বাউরেস
বাকৃবিতে ৬ শতাধিক কৃষি বিষয়ক নতুন গবেষণা উপস্থাপন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের শতাধিক গবেষক পোস্টার ও মৌখিক আকারে ছয় শতাধিক কৃষিভিত্তিক গবেষণা উপস্থাপন করেছেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষসহ কয়েকটি স্থানে পোস্টার ও মৌখিক উপস্থাপনাগুলো নেওয়া হয়।
বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) গবেষণা অগ্রগতির তিন দিনব্যাপী বার্ষিক কর্মশালায় ২৩টি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থাপনাগুলো সম্পন্ন হয়েছে।
বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, ‘১৯৮৪ সালে বাউরেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪ হাজার ৫৩৭টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে ও ৬৭৪টি গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনুষ্ঠানে ২৩টি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থাপিত হবে এবং তা থেকে পরবর্তী গবেষণার পরিকল্পনা করা হবে। পরবর্তীতে সেশনভিত্তিক বেস্ট ২১ জন উপস্থাপনকারীকে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হবে।’
এছাড়া পোষ্টার সেশন মোট ৬ জনকে সেরা পোস্টার উপস্থাপনকারী হিসেবে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান ড. মো. হাম্মাদুর রহমান।
সরজমিনে দেখা যায়, গবেষকরা কৃষিখাতে বিভিন্ন রকম নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন। কেউ কাজ করেছেন ডায়াবেটিস কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে; কেউ কাজ করছেন গবাদি পশু, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান উন্নয়নে; বাজারে থেকে কিনে আনা মুরগি, ডিমের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে; গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও এর সমাধান; জৈব সারের মানোন্নয়ন ও উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে; ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন; মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলজ সম্পদের অধিকতর ব্যবহার; কৃষি প্রযুক্তিতে উন্নয়ন; গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় কৃষি অর্থনীতির নানা দিক ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালার উদ্বোধন
এ সময় ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক গবেষণায় বাজার থেকে আমরা যে পোল্ট্রি মুরগি কিনে আনি তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি কক্সিডিওস্ট্যাটও থাকে। এর প্রভাবে মানুষের লিভার, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া কক্সিডিওস্ট্যাটও অতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশ আরিয়াল ও আসমিতা ভূজেলের সহযোগিতায় প্রাথমিক গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারাহ তাসফিয়া বলেন, বাউরেসে আমার গবেষণা উপস্থাপনের সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এটি আমাকে বৈশ্বিক গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ করে দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর গবেষণার পথ সুগম করবে। আমি আশা করি, আমার কাজ কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষণা কার্যক্রম সূক্ষ্মভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৮৪ সনের ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৬১তম অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) অধ্যাদেশ’ অনুমোদন লাভ করে। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকদের পরিচালিত প্রকল্প-গবেষণা কার্যক্রমের তদারকি, ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব বাউরেস পালন করে আসছে।
৩৫ দিন আগে
টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য শনিবার গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘সরকার গবেষণার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে। আমরা আশা করব, আপনারা গবেষণা করে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের আরও উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবেন। ধান, শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল যা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।’
টাঙ্গাইল থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) ‘গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালার’ উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমকে কার্যকর গবেষণা পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষি উন্নয়নে যে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেটিকে আমরা সামনে এগিয়ে নিতে চাই, টেকসই করতে চাই। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, চাষযোগ্য জমি হ্রাসসহ নানা কারণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: বাজেট: কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার
তিনি বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে প্রয়োজন আরও উন্নত, আরও উৎপাদনশীল জাতের ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাকৃবির শিক্ষক ও গবেষকদেরকে অংশীদার হতে হবে। কার্যকর গবেষণা করে ধান, বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূল, পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে বিপ্লব এনেছেন, সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে সবসময় কৃষকের পাশে থেকেছেন। তার লক্ষ্য শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই নয়, বরং কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকের জীবনমানকে উন্নত করা; গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা।
‘কৃষি নিয়ে এখন তার স্বপ্ন হলো, সারা পৃথিবীতে আমরা শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, হাঁস-মুরগি রপ্তানি করব,’ বলেন তিনি।
বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক আবু হাদী নূর আলী খানের সভাপতিত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, বাউরেসের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহফুজুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় অনলাইনে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক, গবেষক ও অংশগ্রহণকারী সংযুক্ত ছিলেন।
দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় ২০২০ সালে সম্পন্ন হওয়া বাকৃবির বিভিন্ন অনুষদের সর্বমোট ৪৭৭টি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। কর্মশালায় মোট ১৯টি টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
১৩৯৫ দিন আগে