ধ্বংসস্তুপ
সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
সিলেটের উঁচু এলাকাগুলো থেকে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। তবে ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা এখনো পানিতে টইটুম্বুর। এদিকে উঁচু এলাকাগুলো থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ধ্বংসস্তুপের চিত্র।
রবিবার সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেটে ক্ষয়-ক্ষতির যেন কোনো শেষ নেই। ঘরবাড়ি, ফসল, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। এবারের বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সোয়া চার লাখ পরিবারের প্রায় ২২ লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার আহসানুল আলম জানান, বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৯টি ইউনিয়নের চার লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে।বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এখন অবধি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক হাজার ৪১২ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ এক কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে।তবে জেলা প্রশাসনের এ হিসেবের চেয়ে প্রকৃত ক্ষতি আরও কয়েক গুণ বেশী বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সূত্রগুলো। এছাড়া সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি সূত্র বলছে, সিলেট জেলার সড়ক বিভাগের প্রায় ১২৫ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গেছে।এদিকে, বন্যার ভয়াবহতায় সিলেটের স্বাস্থ্যখাতেও নজিরবিহীন ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের নিচতলা প্রায় তিনফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। পানি নামার পর দেখা যায়-হাসপাতালটির এম আর আই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে বন্ধ রয়েছে এসব সেবা কার্যক্রম।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এবারের বন্যায় শুধু ওসমানী হাসপাতালেই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিভাগের অনেক সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে বিভাগজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।বন্যায় আক্রান্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উল্লেখ করে- সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। ৮৫ টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢুকেছে। সুনামগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও ৯শ ২৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক পানিতে নিমিজ্জিত হয়।সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সকল উপদ্রুত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইপিআই আইএলআর ফ্রিজ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্সরে মেশিন, এমএসআর সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব যন্ত্রপাতি কতটা সচল কিংবা অচল তা পানি নেমে না যাওয়ায় যাচাই করা যাচ্ছে না। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে আরও সময় লাগবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটার কমে ১৩ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। একই সময়ে নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি দশমিক শূন্য ৭ সেন্টিমিটার কমে ১০ দশমকি ৮২ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। তবে এই সবই বিপদসীমার ওপরে।
ওদিকে, কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্ট ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে ।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটে গত পাঁচদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তবে আগামী মাসের শেষ দিকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
২ বছর আগে
ঝিনাইদহে ঝড়ে লন্ডভণ্ড অর্ধশত বাড়িঘর
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আড়মুখী গ্রামে হঠাৎ ঝড়ে লন্ডভণ্ড হয়েছে অর্ধশত বাড়িঘর। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আড়মুখী গ্রামে এ ঝড় আঘাত হানে।
নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকেই হালকা বাতাসের সাথে বৃষ্টিপাত হয়। সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। শুরু হয় ঝড়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়
তিনি আরও জানান, ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড স্থায়ী এ ঝড়ে আড়মুখী গ্রামের কুটিপাড়া থেকে পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটারের মত ব্যাস ধারন করে ২ কিলোমিটার লম্বা স্থান ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। এতে অর্ধ-শত কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উপড়ে যায় শতশত গাছপালা। ঝড়ের কবলে পড়ে নারী ও শিশুসহ ৩ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
ক্ষতিগ্রস্থ ওই গ্রামের বাবলু শেখ বলেন, হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলো। কিছু বোঝার আগেই ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে গাছপালা উপড়ে গেল। বাড়িঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেছে।
একই এলাকার দোস্তর আলী বলেন, যাদের মাটির ঘর বা টিনের ঘর ছিল তাদের আর কিছুই নেই।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩ বছর আগে