ন্যায়বিচার
মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে: টিআইবি
মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৫টি স্থানে একযোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে টিআইবি।
এতে বলা হয়, মানবাধিকারের গুরুতর ও ব্যাপক লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গুরুতর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বিচারে ক্ষমতার অপব্যবহার, সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব এবং ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ, জনস্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিবর্জিত এবং সীমাহীন দুর্নীতিতে জর্জরিত শাসন ব্যবস্থা এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।
এ প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।
অনতিবিলম্বে এসব দাবি মেনে নিতে হবে এবং কোনো বিলম্ব না করে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
দাবিগুলো হলো-
১. বহুমাত্রিক ও বহুপর্যায়ের নজিরবিহীন ও নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্ত নিশ্চিতে জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বাধীন কমিশন গঠন করার মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে আইন-প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনের শাসনের সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান তথা সার্বিক রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাবার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে হয়রানি ও নির্মম নিপীড়ন এখনই বন্ধ করতে হবে। আটক সব সমন্বয়ক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. বেআইনি, নির্বিচার ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত, অসামাঞ্জস্যপূর্ণ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে যারা নির্মম হতাহতের জন্য দায়ী এবং যাদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নকে পদদলিত করে নজিরবিহীন এই নির্মমতা সংগঠিত হয়েছে তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. জাতির ইতিহাসের নজিরবিহীন এই অধ্যায়ে নিহত-আহত সবার বয়স ও পেশা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
৬. আহত সবার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. হতাহত সবার পরিবারের জন্য সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুনর্র্বাসন প্রক্রিয়া প্রকাশ করতে হবে।
৮. অবাধ তথ্যপ্রবাহের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটালসহ সব গণমাধ্যমের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের হুমকি, নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার এবং বন্ধ করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ওপর সব নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৯. সহিংসতা দমন বা অন্য কোনো অজুহাতে, ভিন্নমত দমনের হঠকারি-প্রক্রিয়া থেকে এখনই সরে আসতে হবে। ভিন্নমত, বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থী নজরদারিভিত্তিক ভীতিকর পরিবেশ, তথা জনগণের জন্য নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে।
১০. এই মুহূর্ত থেকে সব অসত্য বয়ান ও মিথ্যাচার বন্ধ করে, দেশবাসীর মানবাধিকার, ন্যয়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
১১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ফাঁকাবুলির সংস্কৃতি পরিহার করে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিচারহীনতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩ মাস আগে
বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ নবায়নের আশাবাদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নিরীহ মানুষের প্রাণহানিসহ সাম্প্রতিক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের ফলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধের নবায়ন ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষে ঢাকা ত্যাগ করার প্রস্তুতিকালে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যান্ডেলে তার উপলদ্ধি ও আশার কথা তুলে ধরেন। এতে তিনি ন্যায়বিচারের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশ যে মূল নীতিগুলোর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনাবলির দিকেও আলোকপাত করেছেন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গাড়ি রেখে সিএনজিতে ইইউ রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূতের বার্তাটি ঐক্য ও সহনশীলতার আহ্বান জানিয়েছে। এতে যারা চড়া মূল্য দিয়েছে তাদের সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হাওর-উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে: ইইউ রাষ্ট্রদূত
৩ মাস আগে
জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বৈশ্বিক সহযোগিতার বাড়ানোর আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন ও পরিবেশগত অবনতির জটিল সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংহতির গুরুত্ব তুলে ধরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জলবায়ু ন্যায়বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেলজিয়ামের লিজ শহরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট মোবিলিটিস নেটওয়ার্কের (ইসিএমএন) দ্বিতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘কলোনাইজিং দ্য ফিউচার: ক্লাইমেট জাস্টিস, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড মাইগ্রেশন গভর্ন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ, জলবায়ু সহযোগিতা জোরদারের আশা
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হলেও এটি বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য একটি হুমকি। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে ১৭ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যেতে পারে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে ৪০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
কপ আলোচনায় বাংলাদেশের প্রথম সারির ভূমিকা, বিশেষ করে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলার বিষয়ে প্রশংসা করেন প্যানেলিস্টরা। বৈশ্বিক আর্থিক ও গভর্নিং মেকানিজমের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও কথা বলেন তারা।
এছাড়াও উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা, আস্থা পুনর্গঠন এবং একটি ন্যায্য, আরও গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক শাসনের কথা তুলে ধরেন প্যানেলিস্টরা।
