পথবাসী নারী
খুলনা শহরের অসহায় পথবাসী নারীদের মানবেতর জীবন
খুলনা শহরের অসহায় পথবাসী নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের সহায়তা বা অন্য কোন সাহায্য মেলেনি তাদের ভাগ্যে। রাস্তায় রাস্তায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় খুলনাভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে এসব গৃহহীন মানুষের দুর্দশার বিষয় তুলে ধরতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকরী সাহায্য পায়নি তারা।
আরও পড়ুন: খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
রূপসা ঘাট এলাকার এটলাস সী ফুডের সামনের ফুটপাতে রোদের মধ্যে কোমরের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন ভানু বেগম। গত পাঁচ বছর থেকে শহরের বিভিন্ন ফুটপাতেই থাকেন তিনি। স্বামী-সন্তান, পরিবার সবই ছিল, এখন কিছুই নেই তার। পাঁচটা বস্তা, একটি প্লাস্টিকের ড্রাম, একটা বালতি আর একটা ছেড়া তোষক নিয়েই তার রাস্তার সংসার।
আরও পড়ুন: করোনা: ঝিনাইদহে বন্ধ পার্ক কর্মীদের মানবেতর জীবন
তিনি জানান, ছোট বেলায় ফুপুর সাথে বরিশাল থেকে খুলনায় এসেছিলেন। বিয়ের পরে গর্ভবতী অবস্থায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর চাকরি করতেন এটলাস সী ফুড কোম্পানিতে। ফাতেমা নামের একটি মেয়েও ছিল তার। গত পাঁচ বছর আগে মেয়েকে হারিয়েছেন। তারপর থেকে ফুটপাতে থাকেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, রাস্তায় রাত কাটাতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। আগে থাকতেন টুটপাড়া কবর খানার মোড়ে। সেখানে একজন নাইটগার্ড রাতে নিপীড়ন করতো তাকে। আর এখন রূপসা সন্ধ্যা বাজারের কয়েকজন নাইটগার্ড ও বখাটেরা বিরক্ত করে। সোমবার রাতে তাদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় মারধর করেছে তাকে।
আরেকজন মহিলা এক বছর থেকে সন্তান নিয়ে থাকছেন খুলনা জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী রেঞ্জ অফিসের সামনের ফুটপাতে। সকাল থেকে শিশু সন্তানটিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। সন্তান হারিয়ে রাস্তার পাশে লাঠি হাতে পাগলের প্রলাপ বকছেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মানবেতর জীবন: বিচারের জন্য নিরলস লড়াই
রেঞ্জ অফিসের অপর পাশে আতিক এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ইমারুল ইসলাস জানান, গত এক বছর থেকে সাত বছরের মেয়ে নিয়ে এখানে আছে মহিলাটি। রোদ, শীত, ঝড়, বৃষ্টিতে বাচ্চা নিয়ে রাস্তাতেই থাকেন। মানুষের দেয়া খাবারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে মহিলাটির।
রাস্তায় দিনযাপন করা এসব মানুষগুলোর সরকারি সহায়তা পাওয়া সম্ভব কি না, এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খাঁন মোতাহার হোসেন বলেন, ‘পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সমাজ সেবা অফিসের সহায়তার সুযোগ নেই। ভবঘুরে হলে ময়মনসিংহ ভবঘুরে পুনর্বাসন সেন্টারে পাঠানো সম্ভব। তবে তারা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী হলে আবেদন করলে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’
৩ বছর আগে