মীর হেলাল
হেফাজতের তাণ্ডব: ৩ মামলায় বাবু নগরী ও মীর হেলালসহ আসামি ৩ হাজার
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের তাণ্ডবের অভিযোগে এবার দলটির নতুন আহ্বায়ক কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর হেলাল ও উপজেলা জামায়েতের আমিরসহ ১৪৮ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
গত ২৬ ও ২৭ মার্চ হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার হাটহাজারী থানায় এসব মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ৪দিন মামলার বিষয়টি গোপন রাখলেও সোমবার গণমাধ্যমকে জানায়।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ গ্রেপ্তার ৩১০
এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ৩ হাজার জনকে নতুন করে দায়ের করা এ ৩ মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তৌহিদুল করিম বলেন, ‘গত ২৬ ও ২৭ মার্চে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সব ডকুমেন্টস আদালতে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জন গ্রেপ্তার
পৃথক তিন মামলার এজাহারে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে হাটহাজারী সদর, ইছাপুর বাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও রাস্তায় দেয়াল দিয়ে আসামিরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আসামিরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ, থানা ও ভূমি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর হামলা করেন।
একটি মামলার বাদী চট্টগ্রাম পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কনস্টেবল মো. সোলায়মান। এ মামলায় বাবুনগরী, হেফাজত নেতা মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন, জাকারিয়া নোমান, আহসান উল্লাহসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের দেড়শ থেকে ২শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় আরও গ্রেপ্তার ১১
কনস্টেবল মো. সোলায়মানকে ২৬ মার্চ মাদ্রাসার ভেতর অবরুদ্ধ করে রাখার পরের দিন সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
আরেক মামলার বাদী হাটহাজারী থানার পরিদর্শক আমির হোসেন। এ মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমান ও উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয় আসামি আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার জন। এ মামলাটি করা হয় সড়কে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টির দায়ে।
অন্যদিকে হাটহাজারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে তৃতীয় মামলাটি করেছেন। এ মামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সৈয়দ ইকবাল, উপজেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমরান শিকদারসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয় আসামি আড়াইশ থেকে তিনশ জন। তাদের বিরুদ্ধেও ইছাপুর বাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, থানা ও ভূমি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়।
গত ২৬ মার্চ হেফাজতের তাণ্ডবের পাঁচ দিন পর গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা ভবনে হামলা, ভূমি অফিসে ভাঙচুর, ডাকবাংলোয় আগুন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়টি ও পটিয়াতে একটি মামলা করে পুলিশ। হাটহাজারী থানায় চারটি ও পটিয়ায় একটি মামলার বাদী পুলিশ। আর ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দায়ের করেন দুটি মামলা। তবে প্রায় দুই হাজার জনকে আসামি করা হলেও কারো নাম নেই এসব মামলায়। সাত মামলার সব আসামিই অজ্ঞাত। ওই সময় থেকে মামলাগুলো তদন্ত করছিল পুলিশ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ ও ২৭ মার্চ হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা দু’দিন ধরে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তারা ওই সময় হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ৫৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এসিল্যান্ড অফিসের সব নথি পুড়িয়ে দেয়া হয়। তছনছ করা হয় সব আসবাবপত্র। সরকারি ডাক বাংলোতে আগুন দেয়া হয়। সেখানে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলও আগুনে পুড়ানো হয়।
এছাড়া সদর ভূমি অফিস তছনছ করার পাশাপাশি জমির খতিয়ান সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই অফিসের অধীন পৌরসভা, মেখল ও ফতেপুর ইউনিয়নের জমির খতিয়ান ও খাজনার সব রেকর্ড ছিল। ডাকবাংলোর ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে জেলা পরিষদ। তবে এসিল্যান্ড অফিস ও সদর ভূমি অফিসে হেফাজতের নেতাকর্মীদের তাণ্ডবে শুধুমাত্র ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
৩ বছর আগে