টিকে থাকতে
টিকে থাকতে মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের সহযোগিতা চায় বেসরকারি এয়ারলাইন্স
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সীমিত পরিসরে চলছে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। সব মিলিয়ে বেসরকারি এভিয়েশন খাতের ভঙ্গুর অবস্থা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ও টিকে থাকতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।
শনিবার (৮ মে) ‘মহামারিতে বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টর : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন বক্তারা।
ওয়েবিনারটির আয়োজন করে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম (এটিজেএফ)।
বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন এই সেক্টরটি ঘুরে দাঁড়াক। প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো যাতে তাদের সেবা চালু রাখতে পারে সেজন্য তাদের যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তাই দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বাণিজ্যিক বিমান পরিসেবা চালু করেছে সরকার
ওয়েবিনারে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স ব্যবসা শুরু করেছিল। এরই মধ্যে ৫টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে থাকা তিনটির মধ্যে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ফ্লাইট স্থগিত করেছে, দুটি চলছে। যেসব কারণে এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়েছে সেই কারণগুলো এখনো বিরাজমান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সিভিল এভিয়েশনের চার্জ অনেক বেশি। আমরা এ কথাগুলো বার বার অনেক জায়গায় বলেছি। তবে কোনো কাজ হয়নি। আমাদের এভিয়েশন ফাইন্যান্স ইন্টারেস্ট আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড থেকে বেশি। প্লেনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে সেগুলো অর্ডার দেওয়ার পর দেশে আসতে সময় বেশি লাগে। অনেক ক্ষেত্রে তিন মাস লেগে যায়। এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে করোনাভাইরাস। করোনার প্রথম ঢেউয়ে আমরা মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি। আশা করছি, এবারের সংকটে তারা প্রতিটি স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বসে কার কী দরকার সে বিষয়ে আলোচনা করবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এভিয়েশন খাতকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই। আমরা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭টি নতুন এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট আনি। ৮টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু করি। এরপরই হানা দেয় করোনা। আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত, এর মাঝে আমাদের জেট ফুয়েলের দাম অভ্যন্তরীণে ৪৬টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ৩৬ থেকে ৫০ টাকা করা হয়েছে। ডিলে ইনভয়েজের চার্জ, অ্যারোনটিক্যাল, নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ সবই বেশি। অথচ ভারতে ৮০ সিটের নিচে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের কোনো অ্যারোনেটিকাল চার্জ লাগে না। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং বিমান ৬ হাজার কোটি টাকা ফরেন রেমিটেন্স রিটেইন করেছে। বাংলাদেশের আকাশপথের মার্কেট শেয়ারের ৭০ ভাগ বিদেশি ও ৩০ ভাগ দেশি এয়ারলাইন্সের কাছে। অথচ আমাদের মার্কেট শেয়ার ৭০ ভাগ হওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, এগুলো আমরা গত ৭ বছর ধরেই বলে যাচ্ছি। অথচ করোনাপরবর্তী সময় বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র ডোমেস্টিকে ৫০ লাখ টাকার প্রণোদনা পেয়েছি। যদিও আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে আমি মনে করি আমাদের প্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারম্যান তাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছেন। আমাদের টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের আরও সহযোগিতা দরকার।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পর্ষদের চেয়ারম্যান ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমরা করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়েছিলাম। তবে আরেকটি ঢেউ এভিয়েশন খাতকে আঘাত করেছে। সারা পৃথিবীর এয়ারলাইন্সগুলো যখন বিপর্যস্ত, তখন বাংলাদেশের ৩টি এয়ারলাইন্স আমাদের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যদি বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বন্ধ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে তাহলে আগামীর সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর যদি সেসব সমস্যা ফিগারআউড না করা হয় সেক্ষেত্রে বর্তমানে ফ্লাইট চালানো এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হবে।
এ সময় বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আমরা করোনার প্রথম ঢেউকে আকস্মিকভাবে দেখিনি। আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আমরা প্রথমে ফ্লাইট গুটিয়ে নিলেও পরে আবার ধাপে ধাপে খুলে দিয়েছিলাম। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, এয়ারলাইন্স এবং মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। এয়ারলাইন্সগুলোকে বাড়াতে আমরা প্রণোদনা দিয়েছি, নানা চার্জ মওকুফ করেছি, বসে থাকা যাত্রীবাহী ফ্লাইটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সকে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক চার্জ মওকুফ করেছি, তবে সিভিল এভিয়েশনকে চালাতেও অর্থের প্রয়োজন। সিভিল এভিয়েশনকে চালাতে ১৬০০ কোটি টাকা দরকার, অথচ করোনাকালে আমাদের রাজস্ব ৮০০ কোটিতে চলে এসেছে। সারচার্জ কমানোসহ অন্যান্য চার্জ মওকুফ করার বিষয়টি দেশের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এগুলো বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করব।
অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামাল, ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মনছুর আহামেদ কালাম, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান, এটিজেএফবির সভাপতি নাদিরা কিরণ ও সাধারণ সম্পাদক তানজিম আনোয়ার যুক্ত ছিলেন।
৩ বছর আগে