বাংলাদেশে ব্যাংক
মোবাইল ব্যাংকিং: মনোপলি নয়, সুস্থ প্রতিযোগিতা চায় সরকার
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে (এমএফএস) কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্দেশে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘আপনারা মনিটরিং করবেন, যেকোনও মূল্যে মনোপলি হতে দেবেন না। মনোপলি হলে তারা মনস্টার হয়ে যায়, তখন তাদের ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়ে।’
শনিবার (৮ মে) টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক খাতের নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, চীনের মতো দেশে আলিবাবা’র মতো জায়ান্টের মনোপলি ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়েছে।
এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কারণ মানুষ অভিযোগ করার প্রক্রিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় হেনস্তা হওয়ারও। তাই কেউ যেন এমএফএস বাজারে মনোপলি করতে না পারে, সে বিষয়টি আপনারা লক্ষ্য রাখবেন।
এমএফএস’র চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৪ টাকা নিচ্ছে। আমি এমএফএস’র সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করার পক্ষে, সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণের পক্ষে না। কারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকলে কেউ বেশি নিতে পারবে না। তাতে জনগণ উপকৃত হবে।’
এ সময় তিনি এমএফএস-এ ইন্টারঅপারেবিলিটি না হওয়াকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন। ইন্টারঅপারেবিলিটি কেন দেয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, দেশে এমএফএস বাজারে একটি একচ্ছত্র ব্যবসা চলছিল। সেটা ভাংতে পেরেছে ‘নগদ’। প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। অনেকটা কমে গেলেও এখনো মনোপলি আছে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং: সেন্ড মানি ফ্রিসহ সার্ভিস চার্জ কমানোর দাবি
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যাশ আউট চার্চ হাজারে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। অথচ সেখানে এখন ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। দেড় টাকা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না, কিন্তু দেড় টাকায় তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা সরাসরি চুরি করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এমএফএস-এর চার্জ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএসডি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, আমরা ২০১১-১২ সালে একটা সেইলিং দিয়েছিলাম যে, যেন এর ওপরে না যায়। এর সাথে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। ইউএসএসডি-এর পরিবর্তে অ্যাপে যখন পুরো মার্কেট চলে আসবে, তখন আমরা এটা করতে পারব।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের বর্তমানে যারা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছেন, তারা কেউ ফাউল প্লে করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্ভিস চার্জটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, ১৮ টাকার ওপরে না নেয়ার। এটা যদি না মানা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক জানান, হাজারে ২০ টাকা চার্জ সারা পৃথিবীর কোথাও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা প্রথম থেকে ফ্রি রেখেছি। সেন্ড মানিতে আসলে কোনো খরচ নেই।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ইনোভেশন নিয়ে এসেছি। ডিজিটাল কেওয়াইসি ও *১৬৭# এর মাধ্যমে মানুষ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এমএফএস সেবা ‘নগদ’ ব্যবহার করে টাকা সাশ্রয় করছে। সরকার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে গ্রাহকেরা উপকৃত হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে পারলে এমএফএস-এ প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও রকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো: শিরিন বলেন, বলা হয় এমএফএস বাজারে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আছে। আমার মতে ২-৩টা ছাড়া বাকি কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। মনোপলি হওয়ার পরে ৮০ শতাংশ শেয়ার ছিল। এখন নতুন একটি অপারেটরের কারণে ৭০ শতাংশে এসেছে। আগে প্রোপার কেওয়াইসি মেনে গ্রাহক তৈরি করা হয়নি। এসব কারণে মনোপলি দাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আপনারা এভাবে যদি প্রাইস রাখেন, তাহলে সব গ্রাহক চলে যাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। সে কারণে প্রাইস কমাতে হবে। এখন সময় এসেছে প্রাইসিং নিয়ে কথা বলার ও প্রাইস কমানো।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের এমডি ও সিইও এবং এমটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে আমরা এমএফএসগুলো চালু রাখতে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এমএফএস এমন থাকবে না। যখন ডিজিটাল কারেন্সি চলে আসবে, তখন কোনো ডিস্ট্রিবিউটর থাকবে না। আরও কিছু খরচ কমানোর সুযোগ আছে। খরচ কমালে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে।
আলোচনায় বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, ‘সহজলভ্যতা দিতে গিয়ে আমরা এই চার্জ নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নতুন কোনো রেট যদি আমরা দেশের জনগণের কল্যাণে নির্ধারণ করি, তাহলে সেটা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। অর্থাৎ সেই রেট যেন অপারেটরগুলোর জন্যও ভালো হয়।’
টিআরএনবি-এর সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
এ ছাড়া বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
৩ বছর আগে