বেলজিয়ামের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষক ফ্রাঁসোয়া গেমেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ এবং লেখক ডেভিড ভ্যান রেইব্রুক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের মহাসচিব ও মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন স্যান্ড্রিন ডিক্সন-ডেক্লেভ, ক্লাব অব রোমের সহসভাপতি এবং আর্থ ৪অল-এর নির্বাহী পরিচালক এবং সেন্ট্রাল ইউরোপের ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্যাটারিনা সেফালভায়োভা।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইইউতে মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি: পরিবেশমন্ত্রী
বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
৪ মাস আগে
'উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা' শীর্ষক বিআইডিএসের বার্ষিক সম্মেলন শুরু বৃহস্পতিবার
'উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলন শুরু হবে বৃহস্পতিবার।
আগামী ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান এবং অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।
আরও পড়ুন: করোনায় ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছে: বিআইডিএস
সম্মেলনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও নীতিবিকল্প, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র, কোভিড-১৯ পরবর্তী সংকট বিশ্লেষণ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, তৈরি পোশাক খাত, দক্ষিণ এশিয়ার হালনাগাদ প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা, বৈশ্বিক মূল্যের ধাক্কা ও খাদ্য নিরাপত্তা, লিঙ্গ, জনসংখ্যার মেগাট্রেন্ডসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোট ১৮টি প্রবন্ধ, ৭টি গণ বক্তব্য ও ৫টি বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। উন্নয়ন, কর, অবৈতনিক পরিচর্যার কাজ, বিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থা, ভূ-অর্থনৈতিক বিষয়, সমসাময়িক বাংলাদেশে কৃষি পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং আরও অনেক কিছু থাকবে অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: ঢাকা শহরে ২০১৯-২০২২ সালের মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার কমেছে ৪.৩ শতাংশ: বিআইডিএসের জরিপ
এস আর ওসমানী, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আহসান এইচ মনসুর, বিনায়ক সেন, আতিউর রহমান, সাজেদা আমিন, নায়লা কবীর, জায়েদী সাত্তার, হোসেন জিল্লুর রহমান, কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, আহমেদ মুশফিক মোবারক, সৈয়দ আবদুল হামিদ, প্যাট্রিক আলেকজান্ডার কার্বি, সিদ্ধার্থ শর্মা, ড্যানিয়েল রেসনিক, জেমস থারলো, পল ডরশ, গৌরব দত্ত, সৈয়দ মঈনুল আহসান, দিলেনি গুনওয়ার্দেনা, আহমদ আহসান, এম নিয়াজ, জিওফ উড এবং অন্যান্যরা সমসাময়িক উন্নয়ন আলোচনার মূল বিষয়গুলোতে মূল দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করবেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজের সদস্য ও স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে 'অর্থনৈতিক নীতি: বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে নীতিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা' শীর্ষক বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটবে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে ধনী ও দরিদ্রের আয়বৈষম্য বেড়েছে: বিআইডিএস’র গবেষণা
১১ মাস আগে
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জামায়াত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে: বিএনপি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বলেছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলের আপিল খারিজ করে দিয়েছে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ‘অন্যায়’ রায় দিয়ে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়।
তিনি বলেন, ‘যদিও দেশের জনগণ এই রায়ে (জামায়াতের বিরুদ্ধে) বিস্মিত হয়নি। তারা ন্যায়বিচারের শেষ অবলম্বন বিচার বিভাগের ব্যক্তিদের রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য এবং সরকারের ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করার ঘটনায় হতাশ।’
বিএনপি নেতা বলেন, জামায়াত ইতোমধ্যেই এই রায়কে 'বিচারহীন' বলে বর্ণনা করেছে।
রিজভী আরও বলেন, যে কোনো বিরোধী দল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ কর্তৃক তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা পাওয়ার যোগ্য। ‘এর কোনো ব্যতিক্রম গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এটাও অগ্রহণযোগ্য।’
পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ বিএনপির ১৪ নেতা-কর্মীকে দেড় বছরের কারাদণ্ডের ঢাকার আদালতের রায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।
আরও পড়ুন: বুধবার থেকে আবারও বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে মাঠ পরিষ্কার করার জন্য এই নির্দেশিত রায়গুলো ভালভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এই তরুণ নেতাদের সাজা দিয়ে যদি আটক করা যায়, তাহলে শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘকাল চলবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, এই নেতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর দায়ের করা লিভ-টু-আপিল খারিজ করে, হাইকোর্টের একটি রায়কে চ্যালেঞ্জ করে যা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন বাতিল করেছে।
শুনানির নির্ধারিত তারিখে অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীসহ দলের আইনজীবীদের ঘন ঘন অনুপস্থিতির কারণে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বরখাস্তের আদেশ দেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয় ইসি।
এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি।
আবেদনে তারা বলেন, জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অপপ্রচার একতরফা নির্বাচনের কৌশল: রিজভী
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হরতাল উপলক্ষে বিএনপি ও জোটের সমাবেশ
১ বছর আগে
বাংলাদেশে গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে: ওয়েবিনারে বক্তা
কানাডার রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট কানাডার (সিআরআরআইসি) সহযোগিতায় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা (বিসিবিএস) ‘ডিনায়াল অ্যান্ড রেকগনিশন: দ্য কেস অব বাংলাদেশ জেনোসাইড’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করে।
কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস (সিএমএইচআর) কর্তৃক ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও প্রদর্শনের বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, কানাডায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিসিবিএস’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. খলিলুর রহমান, কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ও পরিচালক অধ্যাপক ড. অ্যাডাম মূলার, কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসের কিউরেশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ড. জেরেমি ম্যারন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), রোটারি পিস ডে’র প্রতিনিধি গ্যারি সেনফ্ট, বিংহামটনের স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের ভিজিটিং স্কলার ড. তাওহীদ রেজা নূর এবং সিআরআরআইসি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. হেলাল মহিউদ্দিনসহ কয়েকজন গণহত্যার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন এজেন্ডা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেমিনার
মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং একটি জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সংগঠিত এই সহিংসতার ব্যাপকতার কারণে এর বৃহত্তর স্বীকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, একাত্তরের ভয়াবয় অভিজ্ঞতা এখনো আমাদের জাতির সম্মিলিত স্মৃতিতে প্রোথিত এবং এর প্রভাব একটি প্রজন্মকে আঘাত করেছে।
তিনি বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা (বিসিবিএস), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায়টি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং গণহত্যার প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করার জন্য সিএমএইচআরকে অনুরোধ করেন।
কি-নোট বক্তব্যে অধ্যাপক ডক্টর অ্যাডাম মুলার গণহত্যার যারা শিকার হয়েছেন তাদের পরিচিতি গঠনে ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে স্বীকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার প্রত্যাখ্যান যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর শিকার হয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি অপরাধীদের দায়মুক্তির ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, শাস্তি ও জবাবদিহি ভবিষ্যতের গণহত্যা প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি এবং এক্ষেত্রে দায়মুক্তি ভবিষ্যৎ গণহত্যার ক্ষেত্রে অনুঘটক।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকায় এসডিজি সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন আজ
কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধি জেরেমি ম্যারন গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অস্বীকার এবং বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি তাদের ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ গ্যালারিতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা সম্পর্কিত নতুন বিষয়বস্তু তৈরির জন্য জাদুঘরের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অতীতের গণহত্যাকে অস্বীকার করলে তা ভবিষ্যতে তাদের পুনরাবৃত্তিতে ইন্ধন যোগায়।
৭১’ এর গণহত্যার বিশ্বব্যাপী প্রচার ও স্বীকৃতির জন্য তিনি কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসকে অতি দ্রুত ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ গ্যালারি উন্মুক্ত করতে অনুরোধ করেন এবং এই উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সহযোগী সকল সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
ওয়েবিনারে উপস্থিত সকল বক্তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত ১৯৭১ সালের ভয়াবহতাকে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা বলে চিহ্নিত করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের নৃশংসতা যাতে আর না ঘটে সেলক্ষ্যে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস এই ইতিহাস দ্রুত প্রদর্শনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
১ বছর আগে
‘মিয়ানমারে আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন’
কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাঈদা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাষায় দাবি জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্ণপাত করছে না। আমরা ইংরেজিতেও আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও তারা মনোযোগ দিচ্ছে না। আমরা হতাশ। আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা বেঁচে আছি এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলছি।’
তিনি বলেন, তিনি ২৫ আগস্টের দিনটি কখনোই ভুলতে পারবেন না এবং গত ৬ বছরে তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে পারেননি।
অশ্রুসিক্ত সাঈদা বলেন, ‘ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়েছে, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
তাদের সম্মিলিত দাবি- রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্তিশালী সমর্থন চায় বাংলাদেশ
অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা, মিয়ানমারের অন্যান্য ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো পূর্ণ অধিকারসহ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার।
বর্তমানে ১০ বছর বয়সী বনি আমিন ৬ বছর আগে মিয়ানমার থেকে দেশটির সামরিক জান্তার আক্রমণের সময় পরিবারের ৮ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিল। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনবিকে এই শিশু বলেছে, ‘আমার মনে আছে কীভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সামরিক বাহিনী আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।’
আজকের (শুক্রবার) সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করতে চান যেন তারা আগের মতোই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ও সেখানে বসবাস করতে এবং নাগরিক হিসেবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারেন।
তারা বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
রোহিঙ্গা যুবক মুসা বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহায্য করুন, ওটাই আমাদের দেশ। আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এই দিনটিকে কেবল আমাদের অভিন্ন ট্র্যাজেডি মনে করিয়ে দেওয়ার নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার দিন হিসেবেও পালন করি। আসুন আমরা বেদনার ঊর্ধ্বে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।’
মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি পথ সৃষ্টি করবে যে বিশ্বে এই ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। এর ফলে এখানে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সব সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
পরিবারের সদস্যদের হারানো নূর জাহান ইউএনবিকে বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনো ঠিক হয়নি: সেহেলী সাবরীন
তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার চান, যাতে তারা নিরাপদ বোধ করেন।
‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা একত্রিত হয়েছেন। তারা বলেন, এই ট্র্যাজেডিতে তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত, যা তাদের কষ্ট দিয়েই চলেছে।
প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা কয়েক ডজন সমাবেশে যোগ দেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি কুতুপালং ক্যাম্পে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার শরণার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তারা এই দুঃসময়ে হাত বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর পরেও সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের বাংলাদেশে একীভূত করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে, এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও প্রচুর সংখ্যক জনসংখ্যার প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ১৯৭০, ৮০’ ও ৯০’ এর দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু প্রতিবারই তারা ফিরে গিয়েছিল, এমনকি অতীতে সামরিক শাসনের সময়ও।
পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে কারো বাধা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতেই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধান আরও ভালোভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেননি যে তারা ফিরে যেতে চান না। বরং যখনই কোনো বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে দেখা করেন তখনই তারা দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অস্ত্র ও মাদক পাচারের ঘটনা ক্যাম্পে বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ সদস্যও নিহত ও আহত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কীভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভাসানচরকে ‘একটি ভাসমান দ্বীপ’ বলে বর্ণনা করেছিল তা স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সমাধান খুঁজতে মানবিক সাড়া ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য নতুন করে অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের বারবার বলেছে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন নিরাপদ হলেই কেবল তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
সংস্থাটি আরও বলেছে, সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। যেন, তারা তাদের জন্মস্থান বা পছন্দের জায়গায় অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, নাগরিকত্বের জন্য ব্যবস্থা, পরিষেবা এবং আয়ের সুযোগ পায়।
১ বছর আগে
রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সব মানুষের ন্যায়বিচার চায় যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারের সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যার' ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জনগণের 'গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ' ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ অব্যাহত রাখবে।
২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ৬ষ্ঠ বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ভুক্তভোগী ও বেঁচে যাওয়া দের পাশে রয়েছে।
ব্লিঙ্কেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, পাশাপাশি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যার ৬ বছর: সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহি দাবি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যত্র সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। এটিই সহিংসতায় যাদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তার শীর্ষস্থানীয় একক বৃহত্তম সহায়তা।
দেশজুড়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর অনুসারে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলমান সহিংসতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তি ও সত্ত্বার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে বাধা দেওয়া উচিত নয়: শাহরিয়ার
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর: প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ, একীভূতকরণে চাপ দিচ্ছে কিছু দেশ
১ বছর আগে
মানুষ যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায়: আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে সরকারের কোন কার্পণ্য থাকবে না। কিন্তু বিচার বিভাগের কাছে একটি চাওয়া থাকবে, সেটি হচ্ছে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায় এবং তারা যেন মামলার দীর্ঘসূত্রিতার অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পায়।
শনিবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র সহকারী জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজিত ১৪৮তম রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের জুডিসিয়াল ডিসিপ্লিন মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সুপ্রতিষ্ঠত জুডিসিয়াল ডিসিশনগুলো মেনে না চললে জুডিসিয়াল অ্যানার্কি তৈরি হতে পারে। নিশ্চয়ই আমরা কেউই এই অ্যানার্কি চাই না। তার কারণ সমাজ ও দেশের ওপর এর ইমপ্যাক্ট ভয়াবহ হবে।
তিনি বলেন, দেশের দীর্ঘদিনের পূঞ্জিভূত মামলাজট কমানোর দায়িত্ব আমাদের কাঁধে নিতে হবে এবং এই দায়িত্ব কাধে নিয়ে জনগণ যাতে তড়িৎ সুষ্ঠু বিচার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, অন্য যেকোনো সরকারের চেয়ে বিচার বিভাগের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে। বিচারকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন বিচারকদের দায়িত্ব মানুষ যেন দ্রুত বিচার পায়, সেটা নিশ্চিত করা।
