গুম হওয়া রুবেল
নারায়ণগঞ্জে ১৪ বছর পর জীবিত ফিরলেন গুম হওয়া রুবেল
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেকের কুড়েরপাড় এলাকায় কথিত গুমের ১৪ বছর পর ফিরে এসেছেন আল আমিন রুবেল নামে এক যুবক।
১৪ বছর আগে রুবেলের মা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১৯ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ আসামিদের অনেকে জেল খেটেছেন।
বৃহস্পতিবার রুবেল বাড়িতে ফিরে আসলে রাতে মামলার আসামিরা তাকে ধরে সদর থানায় হস্তান্তর করে। শুক্রবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া রুবেলের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে রুবেল নিজ জিম্মায় তার বাড়িতে ফিরে যান।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত এই মামলার মূল নথিপত্রের সাথে রুবেলের জবানবন্দির রেকর্ড সংযুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কি করণীয়, আদালত সে বিষয়ে পরবর্তীতে নির্দেশনা দিবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় এলাকার জানু মিয়ার সাত বছর বয়সের শিশু সন্তান রুবেল নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দেড় মাস পর ২৩ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় বাদি হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন রুবেলের মা রহিমা বেগম। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ পর্যায়ক্রমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরই প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে আসামিদের অব্যাহতি দেন।
রুবেল জানায়, সে তার মা রহিমা খাতুনের মারধর ও ক্ষুধার যন্ত্রনায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে গিয়েছিল। পরে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কমলাপুর যায়। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষের কাছে হাত পেতে খেয়ে বেঁচেছিল। এরপর এক লোকের সাথে পরিচয় হওয়ার পর ওই লোক রামপুরা একটি হোটেলে কাজ নিয়ে দেয় তাকে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। বর্তমানে সে মগবাজার মধুবাগ হাতির ঝিল সংলগ্ন মসজিদের পাশে ভাড়ায় বসবাস করে সেখানেই রং মিস্ত্রির কাজ করছে।আসল নাম রুবেল হলেও মগবাজারে রং মিস্ত্রি আল আমিন নামে পরিচিত সে।
রুবেল আরও জানায়, বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর তার সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হয়। পরে সে কুঁড়েরপাড় আসতে চাইলে তার মা বলে তাকে এলাকায় নিয়ে গেলে মেরে ফেলবে। গত ৬ বছর ধরে সে এলাকায় আসতে চাইলেও তার মা তাকে আসতে দেয়নি বলে জানায় রুবেল। এক পর্যায়ে তার মাকে না জানিয়েই বুধবার রাতে কুঁড়ের পাড় নিজ বাড়িতে ফিরে আসে সে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার আসামিরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে। মামলার বাদী রহিমা খাতুন গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পলাতক রয়েছেন।
সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান জানান, ১৩ বছর পর ফিরে আসা রুবেলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী থানায় নিয়ে আসে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর আইনের বিধান অনুযায়ী বাদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৩ বছর আগে