বিপাকে কৃষক
সুনামগঞ্জের হাওরের পানি নিষ্কাশনে ধীরগতি, বিপাকে কৃষক
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে হাওরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ধীরগতিতে। এতে বিপাকে রয়েছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।
জানা গেছে, উপজেলার সব হাওরের পানি সঠিক সময়ে কমে বোরো ধান রোপণ করার প্রায় উপযুক্ত সময় হলেও বেহেলী ইউনিয়নের বাড়িরনামা হাওরের পানি এখনও পুরোপুরি কমেনি। ধীরগতিতে বাড়িরনামা হাওরের এই পানি নিষ্কাশনে বিপাকে রয়েছেন কৃষকেরা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে বাড়িরনামা হাওরে সরেজমিনে গেলে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে রহমতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মিয়া বলেন, ‘জামালগঞ্জে অন্যান্য হাওরের তুলনায় এই মুহূর্তে আমাদের ছোট এ হাওরে এখনও অনেক জমি পানিতে তলিয়ে আছে। এই পানি আরও আগেই নিষ্কাশন হওয়ার কথা। কিন্তু বাড়িরনামা হাওরের মাঝখানে একটি বিল থাকায় গ্রামের কেউ পানি নিষ্কাশনের কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। তাই প্রশাসনের সহায়তায় যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’
শিবপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই হাওরে কয়েকটি গ্রামের কৃষকের প্রায় একশ একর জমি রয়েছে। সময়মতো প্রতি বছর পানি নিষ্কাশন না হওয়াতে আমরা বিপাকে পড়ে যাই।’
বেহেলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জয়ন্ত তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এই হাওরটি যদিও ছোট, তবে এখনও জলমগ্ন রয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে জলমগ্ন থেকে পরিত্রাণের যেন ব্যবস্থা করে।’
বেহেলী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য যিশু তালুকদার বলেন, ‘এই হাওরে এখনও পানি থাকার কারণে অনেক জমি তলিয়ে আছে। সঠিক সময়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।’
জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারটা ইউএনও মহোদয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখে। তারপরও আমি ওনাদের সঙ্গে কথা বলে যৌথভাবে সমাধান করার চেষ্টা করব।’
৪৫ মিনিট আগে
তীব্র তাপদাহে যশোরে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ: বিপাকে কৃষক
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় তীব্র তাপদাহে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খেতে সেচ দিতে ও আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন কৃষকেরা।
এতে করে পাটের আবাদ নিয়ে কৃষকের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
আরও পড়ুন: নাটোরে অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার মণ পাট উদ্ধার
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত খেতে পাটের চারা গজালেও তীব্র তাপদাহের কারণে অনেক কৃষকের খেতের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের চারা রক্ষা করতে কৃষকরা দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে সেচ দিতে ও খেতের আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে কৃষকেরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। এতে তাদের পাট উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাটকল শ্রমিকদের পাওনা নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ হবে: মন্ত্রী
উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি ১ বিঘা জমিতে ১৩ দিন আগে পাটের বীজ বপণ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে ১ বার সেচ দিতে তার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। তীব্র তাপদাহে খেতে পাটের বীজ থেকে এখনও পরিপূর্ণভাবে চারা বের হয়নি।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের দোরমুটিয়া গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান জানান, গত বছর পাট চাষে লাভ হওয়ায় এবার বিলে প্রায় ২ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। কিন্তু খরার কারণে ক্ষেতে সেচ দিতে তার বাড়তি খরচ হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে পাট গাছ সেভাবে বাড়ছে না।
পৌরসভার ভোগতীনরেন্দ্রপুর এলাকার পাটচাষী রেজাউল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড রোদ ও অনাবৃষ্টির কারণে তার খেতের পাট গাছের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। পাটের চারা গজানোর থেকে ঘাস গজিয়েছে বেশি। ওই আগাছা পরিষ্কার করতে বাড়তি শ্রমিক নিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাট আবাদে এবার লোকসান গুনতে হবে। তার খেতে নিড়ানি দেওয়ার সময় নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম ও হাজিরা খাতুন বলেন, সাবধানতা অবলম্বন করে ঘাস উপড়ে পাটের চারা রক্ষা করতে হচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় পুলিশ ও পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ১৫
উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের বাগদহা গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান জানান, তিনি ১ বিঘা ৬ কাটা জমিতে পাট বপণ করেছেন। দূর থেকে তিনি পাইপের মাধ্যমে সেচ কাজ চালিয়ে তার খেতের পাট রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বৃষ্টি না হলে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে বকেয়া বেতনের দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের মানববন্ধন
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি মৌসুমে কেশবপুরে ৪ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে কৃষকদের বিকেলের পর ক্ষেতে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
৩ বছর আগে