জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি কমিটির ৫ সুপারিশ
বাংলাদেশে বর্তমান করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পাঁচটি সুপারিশ করেছে। কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৫৩তম সভায় এই সুপারিশ করা হয়।
সুপারিশগুলো হলো-
কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীরা লক্ষণ প্রকাশের ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকবে। এছাড়া কোভিড-১৯ নিশ্চিত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যাক্তি যাদের কোন উপসর্গ নেই তাদের কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন নেই, তবে তাদেরকে টাইট মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।
বিমানবন্দরসহ সকল পোর্ট অব এন্ট্রিতে সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নজরদারি বৃদ্ধির জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।
সকল সরকারি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড সকল রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশীদের যেমন –পরিবহন মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সকলকে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
জাতীয় পরামর্শক কমিটি জনগণকে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের প্রস্তাব করে। এছাড়া জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণের সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৩৩ কোটি ৭১ লাখ ছাড়িয়েছে
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে আরও সাড়ে ৯ হাজার। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৭৬ জনে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৮৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এইদিন শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭২ শতাংশ।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৪৭৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় শনাক্তের হার ২৫.১১ শতাংশ, মৃত্যু ১২
২ বছর আগে
ষাটোর্ধ্ব ও সম্মুখ যোদ্ধাদের করোনার বুস্টার ডোজ দেয়ার সুপারিশ
৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক ও সম্মুখ যোদ্ধাদের করোনার বুস্টার ডোজ দেয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সোমবার এক ভার্চুয়াল সভায় পরামর্শক কমিটি এ সুপারিশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য পর্যাপ্ত টিকা নিশ্চিত করে ষাটোর্ধ্ব নাগরিক ও সম্মুখ যোদ্ধা যারা করোনার দুই ডোজ টিকা ছয় মাস আগে নিয়েছেন তাদের বুস্টার ডোজ দেয়া যেতে পারে।
এছাড়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরামর্শক কমিটি।
করোনার ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের সভা সমাবেশ বা জনসমাগম সীমিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
অতীব প্রয়োজন ছাড়া অফলাইন সভা পরিহার করে অনলাইন এ সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া দেশের সব প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন আরও জোরদার করার সুপারিশ করা হয়।
এর আগে শনিবার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দুজনের দেহে শনাক্ত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯ ডিসেম্বর জানিয়েছে, বিশ্বের ৫৭টি দেশে ওমিক্রন পাওয়া গেছে এবং এ ধরন নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: করোনার বুস্টার ডোজ নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় কাজ করার নির্দেশ
করোনা টেস্টের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত: টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার কারাগারে
৩ বছর আগে
কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে ও সদস্যদের উপস্থিতিতে ৩৪ তম অনলাইন সভায় এই সুপারিশ করা হয়।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতালির করোনা রোগীর পোস্ট মর্টেম সংক্রান্ত একটি তথ্যসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উদ্বৃতি দিয়েও বিভিন্ন ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। সভা মনে করে প্যানডেমিকের সময় এই ধরনের “ইনফোডেমিক” জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি স্বরূপ হতে পারে। জাতীয় কমিটি এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো প্রচারে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন: দেশে কোভিড ভ্যাকসিনের মজুদ শেষের দিকে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সরকার আরও এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ বাড়িয়েছেন। কমিটি বিধিনিষেধের প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ঈদ পূর্ববর্তী যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। ঈদের পরে একইভাবে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। ঈদের পরে কলকারখানা পর্যায়ক্রমে খোলা হলে জনসাধারণকে এক যোগে ঢাকায় ফিরতে হবে না। কমিটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধি নিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের অংশ গ্রহণ নিশ্চত করা প্রয়োজন বলে সভা মনে করে।এ ছাড়াও এসকল বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিভিন্ন অংশীজনদের সহযোগিতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ বিশেষ প্রয়োজন।
ভারত থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। ১৪ দিন পর পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দেয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া বর্ডার এলাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াত কঠোরভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সাথে সীমান্তে চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।
সভায় হাসপাতাল সমূহে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কমিটি এই সব পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে। কমিটি মনে করে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করে পরনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। সকল জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়াও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও মারাত্মক রোগীর চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর ছাড়াও বাই প্যাপ, সি প্যাপ ও হাই ফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা সকল জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সংযোগ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ঈদের আগেই চীন থেকে ভ্যাকসিন পেতে আশাবাদী ঢাকা
স্বল্প মূল্যে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বুয়েটের একটি গবেষকদলের প্রয়াসকে অভিনন্দিত করা হয়। এই কার্যক্রমে সরকার পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটি দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর এবং এর সফল বাস্তবায়ন পরনির্ভরশীলতা কমাতে ভূমিকা রাখবে।
সভায় শ্রীলঙ্কা টিম বাংলাদেশে আসা ও খেলা অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা হয়। অনুশীলন ও খেলা চলাকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ও বিকল্প অনুসন্ধান করছে। প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহের ভিতরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া যায়, কোন কোন দেশ ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান করছে। এই ব্যাপারে সকলকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগকেও এ ব্যাপারে টিকার পরিস্থিতি ও সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা জনগনকে অবহিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। ভ্যাকসিনের জন্য পরনির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের জন্য দ্রুত সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে কমিটি মতামত ব্যক্ত করে।
আরও পড়ুন: করোনা: দেশে মডার্নার ভ্যাকসিন আনার অনুমতি চেয়ে আবেদন
সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোভিড-১৯ পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।
৩ বছর আগে