প্রচণ্ড খরা
পাবনায় প্রচণ্ড খরায় ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি, মাথায় হাত চাষিদের
চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি ও খরার কারণে পাবনা জেলায় লিচু উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা। কিন্তু চলতি বছরের তাপপ্রবাহে গাছ থেকে লিচুর গুটি ঝরে পড়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
চলতি মৌসুমের শুরুতে লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করলেও চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টির কারণে ৫০ শতাংশ মুকুল ঝরে গেছে।
আরও পড়ুন: মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক
অন্যদিকে গ্রীষ্মের শুরুতে প্রচণ্ড গরমের কারণে লিচুর গুটির একটি বড় অংশ এখন ঝরে পড়ছে।
গ্রীষ্মের দাবদাহ অব্যাহত থাকলে এ বছর লিচু চাষিদের বিপুল অংকের লোকসান গুনতে হবে।
এরই মধ্যে যেসব পাইকারি ব্যাপারি মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে বাগান কিনেছেন তাদের এখন মাথায় হাত। তাদের লাভ তো দূরের কথা লোকসানের আশঙ্কায় শঙ্কিত।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ৮০১ টন।
পাবনার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে জানা গেছে, ফাল্গুনের শুরুতে প্রতিটি লিচু গাছে যথেষ্ট পরিমাণ মুকুল এসেছিল। এবার মুকুল দেখে চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। গাছে গাছে প্রচুর মুকুল দেখে ব্যাপারিরা আগাম বেশি দাম দিয়ে বাগান কিনে নেয়। কিন্ত চলমান খরায় এবং চৈত্রের শেষ দিকে কয়েক দফায় বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার হতাশা দেখা দিয়েছে লিচু চাষিদের মাঝে।
সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আগাম বাগান কিনে রাখা ব্যাপারিরা। তাদের বিনিয়োগের অর্ধেক টাকাও ফেরত আসা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর গ্রামের লিচু চাষি মিরাজুল শেখ জানান, বৃষ্টিতে লিচুর মুকুলের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের শুরুতে যখন মুকুল থেকে গুটিতে পরিণত হচ্ছিল, সে সময় মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে গুটির একটি বড় অংশ ঝরে পড়েছে। তার বাগানের প্রায় ৫০০ গাছের প্রতিটি গাছেই ৫০-৬০ শতাংশ মুকুল গুটিতে পরিণত হতে পারেনি। তার আগেই ঝরে গেছে।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ঈশ্বরদীর গরগরি বাগান ক্রেতা মনিরুল জানান, তিনি ২৫ লাখ টাকার বাগান কিনেছেন। গাছ ভর্তি মুকুল দেখে তিনি আশায় বুক বেঁধে বেশি দাম দিয়ে কেনেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি চরম হতাশ। তার ১০ লাখ টাকার লিচুও বিক্রি করতে পারবেন কি না এই নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত গাছে পানি স্প্রে ও সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কিন্তু বিশাল বিশাল বাগানে এটা বাস্তবায়ন করা মোটেও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, সাধারণত গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে সে পরিমাণ লিচুর ফলন হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়। সে দিক থেকে খরায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এখনো লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ঈশ্বরদী উপজেলার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী শেখ মেহেদি হাসান বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষকদের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ নির্ভর করে লিচুর উৎপাদনের উপর। লিচুর বাম্পার উৎপাদন হলে এ অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হবে। ফলন বিপর্যয় হলে কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, কৃষকদের দাবি সঠিক নয়। গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে, তা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল হয়, বাকি মুকুল ঝরে যায়। এ বছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছে। যে পরিমাণ মুকুল এসেছে তার অর্ধেক ফলন হলেও লিচুর ভারে ডাল ভেঙে পড়ার কথা। তবে খরার কারণে লিচুর ক্ষতি হচ্ছে। দাবদাহ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে গাছগুলো শুষ্ক হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের প্রতিনিয়ত গাছের উপরের দিকে পানি স্প্রে করতে এবং গাছের গোঁড়ায় পরিমাণ মতো পানি দিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শনিবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’
৭ মাস আগে
প্রচণ্ড খরায় মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
জেলায় অতিরিক্ত খরা, প্রচণ্ড দাবদাহ ও নির্ধারিত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন মাগুরার চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা সদরের হাজীপুর, হাজরাপুর, মির্জাপুর, ইছাখাদাসহ ৩০ গ্রামের ২ শতাধিক চাষি লিচু চাষ করে থাকেন। এক মাস আগে যখন লিচুর ফল আসতে শুরু করে, ঠিক তখনই বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার লিচুর ফলন ভালো হয়নি। তাছাড়া বৈশাখের শুরুতেই দাবদাহ থাকায় লিচু বাগানের প্রতিটি গাছের লিচু ফেটে যাচ্ছে। একদিকে যেমন লিচুর ফলন ভালো হয়নি, তেমনি এবার লিচু ফেটে নষ্ট হওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার জেলায় মোট ৫৮৮ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। চাষিরা এবার হাজরাপুরী, মোজাফফরী, বোম্বায়, চায়না-৩সহ বিভিন্ন জাতের লিচু আবাদ করেছে। প্রচণ্ড খরা ও তীব্র দাবদাহে এবার সদরের বিভিন্ন বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষিবিভাগ থেকে নানাবিধ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: লিচু গাছের আমটি ছিঁড়ে নেয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক মেম্বার
মাগুরা সদরের শিবরামপুর গ্রামের আকামত আলী বলেন, আমার ৪টি বাগানে মোট ৩০০ লিচু গাছ রয়েছে। বাগানের সব লিচু গাছে এবার মুকুল আসেনি। সব গাছে ফল না থাকায় আমার আর্থিক ক্ষতি হবে। মুকুল আসার আগে নিয়মিত সেচ ও সার প্রদান করে আসছি। মুকুল শেষে লিচু ফল যখন একটু একটু বড় হতে থাকে ঠিক তখনই দাবদাহ বাড়তে থাকে। এ সময় প্রতিটি গাছের গোড়ায় পানি দিতে শুরু করি। কিন্তু প্রচণ্ড তাপে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছের লিচু তাপে পুড়ে রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নাটোরে আম-লিচু সংগ্রহের সময় নির্ধারণ
ইছাখাদা গ্রামের জিয়ারুল বলেন, আমার তিন বাগানে ২ শতাধিক গাছ রয়েছে। এবার বাগানের প্রতিটি গাছে মুকুল আসেনি। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হয়নি । লিচুর ফল একটু বড় হতে শুরু করলে খরা ও দাবদাহ দেখা দিয়েছে। এবার প্রতিটি গাছের অধিকাংশ লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত বছর লিচু ভালো ফলনে আমাদের আর্থিক সংকট হয়নি। কিন্তু এবার লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
এই ইছাখাদা গ্রামকে বলে লিচুর গ্রাম; কিন্তু এবার বাগানের প্রতিটি গাছে তুলনামূলক লিচু না থাকাতে চাষিরা বিপাকে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে লিচু গাছে আম আকৃতির ফল!
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, জেলায় মোট ৫৮৮ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এবার নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও প্রচণ্ড দাবদাহে অনেক লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাষিদের নিয়মিত ভালো পানি দিয়ে সেচ ও গাছের গোড়ায়, পাতায় এবং ফলে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। এখন লিচুতে রং আসতে শুরু করেছে। যদি এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হয়; তবে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
৩ বছর আগে