ভ্যাট নিবন্ধন
বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি তাদের ভ্যাট রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি কর নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছেন।
গত অর্থবছরে মোট ২৬ লাখ মানুষ বা ৫২ দশমিক ৪১ শতাংশ করদাতা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। ৫০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারকের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ গত অর্থবছরে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবার জন্য ভ্যাট নিলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিচ্ছে না।
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মকর্তারা এনবিআরকে বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ও খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বারবার দেশের রাজস্ব খাতকে এমনভাবে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) করের অনুপাত অর্থনীতির আয়তন অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কর-জিডিপি অনুপাত নেপালে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ভুটানে ১৬ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে এটি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সরকারি তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখালেও কর সংগ্রহে প্রায় বিপরীত প্রবণতা দেখা যায়।
জিডিপির শতাংশ হিসাবে কর সংগ্রহ ২০১৭ সালে প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর একটি।
এটি অর্থনীতিবিদদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে প্রশ্ন করতে প্ররোচিত করে, কারণ রাজস্ব প্রাপ্তি অর্থনীতির সম্প্রসারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ইউএনবিকে জানান, বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে ভ্যাট এড়িয়ে যেতে পারে। সক্ষমতার অভাবে এনবিআর তা শনাক্ত করতে পারে না।
তিনি রাজস্ব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন, যাতে মানুষ ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কর প্রদানে উৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু পরিসরে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসাগুলো ২০২২ অর্থবছরে মহামারির কারণে লোকসান থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারেনি। এতেই বড় কোম্পানিগুলো থেকে ভ্যাট সংগ্রহে কম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যাংকিং খাত থেকে কম সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে মুনাফায় মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
মনসুর বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য মোট ভ্যাট ও কর খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যা বড়ধরনের অমিল দেখায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দেখায় যে জিডিপি বৃদ্ধি ও রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও অন্যান্য দেশে কর-জিডিপি অনুপাত অর্থনীতির বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটা ধাঁধা।’
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোম্পানি। যদিও এর মধ্যে দুই লাখ ৯০ হাজার কোম্পানি বা ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা গেছে যে তবে এখনও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে দুই দশমিক ৪৩ লাখ বা ৮৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার নিচে বার্ষিক টার্নওভার আছে এমন কোম্পানির ভ্যাট নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
২ বছর আগে
বাংলাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন নিল গুগল-আমাজান
বাংলাদেশের নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত সপ্তাহে ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে টেক জায়ান্ট গুগল ও আমাজন।
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দেশ থেকে উপার্জিত আয়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেবে।
২৩ মে গুগল এবং ২৭ মে আমাজন ভ্যাট নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে এই দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের ভ্যাট প্রদান করতো।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ উদযাপনে গুগলের নতুন ডুডল
উভয় প্রতিষ্ঠানই অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএন পেয়েছে। দেশে তাদের পক্ষে ভ্যাট পরামর্শক হিসেবে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি গুগল ও আমাজনের পক্ষে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল তৈরিসহ ভ্যাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষায় সহায়তা করবে।
৩ বছর আগে