ভারতীয় করোনা ভেরিয়েন্ট
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা
পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
পঞ্চগড় আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
যাত্রী পারাপার না হলেও আমদানি-রপ্তানির কাজে পণ্য পরিবহণে নিয়োজিত যানবাহন ও চালকরা যাতায়াত করছেন। এতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসসহ ভারতীয় করোনা ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের আশঙ্কায় স্থানীয়দের চাপের মুখে ৫ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আগামী ৪ জুন থেকে বন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
আরও পড়ুন:বাংলাবান্ধার সাথে ৪ দেশের রেল যোগাযোগ চালু হবে: মন্ত্রী
দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রয়েছে। করোনাকালে বর্তমানে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। তবে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি রপ্তানি চলছে। প্রতিদিন ভারত, নেপাল ও ভুটানের শত শত পণ্যবাহী যানবাহন ও চালক প্রবেশ করছে।
বিশেষ এই পরিস্থিতিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বন্দরের জন্য ১৪টি নির্দেশনা জারি করলেও অধিকাংশই ঠিকমত মানা হচ্ছে না। এর ফলে স্থানীয়দের চাপের মুখে পড়েন বন্দর কর্তৃপক্ষসহ ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা চান রেলমন্ত্রী
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বন্দর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিশৃংখল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্দর বন্ধ রাখা ও চালু রাখার বিষয়ে বন্দর সংশ্লিস্টরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বন্দর সংশ্লিষ্টদের দুটি পক্ষ দু রকম কথা বলছেন।
ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরসহ পুরো তেঁতুলিয়া উপজেলাটি ভারতের তিন দিকে অবস্থিত। ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালকদের মাধ্যমে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, চালকসহ কর্মজীবি মানুষজন এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ভারতের করোনা ভেরিয়েন্ট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাবান্ধার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বাসিন্দারা স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
অপরদিকে ব্যবসায়ীদের অপর পক্ষটি জানান, বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর আমদানি রপ্তানিকারক এসোসিয়েসনের দুটি পক্ষের আত্নসম্মান বজায় রাখার প্রতিযোগিতায় এমনটি ঘটছে। বন্দর খোলা রাখার পক্ষ্যের ব্যবসায়িদের অভিযোগ গত ১০ মে ঈদের ছুটির জন্য ১১ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত আমদানি রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি চিঠি দেয় বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েসনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা। ঈদ উপলক্ষে দশ দিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি মানতে পারেনি ব্যবসায়িদের একটি পক্ষ। তাদের দাবি সারাদেশের অন্যান্য বন্দর যে কয়েকদিন বন্ধ রাখা হবে সেভাবেই এই বন্দরও বন্ধ রাখা হোক। পরে সিনিয়র সভাপতি তফিজুল ইসলাম ১২ মে থেকে ১৬ মে ৫ দিন আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি সংশোধনী চিঠি প্রদান করে। এই চিঠির প্রেক্ষিতেই ১৭ মে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এ নিয়ে শুরু হয় দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৭ মে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনসহ স্থানীয় অধিবাসীরা ভারত থেকে আসা কয়েকটি পাথর বোঝাই ট্রাককে ফিরিয়ে দেয়। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। পরবর্তীতে গত ২৯ মে আবার আমাদানি কার্যক্রম শুরু হলে ব্যবসায়িদের একটি পক্ষ আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। তারা চান স্থলবন্দরের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাক। ওই দিনই কোভিড-১৯ এবং ভারতীয় ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে কুদরতি-খুদা-মিলনের নেতৃত্বে কিছু ব্যাবসায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে বন্দরটি বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানান। পরে আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েসন একটি চিঠির মাধ্যমে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সকল ব্যবসায়ীকে আহ্বান জানান। তবে এই সিদ্ধান্ত মানতে চান না কিছু ব্যাবসায়ী সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং শ্রমিকরা। তারা চান বন্দরে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাক।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েসনের সিনিয়র সহ-সভাপতি তফিজুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় বাস্তব সম্মত নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এখনো কোন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। কয়েকজন ব্যাবসায়ী নেতার ব্যক্তিগত ইগো রক্ষার্থে বন্দরটি অচল হয়ে পড়েছে।
বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, দেশে গত কয়েকদিন আগে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ার মানুষজন, বিশেষ করে বন্দর সংশ্লিষ্ট স্থানীয়রা। তাই নিজের ও এলাকার সুরক্ষার কথা ভেবে একাধিকবার তারা বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে ২৫ মে রাতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বন্দর সংশ্লিষ্ট লোকজনদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের চাপে রবিবার (৩০ মে) থেকে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ি এসি রুমে বসে আমদানি রপ্তানি করতে চান। তাদের জন্য অন্য ব্যবসায়িরা বা স্থানীয় মানুষ ঝুকিতে পড়বে এটা হতে পারেনা। দেশের অন্যান্য সীমান্ত এলাকাগুলোতে করোনা সংক্রমন বাড়ছে। আমরা আতংকে আছি। তাই স্থানীয় ব্যবসায়িরাই আমদানি রপ্তানি বন্ধ করেছে। বন্দর খোলা আছে। তারপরও যদি কেউ আমদানি-রপ্তানি করতে চায়, করতে পারে।
আমদানিকারক ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল লথিব তারিন জানান, যেহেতু সীমান্ত জেলাগুলোতে করোনা ভাইরাস এবং ভারতীয় ব্লাক ফাঙ্গাসের সংক্রমন বাড়ছে তাই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখাই ভালো। কয়েকদিন দেখা দরকার। যদি স্বাভাবিক হয় তবে আবার না হয় শুরু করা যাবে।
পঞ্চগড় আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন থেকে কার্যক্রম পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত, রবিবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ছে। বিষয়টি ভারতের পশ্চিবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি ইম্পোর্টার এক্সপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বন্দর খোলা আছে। ব্যবসায়িরা আমদানি-রপ্তানি করতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। করোনা ঝুঁকি কমাতে বন্দরে আমরা নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি।’
৩ বছর আগে