তীব্র তাপদাহ
অবশেষে চুয়াডাঙ্গায় নামলো স্বস্তির বৃষ্টি
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহের অবসান হলো, সোমবার অবশেষে ২৪ দিন পর বৃষ্টির দেখা পেল চুয়াডাঙ্গাবাসী।
চুয়াডাঙ্গাতে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত ১ এপ্রিল। সেসময় সাত মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও রেকর্ড করা হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে স্বস্তির বৃষ্টি, ঝরেছে শিলা
এরপর একটানা ১৯ দিন প্রচণ্ড তাপে পুড়তে থাকা জেলাবাসী বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলো। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
সোমবার বেলা পৌনে তিনটায় জোরেশোরেই এ জেলায় বৃষ্টি নামে। যদিও মুষলধারে এখনও এখানে বৃষ্টি নামেনি।
গত তিন দিন মেঘ-রোদের খেলায় ঈদ কাটিয়েছে এ জেলার মানুষ। তবে সামান্য বৃষ্টি হওয়ার পর আবার রোদ উঠে থেমে থেমে বাতাস আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কমছে। এটি কয়েক দিন থাকবে। আর দীর্ঘ ২৪ দিন পর বৃষ্টি হলো চুয়াডাঙ্গায়। এর চলতি মাসের ১ তারিখে এ জেলায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সর্বোচ্চ চুয়াডাঙ্গায় ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অফিস
৩ বিভাগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা
১ বছর আগে
বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
সীমান্ত জেলা নওগাঁতে গত দেড় মাস ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। ফলে চরমভাবে রোপা আমন ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপদাহে শুধু ধানই নয়, সবজির খেতও পুড়ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কদিন আগেই আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা মরতে বসেছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। নওগাঁর প্রতিটি মাঠের চিত্রই একইরকম। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির খেতও নষ্ট হতে বসেছে।
নওগাঁ সাপাহার সদর উপজেলার কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, মাঠজুড়ে যখন ব্যস্ততা থাকার কথা ধান রোপনের। ঠিক এমন সময়ে বসে বসে দিন কাটছে কৃষকদের। সারাদিন অতিরিক্ত রোদে ঘরের বাহিরে বের হওয়ায় কষ্টর হয়ে পড়েছে। এরপর আবার বৃষ্টি নেই প্রায় মাস পার হতে চললো। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমের আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
তিনি জানান, এই মুহূর্তে কৃষক যদি গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচে চাষাবাদ করে, তাহলে অনেক খরচ বেড়েছে যাবে। অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ করলে এই ফসল থেকে কৃষকের কিছুই থাকবে না।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস মাঠ এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, অনেক কষ্টে মাঠের পাশে একটি ডোবা থেকে পানি সেচে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় রোপণ করা ধান গাছগুলো পুড়ে গেছে, জমির মাটি ফেটে গেছে। অল্প দিনের মধ্য যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে এসব ধান আর হবে না। শুধু দুই এক জনের নয়, পুরো মাঠ জুড়ে একই অবস্থা। এই বছর পানির অভাবে অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। ফলে ধান রোপণ করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারহানা নাজনিন জানান, এই সময়ে রোপা আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ হয়। সেহেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলায় বৃষ্টিপাত নেই, ফলে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যেই বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গভীর নলকুপগুলো চালুর বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে কিছুটা আশাবাদী আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আগামী ১৯ তারিখের পর থেকে বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হবে সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না৷ তবে সার্বিকভাবে বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস আছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ মৌসুমে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
২ বছর আগে
তীব্র তাপদাহে যশোরে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ: বিপাকে কৃষক
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় তীব্র তাপদাহে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খেতে সেচ দিতে ও আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন কৃষকেরা।
এতে করে পাটের আবাদ নিয়ে কৃষকের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
আরও পড়ুন: নাটোরে অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার মণ পাট উদ্ধার
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত খেতে পাটের চারা গজালেও তীব্র তাপদাহের কারণে অনেক কৃষকের খেতের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের চারা রক্ষা করতে কৃষকরা দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে সেচ দিতে ও খেতের আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে কৃষকেরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। এতে তাদের পাট উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাটকল শ্রমিকদের পাওনা নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ হবে: মন্ত্রী
উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি ১ বিঘা জমিতে ১৩ দিন আগে পাটের বীজ বপণ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে ১ বার সেচ দিতে তার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। তীব্র তাপদাহে খেতে পাটের বীজ থেকে এখনও পরিপূর্ণভাবে চারা বের হয়নি।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের দোরমুটিয়া গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান জানান, গত বছর পাট চাষে লাভ হওয়ায় এবার বিলে প্রায় ২ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। কিন্তু খরার কারণে ক্ষেতে সেচ দিতে তার বাড়তি খরচ হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে পাট গাছ সেভাবে বাড়ছে না।
পৌরসভার ভোগতীনরেন্দ্রপুর এলাকার পাটচাষী রেজাউল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড রোদ ও অনাবৃষ্টির কারণে তার খেতের পাট গাছের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। পাটের চারা গজানোর থেকে ঘাস গজিয়েছে বেশি। ওই আগাছা পরিষ্কার করতে বাড়তি শ্রমিক নিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাট আবাদে এবার লোকসান গুনতে হবে। তার খেতে নিড়ানি দেওয়ার সময় নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম ও হাজিরা খাতুন বলেন, সাবধানতা অবলম্বন করে ঘাস উপড়ে পাটের চারা রক্ষা করতে হচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় পুলিশ ও পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ১৫
উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের বাগদহা গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান জানান, তিনি ১ বিঘা ৬ কাটা জমিতে পাট বপণ করেছেন। দূর থেকে তিনি পাইপের মাধ্যমে সেচ কাজ চালিয়ে তার খেতের পাট রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বৃষ্টি না হলে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে বকেয়া বেতনের দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের মানববন্ধন
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি মৌসুমে কেশবপুরে ৪ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে কৃষকদের বিকেলের পর ক্ষেতে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
৩ বছর আগে