পিঠা পুলি
মাগুরায় কালের বিবর্তনে 'ঢেঁকি' বিলীন হতে চলেছে
মাগুরা জেলার ৪ উপজেলায় কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ার দাপটের কাছে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এক সময়ের কৃষান-কৃষানীদের ভাল মানের চাল তৈরি করার প্রধান মাধ্যম ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি।
চাল তৈরির কদর কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে কমে গেলেও পৌষ মাসে জামাই, মেয়ে, আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নের জন্য এই এলাকায় শীতের আমেজ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে পিঠা পুলি তৈরির মূল উপাদান চাল থেকে আটা তৈরির জন্য কাঠের ঢেঁকির কদর বেড়ে যেতো। এমন কি যার বাড়িতে ঢেঁকি থাকতো সেই বাড়িতে প্রতি কেজি ভেজানো চাল টাকার বিনিময়ে বা হতদরিদ্র পরিবার চাউলের বিনিময়ে আটা ভাঙ্গানোর জন্য দুই দিন আগেই সিরিয়াল দিয়ে রাখতেন।
এই আটা দিয়ে পিঠা তৈরিতে মা-বোনদের কোন বেগ পেতে হয় না।
“ও বউ ধান বানেরে” গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী গানটি আর তেমন শোনা যায় না। চোখে পড়ে না আর ঢেঁকিতে পাড় দিতে দিতে গ্রামীণ বউদের এই গান গাওয়ার দৃশ্য।
আরও পড়ুন: মাগুরায় হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি, চোখে পড়ে না বাসা
কালের পরিবর্তনে মাগুরা জেলা সদর সহ ৪ উপজেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর গ্রাম-বাংলার কৃষকদের বাড়ী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা দুই এক জন কৃষকের বাড়ীতে কাঠের তৈরি প্রাচীনতম ঢেঁকি এখনও চোখে পড়ে।
ধান, চাল, আটা ও চিড়া ভাঙ্গনোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীণ কৃষকরা সহজেই ধান, আঁটা ও চিড়া কম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। তাই বাড়ীতে ঢেঁকি রাখার প্রয়োজন মনে করছেন না অনেকেই।
আগের দিনে কৃষকদের বাড়ীর বউদের অনেক কষ্ট করে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ভাঙ্গানোর পর চাউল ও চিড়া তৈরী হত। ধান ভাঙ্গানোর বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকদের বাড়ীর বউদের আর কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভেঙ্গে চাউল, আঁটা ও চিড়া তৈরী করাতে হয় না।
তবে বিশেষ সময়ে আটার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢেঁকির কদরও বৃদ্ধি পায়। কবি, সাহিত্যিকরা যুগে যুগে অনেক কবিতাও লিখেছেন এই ঢেঁকি নিয়ে। তাই ঢেঁকির গুণ সম্পর্কে প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও নাকি ধান বানে।
গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাপ-দাদার মাটির বাড়ি ঘড়ের বদলে ডিজাইন করে ইটের বাড়ি ঘড় তৈরি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক বাড়িতেই ঢেঁকি রাখার মত জায়গা থাকছে না। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি বিলুপ্তীর পথে। ঢেঁকি হয়ত আর কারও চোখে পরবেনা বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
ধোয়াইল গ্রামের শামেলা বেগম (৭০) জানান, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির আমল থেকেই এই বাড়িতে ঢেঁকি ছিলো। পারিবারিক প্রয়োজনে খুব বেশি ব্যবহার না করলেও শীতের সময় আমার প্রয়োজন মত আটা তৈরি সহ প্রতিবেশিরা প্রায় প্রতিদিনই পিঠা তৈরির আটা ভাঙ্গানোর জন্য ভিড় করতো। সত্যিই এর কদর একেবারে শেষ হচ্ছে না।
বড়রিয়া গ্রামের ছকিনা বেগম (৫০) জানান, এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি অনেকটা স্মৃতিবসতই ধরে রেখেছি। প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে এই ঢেঁকিতে ধান, আঁটা ও চিড়া ভেঙ্গে আসছি।
এলাকার লোকেরা আঁটা ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসতেন। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি কেজি চালের আঁটার জন্য ৪-৫ টাকা নিতেন। এখন হাট বাজারে মিল হওয়ায় সবাই মিল থেকে চাল গুড়া করে আনে। যে কারনে তাদের কাছে এখন আর কেউ আসে না চাল গুড়া করতে।
৩ বছর আগে