ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের রেশ এখনো কাটেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে।
এদিকে, ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শ্যামনগরে ২৪টি, আশাশুনিতে ১২, কালিগঞ্জে পাঁচ ও দেবহাটায় একটি পয়েন্ট রয়েছে। বুধবার বিকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধ স্থানীয় লোকজন সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইয়াসের প্রভাবে কারণে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে মৎস্য শিল্পে। কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে নদীর সাথে মিশে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন।
ইয়াস অতিক্রম করার সময় নদীতে ৮ থেকে ৯ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। তবে বুধবার বিকালে নদীতে ভাটার টানে প্রচুর পরিমাণ পানি নেমে গেছে। ফলে রাতে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ ফুট কমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা নদীতে দ্রুত পানি কমে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
অপরদিকে, ইয়াসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী, গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়ন এবং আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রিউলা ইউনিয়ন। বুধবার দুপুরে ইয়াস অতিক্রম করার সময় জলোচ্ছাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে বিস্তিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এদিন রাতে শ্যামনগর উপজেলার ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। তাদের অধিকাংশের বাড়িঘর পানিতে ধসে পড়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্রে রাতে খাবার পৌঁছায়নি। খাবার পানির তীব্র সংকট দুর্গত এলাকায়। এই মুহূর্তে দুর্গত এলাকায় খাবার পানি ও শুকনো খাবারের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, যে সমস্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামতের জন্য বুধবার বিকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনেক মানুষকে সংস্কার কাজে লাগানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৩ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। বৃহস্পতিবার শুকনো খাবার বরাদ্দ আসার কথা রয়েছে।
৩ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলার সাতক্ষীরায় ব্যাপক প্রস্তুতি
জেলা ও প্রতিটি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলার সাতক্ষীরায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলায় ১৪৫ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দেড় হাজার স্কুল, কলেজ, মাদরাসাকে ইতোমধ্যে পরিষ্কার পরিছন্ন করা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে যেন দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষ আশ্রয় নিতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ১৪০টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন: প্রতিমন্ত্রী
এদিকে, সুন্দরবনের ভেতরে জেলে,মৌয়াল,বাওয়ালীদেরকে নিরাপদে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বনবিভাগ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই উকপূলীয় এলাকায় মাঝে মধ্যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তবে সাতক্ষীরা জেলা শহরে মাঝে মাঝে রোদ উঠছে, তবে কোন দমকা হাওয়া বইতে দেখা যায়নি। গরমের তীব্রতা কমে গেছে। নদীর পানি এক থেকে দেড় ফুট বৃদ্ধি পয়েছে। এলাকার মানুষ বেশ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। নগদ ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল , রেড ক্রিসেন্ট দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষ যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আসে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ অধীক ঝুকিপূর্ণ সেসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় সংস্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনগুণ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পাউবো-১ ও পাউবো-২ এর আওতায় প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ । আর অধীক ঝুকিপূর্ণ প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মানুষকে সাথে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
৩ বছর আগে