তিনি প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, সহকারী জজ থাকা অবস্থায় তারা সকলেই এই ইনস্টিটিউটে একটি মানসম্পন্ন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করে গেছেন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে আবারও নতুন প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। একটি সুদক্ষ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দ্রুত মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের জন্য এমনটিই হওয়া উচিত। কিন্তু অন্যান্য সরকারের আমলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কি অবস্থা ছিল, তার ইতিহাস অনেকেরই জানা। এক কথায় বলা যায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক কোন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করার পর প্রথম বিচারকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে দেন। তাঁর সরকারের সদিচ্ছার কারণেই দেশে আরও একটি বিশ্বমানের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। যেখানে বিচারকরা বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না: আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক বিচারকদের আশ্বস্ত করে বলেন, তাদের প্রশিক্ষণের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয়, দেশিও প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রমও চলমান থাকবে।
আইনমন্ত্রী একথাও স্মরণ করিয়ে দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান লক্ষ্য ছিল এমন এক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। জাতির পিতা তার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিজয়ের মাত্র ১০ মাস ১৮ দিনের মাথায় সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতিকে যে অনন্য সংবিধান উপহার দেন, সেই সংবিধানের পরতে পরতে তার দর্শনের প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়। এই সংবিধানের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, সকলেই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী এবং ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলেও যুগযুগ ধরে ন্যায়, সাম্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার মতো সূক্ষ্ণ ও স্পর্শকাতর দায়িত্বগুলো সুচারুরূপে পালন করায় এদেশের জন-মানুষের হৃদয়ে ও মননে গভীর আস্থা ও নির্ভরশীলতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের বিচার বিভাগ।
আনিসুল হক মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আদালতের বিভিন্ন সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধানসহ বিজ্ঞ বিচারকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য। আর পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। সেকারণে তারা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে যাচ্ছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।
আরও পড়ুন: সুলতানার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে: আইনমন্ত্রী
নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের চাপ নেই: আইনমন্ত্রী
১ বছর আগে
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জলবায়ু ন্যায়বিচারকে এগিয়ে নিতে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতার বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের জন্য বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ করে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশসহ ১৭-সদস্য বিশিষ্ট কোর গ্রুপ দ্বারা উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতার পক্ষে সমর্থনকারী দেশগুলোর জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন।
কোর গ্রুপের পক্ষে রেজ্যুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করে ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করার নিমিত্ব এই রেজ্যুলেশনে মানবাধিকার আইনসহ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সকল আইন, স্বীকৃত নীতিমালার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দায়ী দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতার ওপর পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ করা হয়।
কার্বন নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনি পরিণতি সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার জন্যও এই রেজ্যুলেশনে অনুরোধ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের জন্য আয়োজিত উচ্চ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক ও অপরিবর্তনীয় হুমকির বিষয়ে স্পষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও মানবতার বেঁচে থাকার জন্য যে মাত্রায় বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন, তার ধারে কাছেও নেই বিশ্ব সম্প্রদায়। এই রেজ্যুলেশন এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত কর্তৃক পরামর্শমূলক মতামত ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দায়ী দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য মানব সভ্যতাকে আরও সম্যক ধারণা দিয়ে তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
আদালতের পরামর্শমূলক মতামতের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেন যে এই ধরনের পরামর্শমূলক মতামত জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আরও সাহসী এবং শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে। রেজ্যুলেশনটি সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি জলবায়ু কর্মী এবং যুব সমাজসহ আন্তর্জাতিক সুশীল সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে।
ভানুয়াতুর আহ্বানে প্রতিষ্ঠিত কোর গ্রুপটি রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রণয়ন থেকে প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে গ্রহণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। খসড়া রেজ্যুলেশনের ওপর তারা জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অংশ গ্রহণে উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ পদ্ধতিতে একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক সভা করেছে। বাংলাদেশ, কোর গ্রুপের সদস্য হিসেবে, খসড়া প্রণয়ন ও নেগোশিয়েশন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আউটরিচ প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ছিল।
‘এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য একটি কালজয়ী মুহূর্ত। আমরা পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অসীম আগ্রহ ও সম্পৃক্ততার জন্য কৃতজ্ঞ, যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাদের গভীর অঙ্গীকারের সাক্ষ্য দেয়।’ - বলেছেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহিত, যিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাছ থেকে সমর্থন অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব ভানুয়াতু কর্তৃক আয়োজিত এক সংবর্ধনায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন: এসডিজি: বিশ্বকে 'ট্র্যাকে ফিরে' পেতে ইইউকে সহায়তা করার আহ্বান জানাল জাতিসংঘ প্রধান
১ বছর আগে