘু নাথ জানান, এখানকার লোকজন সেচ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি আবাদ করে থাকে। যেই মহামায়া একসময় মানুষের জন্য অভিশাপ ছিল, লেকে বাঁধ দেয়ার কারণে সেই মহামায়া আজ মানুষের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে।
সেচ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ঘড়িয়াইশ গ্রামের জয়নাল জানান, আগে শুকনো মৌসুমে আমরা চাষাবাদ করতে পারতাম না। ড্যাম হওয়ার কারণে লেকের পানি ধরে রেখে আজ আমরা চাষাবাদ করতে পারছি। আগে বর্ষাকালে লেকের পানিতে বিশাল এলাকা তলিয়ে যেত কিন্তু ড্যাম হওয়ার কারণে এখন আর ওইসব এলাকা প্লাবিত হয় না।
স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী জসিম উদ্দিন জানান, মহামায়া ছিল গণমানুষের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মহোদয়ের স্বপ্নের প্রকল্প। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলছে।
৮নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব বলেন, মানুষের কথা মাথায় রেখে এখানে সকল নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে এই সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ঢল
তিনি বলেন, এই মহামায়া ইজারা দিয়ে সরকার প্রতি বছর বিরাট অংকের রাজস্ব পেয়ে থাকে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখে।
এক কথায় মহামায়া ভ্রমণের জন্য অপূর্ব স্থান। সরকার যদি এই মহামায়ার প্রতি সুনজর দেয় অথবা বেসরকারি কোনো উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে মহামায়া হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র যা দেশের অর্থনীতির গতি তরান্বিত করার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখবে।
৩ বছর আগে