৩৩৩
৩৩৩-তে সাহায্য চেয়ে রিকশাভ্যান পেলেন হাটহাজারীর প্রদীপ
করোনাকালীন অসহায়, কর্মহীন, হতদরিদ্র মানুষদের ত্রাণ বিতরণের জন্য সরকার ৩৩৩ নম্বরের একটি জাতীয় কলসেন্টার চালু করেছেন। যাতে ফোন করে জরুরি খাদ্য সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু এবার ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করে খাদ্য সামগ্রী নয়, একটি রিকশাভ্যান উপহার পেয়েছেন হাটহাজারীর দরিদ্র রিকশাচালক প্রদীপ নাথ।
৩৩৩ নাম্বারে সাহায্য চাওয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিব্রতকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, সেই মুহূর্তে ত্রাণের বদলে রিকশাভ্যান উপহার পেয়ে রীতিমত হতবাক ও মহাখুশি হতদরিদ্র প্রদীপ নাথ। আর এ উপহার দিয়ে মানবিকতার নজির স্থাপন করলেন হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন।
আরও পড়ুন: ৩৩৩ নম্বরে খবর পেয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও
হাটহাজারীর প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকার হাট এলাকার দরিদ্র রিকশাচালক প্রদীপ নাথ ৩৩৩ নাম্বারে এসএমএস করে সাহায্যের আবেদন করেন সপ্তাহখানেক আগে। এসএমএস পেয়েই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রদীপের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রদীপ নাথ তার দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে ত্রাণের বদলে তার একমাত্র সম্বল জরাজীর্ণ রিকশাভ্যানটি মেরামত করে দেয়ার অনুরোধ করেন।
ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, প্রদীপকে ফোন করে যখন জানতে চাইলাম তার চাল, ডালসহ কোনও ধরনের ত্রাণ লাগবে কিনা। তখন প্রদীপ জানান, আপাতত চাল ডাল আছে। কিন্তু তার সংসার পরিচালনার একমাত্র মাধ্যম রিকশাভ্যানটি বয়সের ভারে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার যদি এটি মেরামত করে দেয় তাহলে তিনি ভ্যান চালিয়ে চাল-ডাল যোগাড় করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রকৌশলী জামাল এখন আদর্শ কৃষক
ইউএনও বলেন, ‘তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য আমি গোপনে খবর নেই। এবং জানতে পারি তিনি সত্য বলেছে এবং তার উপার্জনের একমাত্র বাহন ভ্যানটি চালানোর অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম প্রদীপকে একটি ভ্যান উপহার দিব।’
তিনি বলেন, ‘প্রদীপ নাথের মন মানসিকতা আমাকে অবাক করেছে। তিনি পরিশ্রম করে আয় করতে চান, কোনও ত্রাণ চান না। তার দূরবস্থা দেখে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে একটি ভ্যানগাড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ভ্যান পেয়ে এখন খুব খুশি প্রদীপ।
৩ বছর আগে
ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে বৃদ্ধ ফরিদের পরিবার
অবশেষে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পরিবার। ফরিদ আহমেদ সরকারি হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন। তবে তিনি খাবার পাননি উল্টো তাকে ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন রবিবার সকালে জানিয়েছেন, বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়৷
আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে নিহতদের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি ডা. জাফরুল্লাহ’র
ডিসি বলেন, ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে সেসব ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ। ঘরে তার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে, স্নাতক পড়ুয়া মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। এক সময়ে স্থানীয় এক হোসিয়ারি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। তিনবার ব্রেন স্ট্রোক করার পর ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ফরিদ এখন কাজ করতে পারেন না।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণের চেকসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে আবেগাপ্লুত বয়োবৃদ্ধ আবু বকর
ওই কারখানাতেই শ্রমিকদের উপর নজরদারি রাখা বাবদ মাসে ৮ হাজার টাকা পান তিনি। তাতে কষ্টেসৃষ্টে চলছিল তার সংসার। তবে করোনাকালীন সময়ে পড়েছেন মহাসংকটে। এক রকম নিরুপায় হয়েই জাতীয় কল সেন্টারের ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চান ফরিদ। এই একটি কলই কাল হলো তার।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাগবাড়ি শেষ মাথা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, নিয়মিত এফএম রেডিও শোনেন তিনি। রেডিওতে সংবাদে তিনি জেনেছেন ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়। সরকারি সহায়তা পেতে তিনি কল করেছিলেন ওই নম্বরে। কিন্তু সহায়তা তো পাননি, উল্টো তিনি চারতলা ভবনের মালিক এমন তথ্যের কারণে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে তাকে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরার নির্দেশে তাকে ১০০ জনের মাঝে চাল, আলু, ডাল, লবন ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে হয়েছে।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, তার আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ। কাজ করতে পারেন না। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য মেয়ে টিউশনি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগান। প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য নিয়মিত ওষুধ লাগে। তার নিজেরও দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। দুই চোখেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তিনবার স্ট্রোক করেছেন। কোনো রকমের সঞ্চয় নেই তার। নিজের ওষুধ কেনারও পয়সা নেই। ছয় ভাই ও এক বোন মিলে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে চারতলা ভবন করেছেন। চারতলায় উপড়ে টিন শেড দেওয়া দু’টি ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন ফরিদ।
নিজে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন বলেই সরকারি সহায়তার জন্য ওই নম্বরে কল করেছিলেন বলে জানান এই বৃদ্ধ। সহায়তা চেয়ে আরও বিপদে পড়েছেন তিনি। ১০০ জনকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই।
নিজের স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর গয়না বিক্রি ও ধার-দেনা করে বিতরণের জন্য এসব খাদ্যসামগ্রী কিনেছেন বলেও জানান।
এমনকি স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর থেকেও ধার নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা।
এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে প্রধান করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
৩ বছর আগে